নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যাহা বলিব সত্য বলিব

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।

তালপাতারসেপাই

লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।

তালপাতারসেপাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

১/১১-এর জরুরি আইনের শাসনামলের তদন্ত জরুরি

০২ রা মার্চ, ২০১৬ ভোর ৬:২৯

‘চেতনার প্রত্যাশা’ কলামটা লিখি প্রতি মঙ্গলবার সকালে। তাই ভাবছিলাম চলতি সংসদ অধিবেশনের শেষ দিন রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর সংসদে কি আলোচিত হয় এবং সমাপ্তি ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কি বলেন, তা নিয়ে কলামটা লিখব। কিন্তু অনিবার্য কারণে আগের দিন দুপুরে শুরু করতে হলো কলামটা লেখা। কি বিষয়ে লিখব নিয়ে ভেবে যখন পূর্ববর্তী সাত দিনের দৈনিক সংবাদপত্রের পাতা উল্টাচ্ছিলাম, তখনই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোতে যে পারস্পরিক কাদা ছোড়াছুড়ি ও খিস্তিখেউর হচ্ছে, সে সবের কথা মনে পড়ল। সঙ্গে সঙ্গেই ভাবলাম আমাদের দেশের তুলনায় তা কতটুকু কম বা বেশি, তা নিয়ে আলোচনা করলে মন্দ হয় না। কেননা আমাদের রাজনীতির অঙ্গনে যখন কাঁদা ছোড়াছুড়ি বা মুখোমুখি অবস্থা সৃষ্টি হয়, তখন সব গেল গেল বলে মহল বিশেষ থেকে একটা রব তোলা হয়। টার্গেট করা হয় রাজনীতি, রাজনীতিক ও রাজনৈতিক দলগুলোকে। প্রচারের ভেতর দিয়ে এমন এক পরিবেশ সৃষ্টি করা হয় যে, রাজনীতিকরা গণতন্ত্রের বারোটা বাজাচ্ছেন। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বিরাজনীতিকরণের একটা প্রচেষ্টাও তখন লক্ষণীয় হয়ে ওঠে। ত্রাণকর্তা হিসেবে সামরিক বাহিনীকে ক্ষমতায় আনার তৎপরতা চলে। কখনো তা হয় সফল আর কখনো বিফল।
অতীত স্মরণে আনলে দেখা যাবে, পাকিস্তান আমলে আইয়ুব খান আর স্বাধীন বাংলাদেশ আমলে জিয়াউর রহমান ও হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ হত্যা-ক্যু-পাল্টা ক্যু ও সামরিক শাসনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা দখল করার আগে একই ধরনের পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছিল। আগ্রহউদ্দীপক বিষয় হচ্ছে এই যে, রাজনীতি ও রাজনীতিকরা দেশের বারোটা বাজাচ্ছে বলে ক্ষমতায় বসেই এই সব সেনাশাসকরা রাজনৈতিক দলের রাজনীতি বন্ধ করে দিয়ে রাজনীতিতে নামেন; রাজনৈতিক দল গঠন এবং রাবারস্ট্যাম্প পার্লামেন্ট প্রতিষ্ঠা করেন। আবার শুরু হয় কাদা ছোড়াছুড়ি ও মুখোমুখি রাজনীতি। আবার চলে একই ধরনের প্রচার। একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে, তেমন ধরনের অবস্থায় দুইবার সামরিক হস্তক্ষেপ হয়নি। ১৯৯০ সালে সেনাশাসক এরশাদের জাতীয় পার্টির শাসন এবং ১৯৯৬ সালে খালেদা জিয়ার বিএনপির শাসনের অবসানের সময় উল্লিখিত ধরনের পরিবেশ সৃষ্টির পাঁয়তারা চললেও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা দিয়ে গণতন্ত্র ও সংবিধানের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে।
আর ২০০৬ সালে তৃতীয়বার জরুরি আইনের শাসনামলে কিছুটা ভিন্ন প্রক্রিয়ায় হলেও আইয়ুব জিয়া এরশাদের মতোই রাজনৈতিক প্রক্রিয়া চালু ও রাজনৈতিক দল গঠন করার প্রচেষ্টা চালানো হয়। কিন্তু গণপ্রতিরোধের মুখে তা বাতিল হয়ে যায় এবং ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনের ভেতর দিয়ে দেশ গণতান্ত্রিক সাংবিধানিক ধারায় ফিরে আসে। তারপর অভিজ্ঞতা বিবেচনায় অবৈধ পন্থায় ক্ষমতা দখল করার প্রচেষ্টা ও উচ্চাক্সক্ষাকে চিরতরে নির্বাসিত করার জন্য সংবিধান সংশোধন করে সর্বোচ্চ দণ্ডের বিধান রাখা হয়। এতদ্সত্ত্বেও ২০১৪ সালের জানুয়ারির নির্বাচনের আগে একই ধরনের পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে সামরিক হস্তক্ষেপের প্রচেষ্টা চালানো হয়। কিন্তু জনগণের সচেতনতা ও সক্রিয়তা বিশেষত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যথাযথ দৃঢ় ও সাহসী পদক্ষেপের ফলে তা সম্ভব হয়নি। সবশেষে ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে পুনরায় এই প্রচেষ্টা চালানো হলেও তা ব্যর্থ হয়। তবে অবস্থা পর্যবেক্ষণে এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, আগামী দিনেও বাংলাদেশে অবৈধ পন্থায় ক্ষমতা দখলের লক্ষ্যে গেল গেল রব তুলে উল্লিখিত ধরনের পরিবেশ সৃষ্টির প্রচেষ্টা চলবে। এ দিকটি বিবেচনায় নিয়ে প্রথমে আমেরিকার রাজনীতিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সামনে রেখে কাঁদা ছোড়াছুড়ি ও খিস্তিখেউর বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হলো।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এখন দলীয় প্রার্থী মনোনয়নের লক্ষ্যে দলের মধ্যে প্রার্থী হতে ইচ্ছুকদের বিতর্ক ও নির্বাচন চলছে। রিপাবলিকান দলের বিতর্কে ডোনাল্ড ট্রাম্প অংশ নিয়ে মার্কো রুবিওকে হেনস্তা করতে বলেন যে, ‘সেদিন বিতর্কের সময় রুবিও শুধু যে ঘামছিলেন তা-ই নয়, সম্ভবত ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে মূত্র ত্যাগ পর্যন্ত করে ফেলেছিলেন, সহাস্যে তিনি বলেন, তার পায়ের কাছে আমি দেখি পানি জমে আছে, সেটা কী?’ রুবিওই বা কম যাবেন কেন? শঠে শাঠ্যং বলে রাজনীতিতে একটা স্বতঃসিদ্ধ কথা আছে না! প্রতিত্তোরে তাই তিনি বলেন যে, ‘সেদিন বিতর্কের বিরতির সময় ট্রাম্প প্রথমে তার ঠোঁটের ওপর ঘাম লিপস্টিক দিয়ে ঘষলেন, তারপর পূর্ণদৈর্ঘ্য একখানা আয়না চেয়ে নিলেন। কেন, অত বড় আয়নার দরকার কী?’ মহা হাস্যরোলের মধ্যেও রুবিও বললেন, ‘ট্রাম্পই সম্ভবত তার প্যান্টে প্রস্রাবের দাগ লেগে আছে কি না, তা পরখ করতে চাইছিলেন।’ ভাগ্যি ভালো! লিপস্টিকের পর প্রস্রাব বলেছেন, অন্য কিছু বলেননি।
প্রসঙ্গক্রমে বলতেই হয় যে, মূত্র ত্যাগ, ভেজা প্যান্ট, ঠোঁটে লিপস্টিক প্রভৃতি শব্দ প্রয়োগ করে যদি আমাদের দেশে রাজনীতিকরা কাদা ছোড়াছুড়ি ও খিস্তিখেউর করতেন, তবে কতটা রাজনীতি গেল, গণতন্ত্র গেল গেল রব উঠত তা হিসাবে নিলে শিহরিত হতে হয়। কিন্তু আমেরিকায় এমন সব কথা উচ্চারিত হলেও তাতে গেল গেল রব ওঠে বলে জানা যায় না। এ কথাটা যখন বলা হচ্ছে তখন কিন্তু রাজনীতিতে এসব অশ্লীল কথা বলার পক্ষে ‘চেতনায় প্রত্যাশা’-এর কলাম লেখক সাফাই গাচ্ছে না। কেননা এসব ধরনের শব্দ রাজনীতিতে যত কম উচ্চারিত হয় ততই ভালো। ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে কাঁদা ছোড়াছুড়ি ও খেস্তিখেউর রাজনীতিতে পরিত্যাজ্য হওয়াটাই বাঞ্ছনীয়। তবে এটা সবাইকেই মেনে নিয়ে স্বীকার করতে হবে যে, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ও কথাবার্তায় সমাজজীবনের প্রতিফলন ঘটবেই। সমাজে গালি থাকলে রাজনীতিতে গালাগালি হবেই। মারামারি থাকলে হবে মারামারি। নদীতে ময়লা-আবর্জনা থাকলে যেমন তা পানিতে ভেসে উঠবেই, তেমনি সমাজ ও অর্থনীতিতে দুর্নীতি-লুটপাট-স্বজনপ্রীতি, দখল-দাপট-সন্ত্রাস থাকলে উপরিকাঠামো রাজনীতিতে তার প্রতিফলন না চাইলেও ঘটবেই।
একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে যে, আমাদের সমাজ জীবনের সব ক্ষেত্রে এবং এমন কি সংবাদমাধ্যম জগতে যেমন দুর্নীতি রয়েছে, তেমন রাজনীতিতেও রয়েছে। সংবাদপত্র জগতে দখল-দাপটের ঘটনাও কিন্তু খুব কম নয়! মিথ্যা ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত সংবাদ পরিবেশনা, সংবাদ প্রকাশের নামে অর্থ আদায়ের জন্য ধমক দিয়ে ব্যক্তিকে জিম্মি করার ঘটনা এবং নিউজ পেপার নিয়ে নানা কিচ্ছাকাহিনী প্রভৃতি কার না জানা। সেজন্য সৎ সাংবাদিকতা কথাটা আমাদের সমাজ জীবনে বহু প্রচারিত ও আকাক্সিক্ষত একটি শব্দ। সার্বিক বিবেচনায় বলা যায়, আমেরিকান সমাজের প্রতিফলন যেমন সেই দেশের সব ক্ষেত্রের মতো রাজনীতিতে হবে, ঠিক তেমনি আমাদের সমাজের ময়লা-আবর্জনা অন্যান্য সব ক্ষেত্রের মতো আমাদের রাজনীতিতে অনভিপ্রেত হলেও প্রকাশিত হবেই। দেশ-কাল ভেদে রূপ ও মাত্রা ভিন্ন হলেও এসব রাজনীতিরই অনুষঙ্গ। একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে, অন্যান্য দেশসহ পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সমাজের প্রতিফলন ভারতীয় রাজনীতি ও সংসদে হচ্ছে এবং তা যে বাংলাদেশের তুলনায় কম, তা বলা যাবে না।
লোকসভায় হট্টগোল, হাতাহাতি প্রভৃতির অনেক ঘটনার মধ্যে একটি এখানে উল্লেখ করা হলো। ২০১৪ সালের ১৪ ফেব্রয়ারি। ভারতের লোকসভা অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন আমাদের জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। তিনি লোকসভা অধিবেশনে প্রবেশ করলে তাকে স্বাগত জানানো হয় এবং বিশেষ একটি আসনে বসেন তিনি। অতিথির সামনেই শুরু হয়ে যায় তেলেঙ্গনা বিল নিয়ে অগের দিনের মতো অস্থিরতা হৈ হট্টগোল। স্পিকারের মাইক কেড়ে নেয়া, হাতাহাতি, মারপিট, টেবিল ভাঙাভাঙি প্রভৃতি সব হওয়ার পর শুরু হলো স্প্রে দিয়ে গোল মরিচের গুঁড়া ছড়িয়ে দেয়ার কাজ। গ্যাস ছড়ানোরও অভিযোগ ওঠে। অনেক সদস্য তাতে হয়ে পড়েন অসুস্থ। কয়েকজন সংসদকে বরখাস্ত করার ঘোষণা পর্যন্ত স্পিকারের পক্ষ থেকে দেয়া হয়। তারপর যথারীতি মুলতবি। সবই ঘটল অতিথির সামনেই। হাতাহাতি ভাঙাভাঙি মরিচের গুঁড়া নিক্ষেপের ঘটনা সচরাচর না ঘটলেও অশান্ত উত্তপ্ত কাদা ছোড়াছুড়ি যে সেখানে সচরাচর হচ্ছে তা সংবাদ মাধ্যম থেকে কমবেশি আমরা জানতে পারি। কেবল লোকসভায় নয়, উচ্চকক্ষ রাজ্যসভাও তা হয়ে থাকে। আর রাজ্যের বিধানসভাগুলোতে অহরহই যে ধরনের কাদা ছোড়াছুড়ি ও খিস্তিখেউর হয়ে থাকে, তা শোনার আগে কানে তুলা দিতে হবে।
