নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যাহা বলিব সত্য বলিব

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।

তালপাতারসেপাই

লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।

তালপাতারসেপাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিএনপি কি মুসলিম লীগ হয়ে যাবে?

১২ ই মে, ২০১৫ সকাল ৯:৩৩


চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ- এ তিন মাস লাগাতার অবরোধ এবং দুই মাস প্রতি সপ্তাহে পাঁচ দিন করে হরতাল ডেকে বিএনপি কী অর্জন করেছে? এ কর্মসূচি ঘোষণার আগে যেমন দলের নীতিনির্ধারণী বা অন্য কোনো পর্যায়ে সভা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণের কোনো খবর পাওয়া যায়নি, আন্দোলনের লক্ষ্য অর্জনের কতটুকু হলো-না হলো তা নিয়েও কোনো পর্যায়ে পর্যালোচনামূলক কোনো সভা-বৈঠকের খবর এখনও কানে আসেনি, চোখে পড়েনি। লক্ষ্যটা পরিষ্কার ছিল। সবার এটি জানা যে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বিতর্কিত নির্বাচনটি বিএনপি ও তার মিত্ররা বর্জন করেছিল। সরকার পক্ষ ছাড়া দেশি-বিদেশি নানা গুরুত্বপূর্ণ মহল সেই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে যে প্রশ্ন তুলেছিল, তা এখনও জারিই আছে। সেই দশম সংসদ নির্বাচন প্রকৃত অংশগ্রহণমূলক ছিল না। ৩০০ আসনের সংসদে ভোট গ্রহণের আগেই ১৫৩ জন জিতে বসে থাকেন। ওইসব আসনে কোনো নির্বাচন ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাই হয়নি। সমঝোতার ভিত্তিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং এরশাদের জাতীয় পার্টি আসন ভাগাভাগি করে নিয়েছে, যদিও ভোট গ্রহণের আগে এরশাদকে নিয়ে নানা নাটক হয়েছে। পরে বোঝা গেছে যে, রওশন এরশাদ সরকারের সঙ্গে যে অ্যারেঞ্জমেন্টে গিয়েছিলেন, তাতে এরশাদেরও সম্মতি ছিল। অর্থাৎ নির্বাচনটি পাতানো ছিল বলে বিএনপি ও নির্বাচন বর্জনকারী বিরোধী দলগুলো যে অভিযোগ করে চলেছে, তা সর্বাংশেই সত্য।

২০১৪ সালের নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ৪২টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে বিএনপিসহ ৩৪টি দলই ভোট বর্জন করেছে। বিএনপি ও তার জোটসঙ্গীরাসহ অন্য বিরোধী দলের প্রধান দাবি একটি অংশগ্রহণমূলক, স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য মধ্যবর্তী নির্বাচন। বিএনপি একটি নির্বাচনপন্থী উদার গণতান্ত্রিক দল। ঘোষণাপত্রের বক্তব্য অনুযায়ী দলটি নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনের নীতিতে বিশ্বাসী। আগাম বা মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতেই ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি ঢাকায় সমাবেশ ডেকেছিল বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। সরকার সে সমাবেশ করতে দেয়নি। বালুর ট্রাক দিয়ে পথ আটকে রেখে খালেদা জিয়াকে তার গুলশান কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখে। খালেদা জিয়া তার নয়াপল্টনের পার্টি অফিসের দিকে রওয়ানা দিতে গেলে তার ওপর বিষাক্ত পিপার স্প্রে নিক্ষেপ করাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আরও কী আচরণ করেছে তা বেসরকারি টেলিভিশনগুলোর পর্দায় সরাসরি দেখেছে দেশ-বিদেশের মানুষ। খালেদা জিয়ার সঙ্গে সরকার খুবই অন্যায় আচরণ করেছে। গণতান্ত্রিক শিষ্টাচারের ন্যূনতম কিছুও অবশিষ্ট রাখেনি। বাহ্যত এ পরিস্থিতিতে লাগাতার অবরোধ কর্মসূচি ঘোষিত হলেও কর্মসূচিটি খালেদা জিয়ার পূর্বনির্ধারিত ছিল বলেই বলা যায়। এও বলা যায় যে, তাতে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানেরও সম্মতি ছিল।

