নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যাহা বলিব সত্য বলিব

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।

তালপাতারসেপাই

লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।

তালপাতারসেপাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

পদ্মা সেতু নিয়ে ‘থ্রেট’ এবং দেশপ্রেম

২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:২৪


দেশের বৃহত্তম স্থাপনা দেশবাসীর স্বপ্নের পদ্মা সেতুর কাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। বিগত বছর শেষে সরকারের সাফল্য নিয়ে আলোচনার সময় এটা সব মহলই স্বীকার করেছে যে, স্থাপনাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সফলতার সঙ্গে সময়মতো এর কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। বিগত ১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মাপাড়ে এক অনুষ্ঠানের ভেতর দিয়ে সেতুর মূল কাজ উদ্বোধন করার পর বাস্তবায়নের কাজ আরো দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। স্বপ্ন বাস্তবেই সত্যে পরিণত হতে যাচ্ছে। নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মাণকাজের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণে এটা এখন বলতে পারা যাচ্ছে যে, ২০১৮ সালের মধ্যে কাজ সমাপ্ত হয়ে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম ৬.১৫ কিমি সেতুটি চালু হয়ে যাবে। সময়মতো যদি পদ্মা সেতু চালু করা যায়, তবে তা হবে স্থাপনা নির্মাণের ইতিহাসে বাংলাদেশের অবিস্মরণীয় এক সাফল্য এবং আমাদের মতো দেশগুলোর জন্য অনন্য দৃষ্টান্ত।
পদ্মা সেতু নির্মাণকাজের অগ্রগতি ও কর্মযজ্ঞ দেখে ফেরির ঝক্কি সামলিয়ে অনেকটাই বিধ্বস্ত অবস্থায় ঢাকা এসে কয়েক দিন আগে ফরিদপুরের প্রত্যন্ত অঞ্চলের দুই সহযোদ্ধা আমাকে বলছিলেন, কাজের অগ্রগতি দেখে মনে হয়েছে ৯ মাসে মুক্তিযুদ্ধে আমরা বিজয়ী হয়েছিলাম। ‘আমরাও পারি, আমরাও পারব’ কথাটা পদ্মা সেতু যেন আবারো প্রমাণ করতে চলেছে। তারা আরো বলেছিলেন যে, সেতুটি যথাসময়ে যাতে চালু হতে পারে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশেষ নজর রাখছেন। বিদেশ সফর থেকে ফিরে এলে প্রধানমন্ত্রী প্রথমেই পদ্মা সেতুর অগ্রগতি সম্পর্কে সর্বশেষ তথ্য জানতে চাচ্ছেন এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশ প্রদান করছেন; এই কথাগুলো যখন পত্রিকায় পড়ি তখন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় যে আমরা সফল হতে যাচ্ছি তা নিয়ে সন্দেহ থাকে না। মনে এই ভরসা জাগছে যে, জীবদ্দশায় পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ঢাকা আসব-যাব। এতটা কষ্ট আর করতে হবে না। রেলগাড়িতে চড়ে ঢাকা আসব, এটা ভাবতেই ভালো লাগছে।
