নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।
দেশে-বিদেশে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের সদস্য সংখ্যা দিন দিন বাড়তে থাকায় পুলিশ, র্যাব ও গোয়েন্দারা নড়েচড়ে বসেছে। দেশে নিষিদ্ধ ৮ জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা আন্তর্জাতিকভাবে নিষিদ্ধ অনেক সংগঠনের সঙ্গে নেটওয়ার্ক গড়েছে। এসবের সঙ্গে জড়িতরা উঠতি বয়সী এবং কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া। নামীদামি কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে জঙ্গিবাদের বিস্তৃতি ঘটছে এমন অভিযোগও উঠেছে। জঙ্গি তৎপরতায় শিক্ষিত এবং ধনাঢ্য পরিবারের সন্তানরা আগ্রহী হচ্ছে এমন তথ্য রয়েছে গোয়েন্দাদের কাছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কাওমি মাদ্রাসা রয়েছে। এ অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্র-শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করবে। একই সঙ্গে চিহ্নিত কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরে সম্প্রতি অপরাধ বিষয়ক এক পর্যালোচনা সভায় (ক্রাইম কনফারেন্স) পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা এ সিদ্ধান্ত নেন।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বসে জঙ্গি তৎপরতার বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ওই সভায় পুলিশ ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের প্রতি নির্দেশনা দেয়া হয়। একই সঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় নিয়মিত পরিদর্শন ও নজরদারি জোরদার করতেও নির্দেশনা দেয়া হয়। পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হকের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত ওই কনফারেন্সে জঙ্গি তৎপরতার বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বাড়ানোর কাজে কমিউনিটি পুলিশকে সম্পৃক্ত করারও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত শনিবার রাতে ঢাকার মধ্য বাড্ডার তেঁতুলতলা এলাকা থেকে আশুলিয়ার কাঠগড়ায় কমার্স ব্যাংকে ডাকাতির ঘটনায় জড়িত সন্দেহে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের শীর্ষ নেতা মাহফুজুল ইসলাম শামীম ওরফে সুমনকে (৩২) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ ছাড়া একই রাতে ঢাকার একটি ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল থেকে ‘এ’ লেভেল, ‘ও’ লেভেল শেষ করা আবদুল্লাহ আল গালিব (২৫) নামে এক তরুণকে বারিধারা ডিওএইচএস এলাকার একটি বাসা থেকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। যিনি মধ্যপ্রাচ্যের আইএসের আদলে নতুন জঙ্গি সংগঠন খুলে সদস্য সংগ্রহ ও বাংলাদেশে ‘খিলাফত প্রতিষ্ঠার’ পরিকল্পনা করছিলেন বলে গোয়েন্দারা দাবি করছে।
এর আগে গত ২৫ মে সোমবার ঢাকার উত্তরা ও মোহাম্মদপুরের দুটি বাসা থেকে ইরাক ও সিরিয়ার সুন্নিপন্থী সশস্ত্র সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সদস্য সন্দেহে আমিনুল ইসলাম বেগ (৩৫) ও সাকিব বিন কামালকে (৩০) আটকের পর আদালতের মাধ্যমে তিনদিন করে রিমান্ডে নেয় ডিবি পুলিশ। উত্তরা পশ্চিম মডেল থানার ১৪ নম্বর সেক্টরের ১১ নম্বর সড়কের একটি বাসা থেকে আমিনুল ইসলাম বেগ এবং মোহাম্মদপুর লালমাটিয়া এলাকা থেকে সাকিব বিন কামালকে আটক করা হয়। এর আগে গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর পুরানা পল্টন এলাকা থেকে হিফজুর রহমান নামে একজনকে আইএস জঙ্গি সন্দেহে আটক করে ডিবি পুলিশ। আইএস বাংলাদেশ নামে যে ফ্যান পেজ রয়েছে তিনি এর জনক। তিনি নিজ উদ্যোগে জিহাদি দল গঠনের চেষ্টা করেন। এ ছাড়া গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর রাজধানীর কমলাপুর থেকে আইএস জঙ্গি সন্দেহে সামিউর রহমান ওরফে ইবনে হামদান নামে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এক ব্রিটিশ নাগরিককে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। এসব ঘটনা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে জঙ্গিদের বিস্তৃতির ইঙ্গিত দেয়।
একাধিক সূত্র জানায়, দেশের কয়েকটি জঙ্গি সংগঠন সম্প্রতি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কওমি মাদ্রাসার মেধাবী শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করে জঙ্গিবাদের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। কয়েক বছরে বিভিন্ন নাশকতা ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় যারা গ্রেপ্তার হয়েছে তাদের বেশিরভাগই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা কোনো কওমি মাদ্রাসার ছাত্র ও বেশিরভাগই উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, জঙ্গিবাদের বিস্তৃতি উদ্বেগজনক পর্যায়ে চলে গেছে। বিশেষ করে জঙ্গিরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে টার্গেট করে মাঠে নেমেছে। তারা কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের ধর্মীয় উন্মাদনার মাধ্যমে বিভ্রান্ত করে জঙ্গিবাদের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। সে জন্য চিহ্নিত কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নজরদারি করা ছাড়াও দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জঙ্গিবাদবিরোধী প্রচারণা চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
