নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যাহা বলিব সত্য বলিব

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।

তালপাতারসেপাই

লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।

তালপাতারসেপাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্থলসীমান্ত চুক্তি এবং প্রধানমন্ত্রীর সাফল্য

২৬ শে মে, ২০১৫ সকাল ৮:২১

অবশেষে দীর্ঘ ৪১ বছর পর ভারতীয় রাজ্যসভা ও লোকসভায় ঐতিহাসিক সীমান্ত বিল পাস হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত সমস্যার স্থায়ী সমাধান হলো। এখন থেকে যে ছিটমহলগুলো বাংলাদেশের ভূখ- দ্বারা বেষ্টিত, তা বাংলাদেশেরই অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বিবেচিত হবে। আর যেগুলো ভারতীয় ভূখ- দ্বারা বেষ্টিত ছিল, সে মহলগুলো ভারতের অংশ হয়ে যাবে। ছিটমহলে বসবাসকারী নাগরিকরা একদিকে বাংলাদেশি; অপরদিকে ভারতীয় বলে বিবেচিত হবে। বিভিন্ন প্রচারমাধ্যম থেকে যা জানা গেছে তাতে কোন দেশ কতটুকু জমির অধিকার পেল, তার চেয়ে বড় কথা_ ৪১ বছরের একটা বিরোধ, যা উভয় দেশে বসবাসকারী নাগরিকরা যে বিপন্ন জীবনযাপন করতেন তা থেকে হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছেন। এজন্যই সস্নোগান উঠেছে_ 'শেখ হাসিনা দীর্ঘজীবী হোক।'
সীমান্তের অমীমাংসিত সমস্যাগুলো মিটিয়ে ফেলতে ১৯৭৪ সালের ১৬ মে দিলি্লতে স্থলসীমান্ত চুক্তিতে সই করেন বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। সে সময়ে চুক্তি সই হলেও বিগত ৪১ বছরে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। যেহেতু বিষয়টির সঙ্গে উভয় দেশের সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন পড়ে, বাংলাদেশ দ্রুততার সঙ্গে সংবিধান সংশোধন করতে পারলেও ভারত তার রাষ্ট্রীয় জটিলতার কারণে আইনসভায় সংবিধান সংশোধন করতে সক্ষম হয় না। অতীতে বহুবার এই ছিটমহল নিয়ে আলাপ-আলোচনা হয়েছে। '৭৪-এর চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ ভারতের কাছে বারবার আবেদন-নিবেদন জানিয়েছে। কিন্তু ভারতের পক্ষ থেকে সমন্বিতভাবে রাজ্যসভায় বা লোকসভায় বিলটি উত্থাপন করা সম্ভব হয়নি। গত বছর নরেন্দ্র্র মোদি সরকার নির্বাচিত হওয়ার পর অতীতের এই সংকট সমাধানের উদ্যোগ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গ্রহণ করেন। দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সচিব বরাবর আলোচনা হয়। যদিও মোদি সরকার সম্পর্কে বাংলাদেশে একটা বিশেষ ধরনের অনুভূতি ছিল, তথাপি দেখা গেল মোদি সরকারের আমলেই এই বিল রাজ্যসভা ও লোকসভায় সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়েছে।
ভারতের রাজ্যসভায় বাংলাদেশ-ভারত স্থলসীমান্ত বিল অনুমোদনের পর ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বলেছিলেন, ভারতের সংসদীয় ইতিহাসে এটি একটি বিরলতম ঘটনা। মনমোহন সিং এটি করে গিয়েছেন, আমরা তা এগিয়ে নিয়ে গেলাম। বাংলাদেশের সঙ্গে এ চুক্তি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বিশ্বের কাছে আমরা যে প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলতে বিশ্বাসী, সেই বার্তা পেঁৗছাবে।
স্থলসীমান্ত চুক্তির বাস্তবায়ন এজন্যই জরুরি যে, বাংলাদেশের ভেতরে ভারতের ১১১টি ছিটমহল রয়েছে, যার আয়তন ১৭ হাজার ১৪৯ একর। অন্যদিকে, ভারতের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের ছিটমহলের সংখ্যা ৫১টি, যার আয়তন ৭ হাজার ১১০ একর। বিলটি পাস হওয়ায় এসব ছিটমহল বিনিময় হতে আর কোনো বাধা নেই। ছিটমহলবাসী এদিনটির অপেক্ষায় রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। ড. মনমোহন সিং ভারতের প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে ২০১১ সালের সেপ্টেম্ব্বরে বাংলাদেশ সফরকালে ১৯৭৪ সালের স্থলসীমান্ত চুক্তির অতিরিক্ত প্রটোকলে সই করেন। যে কারণে চুক্তিটি বাস্তবায়নের জন্য ভারতের সংবিধানে সংশোধনী আনা হলো।