দীর্ঘ তিন মাস গণদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী সেই আন্দোলন থেকে বিএনপির বাড়িতে কী জমা হয়েছে? আগাম বা মধ্যবর্তী নির্বাচন প্রশ্নে ক্ষমতাসীন সরকারকে কতটা নমনীয় করতে পেরেছে বিএনপি জোট- এই প্রশ্ন এখন চতুর্দিকে। তাদের দলের ভেতর এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক আলোচনা-পর্যালোচনা, সমালোচনা-আত্মসমালোচনা না হলেও অনানুষ্ঠানিকভাবে দলের বিভিন্ন পর্যায়ে কথাবার্তা হচ্ছে না, তা নয়। তবে দলটির চরিত্র এতটাই অগণতান্ত্রিক যে, গঠনমূলক কোনো সমালোচনা করলেও দল থেকে পত্রপাঠ বিদায়। দায়িত্বশীল কেউ কেউ কথা বলেন; কিন্তু নাম প্রকাশ করতে চান না। কেউ এমনও বলেন, ‘কোনো ধরনের মন্তব্য করে বিপদে পড়তে চাই না।’ রাজনীতি এবং রাজনৈতিক দল করতে গিয়ে যেন তারা খালেদা জিয়া আর তারেক রহমানের মালিকানাধীন কোনো করপোরেট প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন। পদে পদে চাকরি হারানোর ভয়। কিন্তু যারা বিএনপি সরাসরি করেন না; কিন্তু দলটি ভালোবাসেন, তাদের তো চাকরি হারানোর ভয় নেই। আবার যেসব রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক বা বিশ্লেষক বিএনপির মতো একটি জাতীয়তাবাদী দলের শক্তিমত্তার সঙ্গে টিকে থাকা দেশের স্বার্থে ও গণতন্ত্রের স্বার্থে জরুরি মনে করেন, তারা তিন মাসের ঘটনার নির্মোহ বিশ্লেষণ শুরু করে দিয়েছেন এরই মধ্যে। তারা মনে করেন, ঘোষিত কর্মসূচির মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে সরকারকে কিছুটা ভয় পাইয়ে দিতে পেরেছিল ২০ দল। এক মাস সারা দেশ থেকে রাজধানী ঢাকা বিচ্ছিন্নই ছিল বলা চলে। কিন্তু তাতে সরকার যতটা না ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তার চেয়ে অনেকগুণ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জনগণ। তারপরও আন্দোলনটি যদি নিয়মতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ হতো, মানুষ দেখত আরও কিছুদিন। কিন্তু পেট্রলবোমা হামলা, অগ্নিসংযোগ, রাস্তার ধারে শত-সহস্র বৃক্ষ নিধন করে ব্যারিকেড দেয়ার চেষ্টা এবং প্রায় পৌনে ২০০ মানুষ নিহতের ঘটনা বিএনপির ভাবমূর্তির বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। ফলে ঝুলে গেছে আন্দোলন। জনগণের জন্য আন্দোলনে জনসমর্থন পাওয়ার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই যে কোনো আন্দোলনের কর্মসূচি প্রণয়নকালে অনেক বিষয় বিবেচনায় নিতে হয়। আন্দোলনের কর্মসূচির বিষয়টি ‘পূর্বনির্ধারিত’ ছিল বটে; কিন্তু তা সুপরিকল্পিত ও সুবিবেচিত ছিল না। একটি রাজনৈতিক দলের সরকারবিরোধী আন্দোলনের কর্মসূচি প্রণয়নের সময় লক্ষ্য রাখতে হয়- ১. কর্মসূচির গুরুত্ব এবং তাতে জনস্বার্থ ২. কর্মসূচির ওপর দলীয় নিয়ন্ত্রণ ও নেতৃত্ব প্রদানে দলের দক্ষতা ও সক্ষমতা ৩. নেতৃত্বের সততা, সাহস ও দৃঢ়তা ৪. বিশ্বস্ত ও নিবেদিত কর্মী-সংগঠকের প্রতুলতা ৫. সবপর্যায়ের নেতাকর্মী-সংগঠকরা কতদিন কর্মসূচিটি চালিয়ে নিতে সক্ষম, কষ্ট সহিষ্ণুতাই বা কতটুকু ৬. দালাল, লোভী ও আপসকামীদের ব্যাপারে সতর্কতা ও ৭. আন্দোলনে জনগণের সংশ্লিষ্টতা এবং তারা কতটা কষ্ট, ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত ও কতটা সম্ভব।

অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, একটি সফল আন্দোলনের কর্মসূচি প্রণয়নের উল্লেখিত শর্তগুলোর প্রথমটি ছাড়া বাকি একটিও বিবেচনা করেননি বা এসব নিয়ে ভাবেননি বিএনপির ‘মালিকরা’। মধ্যবর্তী বা আগাম গ্রহণযোগ্য সংসদ নির্বাচনের দাবিটা যুক্তিগ্রাহ্য। দেশে-বিদেশে এর পক্ষে সমর্থন ব্যাপক। সবার অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি স্বচ্ছ গ্রহণযোগ্য নির্বাচন গণতন্ত্রের একটি অপরিহার্য শর্ত। গণতান্ত্রিক শাসনে সব রাষ্ট্রকর্মে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়। গণতান্ত্রিক শাসনে রাষ্ট্রের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির গ্যারান্টি থাকে বলে তাতে জনগণের স্বার্থ যুক্ত থাকে। বিএনপির কর্মসূচিতে প্রথম এ শর্তটি পালিত হয়েছে। কিন্তু এরকম একটি বিশাল ভারবাহী কষ্টকর কর্মসূচির ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখা, নেতৃত্ব প্রদানের দক্ষতা ও সক্ষমতা বর্তমান বিএনপি নেতৃত্বের নেই। এটা ভাবা হয়নি। বিএনপির নেতা কারা? সমালোচকরা বলেন, বিএনপির নেতা বলেন আর মালিক বলেন, দুজনই আছেন- খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান। বিভিন্ন পদের অধিকারী যারা আছেন, তারা খালেদা-তারেকের স্টাফ অফিসারের মতো। সন্তুষ্টি অনুযায়ী ‘ডিউটি’ করতে না পারলে পত্রপাঠ বিদায়। কারারুদ্ধ না হলে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরেরই নাকি ‘চাকরি’ যায় যায় অবস্থায় ছিল। স্থায়ী কমিটি নামে একটি ‘নীতিনির্ধারণী’ কমিটি আছে। কিন্তু নীতিনির্ধারণে এ কমিটির সদস্যদের কি কোনো মূল্য আছে? বছরে ক’টা সভা হয়েছে এই কমিটির? তিন মাসের যে ‘অবিবেচক’ কর্মসূচি দেশে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল, স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে কি তা প্রণয়ন করা হয়েছিল? সভা ডাকলে ১৯ সদস্যের (দুজন সাইফুর রহমান ও খন্দকার দেলোয়ার হোসেন মারা গেছেন) ১৭ জনের মধ্যে ক’জন উপস্থিত হতে শারীরিকভাবে সক্ষম? ক’জন দায়িত্ব পালনে দক্ষ, সক্ষম ও সাহসী? সহসভাপতিম-লী, উপদেষ্টাম-লী, সম্পাদকমন্ডলী- শত শত ‘কাগুজে বাঘ’, নেতা ক’জন- যাদের রাজনৈতিক অতীত আছে, সংগঠন গড়ার ও আন্দোলনের অভিজ্ঞতা আছে? জনগণ নেতা হিসেবে রিকগনাইজ করে ক’জনকে? অথচ বিএনপিতে নেতা হওয়ার নবীন-প্রবীণ ক্যারিয়ার রাজনীতিবিদদের অভাব নেই বলেই শোনা যায়। কিন্তু দখলদারদের ধাক্কায় অন্যদের টেকাতো দূরের কথা, ঢোকাই নাকি দায়। এসব কারণে আন্দোলনের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ফেলে ২০ দলীয় জোটের ‘দ্বিতীয় পক্ষ’ জামায়াতে ইসলামী। আগাম বা মধ্যবর্তী নির্বাচন তাদের এজেন্ডা নয়। তাদের এজেন্ডা তাদের দল ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দ-িত নেতাদের রক্ষা করা। দেশের স্থিতিশীল পরিস্থিতিতে তাদের লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়। আন্দোলনকে তারা নিয়ে গেছে তাদের পথে। বিএনপির অজ্ঞ নেতৃত্বের ক্ষমতা ও বিচক্ষণতা ছিল না তা রোধ করার। সহিংসতা-নাশকতায় মানুষ মারার সব দায় এসে পড়ল বিএনপির কাঁধে। প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সরকারের মন্ত্রী-মিনিস্টার এবং নেতা-পাতি নেতারা খালেদা জিয়াকে ডাকছেন খুনি, জামায়াতের কোনো নেতাকে নয়। পেট্রলবোমা হামলার মামলায় হুকুমের আসামি করা হচ্ছে খালেদা জিয়াকে। মৌলবাদী জঙ্গিবাদী জামায়াতকে নিয়ে জোট বেঁধে রাজনীতি করার মাশুল বিএনপি এভাবেই দিচ্ছে।

