নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যাহা বলিব সত্য বলিব

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।

তালপাতারসেপাই

লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।

তালপাতারসেপাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

বঙ্গবন্ধু হত্যা : সামরিক ক্যু নাকি ভূ-রাজনীতিগত অর্থনীতি?

১৬ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ৯:২৪


চল্লিশ বছর পরও জাতির কাছে দুর্বোধ্যÑ কেন স্বাধীনতার একমাত্র সফল প্রাণপুরুষ বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছে? পরবর্তীতে কেনই-বা জাতীয় চার নেতাকে অবলীলায় কেন্দ্রীয় কারাগারে হত্যা করা হয়? কেনই-বা ঘাতকরা সুনির্দিষ্টভাবে ১৫ আগস্টের ঊষালগ্নকে বঙ্গবন্ধু হত্যার দিনক্ষণ বেছে নেয়? এসব প্রশ্নের বিক্ষিপ্ত উত্তর হয়তো একটি সামরিক ক্যু-তে জড়িত সেনা সদস্যদের বিচারে দোষারোপের ভিত্তিতে বের হয়েছে বটে, তবু ক্ষমতার জন্য উপর্যুপরি ক্যু এবং একটি সিপাহি-জনতার বিপ্লবের আবর্তে মুক্তিযুদ্ধের দুই সেক্টর কমান্ডারের পাল্টাপাল্টি আÍত্যাগ এবং পরবর্তীতে আরো দুই সেক্টর কমান্ডারের আÍত্যাগ, নিঃসন্দেহে একটি ভূ-রাজনীতিগত অর্থনীতির আলো-আধারি ট্র্যাজেডিকে পরিষ্কার করেনি।

ফলে সেই ট্র্যাজেডি আসলে কীভাবে দানা বেঁধেছে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্দীপ্ত একটি সদ্য স্বাধীন দেশের গতিপ্রবাহ কেন ভিন্ন ধারায় গেছে, তারই একটি বিশ্বাসযোগ্য রূপরেখা দুই দশক আগে প্রকাশিত হলেও বাস্তবে অপ্রকাশিতই থেকেছে।

১৯৯২ সালের ১৬ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি থেকে প্রকাশিত এক্সিকিউটিভ ইন্টেলিজেন্স রিভিউ, সংক্ষেপে উইকলি ‘ইআইআর’-এ ম্যাগাজিনটির দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক বিশেষজ্ঞ ও নিউক্লিয়ার প্রকৌশলী রামতনু মৈত্র বঙ্গবন্ধু হত্যা বিষয়ে আলোকপাত করে ২৫-২৭ পৃষ্ঠায় লেখেনÑ ‘দ্য অ্যাসাসিনেশন অব শেখ মুজিব’। ওই গবেষণামূলক নিবন্ধটির ঠিক আগেরটিও তার বাংলাদেশের সাহায্যনির্ভর অর্থনীতি নিয়ে লেখা পাঁচ পৃষ্ঠার: ‘ডেড-অ্যান্ড ফর বাংলাদেশেজ ডোনার-ডিপেনডেন্ট ইকোনমি’।

আলোচ্য ‘দ্য অ্যাসাসিনেশন অব শেখ মুজিব’ নিবন্ধটির সূচনায় বলা হয়েছেÑ আগের মাসে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সরকার ১৯৮৬ সালে এরশাদ আমলে গঠিত ফ্রিডম পার্টির দুই আÍস্বীকৃত বঙ্গবন্ধুর খুনিকে গ্রেফতার করে দেশের রাজনীতির ‘প্যানডোরা বক্স’ খোলেন। তবুও বঙ্গবন্ধু হত্যার রহস্য উšে§াচন বাংলাদেশসহ ওই অঞ্চলের সবার জানা দরকার। কেননা তাতে পর্যায়ক্রমিক ঘটনাগুলো পরিষ্কার হবে।

এরপরই তাতে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পেছনে ভারত ও ইন্দিরা গান্ধির ভূমিকাসহ পদানত পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রসঙ্গটি তুলে ধরা হয়। সেই ফলাফল যে যুক্তরাষ্ট্রের পছন্দনীয় হয়নি, নিক্সন প্রশাসনের সপ্তম নৌবহর প্রেরণেই তা সুস্পষ্ট। অঞ্চলটির নীতিমালা প্রণেতা ছিলেন হেনরি কিসিঞ্জার এবং ভারত ও রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভূ-রাজনীতিগত ভারসাম্যের জন্য পাকিস্তান তখন চীনের বয়োবৃদ্ধ মাও সেতুংয়ের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের রিচার্ড নিক্সনের সংযোগ স্থাপনে ছিল ব্যস্ত। পাল্টা ওই প্রয়াসে মুজিব ভারত-সোভিয়েত বলয়ে একাকার হননি।

