নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।
কানাডিয়ান যোগাযোগবিদ মার্শাল ম্যাকলুহান বহু আগে আমাদের ‘বৈশ্বিক গ্রাম’-এর স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। তিনি আরো উল্লেখ করেছিলেন, আধুনিক প্রযুক্তিই হবে তার সেই স্বপ্ন পূরণের প্রধান নিয়ামক। ম্যাকলুহানের সেই ভবিষ্যদ্বাণী আজ বাস্তবায়িত হয়েছে। বিজ্ঞানের কল্যাণে অত্যাধুনিক সব বাহনের সুবাদে পুরো বিশ্ব এখন মানুষের হাতের মুঠোয়। পৃথিবীর এক প্রান্তের খবর মুহ‚র্তের মধ্যে পৌঁছে যাচ্ছে অপর প্রান্তে। তথ্যপ্রযুক্তিই বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের সম্পর্কের বন্ধনকে দৃঢ় করছে। বর্তমানে বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে এক ধরনের বিপ্লব দেখা দিয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির মহাসড়কে যুক্ত হয়েছে ১৬ কোটি মানুষ। এর মূলে রয়েছে বর্তমান সরকারের যুগোপযোগী পদক্ষেপ। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তথ্যপ্রযুক্তিতে অপার সম্ভাবনার দেশ বাংলাদেশ। এক সময় যে দেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি অপবাদ শুনতে হয়েছে, এখন সে দেশই আন্তর্জাতিক মহলের প্রশংসা পাচ্ছে। বাংলাদেশে বর্তমানে ক্ষমতাসীন মহাজোট সরকারের প্রধান শরিক আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল ২০২১ সালের মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি সমৃদ্ধ এক ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে তার দল আওয়ামী লীগের ইশতেহারে ঘোষণা করেছিলেন, তারা ক্ষমতায় এলে তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক এক ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলবেন। সরকার এজন্য ‘ভিশন ২০২১’ নামে ডিজিটাল বাংলাদেশের এক রূপকল্পও ঘোষণা করেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ মানে হচ্ছে এমন এক ব্যবস্থা যেখানে সুশাসন থাকবে, সরকারের কার্যক্রমে দায়বদ্ধতা-স্বচ্ছতা থাকবে, দুর্নীতি কমে যাবে। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য তারা তথ্যপ্রযুক্তির শক্তিকে ব্যবহার করতে চান।
আজ থেকে বিশ বছর আগে প্রয়োজনীয় তথ্য আহরণ ও স্থানান্তর প্রক্রিয়া যে দুরূহ ছিল, তা আজকের দিনে রূপকথায় পরিণত হয়েছে। দেরি হলেও বাংলাদেশ তার আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নে তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্র প্রসারের উদ্যোগ নিয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি দেশের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তথ্যপ্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার, ব্যবস্থাপনা ও কর্মদক্ষতা বাড়ানোর মাধ্যমে আমাদের দেশের জাতীয় জীবনে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। একজন ক্রেতা কোনো প্রতিষ্ঠানের তৈরি পণ্য এখন অনলাইনে বসেই কেনার অর্ডার দিতে পারছেন। এতে ক্রেতা ঘরে বসেই পেয়ে যাচ্ছেন তার প্রয়োজনীয় পণ্য। ঘরে বসেই ব্যবসায়ের লেনদেন, ব্যাংকিং ইত্যাদি করতে পারছেন। আর দিন দিন তাই তথ্যপ্রযুক্তি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ই-গভর্নেন্স অফিস-আদালতে গতানুগতিক কাগজনির্ভর নোটিস, জরিপ, বিল এবং কন্ট্রাক্ট বিষয়কে তথ্যপ্রযুক্তির বিভিন্ন উপাদান ব্যবহার করে ইলেকট্রনিক রূপদান করে অফিসকে কাগজবিহীন অফিসে রূপান্তর এবং এর উৎপাদনশীলতা বাড়াতে সহায়তা করছে। তথ্য প্রচার ও প্রসারে বিভিন্ন ক্ষেত্রগুলো মানব উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। ডিজিটাল স্কুল হিসেবে যাত্রা