বিএনপির বর্তমান কাগুজে নেতৃত্ব নিয়েও প্রশ্ন আছে। এদের সততা, সাহস ও রাজনৈতিক দৃঢ়তা প্রশ্নাতীত নয়। বিএনপির বর্তমান নিয়োগকৃত যে নেতৃত্ব কাঠামো আছে, আওয়ামী লীগের কথা বাদই দিলাম; অন্য আলোচিত ছোটখাটো যেসব রাজনৈতিক দল আছে, তাদের নেতৃত্ব মানের তুলনায় বিএনপি নেতাদের অধিকাংশের মান একেবারেই নিম্নস্তরের। বিএনপির মতো একট বিশাল দলের পদাধিকারী না হলে এদের চালানোর জন্য ‘নিলাম ডাকতে’ হতো বলে বিএনপির ক্যারিয়ার বাহিনীবিদরাই বলে থাকেন। এমন কথা বলেন শহীদ জিয়ার আমলে ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন, মহিলা দল করা দল ও রাজনীতি থেকে নির্বাসিতরাও। যাদের ‘সিনিয়র নেতা’ বলা হয়, এদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলন, স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীন বাংলাদেশে ’৭২ থেকে ’৭৫ এবং তার পরের বিভিন্ন সময়ে রাজপথের আন্দোলনে এদের ক’জন শরিক ছিলেন? স্থায়ী কমিটির সদস্য, সহসভাপতি, উপদেষ্টাম-লীর সদস্য, সম্পাদকমন্ডলীর সদস্যের পরিচয় ছাড়া রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচয় আছে ক’জনের? বাংলাদেশে অনেক ছোট দলেও জনগণ স্বীকৃত বড় নেতা আছেন কেউ কেউ; কিন্তু বিএনপির বড় পদধারী ক’জনকে জনগণ নেতা হিসেবে স্বীকার করে? কোনো রাজনৈতিক দলে অযোগ্য, অদক্ষ ও অরাজনৈতিক ব্যক্তিরা যারা রাজনীতিতে বাপের নামের জায়গায় দুলাভাইয়ের নাম বলে, তারাই যদি নেতৃত্ব কাঠামোয় নিয়োগপ্রাপ্ত হন, সেই দল কেমন করে একটি ব্যাপকভিত্তিক গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দেবে? মামলা-মোকদ্দমার কথা বলা হয়। পেট্রলবোমা-নাশকতার মামলা তো সাম্প্রতিক। বড় বড় পদধারীদের বিরুদ্ধে আগে থেকে যেসব মামলা ঝুলছে, ক’টা রাজনৈতিক মামলা? অধিকাংশই তো দুর্নীতির মামলা। তারা কি দুর্নীতি করেননি? অনেকেই পরিচিত মুখ। বিএনপির ‘কলিকালের’ ক্ষমতার রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে মন্ত্রী-মিনিস্টার, সংসদ সদস্য