১৯৭৪ সালের ১৮ মে ভারত পারমাণবিক বোমা ফাটিয়ে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের তীব্র সমালোচনায় পড়ে। কিসিঞ্জার বাংলাদেশের অভ্যুদয়কে হিটলারের অধিকৃত রাইনল্যান্ডের সঙ্গে তুলনা করলেও ওই বছর অক্টোবরে ভারতে যান। কিন্তু ইন্দিরা গান্ধি দেখা দেননি। সিকিম সেই গ্রীষ্মে নিজেদের পার্লামেন্টে আইন পাস করে ভারতের সঙ্গে যুক্ত হলে ব্রিটেন নাখোস হয়। বছরের শেষদিকে অর্থনীতির জরাজীর্ণতায় আইএমএফর চাপে ইন্দিরা গান্ধি কোনঠাঁসা হলেও বিরোধী দলগুলোর সৃষ্ট অনাচারে নীরবে পরের বছর ২৫ জুন জরুরি অবস্থা জারির প্রক্রিয়াটি চূড়ান্ত করে বিরোধীদের ব্যাপক ধরপাকড় করেন।

ততদিনে বঙ্গবন্ধুও তেঁতো হয়ে ওঠেন। তার সরকার সমাজতান্ত্রিক আদর্শ প্রবর্তন করে ১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ পাকিস্তানিদের নিষ্ফলা পরিত্যক্ত সহায়-সম্পত্তির রাষ্ট্রায়ত্ত সুফল আপামর মানুষকে দিতে সক্ষম হয়নি, বরং বৈদেশিক সাহায্যনির্ভরতায় রাজনৈতিকভাবে দুর্বল ও সঙ্গিন হয়ে পড়ে। তিন অর্থনীতিবিদ- নুরুল ইসলাম, রেহমান সোবহান ও আনিসুর রহমান পরিকল্পনা কমিশনে যোগ দিলেও সরে পড়েন দ্রুত। মধ্যবিত্ত ও সামরিক বাহিনীতে দুর্বল অর্থনীতির প্রকোপ পড়ে। বঙ্গবন্ধু তা দেখলেও কিছু করার ছিল না, আর বাধ্য হয়ে যখন এক দলীয় সরকার গঠন করেন তখন পরিণতি হয় বিপর্যস্ত। ১৯৭৪ সালের ফেব্র“য়ারিতে পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো ঢাকায় সংবর্ধিত হলেও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে-বিপক্ষের সফল মেরুকরণ ঘটেনি।

তথাপি মাটিতে কান পেতে থাকা অনেকের ধারণাÑ একটি ষড়যন্ত্র অনেক দিন থেকেই চলছিল। ১৯৭২ সালে মাওপন্থী লেফটেন্যান্ট জিয়াউদ্দিন ‘হলিডে’ পত্রিকায় মুজিবের অপসারণ চেয়ে একটি কলাম ছাপেন। বঙ্গবন্ধু জিয়াউদ্দিনকে তিরস্কারের পরিবর্তে কাছে ডাকলেও পরে আÍগোপনে যাওয়া তার ‘কমরেড-ইন-আর্মস’ কর্নেল তাহের, যার ১৯৭৫ সালের নভেম্বরে ক্যু সংঘটনের খ্যাতি রয়েছে, মসনদে সমাসীন জিয়াউর রহমান চরমপন্থি কর্মকাণ্ডের জন্য তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন। ঘটনা এখানেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরং সোভিয়েত নির্মিত ঘোড়াশালের সার কারখানায় ১৯৭৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর যে বিস্ফোরণটি ঘটে, সেটি ছিল অন্তর্ঘাতমুখী। এতে কৃষকের জন্য ইউরিয়া সার আমদানির বৈদেশিক মুদ্রা জোগানও কঠিন হয়, ফলে ১৯৭৪-৭৫ অর্থবছরে ৩০ শতাংশ সার ব্যবহার হ্রাস পায়। পাশাপাশি বাংলাদেশে সাহায্য বন্ধে ১৯৭৪ সালের ৬ জুন লন্ডনের ফিন্যান্সিয়াল টাইমসে কেভিন রেফার্টি লেখেন : ‘সাহায্য সামান্যই আওয়ামী লীগকে নিজস্ব চর্বি শোষণে সমর্থ করেছে। বরং এটা যথোপযুক্ত হবে দেশটি সাবলম্বী হোক, জনগণ কষ্টে থাকুক এবং ক্ষমতাসীনদের বিতাড়িত করুক’।

