নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।
পাঁচটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সমর্থিত প্রার্থীরা পরাজয়ের পর হতাশার চাদরে ঢাকা মাঠ পর্যায়ের আওয়ামী লীগের রাজনীতি। নির্বাচনের পর থেকে আওয়ামী লীগের হাজার হাজার ত্যাগী নেতাকর্মী ও সমর্থকের মতো আমিও যন্ত্রণায় ক্ষতবিক্ষত। এ রকম অপ্রত্যাশিত ফলাফল নিয়ে আওয়ামী ঘরানার বুদ্ধিজীবী থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে চলছে ফলাফল নিয়ে নানা বিশ্লেষণ ও আলোচনা। আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগীরা তাদের ফায়দা লুটে ইতোমধ্যে হাওয়া হতে শুরু করেছে; আর যারা ত্যাগী নেতাকর্মী তাদের মূল্যায়ণ না হওয়ায় অনেকে অভিমানে এখনও দূরে সরে আছে। দেখা দিয়েছে আওয়ামী রাজনীতিতে ত্যাগী কর্মী-সঙ্কট ও অস্থিরতা । বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী ঐতিহাসিক সংগঠনটি এখন কঠিন এক সময় পার করছে। ক্ষমতা আর দল একাকার হয়ে যাওয়াতে লাভবান হয়েছে ক্ষমতার স্বাদ পাওয়া আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী নেতাকর্মীরা । অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দলের সাংগঠনিক শক্তি। গত নির্বাচনে বিএনপির প্রতি ক্ষুুব্ধ হওয়ার কারণে আওয়ামী লীগের পক্ষে যে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছিল সেখানে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের যতটা না সাংগঠনিক কৃতিত্ব ছিল, তার চেয়ে বড় কৃতিত্ব ছিল বিএনপির। কারণ বিএনপির দুঃশাসনের বিরুদ্ধে জনগণ জবাব দেয় ব্যালটে। আওয়ামী লীগের কোন কোন নেতা গণজোয়ারে নৌকায় চড়ে নির্বাচিত হয়ে ভুলে গেছেন নেতাকর্মীদের; ভুলে গেছেন জনগণের দায়বদ্ধতার কথা। ক্ষমতার মোহে ভুলে গেছেন দল গোছাবার কথাও। সঙ্কটের কিনারায় দাঁড়িয়ে আবারও আওয়ামী লীগের ঘুরে দাঁড়ানোর সংগ্রাম, আর এ সংগ্রাম হলো আবারও ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের আর এক মরণপণ সংগ্রামের মহাযাত্রা। ত্যাগী নেতাকর্মীরা উপলব্ধি করেছেন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলে আঘাত আসে তাদের ওপরই। যেমনটি এসেছিল ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের নির্বাচনের পর। একজন ত্যাগী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী অন্য কর্মীদের কষ্টটা বুঝে ও তাদের বিপদে সামনে এসে দাঁড়ায়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বাংলাদেশের অস্তিত্বের শেকড় তাদের হৃদয়ের গভীরে গাঁথা। তাই আওয়ামী লীগের ঘুরে দাঁড়ানোর সংগ্রামে শামিল হতে শুরু করেছে আবারও ত্যাগী নেতাকর্মীরা এবং সঙ্কট মোকাবেলার ভাবনা তাদেরই বেশি। আর সুবিধাভোগীরা নিরপেক্ষ থাকার এক কৌশল অবলম্বন করে দূরে সরে পড়ার ফন্দি আঁটছে। আওয়ামী লীগের ঘুরে দাঁড়ানোর এই সংগ্রামে সুবিধাভোগীরা সরে পড়লে এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগেরই লাভ। খন্দকার মোশতাকরা যত তাড়াতাড়ি কেটে পড়বে আওয়ামী লীগের জন্য ঘুরে দাঁড়ানোর সংগ্রামে সফলতার সম্ভাবনা তত তাড়াতাড়ি সৃষ্টি হবে। ’৭৪-৭৫ সালেও আওয়ামী লীগের এ রকম দুর্যোগপূর্ণ সময় এসেছিল, তখন মোশতাকরা দূরে সরে গিয়ে সে জায়গায় যদি তাজউদ্দীন থাকতেন, তাহলে হয়ত বঙ্গবন্ধুকে জীবন দিতে হতো না। বাংলাদেশের ইতিহাসটাও হতো ভিন্নতর।
সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পরাজয় নিয়ে ইতোমধ্যে নানামুখী বিশ্লেষণ হয়েছে। আমি এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনায় যাব না। আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা প্রচুর কাজ করার পরও সাদা চোখে ফলাফল বিপর্যয়ের পেছনে ত্যাগী নেতা-কর্মীদের মূল্যায়ণ না হওয়া, অনেক ত্যাগী নেতাকর্মীকে সংস্কারপন্থী হিসেবে দূরে ঠেলে দেয়া, সাংগঠনিক শক্তির বহির্প্রকাশ না ঘটা, অতি আত্মবিশ্বাসী মনোভাব এবং হেফাজতে ইসলাম ইস্যুকে কেন্দ্র করে অপপ্রচারের সঠিক জবাব না দেয়া, সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগের অর্জিত সাফল্যকে জনগণের সামনে যথাযথভাবে উপস্থাপিত না করাকেই প্রধান প্রধান কারণ বলে মনে করা হয়। একটি বিষয় খুবই পরিষ্কার যে, আওয়ামীবিরোধী শক্তি অপপ্রচার ও মিথ্যার বেসাতিতে যত দক্ষ ও সিদ্ধহস্ত, সে তুলনায় আওয়ামী লীগ সত্য ভাষণ ও নিজের সাফল্য তুলে ধরতে ততটাই অদক্ষ ও ব্যর্থ । আওয়ামী লীগ যে ডিজিটাল কনেসেপ্টের কথা বলে তা সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে ব্যাপক সাফল্য বয়ে আনলেও আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে কতটা গুরুত্বসহকারে চর্চা করে এ বিষয়ে সন্দেহ আছে। অন্যদিকে বিএনপি ও জামায়াত-শিবির চক্র তারা আজ ডিজিটাল পদ্ধতিরই প্রয়োগ করে আওয়ামী লীগকে ঘায়েল করেছে, করছে। এবারের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে রাজশাহীতে বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখেছিÑ জামায়াত ও বিএনপি হেফাজতে ইসলামের ঢাকা অবরোধকে ঘিরে কত রং-বেরঙের পোস্টার ছাপিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে। অন্যদিকে হেফাজত ৫ মে ঢাকা শহরে যে তা-ব চালিয়েছে, পবিত্র কোরান শরীফ পুড়িয়েছে, সরকার ও জনসাধারণের কোটি কোটি টাকার ক্ষতি সাধন করেছে, সে বিষয়ে আওয়ামী লীগ কর্তৃক প্রকাশিত পোস্টার ও প্রচারণা বিভিন্ন জায়গায় তেমন চোখে পড়েনি। শুধু তাই নয়, আমি অনেকের কাছে শুনেছিÑ শিবিরের কর্মীরা মোবাইল ও আইপডে বিভিন্ন দেশের রক্তাক্ত ছবি ও ভিডিও ফুটেজ যোগ করে সেগুলোকে হেফাজতের ঢাকা অবরোধের রক্তাক্ত অধ্যায় হিসেবে জনগণের নিকট উপস্থাপন করেছে। ভোটের আগে ভোটারদের কাছে বিভিন্ন মোবাইল নম্বর থেকে শতশত মেসেজ এসেছে যেখানে ঢাকায় শতশত মানুষকে ইসলাম রক্ষার আন্দোলনের জন্য হত্যার কথা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ধরনের তথ্য ও প্রযুক্তিগত ক্রাইম আওয়ামী লীগ নির্বাচন কমিশনের দৃষ্টিগোচরে এনে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি। হেফাজতে ইসলাম ইস্যু তেমন কোন জাতীয় ইস্যু না হলেও ৫ মে ঢাকা অবরোধকে কেন্দ্র করে হেফাজতের কর্মীরা মিথ্যাচার ও নানা অপপ্রচার করে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করতে পেরেছে। তবে অনেক ইস্যু আওয়ামী লীগকে জনগণের কাছে প্রশ্নের সম্মুখীন করেছে বলে বিভিন্ন মহল থেকে দাবি করা হয়। যেমনÑপদ্মা সেতু নিয়ে অনিয়মের প্রশ্ন উত্থাপন, হলমার্ক কেলেঙ্কারি, শেয়ার বাজার ধস, ডেসটিনি গ্রুপ কেলেঙ্কারি, ড. ইউনূসের গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে সরকারের অবস্থান এবং কিছু কিছু মন্ত্রীর অতিকথন। শক্তিশালী নেতৃত্বের বহির্প্রকাশ না ঘটায় ইস্যুগুলোর প্রতি যেমন যথাযথ নজর দেয়া হয়নি তেমনিভাবে আওয়ামী লীগের সাফল্যগুলো প্রচারিত না হওয়ায় কোন কোন ক্ষেত্রে ইস্যুগুলো জনগণের নিকট বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইস্যুগুলোর চেয়ে আওয়ামী লীগের অনেক সাফল্য গত সাড়ে চার বছরে অর্জিত হয়েছে যা আওয়ামী লীগের তুলনামূলক নতুন নেতৃত্ব তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে। তবে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ফলাফল বিপর্যয় ও সম্প্রতি আওয়ামী রাজনীতির হতাশার ক্ষেত্রে আমার কাছে আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় সঙ্কটটি মনে হয়েছে অন্য জায়গায়। সঙ্কটটি হচ্ছে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যায়ে আওয়ামী রাজনীতিতে স্থবিরতা ও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব। দল, প্রশাসন ও ক্ষমতা একাকার হয়ে যাওয়াতে আওয়ামী লীগের রাজনীতিবিদরা দলের সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি করতে ও জনগণকে আকৃষ্ট করতে ব্যর্থ হয়েছে। অনেকেই আজ হতাশার সুরে বলছে এত ইস্যু আওয়ামী লীগ ক্ষমতার শেষ প্রান্তে এসে কিভাবে সামাল দেবে? কিভাবে জনপ্রিয়তা ফিরিয়ে আনবে? এ প্রসঙ্গে আমার অভিমত: সমস্যাটি যেহেতু আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক, তাই সংগঠনকে গতিশীল করতে পারলে আওয়ামী লীগ ফিরে আসবে পুরনো চেহারায়।
গত ৫টি সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়াতে অনেকেই মনে করেছে আওয়ামী লীগ পরাজয়ের শেষ প্রান্তে। অনেকের মতো ফলাফল বিপর্যয়ে আমিও মুষড়ে পড়লেও আমার পর্যবেক্ষণ হলো এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের ২টি লাভ হয়েছে। ১টি হলো আন্তর্জাতিকভাবে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, এ সরকারের অধীনে বর্তমান নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন করতে সফল। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ বুঝতে পেরেছে সাংগঠনিক দুর্বলতা ও পরিকল্পিত প্রচারের অভাবে সংগঠনের বেহাল অবস্থা। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনগুলো যদি একেবারে জাতীয় নির্বাচনের খুব কাছাকাছি সময়ে হতো তাহলে আওয়ামী লীগ তার সাংগঠনিক দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার কোন সুযোগ পেত না। এখন আওয়ামী লীগ উপলব্ধি করতে পারছে সমস্যাটা কোথায়। তাই এখন প্রতিটি সময়, প্রতিটি দিন আওয়ামী লীগের ঘুরে দাঁড়ানোর এক প্রাণপণ সংগ্রাম। প্রধানমন্ত্রীকে বুঝতে হবে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের দিকে তাকিয়ে আছে লাখ লাখ মানুষ। এ মুহূর্তে কোন ভুল সিদ্ধান্ত নিলে জাতিকে কতটা চরম মূল্য দিতে হবে ভাবলে অনেকেরই গা শিউরে ওঠে। তাই কোন আবেগের সিদ্ধান্ত নয়, বাস্তবমুখী কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রতিপক্ষকে মোকাবেলা করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি এখনও এ দেশের মানুষের প্রবল আস্থা রয়েছে এবং মানুষ এখনও মনে করেন তিনিই এ দুঃসময়ের কা-ারি হয়ে আওয়ামী লীগ তথা সমগ্র জাতিকে ক্রান্তির হাত থেকে রক্ষা করতে পারেন। আওয়ামী লীগের ক্রান্তিকালীন সময়ে আমি কতক পদক্ষেপ ও উদ্যোগের কথা বলতে চাই যা আওয়ামী লীগের ঘুরে দাঁড়ানোর সংগ্রামে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আমি মনে করি।