নরেন্দ্র মোদি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই বিভিন্ন বক্তব্য-বিবৃতিতে বাংলাদেশ সম্পর্কে তার ইতিবাচক মনোভাব এ দেশের মানুষকে আশান্বিত করে তোলে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এতদিন দেখা গেছে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট ইস্যুতে নিমরাজি থাকতে। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরের সময় এটি বিশেষভাবে আলোচনায় আসে। অবশেষে তিনিও বাংলাদেশের ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়ে চলতি বছর বাংলাদেশ সফর করেন। এটি নিঃসন্দেহে বর্তমান সরকারের অন্যতম কূটনৈতিক সাফল্য হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লোকসভায় বিল পাসের পর এমনটিই উল্লেখ করেছেন। ফলে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সম্মিলিত প্রচেষ্টায় যে স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের নতুন ইতিহাস রচিত হতে চলেছে, তা বলাই বাহুল্য। একইভাবে শেখ হাসিনা ১৯৯৭ সালে পার্বত্য শান্তিচুক্তি করে পাহাড়ে শান্তি ফিরিয়ে এনেছেন।
আগামী জুনে ঢাকা সফরে আসতে আগ্রহী ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এখন তিস্তা চুক্তি ফলপ্রসূ করতেও সরকারকে জোর দিতে হবে। মোদি ক্ষমতা নেয়ার পরপরই আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প চালুর নির্দেশ দিয়েছিলেন। যাতে খরা অঞ্চলে পানি সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। এটা কার্যকর হলে বাংলাদেশে পানিশূন্যতা দেখা দেবে। এ ব্যাপারে নতুন করে চিন্তা-ভাবনা করা প্রয়োজন। সীমান্তে হত্যা একটি বড় সমস্যা। এখন সীমানা চিহ্নিত হওয়ায় এই সীমান্ত হত্যা বন্ধ হবে। গঙ্গাচুক্তি নিয়ে আলোচনারও প্রয়োজন আছে। কেননা চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ পানি পাচ্ছে না। চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে ২০২৭ সালে। জনসংখ্যা বাড়বে তিনগুণ। পানির চাহিদাও বাড়বে। সুতরাং চুক্তিতে পর্যালোচনার যে সুযোগ রয়েছে, বাংলাদেশের উচিত এ ব্যাপারে ভারতকে রাজি করানো।
বিগত ৪০ বছর ছিটমহলে বসবাসকারী বাংলাদেশি ও ভারতীয় নাগরিকরা যে ধরনের বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছেন; শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলোর যেভাবে দায়িত্ব পালন করার কথা, সেভাবে পালন করতে সক্ষম হয়নি এবং সে কারণে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়েছে। সীমান্ত বিরোধের কারণে যত প্রাণ বিসর্জিত হয়েছে, অনিয়ন্ত্রিত ব্যবসাবাণিজ্য দ্বারা রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে। জমিজমা নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি এবং চলাচলে যেভাবে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে, তা একমাত্র ছিটমহলে বসবাসকারী ছাড়া অন্য কেউ ধারণাও করতে পারবে না। তাই যখন ছিটমহল সমস্যার কথা বলা হয়েছে তখন বাংলাদেশ বা ভারতীয়দের পক্ষ থেকেই হোক, ছিটমহলে বসবাসকারী নাগরিকরা সামনে আশার আলো দেখেছেন। এবারই তাদের সংকটের স্থায়ী সমাধান হলো।
স্থলসীমান্ত চুক্তির ফলে এক অমানবিক লজ্জাজনক ও মানহানিকর পরিস্থিতি থেকে ছিটমহলের মানুষ মুক্তি পেল। এটা একটা শুভ দিক। উভয় দেশের সরকারকেই এখন ছিটমহলবাসীর শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং তাদের সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। আমরা চাই, ভারত যে আস্থা প্রদর্শন করেছে, তা আরো সম্প্রসারিত করুক। পানি সমস্যার সমাধানের ব্যাপারেও ভারত আন্তরিক হোক। স্থলসীমান্ত চুক্তির জন্য বাংলাদেশ ও ভারতের সরকার প্রধানকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যেকার বন্ধুত্ব আরো দৃঢ় ও সুপ্রতিবেশীসুলভ হোক।
সুত্র

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.