নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যাহা বলিব সত্য বলিব

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।

তালপাতারসেপাই

লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।

তালপাতারসেপাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

বঙ্গবন্ধুর জীবনে ১৯৭১

২১ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ১:৩২


তাঁর বয়স যখন ৫১ বছর পূর্ণ হয়েছিল, তখন ১৯৭১ সালের ৭ ও ২৬ মার্চ জাতীয় জীবনে সর্বাধিক আকাক্সিক্ষত ‘মুক্তি ও স্বাধীনতা’ সংগ্রামের নিমিত্তে ‘প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে’ তোলা এবং ‘যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা’ করার জন্য বঙ্গবন্ধু আহ্বান জানিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর নিজের জীবনের এবং বাংলাদেশের জাতীয় জীবনের গতি-প্রকৃতি পরিবর্তনকারী ঐতিহাসিক মুহ‚র্ত আবির্ভূত হয়েছিল ১৯৭১-এ। এ মুহ‚র্তের জন্য বঙ্গবন্ধু সারা জীবন জেল-জুলুম, নির্যাতন ভোগ করেছেন। প্রকৃতপক্ষে এই মুহ‚র্তের জন্য তিনি তাঁর সমগ্র জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। এই মুহ‚র্তের জন্য বাঙালি জাতি হাজার বছর যাবৎ অপেক্ষা করেছিল। ১৯৭১ বছরটি প্রকৃতপক্ষে বাঙালি জাতির ‘ডিফাইনিং মোমেন্ট’ হিসেবে গণ্য হয়ে থাকে।
জন্মের পর থেকেই তিনি তাঁর দেশ, সমাজ ও মানুষের সুখ, দুঃখ, আশা, আকাক্সক্ষা, ব্যথা-বেদনা, চাওয়া-পাওয়া, বিশ্বাস-আস্থা এসব কিছু একান্ত আপনজনের মতো করে উপলব্ধি করেছেন এবং জনগণের প্রয়োজন অনুযায়ী কাজ করেছেন। এজন্য তাঁকে কারাভোগ করতে হয়েছে এবং তিনি বেশ কয়েকবার মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়েছেন। জনগণের প্রয়োজনে সততা ও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করতে পারার কারণে তিনি তাঁর জনগণের কাছ থেকে গভীর আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। এভাবে দেখা যাচ্ছে, তাঁর জন্মের পঞ্চাশ বছর পর তাঁর জন্মভূমি বাংলাদেশের ইতিহাসের গতি-প্রকৃতির পুরোটাই তাঁর নেতৃত্বে ও নির্দেশনায় নির্ধারিত হয়েছে। ১৯৭১-এর মার্চ মাসের ঘটনাবলি তার জ্বলন্ত উদাহরণ।
ধর্মীয় উপনিবেশ পাকিস্তান সৃষ্টির মূল দলিল হচ্ছে লাহোর প্রস্তাব। ১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ পাঞ্জাবের লাহোরে সে সময়ের নিখিল ভারত মুসলিম লীগের অধিবেশনে উপমহাদেশের মুসলমানদের জন্য স্বতন্ত্র আবাসভূমির প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছিল। পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার পর এই দিনটিকে সমগ্র পাকিস্তানব্যাপী যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে, পাকিস্তান দিবস হিসেবে পালিত হতো। কিন্তু ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মভূমি তৎকালীন (পূর্ব) বাংলায় সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র দেখা গিয়েছিল। সে সময়ের (পশ্চিম) পাকিস্তানে ২৩ মার্চ ‘পাকিস্তান দিবস’ হিসেবে পালিত হলেও, (পূর্ব) বাংলায় পালিত হয়নি। প্রসঙ্গক্রমে স্টানলি উলপার্টের বই ‘জুলফি অব পাকিস্তান’-এ উল্লিখিত একটি পর্যবেক্ষণ উদ্ধৃত করা যেতে পারে। উলপার্ট বলছেন, মুসলিম লীগের লাহোর প্রস্তাব অনুমোদিত হওয়ার একত্রিশতম বছর পূর্তি উৎসব হিসেবে ১৯৭১-এর মার্চের ২৩ তারিখটি পশ্চিম পাকিস্তানে উদযাপিত হয়েছিল, যেটি প্রতি বছর পাকিস্তান দিবস হিসেবে স্মরণ করা হতো। কিন্তু সেই সকালে ঢাকার বেশিরভাগ সংবাদপত্রে ‘বাংলাদেশের মুক্তি’ শিরোনাম দিয়ে বিশেষ সংখ্যা বের করা হয়েছিল। এতে শেখ মুজিবুর রহমানের একটি বার্তা সন্নিবেশিত হয়েছিল, ‘আমাদের দাবি ন্যায়সঙ্গত এবং সে কারণে জয় আমাদেরই’, এটি শেষ হয়েছিল ‘জয় বাংলা’ বলে।