প্রথমত, আওয়ামী লীগের অনেক ত্যাগী ,বয়োজ্যেষ্ঠ ও মেধাবী নেতৃত্বকে সংস্কারপন্থী হিসেবে দূরে ঠেলে দেয়া হয়েছে এটি বাস্তব সত্য। এসব নেতৃত্বকে দল ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে আবারও কাজ করার সুযোগ দিতে হবে এবং তাদের বিশ্বাস করতে হবে। মনে রাখতে হবে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় নেত্রী গ্রেফতার হলে অনেকে হয়ত সাহস করে দাঁড়াতে পারেননি, কিন্তু বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের প্রতি তাঁদের আস্থা ও শ্রদ্ধা অপরিসীম এবং এ ব্যাপারে কোন সংশয় নেই।
দ্বিতীয়ত, দেশের বিভিন্ন জায়গায় পারিবারিক বলয় থেকে আওয়ামী লীগকে বের করে এনে সারাদেশে আওয়ামী লীগের ত্যাগী ও সৎ নেতাকর্মীদের দলের নেতৃত্ব এবং নির্বাচনী প্রচার প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করতে হবে। এজন্য বিভিন্ন মহানগর ও জেলায় আওয়ামী লীগের কারা মূলধারার ও ত্যাগী কর্মী এবং অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব কি পর্যায়ে রয়েছে তার একটা প্রকৃত চিত্র কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগকে সংগ্রহ করতে হবে। এজন্য মহানগর ও জেলায় আওয়ামী লীগের যে উপদেষ্টা কমিটি রয়েছে তাদের সঙ্গে পর্যায়ক্রমে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড বৈঠক করে কিভাবে ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের গতিশীল এবং অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব দূর করা যায় সে ব্যাপারে পরামর্শ নিতে পারে। কারণ, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন মতবিনিময় সভায় প্রকৃত চিত্রের সন্ধান পাওয়া যায় না।
তৃতীয়ত, মনোনয়ন প্রদানের ক্ষেত্রে মাঠ পর্যায়ের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে এবং তৃণমূল জনগণের মধ্যে জনপ্রিয়তা রয়েছে ও ক্লিন ইমেজ আছে এমন নেতৃবৃন্দকে প্রাধান্য দিয়ে মনোনয়ন প্রদান করতে হবে। এজন্য আওয়ামী লীগ সভানেত্রী, মাঠ পর্যায়ে যারা বিভিন্ন জরিপ টিমে কাজ করেছেন, তাঁদের মধ্য থেকে তাঁর বিশ্বস্ত ও আইটি কাজে অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের নিয়ে বিভিন্ন জরিপ রিপোর্ট পর্যবেক্ষণ করে তুলনামূলক বিশ্লেষণ করতে পারেন । রিপোর্টগুলো থেকে যেমন সম্ভাব্য প্রার্থীদের সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে তেমনি নির্বাচনী এলাকায় দলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও তার সঙ্কটেরও সুপারিশ পাওয়া যাবে যা দলীয় সভানেত্রীর জন্য পদক্ষেপ গ্রহণে সহায়ক হবে। শুধু তাই নয়, জরিপ রিপোর্টে যাদের গ্রহণযোগ্যতা আছে তাদের সবুজ সঙ্কেত দিয়ে এখনই সর্বক্ষণিক মাঠে থাকার নির্দেশ দিতে পারেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।
