নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।
ফজরের নামাজ শেষে পাঞ্জাবিটা খুলে রেখে প্রতিদিনের মত তিন তলার জানালার পাশে বসেছেন বঙ্গবন্ধু। পাশে এসে দাঁড়ি-য়েছেন স্ত্রী ফজিলাতুন্নেছা। পূবের আকাশটা লাল হয়ে উঠছে ধীরে ধীরে। দুজনেই নীরবে তাকিয়ে সেদিকে। হঠাত্ করেই বেপরোয়া গুলির আওয়াজে কেঁপে উঠল ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের ঐতিহাসিক বাড়িটা। খানখান হয়ে গেল শান্ত প্রত্যুষের নীরবতা।
জীবনে অনেক ইতিহাস, অনেক ঘটনা-দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বেগম মুজিবের অন্তর সেদিন হয়তো কেঁপে উঠেছিল অজানা আশঙ্কায়। উত্কণ্ঠিতভাবে তিনি বঙ্গবন্ধুকে বললেন, কারা যেন গুলি করছে! বেগম মুজিব জানতেন না বাংলার ইতিহাসের সবচে গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় রচনা হয়েছে যে বাড়ির আঙ্গিনা থেকে; সে বাড়িতেই ইতিহাসের সবচে কলঙ্কজনক, সবচে বেদনাদায়ক অধ্যায়ের জন্ম দিতে ঢুকে পড়েছে এক দল জল্লাদ। হাতে তাদের উদ্ধত মারণাস্ত্র। মৃত্যু ছড়াতে ছড়াতে এগিয়ে আসছে তারা। তাদের গুলিতে ততক্ষণে প্রাণ হারিয়েছেন বাড়ির কয়েকজন রক্ষী। বঙ্গবন্ধু ব্যাপারটা জানার জন্য টেলিফোন তুলে নিয়ে প্রথমেই ডায়াল করলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাড়ি। এনগেজড! তাকে না পেয়ে তিনি ফোন করলেন জীবনের সবচে বিশ্বস্ত সঙ্গী তাজউদ্দিনকে। তার ফোন ডেড! এরপর তিনি ফোন করলেন কর্নেল জামিলকে। বঙ্গবন্ধু বললেন, জামিল, আর্মিরা আমার বাড়ি আক্রমণ করেছে। আমি কাউকেই ফোনে পাচ্ছি না। জামিল বললেন, স্যার, আমি এক্ষুণি আসছি!
ততক্ষণে গুলির আওয়াজ বেড়েই চলেছে। কি ঘটছে জানবার জন্য বঙ্গবন্ধু নামতে লাগলেন সিঁড়ি দিয়ে। সিঁড়ির নিচে জল্লাদ মহিউদ্দিন আর জল্লাদ বজলুল হুদা অস্ত্র হাতে দাঁড়িয়ে। তাদের দেখে বঙ্গবন্ধু তার স্বভাবসুলভ জলদগম্ভীর স্বরে জানতে চাইলেন, কি হচ্ছে এখানে? কি চাও তোমরা? তারা বলল, স্যার আপনাকে নিতে এসেছি! আমাদের সঙ্গে চলুন, প্লিজ! বঙ্গবন্ধু বললেন, কোথায় যাব? ঘাতকরা বলল, ক্যান্টনমেন্টে। বঙ্গবন্ধু বললেন, তোমাদের কথায় আমি যেতে পারি না। দরকার হলে তোমরা আমাকে মেরে ফেলতে পার। বজলুল হুদা বলে, আপনি না গেলে আপনাকে পদত্যাগ করতে হবে। এর জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেন, তোরা কি ভেবেছিস? তোদের কথায় আমি কোথায় যাব! আমি ক্ষমতা চাই না; তবে এভাবে দেশকে ধ্বংসও হতে দেব না। আর্মিরা যদি দেশ চালাতে পারে, ক্ষমতা নিক! জেনারেলরা কোথায়? মেজর মহিউদ্দিন বলে, তারাই আমাদের পাঠিয়েছে। আপনি চলুন, সেখানে গেলেই দেখতে পাবেন। বঙ্গবন্ধু বলেন, বেশ, কামাল আমার সঙ্গে যাবে। এই বলে তিনি উপরে উঠে গেলেন। কিশোরগঞ্জের ধসুদল গ্রামের কিশোর আবুল কালাম ভুঁইয়ার কাছ থেকে পাঞ্জাবিটা নিয়ে পরে নিলেন। কয়েকটা জায়গায় ফোন করলেন। জানালেন, তার বাড়ি আক্রান্ত। এসময় সেনাপ্রধান জেনারেল সফিউল্লার ফোন পেলেন তিনি। বঙ্গবন্ধু