নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যাহা বলিব সত্য বলিব

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।

তালপাতারসেপাই

লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।

তালপাতারসেপাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

শহীদের সংখ্যার উসকানিদাতা পাকিস্তানি কূটনীতিক

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ভোর ৬:৩৮


মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা যত কম করে দেখানো যাবে তত পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নৃশংসতা কম ধরা পড়বে এ রকম কৌশল থেকেই সংখ্যাবিতর্ক সৃষ্টির উসকানি দেন পাকিস্তানি কূটনীতিক আফরাসিব। শহীদ হয়েছেন ৩৪ হাজার অথবা ৪০ সহস্রাধিক, এ রকম একটি বিভ্রম তৈরি করার মতলবে ৪৪৪ পৃষ্ঠার বিরাট একটি বই লিখে ফেললেন মিয়া আফরাসিব মেহদি হাশমি কোরেশি। ইনি ঢাকায় পাকিস্তানের হাইকমিশনার ছিলেন তিন বছর। আফরাসিব রচিত ‘নাইনটিন সেভেনটিওয়ান : ফ্যাক্টস অ্যান্ড ফিকশন’ বইতে মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দ আর ভারতকে হেয় করার উদ্দেশ্যে চালাকির সঙ্গে নানারকম তথ্য ও ভাষ্য হাজির করা হয়েছে। প্রপাগান্ডাধর্মী বইটিতে শহীদের সংখ্যা ‘৩০ লাখ নয়, ৩০ লাখ নয়’ কথাটি অনেকটা বিলাপের সুরে বার বার বলা হয়েছে। বাংলাদেশের কিছুসংখ্যক রাজনীতিক ইদানীং যে ভাষায় শহীদের সংখ্যা প্রসঙ্গে বলছেন, তাদের ভাষা আর আফরাসিবের বইয়ের ভাষার মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করা দুঃসাধ্য। সেই চেষ্টা না করে উদ্ভট কথাবার্তা উপভোগ করবার জন্য বইটির কিছু কিছু অধ্যায় পাঠ করা যেতে পারে। ২৬ পৃষ্ঠায় বলা হয়— ‘লে. জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা (মুক্তিযুদ্ধকালে ভারতীয় মিত্রবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের অধিনায়ক) এক ভিডিও সাক্ষাৎকারে বলেছেন, আমরা সবাই জানি যে পাকিস্তানি সেনারা নৃশংসভাবে প্রায় ১০ লাখ লোককে হত্যা করেছে। তবু শেখ মুজিব, যিনি যতটা প্রশাসক তার চাইতে বড় ধরনের আন্দোলনকারী, বিষয়টিকে আরও বেশি করে নৃশংস দেখানোর জন্য বলেন যে, পাকিস্তানি সেনারা ৩০ লাখ বাঙালিকে হত্যা করেছে।’ লেখক জানান, ১৯৯৬ সালে লন্ডনে প্রকাশিত এম আবদুল মমিন চৌধুরীর বই ‘বিহাইন্ড দি মিথ অব থ্রি মিলিয়ন’ থেকে অরোরার বক্তব্যটি নেওয়া হয়েছে। কিন্তু অরোরা কবে কোথায় এ সাক্ষাৎকার দিলেন তার উল্লেখ নেই। আফরাসিবের আরেকটি তরিকা আমোদজনক। একাত্তরে পাকিস্তানি সেনাদের হাতে কয়েক হাজার বাঙালির প্রাণ গেছে, এটা প্রমাণ করতে গিয়ে তিনি বার বার মরহুম ব্যক্তিদের উক্তি ব্যবহার করেছেন। এতে ‘সুবিধা’ হলো, মৃতজন তো এসে বলবেন না ‘আমি অমন বলিনি’। কৌশলটির নেতিবাচক দিক হলো, পাঠক মনে করে, লেখক তার মনগড়া কাহিনী ফলাচ্ছেন। ‘মুক্তিযোদ্ধারা কিছুই না। ভারতের নষ্টামিতে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।’ এ ধরনের বিকারগ্রস্ত মন্তব্য পাকিস্তানের অনেকেই করেন। এ বিকার চেপে রাখার চেষ্টা পেশাদার কূটনীতিক আফরাসিবের মধ্যেও দেখা গেল না। ২৬ পৃষ্ঠায় তিনি বলেছেন ‘মে. জেনারেল ডি কে পালিত ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রকৌশলে বাংলাদেশের জন্ম ঘটানোয় যার হাত ছিল, বলেছেন নিহতের সংখ্যা ১০ লাখ।’ প্রয়াত ভারতীয় লেখক-সাংবাদিক খুশবন্ত সিংয়ের সঙ্গে আফরাসিব (তখন তিনি দিল্লিতে পাকিস্তানের উপ-হাইকমিশনার) ২০০৬ সালের ৩ জুলাই দেখা করেন। লেখক জানান, তখন খুশবন্ত নাকি বলেছেন, ‘পাঞ্জাবি সৈনিকরা, হোক তারা পাকিস্তানি বাহিনী কিংবা ভারতীয় বাহিনীতে, একই নৃগোষ্ঠীভুক্ত। তারা উভয়েই মৌলিক মানবিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনারা পূর্ব-পাকিস্তানে ৩০ লাখ বাঙালিকে হত্যা আর ২ লাখ নারী ধর্ষণ করেছে, এটা বিশ্বাস করা আমার পক্ষে কঠিন। এ ধরনের ঢালাও অভিযোগ বন্ধ করতেই হবে।’ ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কয়েক দিন পরে প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খানকে বিদেশি এক সাংবাদিক বলেন, সৈন্যরা ঢাকায় ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে, গণহত্যা চালিয়েছে। ইয়াহিয়া বলেন, ‘আমি তো সৈন্যদের ওখানে ফুটবল খেলতে পাঠাইনি।’ আফরাসিবের বইতে এসব তথ্য নেই। তবে গণহত্যার যৌক্তিকতা প্রতিপন্ন করার জন্য কূটনীতিকসুলভ ভাষার চাতুরী আছে। যেমন ৩৩ পৃষ্ঠায় আছে : ‘১৯৭১-এর ২৫ মার্চ ফেডারেল সৈন্যরা দমন অভিযানে নামার সঙ্গে সঙ্গেই পূর্ব পাকিস্তানে হত্যা যে শুরু হয়নি, নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষকরা তা জানেন। সত্য এই যে, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া নবনির্বাচিত জাতীয় পরিষদের অধিবেশন ১ মার্চ স্থগিত ঘোষণা করার পরপরই অগ্নিসংযোগ, দাঙ্গা, লুণ্ঠন শুরু হয়। ২৫ মার্চ রাতে হঠাৎ সেনা অভিযানের ফলে ঢাকায় কিছু লোক, প্রধানত বাঙালি, প্রাণ হারায়।’ নিহতের সংখ্যাকে গুরুত্বহীন করে তোলার জন্য ‘কিছু লোক’ বলছেন লেখক। সঙ্গে সঙ্গে তিনি এও বলছেন যে, ২৫ মার্চের অভিঘাতে পূর্ব পাকিস্তানের (ঢাকার) দূরবর্তী এলাকায় ও শহরগুলোয় সামরিক ও অসামরিক অবাঙালিদের হত্যা চলতে থাকে। সৈন্যরা ওসব অঞ্চলে না পৌঁছা পর্যন্ত ব্যাপকহারে অবাঙালি হত্যা চলেছে। মুক্তিযোদ্ধারা ‘খুনি’ এটা আভাসে ইঙ্গিতে কয়েকবার বলা হয়েছে আফরাসিবের বইতে। ৩৪ পৃষ্ঠায় আছে— ‘অমানবিক হত্যাগুলো ঘটেছে ১৬ ডিসেম্বর-পরবর্তী সময়ে। বিজয়ী মুক্তিবাহিনী হাজার হাজার পাকিস্তানপন্থি বেসামরিক লোক, রাজাকার ও ইসলামী পণ্ডিতকে হত্যা করে। রাজধানী ঢাকায়, বাঙালি হোক বা অবাঙালি, যারা পাকিস্তানের অখণ্ডতার জন্য সততার সঙ্গে কাজ করেছিল তাদের নির্বিচারে বধ করা হয়েছে।’ লেখক আফরাসিব ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক মোহাম্মদ তাজাম্মুল হোসেনের লেখা ‘বাংলাদেশ ভিক্টিম অব ব্ল্যাক প্রপাগান্ডা ইনট্রিগ অ্যান্ড ইন্ডিয়ান হেজিমনি’ শীর্ষক বই থেকে উদ্ধৃত করেছেন, ‘মুক্তিবাহিনীর কমান্ডার কাদের সিদ্দিকী একাই ঢাকা স্টেডিয়ামে প্রকাশ্যে বাংলাভাষী বহু দেশপ্রেমিক পাকিস্তানিকে নির্বিচারে খতম করেছেন।... সিরাজগঞ্জ শহরে অবাঙালিদের ধরে ধরে এনে জেল ক্যাম্পাসে জড়ো করা হয়। তারপর সেখানে আগুন দিয়ে ওদের জ্যান্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছে।’ তাজাম্মুল হোসেনের বই থেকে আফরাসিব উদ্ধৃতি গ্রহণ ও ব্যবহার করেছেন আরও একটি কারণে। তা হলো, বাঙালিদের মুসলমানির বিষয়ে অবজ্ঞা প্রদর্শন। তাজাম্মুল বলছেন, “১৯৭১-উত্তর বাংলাদেশি শাসকরা ‘পরিচিতির দিক থেকে মুসলমান’ হওয়া সত্ত্বেও দেশের জন্য নতুন একটি জাতীয় সংগীত চালু করলেন না। তারা গ্রহণ করলেন ‘আমার সোনার বাংলা’ গান, যা মুসলিম বিশ্বাসের সঙ্গে খাপ খায় না। গানটি হিন্দু ধর্মবিশ্বাসের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। এ গান রচিত হয়েছিল ঐতিহাসিক কারণে, ব্রিটিশ আমলে অবিভক্ত বাংলার ঐক্য কামনা করে।” ভারতকে যারা নাক সিটকায় তাদের প্রতি লেখক সম্ভবত সবিশেষ মায়া পোষণ করেন। ১৯৭১-এর ৫ নভেম্বর ওয়াশিংটনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সনের সঙ্গে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বৈঠক হয়। ইন্দিরা যুক্তরাষ্ট্রের দাদাগিরি পরোয়া করলেন না। তাই পাকিস্তানের মিত্র নিক্সন ও তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিংগার কষ্ট পান। আফরাসিব ৮৭ পৃষ্ঠায় জানান, সাংবাদিক গ্যারি জে. বাস এ বিষয়ে লিখলেন : কিসিংগার পরদিন নিক্সনকে বললেন : ওয়েল, দি ইন্ডিয়ানস আর বাস্টার্ডস অ্যানিওয়ে। - সূত্র: Click This Link

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৮:৪৬

অগ্নি কল্লোল বলেছেন: জীবনে যতদিন বাঁচব ফাকিস্থানকে ঘৃণা করে যাব।।
ধন্যবাদ জানবেন।।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.