চতুর্থত, আওয়ামী লীগের প্রচার সেলকে আরও অনেক শক্তিশালী করতে হবে। প্রচার সেলে সাংবাদিক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাংস্কৃতিক কর্মীসহ ডিজিটাল লাইনে অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সম্পৃক্ত করতে হবে। এ সেল বিরোধী পক্ষের বিভিন্ন অপপ্রচারের জবাব দিতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। সেল বিভিন্ন ডকুমেন্টারি তৈরি করে সরকারের সাফল্য জণগণের সামনে তুলে ধরবে। এছাড়া এই সেল একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী ও তাদের দল জামায়াতে ইসলামী যে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ কর্মকা- পরিচালনা করেছে এবং যেভাবে হত্যা, ধর্ষণ, গণহত্যা ও নারীর সম্ভ্রমহানিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকা-ে পাকিস্তানী বাহিনীকে সহযোগিতা করেছে তার ডকুমেন্টারি দেশের মানুষকে দেখাতে হবে। যেন চলমান যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রত্রিয়াকে আরও ব্যাপক হারে সাধারণ মানুষ সমর্থন জানায় এবং আগামী নির্বাচনে যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষাকারী দলকে সাধারণ মানুষ ব্যালটের মাধ্যমে প্রত্যাখ্যান করে। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট বিশেষ করে জামায়াত-শিবির চক্র সারাদেশে হরতাল ও ধ্বংসযজ্ঞমূলক কর্মকা- এবং পুলিশের ওপর বর্বোরচিত হামলার মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন সেক্টরে যে ব্যাপক অর্থনৈতিক বিপর্যয় ঘটিয়েছে সেই বিষয়গুলো তুলে ধরে ব্যাপক পোস্টার ও ডিজিটাল প্রচারণা চালাতে হবে।
পঞ্চমত, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাচনী প্রস্তুতি ও পরিচালনা সেলকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। এ সেলে আওয়ামী লীগের ত্যাগী-অভিজ্ঞ নেতৃত্বের সঙ্গে তরুণ প্রজন্মের স্বপ্ন ও আইটি বিশেষজ্ঞ সজীব ওয়াজেদ জয়কে সামনে নিয়ে এসে বিভিন্ন পেশাজীবী, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, আইনজীবী ও তথ্যপ্রযুক্তিতে অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এক্ষেত্রে ঢাকাকেন্দ্রিক সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করে ঢাকার বাইরেও এ বিষয়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের নির্বাচনী কাজে সংশ্লিষ্ট করতে হবে। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে জয়কে নিয়ে যে আগ্রহ ও উদ্দীপনা তা আগামী নির্বাচনে কাজে লাগাতে হবে। সেই সঙ্গে আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তা হলো আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন সময়ে যে জরিপ টিম বিভিন্ন অঞ্চলে নির্বাচনী জরিপ পরিচালনা করছে তাদেরকে এ সেলে অন্তর্ভুক্ত করা। যেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নির্বাচনী কৌশল নির্ধারণে ও সঙ্কট সমাধানে ঐ সময় বিভিন্ন অঞ্চলের ফিডব্যাক পেতে পারেন। শুধু তাই নয়, এই সেল আঞ্চলিক পর্যায়ের জরিপ টিমের সঙ্গে ঐ অঞ্চলের স্থানীয় ইস্যুগুলো কাজে লাগিয়ে কি ধরনের নির্বাচনী কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে তার একটি ছক তৈরি করবে। কেন্দ্রীয় সেলের সহায়তায় ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে স্থানীয় পর্যায়েও নির্বাচনী প্রস্তুতি ও পরিচালনা সেল গঠন করতে হবে।
