নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।
ক’দিনের ব্যবধানেই বাংলাদেশে বেশ কিছু অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটে গেল যা যে কোনো বিবেকবান আর চিন্তাশীল মানুষকেই ভাবিয়ে তুলবে। প্রথমেই গত ২১ ডিসেম্বর বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দলীয় মুক্তিযোদ্ধাদের এক সভায় পাকিস্তানিদের ভাষায় একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করলেন। বললেন মুক্তিযুদ্ধে কত মানুষ নিহত হয়েছিল তা নিয়ে বিতর্ক আছে। বেগম জিয়া ইতোপূর্বে তিন দফায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন কিন্তু কখনো একাত্তরের শহীদদের নিয়ে এমন মন্তব্য করেননি। তার স্বামী জিয়াউর রহমান একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসনের কর্মসূচি হাতে নিয়েছিলেন কিন্তু কখনো আমাদের মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেননি। কখনও বলেননি আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনি যা এবার বেগম জিয়া বেশ জোর দিয়ে বলেছেন। বেগম জিয়া আরো স্বীকার করেছেন তিনি একাত্তর সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হেফাজতে ছিলেন কিন্তু কী কারণে যে মহিলার স্বামী মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করছেন তাকে একজন নববধূ সমাদরে পাকিস্তান সেনাবাহিনী তাদের হেফাজতে রেখেছিল তা তিনি বলেননি। তিনি এও বলেননি পাকিস্তানের সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল জানজুয়ার মৃত্যুতে তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েও কেন শোকবার্তা পাঠিয়েছিলেন। বলেননি দেশ স্বাধীন হলে কেন তার স্বামী জিয়া তাকে ঘরে তুলতে রাজী হননি। বলেননি তাকে জিয়ার ঘরে তুলে দিতে বঙ্গবন্ধু কী ভূমিকা রেখেছিলেন। তিনি এও বলেননি সেই লাল শাড়ির কথা যা তাকে শেখ হাসিনা আর শেখ রেহানা পরিয়ে জিয়ার ঘরে পাঠিয়েছিলেন। এই সম্পর্কে বেশ কয়েক বছর আগে জাসদ নেতা মঈনুদ্দিন খান বাদল একটি জাতীয় দৈনিকে বিস্তারিত লিখেছিলেন। বেগম জিয়া আরো বলেছেন বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা চাননি, চেয়েছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে। বোঝা যাচ্ছে তিনি ৭ই মার্চের ভাষণ শুনেননি। শুনলেও তা বুঝার মতো ক্ষমতা তার ছিল না। এমন দাবি বেগম জিয়ার অর্বাচীন সন্তান তারেক জিয়া লন্ডনে বসে একবার বলে তুমুলভাবে সমালোচিত হয়েছিলেন। সাধারণ মানুষ তারেক জিয়াকে একজন মাথা নষ্ট মানুষ মনে করে। বেগম জিয়া মনে করেন তার স্বামী জিয়া চট্টগ্রাম বেতার হতে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করার পর (তার মতে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন) বাঙালি মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। তিনি হয়তো জানেন না সে সময় চট্টগ্রাম বেতারের সম্প্রচার ছিল ১০ কিলোওয়াট সম্পন্ন এবং তা চট্টগ্রামের কুমিরায়ও ঠিক মতো শোনা যেত না। অথচ ২৬ মার্চের আগেই চট্টগ্রামের বাইরে মেজর সফিউল্লাহ, মেজর খালেদ মোশাররফ, মেজর জলিল, কর্নেল আবু ওসমান, ক্যাপ্টেন রফিক (চট্টগ্রামে) মুক্তিযুদ্ধ শুরু করে দিয়েছিলেন। তারা কারো রেডিও ঘোষণার জন্য