তাকে বললেন, সফিউল্লাহ, তোমার ফোর্স আমার বাড়ি অ্যাটাক করেছে। কামালকে বোধ হয় মেরে ফেলেছে। জলদি ফোর্স পাঠাও। সেনাপ্রধান বললেন, আই অ্যাম ডুয়িং সামথিং। ক্যান ইউ গেট আউট দ্যা হাউস? পাইপটা হাতে নিয়ে প্রস্তুত হলেন নামার জন্য। ততক্ষণে মেজর ফারুক, মেজর রশিদ তাদের দলবল নিয়ে চলে এসেছে ৩২ নম্বরে। বঙ্গবন্ধু আবার নামতে লাগলেন সিঁড়ি দিয়ে। মেজর ফারুক, মেজর রশিদ, মেজর মহিউদ্দিন—ঘাতকরা সব দাঁড়িয়ে সিঁড়ির নিচে। মেজর শরিফুল হক সেখানে এসে চিত্কার করে বলল, এতো দেরি হচ্ছে কেন? শেখ মুজিব আর পাঁচ মিনিট বেঁচে থাকলে সব শেষ হয়ে যাবে। এক্ষুণি শেষ কর তাকে। বলার সঙ্গে সঙ্গে রিসালদার মোসলেম উদ্দিন, নায়েব রিসালদার সারোয়ার হোসেন স্টেনগান দিয়ে ৬৪টি গুলি ছোঁড়ে বঙ্গবন্ধুকে লক্ষ্য করে।
ঘড়ির কাঁটায় তখন ভোর ৫টা বেজে ৪০ মিনিট। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের প্রাণহীন দেহটা লুটিয়ে পড়ল সিঁড়িতে। নিজে বাঙালি বলে চিরকাল যিনি গর্ব করেছেন, পাকিস্তানিদের খোঁড়া কবরের পাশে দাঁড়িয়ে যিনি গর্বভরে বলেছেন, 'ফাঁসিকাষ্ঠে যাওয়ার আগে বলব আমি বাঙালি, বাংলা আমার ভাষা....', এ বাংলাকে যিনি প্রাণের চেয়ে ভালোবাসতেন—সেই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করল এ বাংলার জল-হাওয়ায় পুষ্ট কিছু ঘৃণ্য নরপশু। যিনি না জন্মালে বাংলা নামে দেশটির কখনো জন্ম হতো না, বাংলার আপামর মানুষ যার নির্দেশে বুকের রক্ত ঢেলে এ দেশকে মুক্ত করেছে, সেই প্রিয় নেতাকে এভাবে হত্যা করা হতে পারে—তা ছিল কল্পনারও অতীত।
ঘাতকরা শুধু বঙ্গবন্ধুকে নয়, সেদিন তারা হত্যা করেছিল বেগম মুজিবকে, ছোট্ট রাসেলসহ তিন সন্তানকে, ভাই শেখ নাসেরকে, দুই পুত্রবধূকে। একজন পুলিশ অফিসার রাসেলের প্রাণভিক্ষা চেয়েছিলেন বলে তাকেও হত্যা করে জল্লাদরা। সন্তানদের মধ্যে শুধু দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন দেশে ছিলেন না বলে। ঘাতকরা শেখ মনির বাড়িতে গিয়ে শেখ মনি ও তার স্ত্রী বেগম মনিকে হত্যা করে। আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের বাড়িতে গিয়ে জল্লাদরা হত্যা করে সেরনিয়াবাত, বেবী সেরনিয়াবাত, আরিফ সেরনিয়াবাত, বাবু সেরনিয়াবাত, নান্টু ও কয়েকজন কর্মচারীকে। বঙ্গবন্ধুর প্রাণ রক্ষায় ৩২ নম্বর বাড়িতে ছুটে আসা কর্নেল জামিলকেও হত্যা করেছিল তারা।
পঁচাত্তরের ঘাতকদের বিচার হয়েছে। কেউ কেউ শাস্তি পেয়েছে, পালিয়ে আছে কেউ কেউ। তবে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পেছনে, বাঙালি জাতিকে কয়েকশ' বছর পশ্চাতে ঠেলে দেয়ার এ ষড়যন্ত্রের পেছনে শুধু এ কয়েকজন খুনিই জড়িত ছিল না। ছিল আরো অনেক বড় ক্ষমতাধররা—যাদের কথা হয়তো জানা যাবে না কোনদিন। সু্ত্র
২| ১৫ ই আগস্ট, ২০১৩ সকাল ৯:৩৭
মুহামমদ মিনহাজ বলেছেন: মুজিবকে মৃত্যুদন্ড দেয়ায় বাংলার কোন ক্ষতি হয়নি। বরং এ বাংলা একদল হায়েনার হাত থেকে বেঁচে গেছে, যারা চেয়েছিলো লাখো জীবনের বিনিময়ে পাওয়া বঙ্গভূমি গলা ফাটিয়ে চৎকারের বিনিময়ে একাই ভোগ করতে। আর সেই হায়েনার দলের একটা বাচ্চাই আজ দেশকে ছিন্ন-ভিন্ন করে যাচ্ছে।