হেফাজতে ইসলামের আন্দোলন শুরু ও ২০১৪ সালের ৫ মে মতিঝিলে সংগঠনটির অবস্থান কর্মসূচির পর থেকে কওমি মাদ্রাসাগুলোয় নজরদারি শুরু করে গোয়েন্দারা। বিভিন্ন কওমি মাদ্রাসায় গিয়ে ছাত্র-শিক্ষকদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও তাদের গোয়েন্দা ইউনিটের সদস্যদের এখন রুটিন ওয়ার্ক। সার্বিক বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থান থাকলেও একই সঙ্গে ছাত্র-শিক্ষকদের সঙ্গে জঙ্গিবাদবিরোধী মতবিনিময় সভা করা হবে বলেও জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
গোয়েন্দারা জানায়, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি একুশে বইমেলা থেকে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় কুপিয়ে হত্যা করা হয় ব্লুগার ও বিজ্ঞানমনস্ক লেখক অভিজিৎ রায়কে। ওই ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া শাফিউর রহমান ফারাবী নটরডেম কলেজের মেধাবী ছাত্র ছিলেন। পরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও প্রথমে হিযবুত তাহরীর ও পরে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের জঙ্গি কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন।
গত ৩০ মার্চ সকাল সাড়ে ৯টায় রাজধানীর দক্ষিণ বেগুনবাড়ির দীপিকার মোড়ে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের চার সদস্য ব্লুগার ওয়াশিকুর রহমান বাবুকে কুপিয়ে হত্যা করে। পরে ধাওয়া দিয়ে স্থানীয়রা দুই খুনি জিকরুল্লাহ ও আরিফুর রহমান নামের দুই জঙ্গিকে আটক করলেও সেখানে থাকা আরো দুই জঙ্গি পালিয়ে যায়। আটক জিকরুল্লাহ ও আরিফুর রহমান কওমি মাদ্রাসার ছাত্র ছিলেন। জিকরুল্লাহ (২২) হাটহাজারী দারুল উলুম মাদ্রাসায় এবং আরিফুল ইসলাম (২২) রাজধানীর মিরপুর-১ দারুল উলুম মাদ্রাসায় পড়তেন বলে গোয়েন্দাদের জানান।
২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ব্লুগার আহমেদ রাজীব হায়দারকে রাজধানীর মিরপুরে বাড়ির সামনে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। হত্যাকাণ্ডের পর মুফতি জসীমউদ্দীন রাহমানী ছাড়া অন্য সাত আসামির সবাই নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। এরা হচ্ছে ফয়সাল বিন নাইম ওরফে দীপ (২২), মাকসুদুল হাসান অনিক (২৬), এহসান রেজা রুম্মান (২৩), নাঈম সিকদার ইরাদ (১৯), নাফিস ইমতিয়াজ (২২), সাদমান ইয়াছির মাহমুদ (২০) ও রেজওয়ানুল আজাদ রানা। রানা ছাড়া অন্য সবাই কারাগারে রয়েছে। একই বছরের ১৪ জানুয়ারি রাতে উত্তরায় হামলার শিকার হন আরেক ব্লুগার আসিফ মহীউদ্দিন। তার ওপর যারা হামলা চালিয়েছিলেন তারাও রাজীব হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃতদের সহযোগী।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ কর্মসূচি থাকবে। একই সঙ্গে সব অভিভাবককে সন্তানদের চালচলনের ওপর খেয়াল রাখতে হবে যেন কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে তার সন্তান জড়িত হয়ে না যায়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র বলেছে, ২৬ মে উগ্র জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। এর আগে ২০০৫ সালে হরকাতুল জিহাদ আল ইসলাম, জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ (জেএমজেবি), জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি), হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামি বাংলাদেশ (হুজি বি) ও শাহাদাত আল হিকমাতকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এরপর ২০০৯ সালে হিযবুত তাহরীর নিষিদ্ধ করা হয়।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০০৮ সালে দেশের নামকরা একাধিক সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের যাত্রা শুরু হয়। তখন রাজধানীর কামাল আতাতুর্ক এভিনিউয়ে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সাবেক ক্যাম্পাসের কাছাকাছি বনানীর একটি মসজিদকে ঘিরে আলকায়েদার মতাদর্শে বিশ্বাসী এ গোষ্ঠীর কার্যক্রম শুরু হয়। প্রধানত ইংরেজি মাধ্যম বা আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থায় অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে তাদের মতাদর্শ প্রচার ও উদ্বুদ্ধকরণ চলত। ধীরে ধীরে এর বিস্তৃতি ঘটেছে উঠতি তরুণ-তরুণীদের মধ্যে। যারা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া বলে জানা গেছে।
সুত্র
©somewhere in net ltd.
১| ০২ রা জুন, ২০১৫ সকাল ৯:৫৬
জিয়া উদ্দিন আহমেদ বলেছেন: সরকার নিজেরাই তো বড় জঙ্গী, অস্ত্রের জোরে টিকে আছে ক্ষমতায়।