অপেক্ষা করেননি। আর জিয়াতো তার রেজিমেন্ট নিয়ে দক্ষিণ চট্টগ্রামের করেল ডেঙ্গা পাহাড়ের দিকে পালিয়ে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে তাকে আওয়ামী লীগ নেতারা অনেকটা জোর পূর্বক ডেকে এনে কালুরঘাট রেডিও মারফত বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করিয়েছিলেন। সেই ঘোষণা সেদিন যারা শুনেছিলেন তারা নিঃসন্দেহে উজ্জীবিত হয়েছিলেন। জিয়া তার জীবদ্দশায় কখনো নিজেকে স্বাধীনতার ঘোষণার দাবিদার মনে করেননি। বেগম জিয়া মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে এদেশের অস্তিত্বকে বস্তুতপক্ষে অস্বীকার করেছেন। তিনি সাংবিধানিকভাবে একটি মীমাংসিত সত্যকে অস্বীকার করে ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তে লিখিত সংবিধান আর বাংলাদেশকেই অস্বীকার করেছেন যা দেশদ্রোহিতামূলক একটি চরম গর্হিত অপরাধ।
বেগম জিয়ার এই বক্তব্যে যখন সারাদেশে তোলপাড় চলছে ঠিক তখনই তার দলের একজন সিনিয়র নেতা বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায় জাতীয় প্রেসক্লাবে ডিসম্বেরের ২৫ তারিখ ঘোষণা করলেন, ‘একাত্তরে যে সকল বুদ্ধিজীবী শহীদ হয়েছেন তারা নির্বোধ ছিলেন। তা যদি নাই হবে তা হলে তারা কেন বিপদ জেনেও নিজ ঘরে অবস্থান করছিলেন।’ তার বক্তব্য শুনে তার সভায় উপস্থিত বেশ কিছু দলীয় সমর্থক সমস্বরে হুক্কা হুয়া করে উঠলেন। কর্তা বললে তার সাথে তারা দ্বিমত করে কীভাবে? বাবু গয়েশ্বর আরো বললেন ‘এই সব নির্বোধদের সম্মান দেখাতে প্রতি বছর আমরাও নির্বোধের মতো তাদের ফুল দিয়ে সম্মান জানাই না হলে তা পাপ বলে গণ্য হবে’। এ যাবত্ বেগম জিয়া বা গয়েশ্বরের ভাষায় একাত্তরের ঘাতক দল জামায়াতও কখনো প্রকাশ্যে এমন কথা বলেনি। গয়েশ্বর যা বলেছেন তা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি চরম অসম্মান। এমন চলতে থাকলে কিছুদিন পর এদেশের মানুষকে শুনতে হবে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশে কোনো ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি। এমন কী যারা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে বন্দি ছিলেন তারাও কোনো ধর্ষণের শিকার হননি। যে সকল যুদ্ধশিশু দত্তক হিসেবে বিদেশে গিয়েছিল সেগুলো বাংলাদেশ ভারত হতে আমদানি করে অন্য দেশে চালান দিয়েছিল।
এই সবের রেশ না কাটতেই দেশে পর পর ঘটে গেল বেশ কিছু চরম জঙ্গি কর্মকাণ্ড। রাজশাহীর বাগমারায় কাদিয়ানি মসজিদে জুমার নামাজের সময় দেশে প্রথমবারের মতো ফাটল আত্মঘাতী বোমা। সেই ঘটনায় নিহত হলো- বোমারু নিজে। ঢাকার মিরপুর আর চট্টগ্রামের হাটহাজারিতে ধরা পড়লো জেএমবি’র বেশ ক’জন প্রশিক্ষিত সন্ত্রাসী। মিরপুরে রীতিমতো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে জেএমবি’র জঙ্গিরা যুদ্ধ করলো। চট্টগ্রামে জেএমবি’র আস্তানা হতে উদ্ধার হলো স্নাইপার রাইফেল যা সাধারণত কোনো একজন নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে হত্যা করার জন্য ব্যবহার করা হয় যাকে বলা হয় টার্গেট কিলিং। এই সব অস্ত্র বিশেষ বাহিনীর কাছে থাকে। বাংলাদেশে সেনাবাহিনীর কাছেও এমন অস্ত্র নেই। প্রশ্ন হচ্ছে কাকে হত্যা করার জন্য এমন অস্ত্র এই দেশে আনা হয়েছে? এমন অস্ত্র