বা নেতা হওয়ার আগে কে কি ছিলেন আর এখন কি হয়েছেন? এক সময় পাওয়ার আকাক্সক্ষায় কিছু ঝুঁকিও নিয়েছেন, এদের বিরুদ্ধে মাঠকর্মীদের অভিযোগ, এখন হারানোর ভয়ে এরা কোনো ঝুঁকি নিতে চান না। যারা দল দখল করে আছে, অনেকেই অবিশ্বস্ত, কাওয়ার্ড। এমন কর্মীবাহিনী দিয়ে বড় ধরনের কোনো সফল আন্দোলন করার কথা ভাবাই যায় না। সংগঠনের নিজস্ব যে শক্তি আছে, এর ওপর নির্ভর করে কত কড়া কর্মসূচি নেয়া যায়, বড় কোনো কর্মসূচি দীর্ঘদিন চালিয়ে যেতে নেতৃত্বের সক্ষমতা এবং তাদের কষ্ট সহিষ্ণুতার কথা বিবেচনা করে টানা অবরোধ ও হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়নি। এমন দৃঢ় মনোবলের কর্মী-সংগঠক এখন বিএনপিতে নিতান্তই কম। আন্দোলনে ছাত্র-যুবশক্তি দৃশ্যমানই ছিল না। বিএনপিতে লোভী লোকের সংখ্যাও বেড়েছে। অর্থবিত্ত-সম্পদ রক্ষায় আপসকারীরা দায়িত্ব নিয়ে সটকে পড়ে, সরকারি পারপাস সার্ভ করে বলে অভিযোগ লড়াকু নেতাকর্মীদের। অথচ নির্ভর করা হয় এমনসব ব্যক্তিদের ওপরই। আন্দোলনে জনগণের সংশ্লিষ্টতার কথাও বিবেচনা করা হয়নি। তিন মাসের আন্দোলনে প্রথম সপ্তাহে যেমন একটা স্বতঃস্ফূর্ততার ভাব ছিল, পরে তা আর লক্ষ্য করা যায়নি। ভাবা হয়নি, এমন আন্দোলনে জনগণের যে কষ্ট, সেই কষ্ট জনগণ কতদিন মেনে নিতে বা সহ্য করতে প্রস্তুত? জনগণের স্বার্থের আন্দোলন হলেও জনগণের কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকার করারও একটা সীমা থাকে। কিন্তু বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন সেই সীমা অতিক্রম করেছে। ফলে আন্দোলনের সমর্থকরা তাদের অংশগ্রহণ এমনকি আন্দোলনের ওপর থেকে সমর্থনও প্রত্যাহার করে নেয়ায় সঠিক নেতৃত্ব ও কর্তৃত্বহীন অবরোধ-হরতাল আন্দোলন সাফল্যের মুখ দেখেনি। তিন সিটি নির্বাচনেও বিএনপি তার সাংগঠনিক শক্তিমত্তার পরিচয় দিতে পারেনি। নির্বাচনে অনিয়ম-কারচুপির বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে প্রতিবাদী কোনো কর্মসূচি নিতেও সাহস করেনি তারা।