এই কথা শুনে তাদের ভরসা আরো চাঙ্গা করে দিতে আমি বললাম, সম্প্রতি মাওয়া ফেরিঘাট সরানো নিয়ে বিলম্বের কারণ ঘটেছিল। সব শেষে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত ঘাট সরানোর সময় বেঁধে দেয়া হয়েছিল অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষকে। কিন্তু তারা সময় চেয়েছিল ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এটা জেনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে তাৎক্ষণিক ঘাট সরানোর নির্দেশ দেয়া হয় এবং ২৭ নভেম্বর ঘাট সরানো হয়। এটা শুনে ওই দুই সহকর্মীর চোখমুখে যে দেশপ্রেমের দীপ্তি ছড়িয়ে পড়েছিল, তা মনে পড়লে পদ্মা সেতুর বহুল প্রচারিত ছবিটাই কেবল চোখের সামনে ভেসে ওঠে। বিগত ১৭ জানুয়ারি বিকেলে ওই দুই সহযোদ্ধার একজন বাড়ি থেকে টেলিফোন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তৃতা পত্রিকায় পড়ে।
কথাবার্তা শুনে যা বুঝা গেল, প্রধানমন্ত্রীর ‘থ্রেট করা হয়েছে’ কথাটা তারা খুবই গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়েছে। দেশাত্মবোধের স্পর্শকাতর যে একটি স্থান রয়েছে, তাতে আঘাত তারা সহ্য করতে পারছে না। চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তারা যেন নিজস্ব অবস্থানে আরো দৃঢ় হচ্ছে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর এই দৃঢ়তা কোন পর্যায়ে পৌঁছতে পারে, তা নিয়ে কেবলই ভাবছিলাম। পদ্মা সেতু নিয়ে যখন ভাবি, তখন আরো চারটি প্রকল্প ভাবনায় চলে আসে। চোখের সামনে ভাসে, মহাশূন্যে স্যাটেলাইট স্থাপন হয়ে গেছে এবং আমরা তা ব্যবহার করছি। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ পেয়ে গ্রামবাংলা আলোকিত হয়ে উঠছে। রাজধানীর আর সেই সঙ্গে গ্রাম থেকে রাজধানীতে এসে মানুষ মেট্রো রেল চড়ছে। জ্যামে পড়ছে না। কর্ণফুলী নদীতে ট্যানেলের স্বপ্ন সত্যি হয়ে উঠছে এবং মানুষ কেবল ওটা দেখতেই বন্দর নগরী চট্টগ্রাম যাচ্ছে। জাতীয় কবির স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে আমরা; আকাশ থেকে পাতাল আমাদের হাতের মুঠোয় চলে আসছে।
বস্তুতপক্ষে এ সব নিয়ে যখন ভাবি, তখন ‘থ্রেট করা হয়েছে’ কথাটাকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় না নিয়ে পারা যায় না। গত শনিবার শিল্পকলা একাডেমির নাট্যশালায় বেগম জেবুন্নেছা ও ২৭তম কাজী মাহবুবউল্লাহ পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন নিয়ে নানাভাবে নানা চাপ, দুটো বছর আমাদের ওপর যেন আজাব সৃষ্টি হয়েছিল। বলা হয়েছে, পদ্মা সেতু বন্ধ করে দেবে, কোনো একটি বিশেষ ব্যক্তিত্বের একটি ব্যাংকের এমডি পদে থাকা না থাকার ওপর। আমাকে সরাসরি থ্রেটও করা হয়েছে। আমেরিকার অনেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এসে সরাসরি বলেছেন, এটা না করলে পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ হবে। এই কথাও আমাকে সরাসরি শুনতে হয়েছে। কিন্তু আমি মুখের ওপর বলে দিয়েছিলাম, পদ্মা সেতু আমরা নিজেরা করতে পারব। আমরা তা পেরেছি। পদ্মা সেতু আমাদের চ্যালেঞ্জ ছিল। আমরা যদি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ করে একটা দেশ স্বাধীন করতে পারি তবে একটা সেতু নির্মাণ করতে পারব না, এটা হতে পারে না। আজকে আমাদের রিজার্ভ ২৭ বিলিয়ন ডলার। কাজেই আমরা নিজেরাই যে কোনো বড় প্রজেক্ট করতে পারি। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘সততাই শক্তি’।
