নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।
১৯৭১ মার্চ ২৫ গ্রেফতারের পূর্ব মুহূর্তে
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দেশ সম্পূর্ণভাবে হানাদারমুক্ত হইয়াছিল। অবসান ঘটিয়াছিল বাঙালির হাজার বত্সরের রুদ্ধশ্বাস প্রতীক্ষার। কিন্তু বিশাল একটি অপূর্ণতা থাকিয়া গিয়াছিল। ইহা কি ভাবা যায় যে, অভূতপূর্ব এ ইতিহাসের যিনি স্রষ্টা, যাঁহার নামে হাসিমুখে প্রাণ উত্সর্গ করিয়াছে লক্ষ লক্ষ মানুষ, মাথা পাতিয়া লইয়াছে অকল্পনীয় দুঃখ ও ক্লেশ— তাঁহাকে ছাড়া এই বিজয় কখনো পূর্ণতা পাইবে কিংবা পাওয়া সম্ভব? অনিবার্যভাবেই সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিটি হূত্স্পন্দনে তখন ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হইতেছিল সেই শূন্যতার সর্বব্যাপী হাহাকার। অবশেষে তিনি আসিলেন। দিনটি ছিল ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি। সেইটি ছিল ঐতিহাসিক এক মুহূর্ত। পাকিস্তানের কারাগার হইতে মুক্ত হইয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান লন্ডন-দিল্লি হইয়া তাঁহার আজন্মলালিত স্বপ্নের স্বাধীন বাংলাদেশের মাটি স্পর্শ করিলেন পরম মমতায়। স্বজনহারানো সর্বস্বান্ত মানুষ হূদয় উজাড় করিয়া বরণ করিয়া লইয়াছিলেন তাহাদের প্রাণপ্রিয় নেতাকে। নেতা ও জনতার আনন্দাশ্রু মিলিয়া-মিশিয়া একাকার হইয়া গিয়াছিল। পূর্ণতা পাইয়াছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা।
কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতির স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পথ ছিল ভয়ঙ্করভাবে কণ্টকাকীর্ণ। দীর্ঘ ৯টি মাস বঙ্গবন্ধুকে শুধু যে দুই হাজার মাইল দূরবর্তী পাকিস্তানের নির্জন একটি কারাগারের ‘ডেথ সেলে’ বন্দি করিয়া রাখা হইয়াছিল তাহাই নহে, সর্বাত্মক প্রস্তুতিও চলিতেছিল তাঁহাকে ফাঁসিতে ঝোলানোর। বিচারের নামে গোপন প্রহসন চলিতেছিল সামরিক জান্তার গঠিত বিশেষ ট্রাইব্যুনালে। অভিযোগ আনা হইয়াছিল পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্ররোচনা দেওয়ার। আর ইহার রায় কী হইবে— তাহাও বিশ্ববাসীর জানা হইয়া গিয়াছিল আগেই। বিশ্বব্যাংকের তত্কালীন প্রতিনিধি কারগিল বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রত্যাহারের অনুরোধ জানাইলে খোদ জান্তাধিপতি জে. ইয়াহিয়া খানই সদম্ভে বলিয়াছিলেন: ‘এই লোকটি রাষ্ট্রদ্রোহিতার মহাঅপরাধ করিয়াছে, তাহার ফাঁসি হওয়া উচিত।’
পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি শফি একাত্তরের আগস্ট মাসেই জার্মান পত্রিকা ‘ডার স্পিগেল’কে ইহা নিশ্চিত করিয়াছিলেন যে, ‘অবশ্যই তাঁহাকে (বঙ্গবন্ধুকে) মৃত্যুদণ্ডে দন্ডিত করা হইবে।’ ইহা জানিতেন পাকিস্তানের রাজনীতিক এবং বুদ্ধিজীবী মহলও। তাহাদের একটি অংশ ইয়াহিয়া খানের নিকট বঙ্গবন্ধুর মুক্তির আবেদনও জানাইয়াছিলেন। আবেদনকারীদের মধ্যে ছিলেন ইশতিকলাল পার্টির প্রধান সাবেক এয়ার মার্শাল আসগর খান ও লেনিন পুরস্কারবিজয়ী প্রখ্যাত কবি ফয়েজ আহমেদ ফয়েজসহ পাকিস্তানের ৪২ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি। বঙ্গবন্ধুর নিঃশর্ত মুক্তির পক্ষে বিশ্বজনমতের চাপও তীব্র হইতে তীব্রতর হইতেছিল। বিশ্বের বহু খ্যাতনামা রাষ্ট্রনায়ক ও মনীষী বঙ্গবন্ধুর নিঃশর্ত মুক্তির পক্ষে জোরালো অবস্থান নিয়াছিলেন। তবে একথা নিঃসংশয়ে বলা যাইতে পারে যে, বঙ্গবন্ধুর প্রাণরক্ষায় যাঁহার ভূমিকা সবকিছুকে ছাপাইয়া উঠিয়াছিল— তিনি হইলেন ভারতের তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী।
