নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যাহা বলিব সত্য বলিব

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।

তালপাতারসেপাই

লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।

তালপাতারসেপাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

কার 'অধিকার', কে রক্ষা করে?

২৯ শে আগস্ট, ২০১৩ সকাল ১১:০০

বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ বিচার নিয়ে মার্কিনপন্থি মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের সাম্প্রতিক তৎপরতা বাঙালিদের জন্য উদ্বেগজনক। অতি সম্প্রতি গোলাম আযমের 'রায়' নিয়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এক বিবৃতি দিয়ে 'ট্রাইব্যুনালের' বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগ উত্থাপন করেছে। এই 'অভিযোগের' মাধ্যমে তারা বলতে চেয়েছে গোলাম আযমের বিচার শুদ্ধভাবে হয়নি!



হিউম্যান রাইট ওয়াচ গোলাম আযমের বিচার সম্বন্ধে যা বলতে চেয়েছে, তা হলো :

১. 'রায়ের ক্ষেত্রে' ট্রাইব্যুনালের বিচারকরা প্রসিকিউশনের পক্ষে পৃথক তদন্ত করেছেন,

২. রায়ের ক্ষেত্রে বিচারক-প্রসিকিউটর 'যোগসাজশ' রয়েছে,

৩. ট্রাইব্যুনাল আসামি পক্ষের 'সাক্ষীদের' সুরক্ষার জন্য পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে,

৪. বিচারকদের 'প্যানেল' পরিবর্তন করা হয়েছে এবং

৫. অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়নি!



উপরোক্ত পাঁচটি অভিযোগের কোন ভিত্তি আছে কি না তা পৃথকভাবে পরীক্ষা করে দেখার প্রয়োজনীয়তা অবশ্যই রয়েছে এবং তা করা হবে। কিন্তু সবার আগে মনে রাখতে হবে যে, গোলাম আযমের বিচার উচ্চ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এই বিচারাধীন মামলা নিয়ে যে 'বিবৃতি' দিয়েছে তা আদালতকে 'অবমাননার' শামিল। ইতোমধ্যে প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে আদালতে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে এবং তা আদালতের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে।



এখন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের অভিযোগগুলো যাচাই করা যাক; ১. উৎসাহী পাঠকের মধ্যে যারা গোলাম আযমের মামলার রায় মনোযোগ দিয়ে পাঠ করেছেন তারা অবশ্যই খেয়াল করেছেন, 'রায়ের' কোথায়ও উল্লেখ নেই প্রসিকিউশনের 'পৃথক তদন্ত' করেছেন বিচারকরা। ২. প্রসিকিউটর ও বিচারকের মধ্যে 'যোগসাজশের' কোন প্রমাণ হিউম্যান রাইটস ওয়াচ দেয়নি। সাদামাটা একটা অভিযোগ উত্থাপন করেই দায়িত্ব শেষ করেছে এইচআরডবিস্নউ। ৩. গোলাম আযমের পক্ষে মাত্র 'একজন' সাক্ষী ছিলেন, তিনি গোলাম আযমের বড় ছেলে। তিনি মামলার তারিখগুলোতে নিয়মিত উপস্থিত থেকেছেন এবং রায়ের দিন পর্যন্ত উপস্থিত ছিলেন। তিনি এক বারের জন্যও অভিযোগ করেননি যে, তার 'সুরক্ষার' ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। তাছাড়া হিউম্যান রাইটস ওয়াচ একাধিক সাক্ষী অর্থাৎ 'সাক্ষীদের' অস্তিত্ব কোথা থেকে পেল? ৪. বিচারকদের 'প্যানেল' পরিবর্তন করা যাবে না, এই নিয়ম হিউম্যান রাইটস ওয়াচ কোথা থেকে আমদানি করল! যদি বিচারকদের মধ্যে কেউ মৃত্যু বরণ করেন, অসুস্থ হয়ে পড়েন, অবসর নেন অর্থাৎ যদি এ ধরনের অনিবার্য পরিস্থিতির উদ্ভব হয় তাহলে 'প্যানেলে' পরিবর্তন আনা যাবে না কেন? আধুনিক জগতের কোন আদালতে 'প্যানেল' পরিবর্তন করা যাবে না বলে কোন আইন বা প্রথা নেই। ৫. গোলাম আযমের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ 'সন্দেহাতীতভাবে' প্রমাণিত হয়েছে কি না সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন উচ্চ আদালত। কারণ এখন মামলাটি সর্বোচ্চ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। 'ট্রাইব্যুনাল' তার রায়ে বলেছেন, অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে এবং গোলাম আযমের 'মৃত্যুদ-' দেয়া উচিত ছিল। বয়স ও স্বাস্থ্য বিচার করে তাকে ৯০ বছর কারাদ- দেয়া হয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ কি 'স্বাধীন বিচার পর্যবেক্ষকের' কাজ করতে পারে? তাছাড়া মামলার 'মেরিট' নিয়ে প্রশ্ন তোলার এখতিয়ার কি তাদের আছে? তারা তো আদালত নয়। এরপরও সব শেষ কথা হলো, মামলাটি সর্বোচ্চ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। এই বিবৃতি দিয়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ স্বাধীন রাষ্ট্র গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের আদালতের অবমাননা করেছ এবং আদালতকে অবজ্ঞা করেছে।



