নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।
প্রিয় সন্তান যেন থাকে দুধেভাতে_এমন ভাবনায় হৃদয়কোণে কত যে স্বপ্ন বোনেন মা-বাবা! সন্তানের সুন্দর ভবিষ্যৎ কামনায় শত আয়োজনের ডালি সাজিয়ে তোলেন তারা। সেই সন্তান বিপথে পা বাড়ালে কষ্টের সীমা থাকে না মা-বাবার। এসব ব্যাপার বিবেচনা না করে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামা'আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশে (জেএমবি) যোগ দিয়ে বিপথগামী বহু সন্তান মা-বাবাসহ নিজের পুরো পরিবারকে ফেলেছে ভীষণ বিপর্যয়ে। বহু চেষ্টা করেও তাদের সঠিক পথে ফেরাতে না পেরে বুকে পাথর চেপে বহু মা-বাবা সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন সন্তানের সঙ্গে। উগ্রবাদে জড়িয়ে পড়া বহু তরুণের পরিবারে তাদের জন্য আর অবশিষ্ট নেই স্নেহ-ভালোবাসার কোনো অনুভূতি। এমনকি তাদের দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যুও শোকের মাতম তোলেনি পরিবারে।
সম্প্রতি দেশের তিনটি এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে 'বন্দুকযুদ্ধে' নিহত পাঁচ জেএমবি নেতার কপালেও জুটেছে এমন করুণ পরিণতি। গণমাধ্যমে পরিচয় প্রকাশের পরও পাঁচটি লাশ অবহেলায় পড়ে ছিল মর্গে। তাদের লাশ নিতে আসেনি কেউ। শেষ পর্যন্ত আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের মাধ্যমে এর মধ্যে দুটি লাশ দাফন করা হয়। পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় আরও একটি লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে হস্তান্তর করা হয় আঞ্জুমানের কাছে। পরিচয় শনাক্ত হওয়া আরও দুই জেএমবি নেতার লাশ এখনও পড়ে আছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ডিসি (দক্ষিণ) মাশরুকুর রহমান খালেদ এ প্রসঙ্গে সমকালকে বলেন, যারা জেএমবিতে যুক্ত হচ্ছে তাদের অনেকের মা-বাবা ঘৃণায় সন্তানের লাশ গ্রহণ করতে আসেন না। কারও কারও ক্ষেত্রে পরিবারের সঙ্গে সম্পর্কও বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তাই আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের মাধ্যমে এদের লাশ দাফন করতে হয়।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এডিসি ও বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দলের প্রধান ছানোয়ার হোসেন সমকালকে বলেন, জেএমবির এমন অনেক সদস্যকে পাওয়া গেছে; পরিবার থেকে যাদের ত্যাজ্য করা হয়েছে। এ ছাড়া সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হওয়ার ভয়েও জেমবিতে যুক্ত হওয়া স্বজনের লাশ গ্রহণ করতে আসেন না পরিবারের কেউ।
গত ২৮ ডিসেম্বর গাজীপুরের জয়দেবপুর থানার যোগীতলার ভোগরা বাইপাস এলাকার দক্ষিণপাড়া জামে মসজিদ সংলগ্ন পরিত্যক্ত ভবনে অভিযান চালায় র্যাব। এ সময় 'বন্দুকযুদ্ধে' নিহত হয় দু'জন। তাৎক্ষণিক জানা না গেলেও পরবর্তীকালে তাদের পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। এরা হলো হেলাল ও মামুন। দু'জনের বাড়িই চট্টগ্রামে। তবে পরিচয় গণমাধ্যমে প্রকাশের পরও মর্গ থেকে এই দু'জনের লাশ গ্রহণ করেননি কেউ। নিহত হওয়ার দু'দিন পর আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে তাদের লাশ গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে দাফন করা হয়। এ ছাড়া গত ২৫ ডিসেম্বর রাজশাহীর বাগমারার মচমইল সৈয়দপুর চকপাড়া আহমদীয়া সম্প্রদায়ের একটি মসজিদে বোমা হামলা করতে গিয়ে নিহত হয় হামলাকারী নিজেই। পুলিশের দাবি, নিহত তরুণ জেএমবির সদস্য। তবে তার পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় ঘটনার দু'দিন পর তার লাশও আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের মাধ্যমে রাজশাহীর হেতেম খাঁ গোরস্তানে দাফন করা হয়।
সর্বশেষ গত বুধবার রাতে হাজারীবাগে 'বন্দুকযুদ্ধে' জেএমবির কেন্দ্রীয় সামরিক কমান্ডার কামাল ওরফে হীরন ও ঢাকা উত্তরের সামরিক কমান্ডার আবদুুল্লাহ আল নোমান নিহত হয়। এদের মধ্যে হীরনের গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধায়, নোমানের ঠাকুরগাঁও। দু'জন একই মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, হীরনের সঙ্গে প্রায় তিন বছর ধরে তার পরিবারের যোগাযোগ নেই। নোমান বিবাহিত হলেও পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখত না। দু'দিন ধরে তাদের লাশ পড়ে আছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে। কিন্তু পরিবারের কোনো সদস্য এখনও তাদের খোঁজ নিতে আসেননি।
ডিবির এক কর্মকর্তা জানান, জেএমবিতে যারা সম্পৃক্ত হয় তাদের অনেকের সঙ্গেই পরিবারের সম্পর্ক থাকে না। কেউ আবার গোপনে জেএমবির সঙ্গে জড়ায়। এমন উদাহরণও আছে, প্রথমে স্বামী জেএমবির সদস্য হয়েছে; এক সময় তার স্ত্রীও স্বামীর পথ ধরে উগ্র মতাদর্শে বিশ্বাসী হয়ে উঠেছে। তবে সন্তানের এমন দুর্গতি সম্পর্কে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অবগত থাকেন না মা-বাবা। 'বন্দুকযুদ্ধে' নিহত হওয়ার পর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর 'ভয়'-এর কারণেও অনেকে সন্তানের লাশ নিতে আসেন না।
পুলিশের অপর এক কর্মকর্তা জানান, 'বন্দুকযুদ্ধে' নিহত অনেক শীর্ষ সন্ত্রাসীর লাশও পরিবারের সদস্যরা গ্রহণ করেছেন। কিন্তু নিহত জেএমবি সদস্যদের ক্ষেত্রে এমন দেখা যায় না।
- See more at: Click This Link
©somewhere in net ltd.