দেশবাসী সবারই জানা রাখঢাক না করে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। কখনোবা এতে প্রচার মাধ্যমে ঝড় তোলা হয়। বলতে দ্বিধা নেই, আমাদের মতো দলের নেতাকর্মীদের কখনো মনটা খারাপ হয়। কিন্তু লক্ষণীয় হচ্ছে, খোলাখুলি কথায় যখন দেশাত্মবোধ জাগে, চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আত্মপ্রত্যয় সৃষ্টি হয়; তখন কেন যেন অন্তত আমার মনে হয় সেটা নিয়ে তেমনভাবে মাঠে আমরা নামি না, প্রচার মাধ্যমও কেন যেন তেমন ঝড় তোলে না। দেশের নির্বাচিত সরকারকে হুমকি দেয়ার পরিবেশ ব্যক্তিবিশেষ সৃষ্টি করলেও নিশ্চুপ থাকতেই কেউ কেউ ভালোবাসেন। কেন এই উত্তর অজানা। প্রসঙ্গত, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে রক্তে কেনা স্বাধীন একটি দেশকে হুমকি দেয়ার ঘটনার ভেতর দিয়েই অনুধাবন করা যায়, আমরা কোন ধরনের বিশ্বে বসবাস করছি। ওই হুমকির সঙ্গে স্মরণে আসে একাত্তর এবং চুয়াত্তরও।
সাম্প্রতিক সময়ে পদ্মা সেতুতে টাকা বন্ধ করতে হুমকি দেয়া হয়েছে। কিন্তু ওই হুমকি কাজে লাগছে না। পদ্মা সেতু হয়ে যাচ্ছে। আর একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত করতে সেভেন ফ্লিট পাঠিয়ে হুমকি দেয়া হয়েছিল। ওই হুমকিও কাজে লাগেনি। জাতি স্বাধীন হয়েছে। কিন্তু চুয়াত্তরে! যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে দেশ যখন সমূহ বিপদে তখন ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলাটাও ছিল সাহায্য না দেয়ার জন্য হুমকিরই নামান্তর। সেই হুমকির পরিণতিতে ঘটেছিল বাঙালি জাতির ইতিহাসের সবচেয়ে বিয়োগান্তক ঘটনা। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড। একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে, উল্লিখিত প্রথম ও শেষ হুমকিটি দিয়ে এটাই প্রতিপন্ন করতে চাওয়া হয়েছিল যে, বাংলাদেশের নির্বাচিত সরকার হচ্ছে ‘চোর’। সাধে কি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দুটো বছর আমাদের ওপর যেন আজাব সৃষ্টি হয়েছিল! তবে জাতির কাছে এখনো প্রশ্ন হলো, আজাব সৃষ্টির চেষ্টা এখন বন্ধ হয়েছে কিনা? এই প্রশ্ন কিন্তু বলে দিয়ে যায়, কতটা সজাগ সচেতন ঐক্যবদ্ধ ও দৃঢ় থাকতে হবে জাতিকে।
প্রসঙ্গত, একটু গভীরে গিয়ে উল্লিখিত হুমকিগুলো বিবেচনায় নিলেই দেখা যাবে, তিন সময়ে তিন অবস্থায় তিন বিষয়ে তিন হুমকি দিলেও লক্ষ্য কিন্তু ছিল একই। আর তা হলো নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ক্ষমতায় বসতে দিও না কিংবা ক্ষমতা থেকে সরাও। একাত্তরের হুমকির লক্ষ্য ছিল নির্বাচনে বিজয়ী দল আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসতে না দেয়া। চুয়াত্তরে নির্বাচনে বিজয়ী আওয়ামী লীগ দলকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করা। আর সাম্প্রতিক সময়ের হুমকির লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগ যাতে নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়িত করতে না পারে। বস্তুতপক্ষে প্রতিটি হুমকিই আসছে আওয়ামী লীগ যাতে নির্বাচনে জিতে বা নির্বাচন করে ক্ষমতায় না বসতে পারে সেই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের অপচেষ্টা সামনে রেখে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন নির্বাচনের ফলাফল ও আওয়ামী লীগ আজাব সৃষ্টিকারীদের টার্গেট কেন? কারণটা কি?