এইচআরডবিস্নউয়ের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রসিকিউশনের পক্ষে ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ 'ব্রিলিয়ান্ট' উত্তর দিয়েছেন। তুরিন আফরোজ এইচআরডবিস্নউয়ের কাছে জানতে চেয়েছেন, '৭১ সালে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর সঙ্গে মিলিত হয়ে গোলাম আযমরা যখন ৩০ লাখ সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছিল, তখন কি তারা সাধারণ বাঙালির পক্ষে দাঁড়িয়েছিল? আইখম্যান এবং সাদ্দাম হোসেনের যখন বিচার হয় তখন এইচআরডবিস্নউ সেখানে 'সুরক্ষা' দিতে যায়নি কেন? ওই বিচারে তো তাদের মৃত্যুদ- দেয়া হবে বলেই বিচার করা হয়েছিল। আর বিচারাধীন মামলা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অধিকার তাদের কে দিয়েছে?



হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, অর্থাৎ আমেরিকানরা খোলাখুলিভাবে জামায়াতের পক্ষ নিয়েছে। হিউম্যান রাইট ওয়াচের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ তোলায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত মজিনা 'উদ্বেগ' প্রকাশ করেছেন! বাংলাদেশের যে কোন নাগরিক এখন মজিনাকে জিজ্ঞেস করতে পারেন যে, মার্কিন আদালতের রায়ের বিরোধিতা বা সমালোচনা করে বাংলাদেশের কোন মানবাধিকার সংস্থা বিবৃতি দিলে আমেরিকা কি তা সহ্য করবে? শুধু তাই নয়, আমেরিকা খেপে গেলে হাজার হাজার মাইল দূর থেকে 'ড্রোন হামলা' চালাতে দ্বিধা করে না। ড্রোন হামলায় সন্ত্রাসী হত্যার সঙ্গে হাজার হাজার নিরীহ মানুষ হত্যা করেছেন মজিনারা। এই নিরীহ মানুষ হত্যার বিরুদ্ধে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ আজ অব্দি টুঁ শব্দ করেনি।



মার্কিনিরা কখনও নিরপেক্ষ ছিল না এবং আজও নেই। হিউম্যান রাইটস ওয়াচও নিরপেক্ষ সংস্থা নয়। এদের কাজ হলো পৃথিবীর সর্বত্র মার্কিনিদের স্বার্থ রক্ষা করা। ১৯৭১ সালে বাংলার এই ভুখ-ে জামায়াত ছিল আমেরিকানদের নির্ভরযোগ্য মিত্র। গোলাম আযম ছিল মার্কিনিদের বিশ্বস্ত চর। ফলে গোলাম আযমের জীবন রক্ষার জন্য হিউম্যান রাইট ওয়াচ এগিয়ে তো আসবেই, এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু আমাদের দেশের 'সুশীল সমাজ', এক শ্রেণীর 'বুদ্ধিজীবী', 'পেশাজীবী' এবং 'রাজনীতিবিদের' আচরণ দেখে লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে যায়, যখন তারা 'গণতান্ত্রিক (!)' মার্কিনিদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে ওঠেন! এইচআরডবিস্নউএর বিবৃতি এবং মজিনার 'উদ্বেগের' বিরুদ্ধে এরা অবস্থান নিয়ে নিন্দা করেন না। এরাই আবার বাংলাদেশে 'গণতন্ত্র রক্ষার' জন্য 'দুই নেত্রীকে' উপদেশ দেন এবং গণতন্ত্র রক্ষায় সাহায্যের জন্য মার্কিনিদের কাছে ধরনা দেন।