এরপরই সে বছর ৩০ অক্টোবর কিসিঞ্জার ঢাকায় আসেন। মুজিবের সঙ্গে তার কী কথা হয়, সেটি তিনি সংবাদ সম্মেলনে খোলাসা না করলেও বলেন, কিছু জটিল বিষয়ে অগ্রগতি হয়েছে। এ ‘জটিলতা’ সম্পর্কে কোনো ধারণা না দিলেও ইঙ্গিত করেন যুক্তরাষ্ট্র সরকার ও তিনি বিশ্বাস করেন মার্কিন সাহায্য বেহিসাবি ভেস্তে গেছে, যা মুজিব প্রতিপক্ষের জন্য ছিল ‘গ্রিন সিগন্যাল’। শুরু হয় বঙ্গবন্ধু হত্যার নেপথ্য। মোট চারটি হত্যা পরিকল্পনা ভণ্ডুল করা গেলেও ওই ‘গ্রিন সিগন্যাল’টি ধারণ করতে পেরেছিল পনের সদস্যের একটি সামরিক দল, যাতে ক্রীড়নক ছিলেন চারজন; এদের দুজন আÍীয় সূত্রে ও অপর দুজন চাকরিচ্যুতি সূত্রে আবদ্ধ হন। এরশাদ আমলের প্রধানমন্ত্রী মওদুদ আহমেদের ভাষ্যানুযায়ীÑ ‘হত্যাযজ্ঞের সময় সুস্পষ্ট হয় দায়িত্বশীলদের নিজস্ব কোনো পরিকল্পনা ছিল না। কেন এবং কার জন্য করেছে তাও পরিষ্কার নয়’।

তারপরও দুটি ঘটনার বিবরণ পাওয়া যায়। একটি জিয়াউর রহমানকে ডিঙিয়ে কে এম শফিউল্লাকে সামরিকপ্রধান হিসেবে নিয়োগের উদ্ভূত ক্ষোভে ক্ষমতা গ্রহণে জিয়াকে তদানীন্তন মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডেভিড বোস্টার উৎসাহিত করেন। অপরটি গা ঢাকা চরিত্রের মার্কিন সাংবাদিক মার্কাস ফ্রেন্ডা ১৫ আগস্টের কদিন আগে ঢাকায় যেতে সক্ষম হন। ফ্রেন্ডার ভাষ্যেÑ ‘কিছু আমেরিকান’ তাজউদ্দিনকে প্রস্তাব করলে অত্যাসন্ন বিপদ সম্পর্কে মুজিবকে সতর্ক করেন। তবে যাই ঘটুক না কেন, ভারতের স্বাধীনতা দিবসে এ হত্যাযজ্ঞটি করে ইন্দিরা গান্ধিকে ক্রীড়নকরা একটি ভারতবিরোধী বার্তা দিয়েছে। আর এ দিনটি সম্পর্কে ফ্রেন্ডার দুবেৃাধ্য অভিব্যক্তি হচ্ছেÑ ‘ওয়ান অব দ্য মেনি আইরনিজঃঅব দ্য কেস’।

দেখা গেল, ১৯৭৫ সালের ৩১ আগস্ট চীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিল। একাত্তরে স্বাধীনতাবিরোধী সৌদী আরব কূটনৈতিক সম্পর্কের হাত বাড়াল। ঘটনার দিন পাকিস্তান রেডিও বাংলাদেশ ‘ইসলামী প্রজাতন্ত্র হয়েছে’ প্রচার করলো। যদিও ভারতের চ্যালেঞ্জের মুখে নতুন সরকার তা অস্বীকার করে এবং ইন্দিরা গান্ধি সীমান্তে প্যারামিলিটারি মোতায়েন করেন। মুজিব মন্ত্রিপরিষদ থেকে পশ্চিমাঘেঁষা ইসলামপন্থি খন্দকার মোস্তাক রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত হন। নভেম্বর ক্যু’র পরই কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়। মার্কিন হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের পৃষ্ঠপোষকতায় মওদুদ আহমেদের ‘মুজিব এ্যরা’ গ্রন্থের ‘মনোগ্রাফ’টিও পাল্টে যায়। তার ভাষায়Ñ ‘মুজিবের সমাপ্তি এবং বাংলাদেশে নতুন অধ্যায়ের সূচনা। মুজিবের মৃত্যু বাংলাদেশের রাজনীতির সবটাই পাল্টে দেয়। সাধারণ মানুষের প্রশান্তির কথা ভেবে সেখানেই নতুনের সূচনা’।

বাস্তবে ওই হত্যাযজ্ঞটি বাংলাদেশকে ভারত বলয় থেকে ‘মার্কিন-চীন-সৌদি আরব’ চক্রে নিয়ে যায়, যা ধনিকের জন্য আরও অর্থ এবং মিলিটারির জন্য অস্ত্রের জোগান নিশ্চিত করে। যদিও অর্থনীতির পরিমণ্ডল বিবেচনায় মুজিবের তুলনায় এ ‘নতুন সূচনা’ বৈদেশিক ঋণ, অনুদান ও খবরদারিকে আনুষ্ঠানিক স্থান করে দেয়।
সুত্র

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.