প্রশ্ন হলো আমেরিকা কিংবা ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনে কাদা ছোড়াছুড়ি ও খিস্তিখেউর প্রভৃতি হলে কি উল্লিখিতভাবে গেল গেল রব ওঠে! এমন সব কথা কি তোলা হয় যে, রাজনীতি গণতন্ত্র পার্লামেন্ট অচল! রাজনৈতিক দলগুলোকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না। প্রসঙ্গক্রমে কাদা ছোড়াছুড়ি ও খিস্তিখেউরের বিষয় ছাড়া আরো একটি বিষয় এখানে উল্লেখ করার মতো। তা হলো, সংসদে সাংসদদের উপস্থিত থাকা তথা কোরাম সংকটের বিষয়। এখানেও বলে নিতে হয়, সংসদে অনুপস্থিতি অনভিপ্রেত হলেও তা আমাদের সমাজের বাস্তবতারই প্রতিফলন। নিঃসন্দেহে এর সমাধান নিয়ে আলোচনা হওয়া বাঞ্ছনীয়। কিন্তু সময় নষ্ট, টাকা নষ্ট প্রভৃতি কথা তুলে গেল গেল জিগির তোলা হয়। দশম জাতীয় সংসদের কোরাম সংকটে যে অক্টোবর ১৫ পর্যন্ত প্রায় ৩২.৫০ কোটি টাকা অপচয় হয়েছে, তা কত সূ² কিংবা ভোঁতাভাবে যে প্রচারে আনা হয়েছে, তা হিসাবে নিলে দেশে বিরাজনীতিকরণের ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত যে কতটা গভীর ও বিস্তৃত তা সুস্পষ্ট হবে। একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে, নানা অভিযোগ তুলে সেই গরুর রচনার মতো বলা হচ্ছে, সংসদে ‘ফ্রুটফুল’ আলোচনা হয় না এবং তাতেও অর্থ ও সময়ের অপচয় হচ্ছে। বলাই বাহুল্য, রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলার সঙ্গে সঙ্গে গেল গেল রব তোলা যেন নিরপেক্ষ দাবিদার সংবাদ মাধ্যমের কাজ একমাত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই গেল গেল রব যে মহল বিশেষ তুলতে সদা তৎপর থাকেন, তাদের কাছে কিন্তু ভারতের লোকসভার কোরাম সংকটের বিষয়টি অজানা নয়। গত বছরের ১৫ ডিসেম্বরের এক সংবাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, লোকসভার অধিবেশনের আগে ক্রমাগত ঘণ্টা বাজতে থাকলেও ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির ২৮২ জন সদস্যের মধ্যে মাত্র ৪/৫ উপস্থিত হন সংসদ কক্ষে। মন্ত্রীদের কাউকে সংসদ ভবন চত্বরে দেখা যায় না। ফলে সংসদ অধিবেশন মুলতবি করা হয়। একই দিনে একইভাবে রাজ্যসভার অধিবেশনও স্থগিত করা হয়। আরো একটি বিষয় এখানে উল্লেখ করতে হয় যে, সংসদ সদস্যরা উপযুক্ত নয়, দুর্নীতিসহ অনৈতিক কাজে যুক্ত প্রভৃতি নিয়েও গেল গেল রব সচরাচর তোলা হয়। নিঃসন্দেহে উপযুক্ত, নৈতিকভবে পরীক্ষিত সচ্ছ ও সৎ রাজনেতিক নেতাদের সংসদ সদস্য হওয়া দেশবাসীর কাম্য। কিন্তু স্বচ্ছ ও সৎ লোকদের তো রাজনীতি ও নির্বাচনে নামতে হবে এবং প্রতিদ্ব›িদ্বতা করে জিততে হবে। জেতার বিষয়টা সব সময়ই গণতান্ত্রিক তথা ভোটের রাজনীতিতে প্রাধান্য পেতে বাধ্য। প্রসঙ্গত বেশ কিছু দিন আগে পত্রিকায় দেখেছিলাম, ভারতের লোকসভার ৫৪১ জন সদস্যের মধ্যে বর্তমানে ১৮৬ জন জনপ্রতিনিধি আছেন, যারা ফৌজদারি মামলার আসামি। এর মধ্যে ক্ষমতাসীন বিজেপির ৯৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। বলাই বাহুল্য, এ সবই অনভিপ্রেত ও বর্জনীয়। এটা কারেরই কাম্য নয় এবং যা কাম্য তা নিয়েও আলোচনা করা প্রয়োজন।