ষষ্ঠত, দলের সাধারণ সম্পাদককে আরও সক্রিয় হওয়ার মাধ্যমে সংগঠনের নেতাকর্মীদের বেশি সময় দিতে হবে এবং আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল মিটিয়ে ফেলার উদ্যোগ নিতে হবে। এজন্য কেন্দ্রীয়ভাবে টিম গঠন করে বিভিন্ন জেলায় ও মহানগরে গ্রুপিং মিটিয়ে ফেলার জন্য উদ্যোগ নিতে হবে। এক্ষেত্রে স্থানীয় নেতৃত্বকে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। মনে রাখতে হবে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না আসতে পারলে সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী শক্তি কাউকেই ছাড়বে না। শুধু তাই নয়, ব্যাপক লোক সমাগমের মাধ্যমে রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে বিশাল জনসভা করতে হবে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের উপস্থিতিতে জেলাগুলোতে ঘনঘন সভা ও সমাবেশ করতে হবে।
সপ্তমত, নারী ভোটারদের আকৃষ্ট করার জন্য হেফাজত ইসলামের নারীবিদ্বেষী বিভিন্ন অশ্লীল বক্তব্য ও নারী অধিকারগুলো ক্ষুণœ করে এমন বিষয় গ্রাম অঞ্চলে ও গার্মেন্টস সেক্টরে সমাবেশ করে ব্যাপক ডিজিটাল প্রচারণার মাধ্যমে নারীদের সামনে উপস্থাপন করতে হবে। বিষয়গুলো প্রচারের জন্য বিভিন্ন নারী সংগঠনকে কাজে লাগাতে হবে।
অষ্টমত, আওয়ামী লীগের নেতা ও বিভিন্ন মন্ত্রীদের বক্তব্য প্রদানের ক্ষেত্রে কৌশলী হতে হবে। অপ্রয়োজনীয় বক্তব্য পরিহার করে মার্জিত ও যুক্তিযুক্তভাবে বক্তব্য ও মন্তব্য প্রদান করতে হবে। যারা বিগত সাড়ে ৪ বছর নানাভাবে বিতর্কিত হয়েছেন তাদের মিডিয়ার সামনে না আসাই ভাল। কারণ অপেক্ষাকৃত কম জনপ্রিয় ও দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের মিডিয়ার সামনে অতিকথন আওয়ামী লীগের ভোট বাড়াতে সহায়ক হবে না, বরং ভোট কমাবে ।
নবমত, আওয়ামী লীগের আদর্শে বিশ্বাসী বিভিন্ন সংগঠন ও পেশাজীবী সংগঠনকে সক্রিয় করতে হবে। এসব পেশাজীবী সংগঠনের অনেক নেতা ক্ষমতায় আসার পর বড় বড় পদ বাগিয়ে নিষ্ক্রিয় হয়েছেন এবং সংগঠনগুলোর মধ্যে নেতৃত্বের অভাবে মারাত্মক গ্রুপিং তৈরি হয়েছে। পেশাজীবীদের গ্রুপিং আওয়ামী লীগের সাধারণ নেতাকর্মীদের মধ্যেও অনেকক্ষেত্রে ছড়িয়ে পড়েছে। সেই সঙ্গে দল ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগের নামে অনেক ভুঁইফোঁড় সংগঠন গড়ে উঠেছে, এগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এসব ভুঁইফোঁড় সংগঠন বিভিন্ন জেলায় রাতারাতি তৈরি হয়ে গ্রুপিং ও দুর্নীতি বিস্তারে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে। এসব ভুঁইফোঁড় সংগঠনের অনেক নেতাকর্মী আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছে। কোন কোন ক্ষেত্রে জামায়াত-বিএনপি থেকে মার্চ করে আওয়ামী লীগে এসেছে।
দশমত, আওয়ামী লীগ থেকে বের হয়ে যারা বিভিন্ন দল তৈরি করেছেন অথবা রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় আছেন, কিন্তু তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও প্রগতিশীল চিন্তায় উজ্জীবিত, তাদের দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলে নিয়ে এসে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির পরিধি বৃদ্ধি করতে হবে। এক্ষেত্রে তোফায়েল আহমদের মতো বয়োজ্যেষ্ঠ নেতাদের দায়িত্ব দিয়ে কাজটি এগিয়ে নেয়া যেতে পারে। দেশের এ ক্রান্তিলগ্নে বৃহত্তর ঐক্যের কোন বিকল্প নেই।