দেশে আর কয়টা আছে? ক’দিন আগে বাংলাদেশে পাকিস্তান দূতাবাসের দ্বিতীয় সেক্রেটারি ফারিনা আরশাদকে বাংলাদেশের অনুরোধে প্রত্যাহার করে নিয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি বাংলাদেশে জঙ্গি অর্থায়নের সাথে জড়িত ছিলেন। এর আগেও পাকিস্তান দূতাবাসের আরো কয়েকজন এই অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে বাংলাদেশ ছেড়েছেন। সার্বিক বিচারে বাংলাদেশে এই মুহূর্তে পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি সক্রিয়। তাদের সাথে আছে এ দেশের তথাকথিত সুশীল সমাজের একটি অংশ, কিছু মিডিয়া এবং পাকিস্তানি ভাবধারায় বিশ্বাসী রাজনৈতিক নেতা-কর্মী। তাদের লক্ষ্য যে কোনো মূল্যে তারা এদেশে অসাংবিধানিক উপায়ে ক্ষমতার পালা বদল চান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন তিনি এই সব জঙ্গিদের তত্পরতায় কোনো ভাবেই বিচলিত নন। বিচলিত নন ঠিক কিন্তু সতর্ক হওয়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। বঙ্গবন্ধু সতর্ক ছিলেন না বলে জাতিকে বড় খেসারত দিতে হয়েছে। তা ভুললে চলবে না। বাংলাদেশে পাকিস্তান একাত্তরে গণহত্যা সংঘটিত করেছে তা ৪৪ বছর পর অস্বীকার করা, মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সাকা চৌ. আর মুজাহিদের ফাঁসি হলে পাকিস্তানের জাতীয় সংসদে তার সমালোচনা করা, পাকিস্তানের একজন কূটনীতিবিদকে এদেশ হতে জঙ্গিদের অর্থায়নের অভিযোগে প্রত্যাহার করে নেয়া, বেগম জিয়ার মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করা, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের শহীদ বুদ্ধিজীবীদের সম্পর্কে চরম অপমানজনক উক্তি করা আর সবশেষে দেশে স্নাইপার রাইফেল উদ্ধার হওয়ার মধ্যে কোথাও একটা যোগসূত্র আছে। আবার নিয়মিত বিরতি দিয়ে দেশের কোনো কোনো জেলায় ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মন্দিরে হামলা হচ্ছে। এই সব ঘটনাকে খাটো করে দেখলে বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। ঘটনা পরম্পরায় দেশের মানুষ শঙ্কিত। সময় থাকতে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেয়ার এখনই সময়। বেগম জিয়া হোক আর গয়েশ্বর চন্দ্র রায় হোক কেউ আইনের ঊর্ধ্বে হতে পারে না এই সত্যটি সকল রাজনীতিবিদ আর সরকারকে মনে রাখতে হবে। সুত্র
২| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:১৭
এক অবিবাহিত যুবকের গল্প বলেছেন: আপনি বোধহয় ভুলে গেছেন, পাকিস্তানিদের হেফাজতে আরোও অনেকে ছিলেন। কারোও বক্তব্য খন্ডন আর কলংক রটানো এক কথা নয়।
৩| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:৫০
আমি ব্লগার হইছি! বলেছেন: পাগল ছাগলের ইজ্জত নিয়ে টানাটানি করেন কেন সেপাই মশাই? এখনতো ওদের কথা বেচে খাওয়া ছাড়া কিছু করার নেই। মুক্তি যুদ্ধ নিয়ে দুইচারটা বিভ্রান্তিকর কথা বলে পাকিস্তান থেকে কিছু মাল পানি না আনতে পারলে কি আপনি লন্ডনের বাড়িভাড়াটা দিয়ে দিবেন?
©somewhere in net ltd.
১| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:২৪
মুশে হক বলেছেন: ধন্যবাদ এমন সুন্দর একটা লেখার জন্য। আশাকরি বাংলার জনগণ ও সরকার যথোপযুক্ত সতর্কতা অবলম্বন করে নিজদেরকে বিপদমুক্ত রাখবে।