আবার ও গর্জে ওঠার সময় হয়েছে সেই স্টেনগানের, যে স্টেনগান ৭৫ এ দেশকে কলঙ্কমুক্ত করেছিলো।
১৫ ই আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১:১৩
তালপাতারসেপাই বলেছেন: কুকুর মাঠে ঘাটে একাধিক বাচ্চা বিয়ায় সবগুলো ... আপনিও তাই
১৫ ই আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১:১৪
তালপাতারসেপাই বলেছেন: কুকুরটিকে বের করে দেয়া হোক,
৩| ১৫ ই আগস্ট, ২০১৩ সকাল ১০:০৪
রামন বলেছেন:
এখনও চোখে ভাসে সেদিনের স্মৃতি। ভোর বেলায় জগিং করার অভ্যাস ছিল বলে সেদিনও বন্ধুসহ বেরিয়ে ছিলাম। তখন সকাল সাড়ে ছয়টা, ধানমন্ডির লেকের পাড় পর্যন্ত পৌঁছাতে পথিমধ্যে সেখানকার বেশ কিছু অধিবাসীরা জানতে চাইলেন ঘটনা কি এবং কেনই বা এত গুলির শব্দ। উনারা বললেন ৩২ নম্বর সড়কের দিক থেকে গুলির আওয়াজ শুনেছেন তারা। আমারদের কিছুই জানা ছিল না তাই প্রকৃত ঘটনা জানার জন্য লেকের পাড়ের সড়ক ধরে ৩২ নম্বর ব্রিজের কাছাকাছি চলে এলাম। ব্রিজের উপর যেই মাত্র এক পা রেখেছি অমনি বিপরীত পাড়ে বালির বস্তার পিছনে লুকানো দুই তিন জন কালো পোশাকধারী সৈন্য গর্জন করে দাড়িয়ে গেল এবং হাতের ইশারায় আমাদেরকে ফেরত যেতে হুকুম দিল। লক্ষ করে দেখলাম মেশিন গানের নলটি আমাদের দিকে তাক করানো অবস্থায় রয়েছে। জীবনের মায়া তো সবার আছে , অগ্যতা ফিরে এলাম। বাসায় এসে দেখি আব্দুর রাজ্জাক সাহের একটি ফ্লাটে আশ্রয় নিয়েছেন। উনার ভয়ার্ত চেহারা দেখে মনে হলো কোনো রকম প্রাণ নিয়ে পালিয়ে এসেছেন তিনি। বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের ভাগ্যে কি ঘটেছে তখনও নিশ্চিত হতে পারিনি আমরা কেউ। তবে আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের মৃত্যুর খবর আগেই ছড়িয়ে পরেছিল।
আমরণ ধীক্কার এবং ঘৃণা জানাই সে সকল পাষণ্ড খুনিদের যারা বাঙালির অবিসংবাদিত নেতাকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল।
৪| ১৫ ই আগস্ট, ২০১৩ সকাল ১০:২৮
মামুন হতভাগা বলেছেন: আমরণ ধীক্কার এবং ঘৃণা জানাই সে সকল পাষণ্ড খুনিদের যারা বাঙালির অবিসংবাদিত নেতাকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল।
৫| ১৫ ই আগস্ট, ২০১৩ সকাল ১০:৩৪
ইরফান আহমেদ বর্ষণ বলেছেন: +
৬| ১৫ ই আগস্ট, ২০১৩ সকাল ১১:০০
গরম কফি বলেছেন: মুহামমদ মিনহাজ@ আপনি বিকৃত ইতিহাস জানেন আপনার প্রতি সমবেদনা । আর যদি আসলেই বুঝে শুনে পক্ষনিয়ে থাকেন তবে আপনার নেশনাল আইডি পাসপোর্ট ফেলে দিয়ে পাকিস্তানে পৈত্রিক নিবাসে চলে যান । সেটাই আপনার জন্য আমাদের জন্য ভালো ।
৭| ১৯ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১:২৯
রাজীব দে সরকার বলেছেন:
মুহামমদ মিনহাজ
এই শুয়োরের বাচ্চাটা কে?
লাত্থি মেরে বের করে দেওয়া হোক
©somewhere in net ltd.
১| ১৫ ই আগস্ট, ২০১৩ সকাল ৯:২৫
দিকভ্রান্ত*পথিক বলেছেন: