নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যাহা বলিব সত্য বলিব

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।

তালপাতারসেপাই

লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।

তালপাতারসেপাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

গোলাম আযমের কারাদন্ড প্রসঙ্গে

২৪ শে আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১২:০৬

ভোরবেলায় গেটের কলিংবেল বেজে ওঠে। গেট খুলতেই হকার পেপার দিতে দিতে বলে, ‘স্যার, কাম হইছে। রাজাকারদের দ্বারা খুন হওয়া শহীদ সাংবাদিকের মাইয়ার স্বামী মুনিরের ফাঁসি হইছে।’ এ ছাড়াও হকার ভকর ভকর করে বাংলাদেশের জন্ম, আদর্শচ্যুতি, গণতন্ত্র হত্যা এমম্বিধ বহু কথা বলতে থাকে। থলে উপুড় করা হকারের কথা বলাটি সম্ভব হয় নীরব এ শ্রোতার কারণে।

অতি সকালবেলায় তার কথা শোনার নীরব শ্রোতা পেয়েই বুঝি সে উথলে উঠেছিল।

তার এত কথার জবাবে শুধু বলি, ‘তাই।’

‘তাই’ শব্দের মধ্যেই জীবনের ছোট্ট ব্যক্তিগত কর্মজীবনের কথা আসে। সে জীবন ছিল, অন্ধ ও বোবা থাকার। আমরা তখন ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে বিচারিক কাজটি নীরবে করতাম। প্রশাসনিক কাজেও অনেক কিছু নীরবে হজম করতে হতো আমাদের। মিডিয়া জগতে উপরোক্ত ফাঁসি নিয়ে কম হৈ চৈ হয়নি। এর একটি জবাব প্রজাতান্ত্রিক বাংলাদেশে স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার বদৌলতে আমরা পেয়েছি। মাননীয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ ঘাতক মুজাহিদের রায়ের সূচনা বক্তব্যে জানান, বিচারকদের বিষয়ে অনেক কথা বলা হয়। কিন্তু জবাবে তাঁরা কথা বলতে পারেন না। তাঁদের কথা বলার একমাত্র জায়গা এটা (এজলাস)। এই অর্থে তাঁরা খুবই দুর্বল। (জনকণ্ঠ : ১৮ জুলাই ২০১৩)।

বিচার দায়িত্বের কাজ করায়, মানুষ হিসেবে একটি দুর্বল মন থাকা সত্ত্বে¡ও প্রশাসনিক কাজ ফাঁসি কার্যকর করতে হয় আমাদের। সে অভিজ্ঞতাটি প্রচার করার মতো নয়। আর ভালও তো নয়, তবু প্রসঙ্গতই উল্লেখ করতে হচ্ছে হকার কথিত ফাঁসি এ লেখক কার্যকর করেছিল। ঘটনাস্থল ছিল ঢাকা সেন্ট্রাল জেল। জেলের কন্ডেমড সেল থেকে জ্যান্ত ও সুস্থ এক মানুষকে হাঁটিয়ে ফাঁসি মঞ্চে তোলা হয় সেদিন। এরপরে মঞ্চে রক্ষিত দড়িতে লটকানো হয় আদালত কর্তৃক মৃত্যুদন্ডে দন্ডিতকে। লটকানো দড়িতে আসামি এক পলকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। জল্লাদের ফাঁসি কাজটি সমাপ্ত হতেই, মঞ্চে স্থাপিত লোহার দু’পাটাতনের ফাঁক গলিয়ে গর্তে পড়ে ফাঁসিতে ঝোলানো ব্যক্তিটি। ফাঁসি কার্যকরকরণে নিয়োজিতেরা চোখের সামনে এ সময়ে দেখতে থাকে শুধু একটি দড়ি, যা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ঝুলছিল। সে ঝোলানো দড়ির সামনে অস্বস্তিতে সময় পার করাটি ছিল ভয়ঙ্কর। অতি অল্প সময় আগে যে মানুষটি জ্যান্ত ছিল, সে চোখের সামনে দড়িতে ঝুলে কোথায় হারিয়ে গেল। তার করুণ ও কষ্টকর বর্ণনা মানুষের জবানীতে দেয়া বড় কঠিন।

এ জন্যই বুঝি, মানুষ হয়ে মানুষকে ফাঁসিতে ঝোলানোর বর্তমান ব্যবস্থা বিশ্বে বন্ধ হোক অনেকে দাবি করেন। এ দাবি উত্থাপনকারীগণ সবাই সদাশয় ব্যক্তি। তবে তারা কেউ বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ দেখেছেন বলে মনে হয় না। মনে হয় না তারা রাজাকার, আলবদরদের মানুষ খুনের পৈশাচিক আনন্দ দেখারও সুযোগ পেয়েছেন। সে সুযোগ তাদের থাকলে তারা অবশ্যই ফাঁসি বা মৃত্যুদ- রোধের দাবির যৌক্তিকতা প্রমাণের অব্যাহত প্রচেষ্টায় থমকে যেতেন। তাদের যৌক্তিক এ দাবি থেকেও হয়ত সাময়িকভাবে পিছিয়ে আসতেন। ক্ষণিকের জন্য নরপশু রাজাকারদের ফাঁসি দাবি না করে পারতেন না। সে বিবেচনায় রাজাকার শিরোমণি গোলাম আজমের ফাঁসিও তারা চাইতে পারেন। গোলাম আজমের ফাঁসি চাওয়ার আগে, এ লেখার শুরুতে হকারের কথাগুলো নিয়ে আলোচনা হওয়ারও যে দরকার।

বাংলাদেশের জন্মলগ্নে যে বিশ্বাস সাধারণ মানুষ রাখত, তা বর্তমানে কেউই আমরা রাখি না। বিশেষ করে, ’৭৫ পরবর্তীতে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের প্রতি ঘটে বিশ্বাসভঙ্গ। যার জেরে আমরা কেউই আর জোর করে মুক্তিযুদ্ধ ভাবনায় নিঃসংশয়ে কিছু বলতে পারি না। আমরা সঙ্কোচ বোধ করি, একদা স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠক না ঘোষকÑ কি করে স্বাধীনতা-বিরোধীদের পুনর্বাসন করেন?

ঠিক সেভাবেই পাকিস্তানী পাসপোর্টে এ দেশে এসে, মুক্তিযোদ্ধার প্রতিষ্ঠিত দলের শাসনামলে নাগরিকত্ব পেয়ে যায় গোলাম আজম। আজমের দলীয় ও বিতর্কিত লোকদের জাতীয় পতাকা উড়িয়ে রাষ্ট্রীয় কর্ম পরিচালনায় ভার দিয়েছিল এ দলটিই। ’৭১-এ খুন ও ধর্ষণের অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে থাকলেও তারা মন্ত্রী হয়েছিল। মন্ত্রী পদে এসে ওরা দম্ভের সঙ্গে বলত, কোন ‘যুদ্ধ-টুদ্ধ’ হয়নি ’৭১-এ। এদেশে কোন ‘যুদ্ধাপরাধী’ নেই। তাদের এ আস্ফালনের পূর্ণ জবাব দিয়েছে মাননীয় আদালত। আদালত পরজীবী টেকনোক্র্যাট মন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করে মৃত্যুদ- দিয়েছে তার।

এটা কী করে সম্ভব হলো?

সম্ভব হয়েছে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পাওয়াতে।

এতদিন শুনে এসেছিলাম, বাংলাদেশ ‘সব সম্ভবের দেশ।’

ড. মুনতাসীর মামুনের এ প্রপঞ্চ বাঙালী আবেগপ্রবণ ও নিকট অতীতকে ভুলে যাওয়া জাতি সংজ্ঞায় একাকার ছিল। তবে বাঙালীর আবেগের পালে হাওয়া লাগলে সে যে হয়ে ওঠে জাতিস্মর। রিমার খুনীর ফাঁসি হওয়ায় এমনটিই হয়েছিল বাঙালী হকারটির। ব্যক্তি রিমার খুনীর মৃত্যুদ- কার্যকরণের খবরে সে জাতিস্মরের মতো বাংলাদেশের জন্ম কথা, গণতন্ত্রের কথা, এমন কি স্বৈরাচারের নির্লজ্জ কথাও বলে বসে। এটাও বাঙালীর এক বৈশিষ্ট।

বাঙালী বহুভাবে স্বৈরচারকে দেখেছে। স্বৈরাচারের অন্যতম উপাদান দুর্নীতি। দুর্নীতিগ্রস্ত স্বৈরাচারের উদাহরণ হিসেবে হকারটি এরশাদকে উদ্ধৃত করায় বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই। বিস্ময়ের বিষয়, বাংলাদেশের আরেক স্বৈরাচারীর নির্দেশিত বিচারে কর্নেল তাহেরের ফাঁসি, যা ইতোমধ্যে হাইকোর্ট রায়ে সবাই জানি। এ জানাটিও শেষ জানা নয়। কর্নেল তাহের ছিলেন মুক্তিযুদ্ধে একটি পা হারানো মানুষ। এক পা হারানো ব্যক্তিকে ফাঁসি দেয়াটি ছিল রীতিমতো অন্যায়। এ অন্যায়ের কারণে স্বৈরাচারের কু-উদাহরণ হিসেবে তাহেরের ফাঁসিকে উল্লেখ করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, অসুস্থ কোন মানুষকে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলানো যায় না। এ জন্য মৃত্যুদ-প্রাপ্তদের প্রতিদিন দুই বেলা ডাক্তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। পরীক্ষায় সামান্য এদিক ওদিক হলে মৃত্যুদ-প্রাপ্তের ফাঁসি কার্যকর হয় না। কর্মরত ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে স্ত্রী-ঘাতক মুনিরের ফাঁসি কার্যকর করতে এ লেখকের প্রতি পাঁচ পাঁচবার তারিখ পরিবর্তনের সরকারী আদেশ এসেছিল এবং তা মুনিরের শরীরের তাপমাত্রায় তারতম্য ঘটায় নাকি ঘটেছিল!

নব্বই বছরের কারাবাস দন্ডে দন্ডিত গোলাম আজম বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছে। সেজন্য ডাক্তারদের সুপারিশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিজন সেলে রাখা হচ্ছে তাকে । তার মৃত্যুদন্ড হলে সেটা কার্যকর করাটি কারা আইনে বিপত্তি আনতে পারে। এ ব্যক্তিটিই তো বিপত্তিকর। বাংলাদেশে জন্ম নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তার জঘন্য ভূমিকা তো তাই প্রমাণ করে। এরা এক স্ত্রী-ঘাতক মুনিরের চেয়েও বড় ঘাতক। তাদের প্রাপ্য দন্ড মৃত্যু। শহীদ জননী জাহানারা ইমাম গণআদালত করে তাই-ই দাবি করেছিলেন। দাবি করলেও আইন নিজ হাতে তুলে নেননি। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় তা কার্যকরের অনুরোধ রেখে আমৃত্যু আন্দোলন চালিয়ে গেছেন।

রিমা নারী হওয়ার সুযোগে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের শীর্ষে থাকা তথাকথিত ‘বীর স্বামী’র হাতে খুন হয়। এসব খুনিদের চেয়েও জঘণ্য চরিত্রাধিকারীগণ তো ধর্মের লেবাসে মন্তব্য রাখে, তেঁতুল দেখে জিভেয় লালা ঝরেÑ এমনি তুলনীয় নারীরা। গোলাম আজমেরা ‘৭১-এ নারী ধর্ষণকে তাই বুঝি উৎসাহিত করেছিল। মানুষ খুন তাদের কাছে মুরগি জবেহর সমান মনে হত। মানুষ রূপে এরা জন্মালেও পশু-চরিত্র এদের চালিত করে।

বিশ্বপশু ক্লেশ নিবারণ সংস্থা কোন পশুকে মেরে ফেলাই শুধু নয়, তাদের আটকের বিরুদ্ধেও শ্লোগান দেয়। তারপরেও গোটা দুনিয়ায় সার্কাস দলগুলো পশুদের আটকিয়ে তাদের প্রকাশ্য প্রদর্শনী করে। তা দেখে সাধারণ মানুষ আমোদিতই হয়। আর পশু হলেও, অবয়বে মানুষ গো. আজমকে মাননীয় আদালতের রায়ের প্রেক্ষিতে ৯০ বছর কারাবাসে থাকতে হবে অর্থাৎ আমৃত্যু জেলই হচ্ছে তার আস্তানা। এ আস্তানা প্রমাণ করে, ধর্ম ব্যবসায়ীদের শেষ পরিণতি মহান আল্লাহ মন্দ নতিজায় কার্যকর করছে। জেলে থাকলে সার্কাসের পশুদের মত প্রকাশ্য প্রদর্শনী তার হবে না। তবে পরোক্ষ হলেও পশুরূপী গো. আজম সাধারণ মানুষের ঘৃণা কুড়োতেই থাকবে। এটা হয়তো আল্লাহর ইচ্ছা। সুত্র

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ২:৪৮

প্রকৌশলী রিয়াদ হাসান চৌধুরী বলেছেন: |-)

২৪ শে আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ২:৫৬

তালপাতারসেপাই বলেছেন: :(

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.