বঙ্গবন্ধু যখন দেশে ফিরিয়া আসেন তখন সাড়ে ৭ কোটি জনসংখ্যাঅধ্যুষিত সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত এই দেশটি যুদ্ধবিধ্বস্ত। সড়ক-বন্দর ও সেতুসহ সমগ্র অবকাঠামোই বিপর্যস্ত। বেশিরভাগ মানুষেরই জীবন-জীবিকা তছনছ হইয়া গিয়াছে। একদিকে যুদ্ধবিধ্বস্ত এই দেশটিকে ধ্বংসস্তূপ হইতে টানিয়া তোলার চ্যালেঞ্জ, অন্যদিকে টানিয়া তুলিবার জন্য যে-সম্পদ ও প্রশাসনিক অবকাঠামো দরকার তাহার কিছুই নাই। বলা যায়, প্রায় শূন্য হাতেই যাত্রা শুরু করিতে হইয়াছিল স্বাধীনতাপরবর্তী সরকারকে। এদিকে, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও ছিল পাকিস্তানের মিত্র দেশগুলির চরম বৈরিতা। বিশ্বের অনেক বিশেষজ্ঞ জন্মলগ্নেই বলিয়া দিয়াছিলেন যে, বাংলাদেশের কোনো ভবিষ্যত্ নাই। তাহার পরও সব বাধার অচলায়তন অতিক্রম করিয়া অতি অল্প সময়ে বাংলাদেশ যে ঘুরিয়া দাঁড়াইল তাহার নেপথ্যে যেই ম্যাজিক বা জাদুটি কাজ করিয়াছে তাহার নাম নিঃসন্দেহে বঙ্গবন্ধু। এই নামটিই সেইদিন জাদুমন্ত্রের মতো কাজ করিয়াছে। ইহা কোনো আবেগের কথা নহে। অকাট্য প্রমাণ রহিয়াছে ইহার অনুকূলে।
রক্তক্ষয়ী একটি যুদ্ধজয়ের পরপরই মিত্রবাহিনীর নিজ দেশে প্রত্যাবর্তনের নজির বিশ্বে বিরলই বলা চলে। তাহার পরও মাত্র তিনমাসের মধ্যে ভারতীয় সেনাবাহিনী যে বাংলাদেশ ছাড়িয়া গেল— সেই অসম্ভবও সম্ভব হইয়াছিল বঙ্গবন্ধুর সাহসী ও দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে। বলা অপ্রাসঙ্গিক হইবে না যে বঙ্গবন্ধু আমৃত্যু যে ‘সোনার বাংলা’র স্বপ্ন দেখাইয়া গিয়াছেন জাতিকে— তাহা সফলতা পাইতে শুরু করিয়াছে তাঁহার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে। যাহারা একদা বাংলাদেশকে তাচ্ছিল্য দেখাইয়াছিল, তাহারাই আজ অকপটে স্বীকার করিতেছেন যে, বাংলাদেশের সাফল্য উন্নয়নশীল দুনিয়ার দেশগুলির জন্য অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত হিসাবে বিবেচিত হইতে পারে। বলা বাহুল্য, পাকিস্তানের মৃত্যুকূপ থেকে বঙ্গবন্ধু সেইদিন দেশে ফিরিয়াছিলেন বলিয়াই সাফল্যের এই ভিত রচনা করা সম্ভব হইয়াছে।
সূত্র
২| ১০ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৯:৪৭
ডাঃ প্রকাশ চন্দ্র রায় বলেছেন: বঙ্গবন্ধুর প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন পূর্বক,আপনার সঙ্গে একমত পোষন করছি। এই লেখাটা নতুন প্রজন্মর জ্ঞাতার্থে বারংবার প্রচার করা উচিৎ । ধন্যবাদ।
১০ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৯:৫৫
তালপাতারসেপাই বলেছেন: একের লাঠি দশের বোঝা....
সবাই মিলে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দিলে অনেকে পড়ার সুযোগ পেত। সাহায্য করবেন কি?
৩| ১০ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১০:১৩
আহা রুবন বলেছেন: 'বলা অপ্রাসঙ্গিক হইবে না যে বঙ্গবন্ধু আমৃত্যু যে ‘সোনার বাংলা’র স্বপ্ন দেখাইয়া গিয়াছেন জাতিকে— তাহা সফলতা পাইতে শুরু করিয়াছে তাঁহার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে।'
'...স্বপ্নদেরও আলাদা অস্তিত্ব আছে। তারা মানুষের ওপর ভর করে, আর তাকে পরিচালিত করে। মানুষের মৃত্যু হয়, স্বপ্নরা অন্য মানুষ খুঁজে নেয়, যুগযুগ ধরে; কিন্তু স্বপ্নদের মৃত্যু হয় না।’
৪| ১০ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:৩৭
রানার ব্লগ বলেছেন: সন্মানের সহিত তাকে স্বরন করছি।
©somewhere in net ltd.
১| ১০ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৯:৩১
সরদার হারুন বলেছেন: সহমত ।