এই কেন ও কি-এর জবাব খুঁজতে ‘কেমন বাংলাদেশ চাই’ বিষয়টির দ্বারস্থ হতে হবে আমাদের। লড়াই-সংগ্রামে রক্ত এবং নির্বাচনের রায় দিয়ে বারবার দেশবাসী প্রমাণ রেখেছে, উন্নত সমৃদ্ধ অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো দেশবাসীর কাম্য। যা মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর জাতীয় চার মূলনীতি গ্রহণের ভেতর দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ যে আজাব সৃষ্টিকারীরা চায় না, তা অনুধাবন করা যায় মিথ্যা অজুহাতে পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করার ভেতর দিয়ে। অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ যে চায় না, এর প্রমাণ হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তথা চার জাতীয় মূলনীতির পক্ষের শক্তি নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এলেই তারা হুমকি-ধমকি দিতে থাকে। সুযোগ পেলেই তারা বাংলাদেশকে ‘মধ্যপন্থার মুসলিম দেশ’ হিসেবে প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়। আর দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো! পঁচাত্তর-পূর্ব সময়ে খাদ্য জাহাজ ফেরানোর ভেতর দিয়েই এর প্রমাণ মেলে।
এতটুকু বলে আবারো পদ্মা সেতু প্রসঙ্গে ফিরে যেতে হয়। কথায় বলে, ঠেলার নাম বাবাজি। হুমকির জবাবই হচ্ছে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ। শেখ হাসিনা সরকার এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে। প্রসঙ্গত, হুমকির জবাব দিতে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করার ঘোষণা যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেন, তখন আজাব সৃষ্টিকারী মহলের একাংশের বাঘা বাঘা অর্থনীতিবিদরা বলেছেন যে, ‘বাগাড়ম্বর’ করা হচ্ছে। এটা ‘নিতান্তই একটা নাটক’। ‘আবেগ সর্বস্ব ও বাস্তবতাবর্জিত’ এবং এসবই আওয়ামী লীগের ‘পুরনো কৌশল’। নাটক ও কৌশলের সারবত্তা হচ্ছে, আওয়ামী লীগ ‘যখনই কোনো অপকর্ম ও অপরাধের জন্য ফেঁসে যায় এবং বেকায়দায় পড়ে’ তখন একাত্তর, মুক্তিযুদ্ধ প্রভৃতি নিয়ে ‘নাটক করতে’ নামে। নুন আনতে যখন পান্তা ফুরায়, গরিবের বৌয়ের মতো যখন গায়ে ছেঁড়া শাড়ি, তখন এই নাটক পরিহাসের মতো শোনায়। যখন ‘চাহিদার অর্ধেকও ঋণ’ দিতে পারা যাচ্ছে না, তখন ১৫-১৮ কোটি টাকার সমমানের বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করার কথা ‘তর্জন গর্জন’-এর নামান্তর।
দুর্নীতি মেনে নাকে খত দিয়ে টাকা নিতে তারা পরামর্শ দিয়েছিলেন। একটু খেয়াল করলেই ওই সব বাঘা বাঘা অর্থনীতিবিদের নাম মনে পড়বে। অবাক হয়ে লক্ষ করা যাবে, ওই সব বাঘা বাঘারাই এখন আবার অর্থনীতি বিষয়ে বড় বড় কথা বলে চলেছেন এবং অতি গণতন্ত্রী হয়ে নানা ছবক দিয়ে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর ‘থ্রেট’ শব্দটা প্রশ্নে তারা নীরব। প্রশ্ন হলো, দেশাত্মবোধের স্পর্শকাতর স্থানে ওই সব নিরপেক্ষবাদীদের কি প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের ওই দুই সহকর্মীর মতো একটুও আঘাত লাগে না! আবেগ তাদের এত ভোঁতা কেন? নিরপেক্ষ সুশীল হয়ে কি আবেগ কমলে চলে! নোবেল বিজয়ী হয়ে কি পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করার পরিবেশ সৃষ্টি করার পাঁয়তারা করা উচিত! কিন্তু! বিচিত্র এই দেশ! এই দেশে সুশীল সমাজের একাংশ জাতির বিবেক না হয়ে হন জাতির উন্নয়ন-অগ্রগতির প্রতিবন্ধক।