'মানবাধিকার' নাম ধারী সংস্থাগুলোর 'মানবাধিকার (!)' রক্ষার নমুনা এতক্ষণ আমরা দেখলাম। এরা বাস্তবে 'মানব সমাজের অধিকার' রক্ষা করছে না। এদের লক্ষ্য থাকে সুনির্দিষ্ট 'রাজনৈতিক উদ্দেশ্য' অর্জন করা। মানুষের অধিকার রক্ষা করাই যদি এদের লক্ষ্য হতো তাহলে হিউম্যান রাইট ওয়াচ ১৯৭১ সালে ক্ষতিগ্রস্ত কোটি কোটি বাঙালির পক্ষ নিয়ে দাবি তুলত 'এই গণহত্যার বিচার কর'। ৩০ লাখ বাঙালি হত্যাসহ বুদ্ধিজীবী হত্যার 'থিঙ্কট্যাঙ্ক' গোলাম আযমের বিচার করার দাবি হিউম্যান রাইট ওয়াচকেই প্রথমে তোলা উচিত ছিল। বাস্তবে হিউম্যান রাইট ওয়াচ আজ 'খুনি ধর্ষকদের অধিকার' রক্ষার আন্দোলনে নেমেছে!



আদিলুর রহমানের 'অধিকার' বাংলাদেশের আর এক উৎপাত। এরাও 'মানবাধিকার (!)' রক্ষার নামে মাঠে নেমেছে। হেফাজতিদের সমাবেশে 'গণহত্যা' হয়েছে, এরকম একটা 'অভিযোগ' তোলার নাম কি 'মানবাধিকার' রক্ষা? তথাকথিত 'নিহত মানুষদের' তালিকা প্রকাশ করতে বাধা কোথায়? আপনি 'সংখ্যা' বলতে পারেন, কিন্তু নিহত মানুষদের নাম বলতে পারেন না, এর চেয়ে 'অদ্ভুত' আর কি হতে পারে! আসলে সমস্যাটা নাম বলায় নয়। সমস্যাটা লুকিয়ে রয়েছে 'নির্দিষ্ট রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনের' কৌশলের মধ্যে। ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে বিএনপি-জামায়াত জোটের স্বার্থ রক্ষা করাই ছিল আদিলুর রহমানের 'ঐতিহাসিক মিশন'।



আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে বেকায়দায় ফেলা বিএনপিপন্থিদের বর্তমানের আসল লক্ষ্য। এই লক্ষ্য অর্জনে ওরা যে যেখানে আছে সেখান থেকেই আক্রমণ শুরু করেছে। 'ক্ষমতার' লড়াই নিয়ে ওরা অনেক কিছুই করছে এবং ভবিষ্যতেও করবে। কিন্তু সেখানে তথাকথিত 'মানবাধিকার' টেনে আনা কেন? কারণটা হলো বাংলাদেশের 'ক্ষমতার লড়াইকে' একটা 'আন্তর্জাতিক ইস্যুতে' পরিণত করা। এদের 'মূল লক্ষ্যটা' আরও বড়, আরও বিশাল। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে যে ভয়াবহ 'গণহত্যা' সংঘটিত হয়েছিল_ যার সঙ্গে জামায়াত প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিল_ তাকে মাটি চাপা দিয়ে 'নতুন গণহত্যা' তত্ত্ব জন্ম দিতে চায় আদিলুর রহমানরা। বিশ্ববাসীকে ভুলিয়ে দিতে চায় জামায়াতের কৃত গণহত্যার অপরাধ। বিশেষ করে যখন যুদ্ধাপরাধের বিচার চলছে বাংলাদেশে। এর সঙ্গে মার্কিনিদের স্বার্থও জড়িত রয়েছে। কারণ '৭১ সালে আমেরিকা, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এবং জামায়াতের দ্বারা সংঘটিত 'গণহত্যার' পক্ষে ছিল।



বাংলাদেশ বর্তমানে একটা জটিল ও কঠিন সময় অতিক্রম করছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার গতিমুখ পেছন দিকে ঘুরিয়ে দেয়া হয়েছিল। সেই 'গতিমুখ' যাতে তার স্বাভাবিক ঐতিহাসিক ধারায় ফিরে না আসে বা কোনদিনই 'ফিরে না আসে', তার জন্য বাঙালির জানি 'দুশমনরা' মরণ লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। তাই ওরা আজ ওদের অপরাধ করার 'অধিকার' রক্ষার জন্য শোরগোল তুলেছে। বাঙালি জাতির মুক্ত চিন্তার প্রতিনিধিদের মধ্যে ওদের কূটকৌশল বিভেদ ও বিভ্রান্তি তৈরি করতে সক্ষম হলে ওদের বিজয় নিশ্চিত হয়। এই কাজে জামায়াত আজ 'বিলিয়ন বিলিয়ন' ডলার ঢালছে। গোপন প্রবাহ পথে এই 'ডলার' নাকি 'নানা চমক পন্থিদের' ঘরে গিয়ে পৌঁছে গেছে। এখন আর কোন পথ খোলা নেই, একমাত্র বাঙালি জাতিই পারে নিজের 'অধিকার' রক্ষা করতে।

সুত্র

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.