কিন্তু বিশেষ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তথা বিরাজনীতিকরণ ও অবৈধ শক্তিকে ক্ষমতায় আসার পথ সৃষ্টি করতে গেল গেল প্রচারের জজবা তোলা ঘৃণ্য কাজ এবং গণতন্ত্রের জন্য চরম ক্ষতিকর বলে চিহ্নিত হতে বাধ্য। আমাদের দেশে বারবার অবৈধ শক্তি ক্ষমতায় আসার কারণেই গণতান্ত্রিক চর্চা ও সংস্কৃতি তেমনভাবে দাঁড়াতে পারেনি এবং জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা না থাকায় দেশের অর্থনীতি ও উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়েছে। নদীর স্বাভাবিক গতিপথ আটকে দিলে যা হয়, এক্ষেত্রে তা-ই হয়েছে। এ কথার বিপরীতে কেউ কেউ হয়তো বলতে পারেন যে, গেল গেল রব তোলা হয় সংশোধনের জন্য, রাজনীতিকে পরিচ্ছন্ন করার জন্য। কোনোভাবেই বিরাজনীতিকরণ ও অবৈধ শক্তিকে ক্ষমতায় আনার লক্ষ্য থেকে তা করা হয় না। এমনটা মেনে নেয়া যেত যদি ওইসব প্রচারের কুশীলবরা কিং বা কিং মেকার হতে না চাইতেন। গেল গেল রব তোলার প্রচারকরা কিভাবে এক একটা সামরিক হস্তক্ষেপের বেনিফিসারি হয়েছেন, তা এই ক্ষুদ্র কলামে উল্লেখ করা সম্ভব নয়। তবে সংক্ষিপ্ত পরিসরে ১/১১-এর জরুরি আইনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ওই ধরনের প্রচারের কুশীলবরা কি করেছেন, তা স্মরণে আনলেই সবটা সুস্পষ্ট হয়ে যাবে।
মাইনাস টু ফরমুলা জনপ্রিয় জনগ্রাহ্য করতে মাঠে নেমেছিল ওই মহল বিশেষই! কারা প্রথমে দুই নেত্রীকে নির্বাসনে পাঠানো আর পরে গ্রেপ্তারের পক্ষে প্রচার তুঙ্গে তুলেছিলেন! কারা জরুরি আইন ও প্রকাশ্যে রাজনীতি করার নিষেধাজ্ঞার মধ্যে নতুন রাজনৈতিক দল করতে উদ্যোগী হয়েছিলেন! দুই বছর জরুরি আইন রেখে শাসন অব্যাহত রাখার পক্ষে ওকালতি করেছিলেন কারা! এক ধাক্কায় দুর্নীতি দমন করতে এবং তলে তলে অবৈধ দখলদার দুর্নীতিবাজদের পক্ষ সমর্থনে উৎসাহিত করেছিলেন কারা! সংবাদপত্র ঘাঁটলেই এসবের প্রমাণ মিলবে। একটু খেয়াল করলেই বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করা যাবে, যে মহল এখন চাপে পড়ে ১/১১-এর জরুরি আইনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে কেবল ‘আর্মি ব্যাকড’ হিসেবে চিহ্নিত করতে উঠেপড়ে লেগেছেন এবং সম্পূর্ণ দোষ আর্মির ঘাড়ে চাপাতে চাইছেন, তারা কিন্তু ছিলেন ওই সরকারের আর্কিটেক্ট, ইঞ্জিনিয়ার, পরামর্শক, প্রচারক প্রভৃতি সব কিছু। নির্দ্বিধায় তাই বলা যাবে, ১/১১-এর জরুরি আইনের সরকার কেবল ‘আমি ব্যাকড’ ছিল না, ছিল ‘আর্মি ও নিরপেক্ষ দাবিদার সুশীল সমাজ ব্যাকড’ একটি সরকার। যে সরকারের লক্ষ্য ছিল প্রথমে দুই নেত্রীকে মাইনাস করে বিরাজনীতিকরণের ধারাকে প্রতিষ্ঠিত করা এবং তাদের ইচ্ছা ও পছন্দমতো রাজনৈতিক দল ও ধারা সৃষ্টি করা।