বিএনপি কি তাহলে শেষ হয়ে গেল? বিএনপি কি অবশেষে মুসলিম লীগের ভাগ্য বরণ করতে যাচ্ছে? সরকার পক্ষ তো বেশ জোর দিয়ে তেমন কথাই বলছে। তাদের কথা ফলবে কিনা নির্ভর করবে খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমান দল নিয়ে কি ভাবছেন, কি করছেন তার ওপর। তবে একটা কথা বলা যায় যে, মুসলিম লীগের জন্ম যে কারণে হয়েছিল, পাকিস্তান সৃষ্টির পর তার প্রয়োজন অর্ধেকটাই ফুরিয়ে যায়। তাদের মূল এজেন্ডাই ছিল ভূখ-ের মুসলমানদের জন্য একটি স্বতন্ত্র আবাসনভূমি প্রতিষ্ঠা। দেশ গড়ার, অর্থনৈতিক উন্নয়নের এবং স্বাধীন পাকিস্তানের উভয় অঞ্চলের সমন্বিত ও সমান্তরাল উন্নয়ন ও জনকল্যাণের ব্যাপক-বিস্তৃতি কোনো কর্মসূচি ও পূর্ব পরিকল্পনা তাদের ছিল না; যেমনটা ছিল ভারত গড়ার ব্যাপারে কংগ্রেসের। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর সেই দলের প্রয়োজন একেবারেই ফুরিয়ে যায়। বিএনপির ক্ষেত্রে বিষয়টা ভিন্ন। একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক অবস্থানের ওপর দাঁড়ানো আছে দলটি, অন্যান্য দলের মালিক-চালকরা সে ব্যাপারে কতটা সচেতন তা কিন্তু প্রশ্ন থাকতে পারে। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ জিয়া মুক্তিযুদ্ধের কিংবদন্তি নায়ক। দলের ঘোষণাপত্রের সূচনাটাই তিনি করেছেন মুক্তিযুদ্ধ ও দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতি অঙ্গীকার দিয়ে। সেই আবেদন ফুরিয়ে যায়নি, যাবে না। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের এক কালোত্তীর্ণ দর্শন তিনি দিয়ে গেছেন জাতিকে। দেশের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ, দেশপ্রেমিক জাতীয়তাবাদী শক্তি এ দর্শনকে মনে-প্রাণে গ্রহণ করেছে এবং যে কোনো সময় দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ববিরোধী চক্রান্তের বিরুদ্ধে ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, সম্প্রদায় নির্বিশেষে জাতীয় ঐক্যের অবলম্বন মনে করে এ বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের দর্শনকে। সাম্রাজ্যবাদ ও আধিপত্যবাদের সব ধরনের আগ্রাসন মোকাবিলায় বিএনপিকে মনে করা হয় একটি কমন প্লাটফর্ম বা মিলনকেন্দ্র। বাংলাদেশের সামনে এখনও নানামুখী বিপদ। এ বিপদ যতদিন থাকবে, বিএনপির মতো একটি দলের প্রয়োজনও ততদিন থাকবে। অবশ্য এ জাতীয় প্রত্যাশা ও চাহিদা পূরণ করতে হলে সর্বাগ্রে বিএনপিকে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির ‘প্রেম’ ভুলতে হবে। বারবার ব্যর্থতার কারণ বিশ্লেষণ ও আত্মসমালোচনা করতে হবে। তারেক রহমানকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, দলে এখনই তার প্রধান নেতা হওয়াটাই জরুরি, নাকি একটি কার্যকর, দক্ষ ও শক্তিশালী দল হিসেবে বিএনপিকে বাঁচিয়ে রাখাটা জরুরি। এ জন্য তাকে ত্যাগের মনোভাব রাখতে হবে। খালেদা জিয়াকে ঘোষণা করতে হবে দল ক্ষমতায় গেলে তিনিই প্রধানমন্ত্রী হবেন, তারেক রহমান নন; অথবা তার অবর্তমানে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত হবেন দলের নেতা- সে প্রক্রিয়ায় তারেকও নেতা হতে পারেন। শোনা যাচ্ছে, দলে পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু হবে। এখন থেকেই দলে গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতার চর্চা শুরু হতে পারে। তাহলে খালেদা জিয়ার ওপরও তেমন চাপ থাকে না পুনর্গঠনে। প্রথমেই এ প্রক্রিয়ার কেন্দ্র গুলশান অফিস থেকে দলের নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে স্থানান্তরিত করতে হবে। মাঠের সাহসী যোদ্ধাদের এবার নেতৃত্বে আনার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু এ যোদ্ধাদের তালিকা যদি গুলশান অফিসের কর্মচারীরা করে কিংবা তালিকায় নাম তোলার জন্য মূল্য হাঁকা হয়, তাহলে তেমন পুনর্গঠনে কোনো লাভ হবে না। ক্যারিয়ার রাজনীতিবিদরা এ দায়িত্বে না থাকলে অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে। বড় যে সিদ্ধান্তটি নিতে হবে, আবারও বলি, জামায়াতের সঙ্গ ছাড়তে হবে বিএনপিকে। বর্তমানে রাজনৈতিকভাবে কনফিউজড বিএনপিকে ফিরে যেতে হবে শহীদ জিয়ার বিএনপির কাছে। বিএনপির সাবেক মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়ার সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নই সহায়ক হবে বিএনপিকে ফের উজ্জ্বল করার কাজে। বিএনপির সামনে সঙ্কট আছে, কিন্তু সম্ভাবনা আছে তারও বেশি। খালেদা জিয়া, তারেক জিয়া তা কি কাজে লাগাবেন?
সুত্র

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.