সবচেয়ে আগ্রহোদ্দীপক বিষয় হলো, সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও প্রধান অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু ঢাকা এসে যখন বিশ্বব্যাংকের ভুল স্বীকার করে যান, তখনো বাঘা বাঘা ওই সব অর্থনীতিবিদের অবস্থান ও কথাবার্তায় নড়চড় পরিদৃষ্ট হয় না। প্রসঙ্গত কৌশিক বসু বলেছেন, ‘নিজের ওপর ভরসা করে পদ্মা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নিয়ে সক্ষমতা দেখিয়েছে বাংলাদেশ। ১০ বছর আগে হলে এটা ভাবা যেত না। তখন ভাবা হতো, এত বিদেশি মুদ্রা কোথায় পাব? এখন একটি স্বাস্থ্যবান বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ আছে।’ পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করা নিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘অতীতে যাই হোক না কেন, এর ফলাফল খুব ভালো। এর একটি খারাপ ইতিহাস রয়েছে, তবে চূড়ান্তভাবে ফলাফলটা ভালো। বাংলাদেশ এখন অনেক ম্যাচিউর।’ দেশের জনগণ চায়, এই কথাগুলো স্মরণে রেখে আজাব সৃষ্টির অপচেষ্টা দেশি হোক আর বিদেশিই হোক, কেউ যেন না করেন।
পদ্মা সেতু যখন ক্রমে দৃশ্যমান হচ্ছে, মানুষ যখন এই সেতুর সুফল পাওয়ার স্বপ্ন দেখছে; তখন একটা সিনেমার একটি সংলাপ ‘ফিরিয়ে দাও আমার বারোটি বছর’ সংলাপটি মনে পড়ছে। স্বাধীনতার পরই বঙ্গবন্ধু পদ্মা সেতু নিয়ে জনগণের স্বপ্নকে বাস্তবায়নের তৎপরতা শুরু করেছিলেন। কিন্তু উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ যারা চায় না, তারা অস্ত্রের জোরে হত্যা-ক্যুয়ের রাজনীতি করে ক্ষমতায় এসে সেই তৎপরতাকে নস্যাৎ করে দেয়। ফলে ২১ বছর পদ্মা সেতু ফাইলবন্দি থাকে। ২০০১ সালের অক্টোবরের সা-ল-সা সরকারের ভোট ডাকাতির নির্বাচন আবারো পদ্মা সেতু নির্মাণে শেখ হাসিনার ১৯৯৬-০১ সরকারের তৎপরতায় ছেদ এনে দেয়।
অতীতের ওই সব যদি বাদও দেয়া যায়, তবেও প্রশ্ন থাকবে, সাম্প্রতিক সময়ের বিগত দুই বছর নানা অভিযোগ তুলে পদ্মা সেতু নির্মাণে বিলম্ব করে জাতির যে ক্ষতি করা হলো, এর দায় নেবে কে? কৌশিক বসুর মিষ্টি ও প্রশংসাসূচক কথায় কি ক্ষতিপূরণ হবে? ক্ষতিপূরণের দাবি বিষয়টা ইতোমধ্যে ক্ষীণভাবে হলেও উঠেছে। যদি ক্ষীণ থেকে তা ব্যাপক ও তীব্র হয়, তবে ভালোই হয়। তবে মাঘের এই কুয়াশাচ্ছন্ন সকালে আমি দেখছি, পদ্মা সেতু চালু হয়ে গেছে। দেশবাসী দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে একাত্তরের মতো নাচছে। উল্টো দিকে দেশি আজাব সৃষ্টিকারীরা নত মস্তকে গাড়ি নিয়ে পদ্মা পাড়ি দিচ্ছে আর বিদেশি আজাব সৃষ্টিকারীরা পদ্মা সেতু ও মানুষের আনন্দের ছবি দেখে আবারো বিফল মনোরথ ও হতাশ হচ্ছে। সূত্র

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.