একাদশতম, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টিকে জোটের সঙ্গে রাখতে হবে। গত সাড়ে ৪ বছরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্তৃক জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের তেমন মূল্যায়ন না হওয়ায় তাদের মধ্যে নানাভাবে ক্ষোভ সঞ্চারিত হয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সহায়তায় স্থানীয় পর্যায়ের এ ক্ষোভকে প্রশমিত করতে হবে এবং ঘন ঘন কর্মসূচী প্রণয়নের মাধ্যমে জাতীয় পার্টিকে আস্থায় এনে মহাজোটকে শক্তিশালী করতে হবে। জাতীয় পার্টি এই দুঃসময়ে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে গেলে তা জোটের অবস্থানকে আরও নাজুক করে তুলবে।
দ্বাদশতম, আগামী নির্বাচনে যেন কোনভাবেই নির্বাচনী প্রচারণায় ধর্মকে ব্যবহার না করা যায় এজন্য নির্বাচন কমিশনের ওপর দলীয়ভাবে জোরাল দাবি রাখতে হবে। নির্বাচন কমিশন আইন করে এ বিষয়ে আদেশ জারি করলে ভবিষ্যত রাজনীতি ও দেশের জন্য মঙ্গলজনক হবে।
ত্রয়োদশতম, সিভিল সোসাইটি, মিডিয়া, বিভিন্ন সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সখ্য বাড়াতে হবে। দল সরকারে আসার পর এসব গ্রুপ ও সংগঠনের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছে। তাছাড়া তরুণ- মেধাবী প্রজন্মকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে আওয়ামী লীগ সম্পর্কে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সোশাল মিডিয়ার মাধ্যমে যে বিভিন্ন অপপ্রচার চালানো হচ্ছে তার যথাযথ জবাব দেয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে। জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে আওয়ামী লীগকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে মিডিয়া কর্মীদের কাছে বিভিন্ন প্রেস রিলিজসহ দলীয় কর্মকা-ের খবরাখবর পৌঁছে দিতে হবে।
আমি অত্যন্ত আশাবাদী, উল্লেখিত পদক্ষেপ ও উদ্যোগগুলো আওয়ামী লীগ জরুরী ভিত্তিতে গ্রহণ করতে পারলে ঘুরে দাঁড়ানোর সংগ্রামে ইতিবাচক সাফল্য আসবে ও দলগতভাবে আওয়ামী লীগ শক্তিশালী হবে এবং বর্তমান সরকারের আমলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যাবে। শোকের এ মাসে শোককে শক্তিতে পরিণত করে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের সকলস্তরের নেতাকর্মীকে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে, বাংলাদেশকে তার অস্তিত্ব সঙ্কটের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। মনে রাখতে হবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্ত ও ঘামে গড়া বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীনতম এই দলের প্রতি অনেকের অভিমান থাকতে পারে, অনেকে অভিমান করে দূরেও থাকতে পারে, কিন্তু সকলেই দেশের স্বার্থে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রাখার স্বার্থে অন্তরের অন্তস্তল থেকে মঙ্গল কামনা করে গভীর আগ্রহে এই দলটির দিকে তাকিয়ে আছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে বুঝতে হবে তাদের ভুলের কারণে আগামীতে যদি বড় ধরনের কোন বিপর্যয় নেমে আসে, এই বিপর্যয়ের খেসারত বাঙালী জাতিকে কতকাল যে বয়ে বেড়াতে হবে তা কেউ জানে না। সুত্র
২৫ শে আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১:০৪
তালপাতারসেপাই বলেছেন: দারুন লাগলো
২| ২৫ শে আগস্ট, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:১১
অচেনাসময় বলেছেন: ভাল বিশ্লেষণ । ভাল লাগল
©somewhere in net ltd.
১| ২৫ শে আগস্ট, ২০১৩ সকাল ১০:১৩
মো: আবু জাফর বলেছেন: বাহ দারুন আত্নতুস্টি মুলক পোস্ট দারুন লাগলো .......