জনগণ নয়, অস্ত্রের ক্ষমতার জোরে রাজনীতিকে বন্দী ও গণতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠিয়ে যারা ওপর থেকে নিজেদের ইচ্ছা ও পছন্দমতো রাজনীতি, রাজনৈতিক ধারা, রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করতে চান, তাদের কি বলা যাবে! গণতন্ত্রের নামাবলি গায়ে থাকলেও এরা স্বৈরাচারেরই রকমফের। এসব উচ্চাকাক্সিক্ষরা গণবিচ্ছিন্ন এবং জনগণের মুখোমুখি হতে ভয় পায়। তাই ক্ষমতা দখল করে রাজনৈতিক দল ও রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতে নীতি কৌশল পদক্ষেপ গ্রহণ করে। ক্ষুদ্র এ কলামে বেশি কথায় না গিয়ে এটা বলা যায় যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা দেশের জন্য ক্ষতিকর ও অকার্যকর হওয়ার পর্যাপ্ত যুক্তিপ্রমাণ ও দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায় থাকা এবং সংবিধানের নিয়ম অনুযায়ী সংবিধান সংশোধন করা হলেও ওই মহলবিশেষ অনির্বাচিতদের দ্বারা পরিচালিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনরায় আমদানি করার পক্ষে। আর এমনভাবে পক্ষে যে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন না হলে অসংবিধানিক অবৈধ সরকার ক্ষমতায় আসবে বিষয়টা অবশ্যম্ভাবী হওয়া সত্ত্বেও ওই নির্বাচনের বিপক্ষে বিএনপি-জামায়াতের ২০ দলীয় জোট নির্বাচন বয়কটের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল।
এই পর্যন্ত কলামটা লেখার পর থামতে বাধ্য হলাম। বাসার টেলিভিশনে তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তৃতা হবে। লেখা থেকে উঠে দ্রুত পায়ে টেলিভিশনের সামনে গিয়ে গভীর আগ্রহ ও মনোযোগ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তৃতা শুনলাম। খুব ইচ্ছে হচ্ছিল সংসদের বিশেষত প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা নিয়ে লিখি। কিন্তু দ্রুত লেখা শেষ করে পারিবারিক আয়োজনে অংশ নিতে হবে। আর সকালেও লিখতে পারব না। কারণ ১ মার্চ। শহীদ তাজুল দিবস। স্বৈরাচারী এরশাদ আমলে গণতন্ত্রের সংগ্রামে উচ্চশিক্ষিত ও শ্রমিকের পেশা গ্রহণকারী উদাহরণের উজ্জ্বল নক্ষত্র তাজুল ইসলাম আদমজীতে শহীদ হন। সকালে তার স্মৃতির উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করতে হবে বিধায় সময় নেই। এদিকে কলামে স্থান সংকুলানও হবে না বিবেচনায় হাত নিশপিস করলেও এ কলামে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মন্ত্রীদের বক্তব্য নিয়ে আলোচনা করা সম্ভব হলো না।
তাই কলামটা শেষ করলাম এতটুকুই লিখে যে, ঘরপোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায়। বর্তমান স্থিতিশীল ও শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতিতে উন্নয়ন ও অগ্রগতির মধ্যে উগ্র জঙ্গিবাদী নাশকতামূলক কাজ ও বিদেশিদের দ্বারা এটিএম জালিয়াতি সংঘটিত হতে থাকায় মানুষের মনে আশার সঙ্গে একটা শঙ্কাও কাজ করছে। এই শঙ্কা দূর করতে সংসদে উত্থাপিত তদন্তু কমিশন গঠনের প্রস্তাব খুবই সঙ্গত ও প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়। কত দ্রুত কমিটি গঠিত হয় এটাই স্বাধীনতার মাসে এখন দেখার বিষয়। সূত্র

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা মার্চ, ২০১৬ ভোর ৬:৪৯

চাঁদগাজী বলেছেন:


"‘চেতনার প্রত্যাশা’ কলামটা লিখি প্রতি মঙ্গলবার সকালে। "

-সারছেন, আপনি কলামও লেখেন?

২| ০২ রা মার্চ, ২০১৬ সকাল ৮:২৪

বিজন রয় বলেছেন: তাই হোক।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.