শুরু করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়। আইটিমস নামক একটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে উদয়নের শিক্ষা ও ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম ‘অটোমেটেড’ করেছে সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান ফোর ডি কমিউনিকেশনস। উদয়নের ক্লাস ম্যানেজমেন্ট, রুটিন তৈরি, ফল তৈরি ও প্রকাশ, উপস্থিতি, পরীক্ষা, বেতন প্রদানসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রম এই সফটওয়্যারের মাধ্যমেই সম্পন্ন করা হয়েছে। এটি ডিজিটাল বাংলাদেশকে এগিয়ে নেয়ার গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। দেশে তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নের মাধ্যমে আমাদের দেশের আর্থ-সামাজিক দুরবস্থা থেকে প্রযুক্তিভিত্তিক ও স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের গ্রামগুলো এখন দেখা যায় অন্যরকম এক দৃশ্য। সাইকেল চালিয়ে তরুণীরা যাচ্ছেন মানুষের বাড়ি বাড়ি, তার সঙ্গে ল্যাপটপ কম্পিউটার বা নোটবুক। ইন্টারনেট ব্যবহার করে স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হচ্ছে, কখনো গ্রামের মেয়েদের বা ছোট ছোট স্কুলের ছেলেমেয়েদের শেখাচ্ছেন কীভাবে ব্যবহার করতে হয় কম্পিউটার। এদের নাম দেয়া হয়েছে ‘ইনফো-লেডি’ বা ‘তথ্য-কল্যাণী’ তথ্যপ্রযুক্তি-ভিত্তিক সেবাকে তারা নিয়ে যাচ্ছেন সরাসরি গ্রামীণ জনগণের দোরগোড়ায়। সাইকেল, ল্যাপটপ আর চিকিৎসা যন্ত্রপাতি নিয়ে তথ্য-কল্যাণীরা গ্রামে ঘুরে ঘুরে লোকজনকে দিচ্ছেন ইন্টারনেট-ভিত্তিক নানা রকম সেবা। তথ্যপ্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার করে কৃষিতে আমাদের অবস্থান সুদৃঢ় হচ্ছে। কৃষিকে আধুনিকায়ন করে আমরা অগ্রসর হচ্ছি। দেশের শিক্ষিত বেকার যুবকদের স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করে সফটওয়্যার আউটসোর্সিংয়ের মতো কাজে নিয়োজিত করে বেকারত্ব দূরসহ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এগিয়ে যাচ্ছে। আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশীয় ব্যাংকিং শিল্পের অগ্রগতির জন্য প্রয়োজন ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনার সর্বক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির সফল ব্যবহার। প্রায় ১৬ কোটি জনগণের এ দেশে যে স্বল্প পরিমাণ ভূমি আছে তার সুষ্ঠু ও পরিকল্পিত ব্যবস্থাপনায় তথ্যপ্রযুক্তির ভূমিকা রাখছে। বর্তমান সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য নারী সমাজকেও অগ্রভাগে নিয়ে আসতে হবে। নারীসমাজ তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে আমাদের অবস্থানকে আরো সুদৃঢ় করছে।
বর্তমান সরকারের দুই বছরে তথ্যপ্রযুক্তির অভাবনীয় সাফল্য অর্জন হয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নে গত বছরে ৬৮৮.১১ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭টি প্রকল্প বাস্তাবায়িত হয়েছে। জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ কর্মসূচির আওতায় ২ হাজার ৪৩৯ জন শিক্ষার্থী/গবেষককে অর্থ সহায়তা দেয়া হয়েছে। তথ্য প্রযুক্তি বিভাগ জেলা/উপজেলা পর্যায়ে ১৮ হাজার ১৩০টি সরকারি অফিসে কানেক্টিবিটি স্থাপন করেছে। বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানের আঞ্চলিক নেটওয়ার্ক স্থাপনের লক্ষে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। বাংলাবান্ধা পর্যন্ত অপটিকের ফাইবার স্থাপন করা হয়েছে। বাংলাদেশ জাতিসংঘ সাউথ-সাউথ কো-অপারেশন অ্যাওয়ার্ড ২০১৪; ডওঞঝঅ থেকে এষড়নধষ ওঈঞ ঊীপবষষবহপব অধিৎফ-২০১৪ এবং ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন (ওঞট) থেকে ওয়ার্ল্ড সামিট অন ইনফরমেশন সোসাইট প্রাইজ-২০১৪ ঝঁংঃধরহধনষব উবাবষড়ঢ়সবহঃ অধিৎফ ২০১৫ অর্জন করেছে। মোবাইল গ্রাহক সংখ্যা জন ২০১৫ পর্যন্ত প্রায় ১৩.০২ কোটি এবং ইন্টারনেট গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৫.৪৭০ কোটিতে পৌঁছেছে। টেলিডেনসিটি প্রায় ৮৩.০৯ শতাংশ এবং ইন্টারনেট ডেনসিটি ৩৪.৪০ শতাংশ উন্নীত হয়েছে। ডিসেম্বর ২০১৫ থেকে সারাদেশে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে জাতীয় পরিচয়পত্র ভেরিফিকেশনসহ সিম/রিম রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম চালু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য ও যোগাযোগ উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের দূরদর্শী ও সুচিন্তিত কর্মপরিকল্পনার আলোকে টেলিটক থ্রি-জি প্রকল্পের আওতায় দেশের ৭টি বিভাগীয় এবং ৬৪টি জেলা শহরে থ্রি-জি প্রযুক্তি চালু হয়েছে।
বলতে দ্বিধা নেই, দেশের ১৬ কোটি মানুষ এখন তথ্যপ্রযুক্তির সুফল পাচ্ছে। এই যুগে দেশ ও জাতিকে অগ্রসর বিশ্বের সঙ্গে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করতে হলে তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে সামর্থ্যরে পরিচয় দিতে হবে। তা না হলে জাতিগতভাবে পিছিয়ে পড়তে হবে। উন্নত বিশ্বের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে তথ্যপ্রযুক্তিকেই প্রধান নিয়ামক হিসেবে বিবেচনা করে সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করতে হবে। তথ্যের ভিত্তিতে আজ ধনী-গরিব নির্ধারণ করা হচ্ছে। যে জাতি তথ্যে যত বেশি সমৃদ্ধ সে জাতি তত বেশি উন্নত। অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমকে জ্ঞান এবং তথ্যনির্ভর করে তোলার অর্থই হলো জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা। আর এজন্য তথ্যপ্রযুক্তিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নে সরকারের নানামুখী পদক্ষেপ দেশকে উন্নয়নের ইপ্সিত লক্ষ্যে এগিয়ে নেবে এটি আমাদের বিশ্বাস। এ ক্ষেত্রে নেয়া প্রতিটি প্রকল্প যাতে সময়মতো এবং যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হয় এ বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। বাঙালি জাতির স্বপ্ন পুরুষ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবন লালিত স্বপ্ন ছিল সোনার বাংলা। সমৃদ্ধ ও উন্নত সেই সোনার বাংলা গড়তে নতুন অভিধা হিসেবে ডিজিটাল বাংলাদেশে প্রতিপাদ্য বাস্তবায়িত হচ্ছে বঙ্গবন্ধু তনয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বেই। ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশ যেভাবে তথ্য ও যোগযোগ প্রযুক্তি বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে তাতে আমরা নিঃসন্দেহে বলতে পারি, সামনের দিনে আমরা এই অঞ্চলের আইসিটি খাতের নেতৃত্ব দেব। বাংলাদেশের মানুষ একটি ডিজিটাল রূপান্তরের জন্য সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে। আমরা যে ডিজিটাল বাংলাদেশ বা একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজের কথা বলছি , সেটি মোটেই কেবল একটি স্লোগান নয়, এটি অভীষ্ট লক্ষ্য। বাংলাদেশকে তথ্য প্রযুক্তি খাতের কেন্দ্রবিন্দুতে রূপান্তরের একটি স্বপ্ন সরকারের রয়েছে। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে তথ্যপ্রযুক্তিকে সবার্ধিক প্রাধান্য দিতে হবে।
সূত্র
©somewhere in net ltd.
১| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ২:৫৮
আনন্দ বড়ুয়া বলেছেন: Intelligence is what intelligence does.”