‘পাকিস্তান দিবসে’ ১৯৭১-এর ২৩ মার্চ বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে তৎকালীন (পূর্ব) বাংলায় প্রতিরোধ দিবস পালিত হয়েছিল। সন্ধ্যায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কে অবস্থিত তাঁর বাসভবনে বিশাল জনসমাবেশে, বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার নিচে দাঁড়িয়ে, বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন, ‘তাদের ন্যায্য ও বৈধ দাবি-দাওয়া অর্জনের জন্য আমাদের জনগণ রক্ত দিতে শিখেছে এবং তদের বাধা দেয়ার জন্য যেকোনো হস্তক্ষেপ, নির্যাতন এবং শক্তিপ্রয়োগ, সোজা কথায়, হবে একটি ব্যর্থ চেষ্টা।’
১৯৭০-এর নির্বাচনের সময় প্রকাশিত ‘দ্য গ্রেট ট্র্যাজেডি’ শিরোনামে একটি প্রচারপত্রে পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টো বলেছিলেন, ‘Sheikh Mujibur Rahaman unlished hatred against West Pakistan’.১৯৭০-এর ৪ এপ্রিল বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য জেনারেল ইয়াহিয়া খান ঢাকায় এসেছিলেন। এ সময় পাকিস্তানের গোয়েন্দারা ইয়াহিয়া খানকে, সহকর্মীদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর কথাবার্তার গোপনে ধারণকৃত একটি টেপ রেকর্ড বাজিয়ে শুনিয়েছিলেন, সেখানে বঙ্গবন্ধু তাঁর ঘনিষ্ঠ সহকর্মীদের বলছেন, উলপার্ট উল্লেখ করেছেন, My aim is to establish Bangladesh; I will tear the L.F.O.into pieces as soon as the elections are over. Who could challenge me once the elections are over ? (p.152) অর্থাৎ ‘আমার লক্ষ্য হচ্ছে, বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা; নির্বাচনের পরে আমি লিগ্যাল ফ্রেম ওয়ার্ক অর্ডার (এল এফ ও) টুকরো টুকরো করে ফেলব। একবার নির্বাচন শেষ হয়ে গেলে কে আমাকে চ্যালেঞ্জ করতে পারবে?’
মূলত ১৯৭১-এর ৭ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ হিসেবে বঙ্গবন্ধুই রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন। ১৬ মার্চ ঢাকায় ক্ষমতা হস্তান্তর প্রশ্নে মুজিব-ইয়াহিয়া বৈঠক শুরু হয়। ২৫ মার্চ আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার পর সন্ধ্যায় ইয়াহিয়া ঢাকা ত্যাগ করেন। ২৫ মার্চ রাতে নিরীহ-নিরস্ত্র বাঙালির ওপর পাকিস্তান সেনাবাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়ে। আক্রমণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পিলখানা রাইফেল সদর দফতর ও রাজারবাগ পুলিশ হেডকোয়ার্টার।
বঙ্গবন্ধু ২৫ মার্চ রাত ১২টা ২০ মিনিটে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন : ইংরেজিতে প্রচারিত সে ঘোষণার বাংলায় তর্জমা করলে দাঁড়ায়- ‘এটাই হয়তো আমার শেষ বার্তা, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। বাংলাদেশের জনগণ, তোমরা যে যেখানেই আছ এবং যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শেষ পর্যন্ত দখলদার সৈন্য বাহিনীকে প্রতিরোধ করার জন্য আমি তোমাদের আহ্বান জানাচ্ছি। পাকিস্তান দখলদার বাহিনীর শেষ সৈন্যটিকে বাংলাদেশের মাটি থেকে বিতাড়িত করে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত তোমাদের যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে।’
এই ঘোষণা বাংলাদেশের সর্বত্র ওয়্যারলেস, টেলিফোন ও টেলিগ্রামের মাধ্যমে প্রেরিত হয়। এর সঙ্গে সঙ্গে তিনি বাংলায় নিম্নলিখিত একটি বার্তা পাঠান :
‘পাকিস্তান সেনাবাহিনী অতর্কিতভাবে পিলখানা ইপিআর ঘাঁটি, রাজারবাগ পুলিশ লাইন আক্রমণ করেছে এবং শহরের রাস্তায় রাস্তায় যুদ্ধ চলছে, আমি বিশ্বের জাতিসমূহের কাছে সাহায্যের জন্য আবেদন করেছি। আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা বীরত্বের সঙ্গে মাতৃভূমি মুক্ত করার জন্য শত্রুদের সঙ্গে যুদ্ধ করছে। সর্বশক্তিমান আল্লাহর নামে আপনাদের কাছে আমার আবেদন ও আদেশ দেশকে স্বাধীন করার জন্য শেষ রক্তবিন্দু থাকা পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যান। আপনাদের পাশে এসে যুদ্ধ করার জন্য পুলিশ, ইপিআর, বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও আনসারদের সাহায্য চান। কোনো আপস নেই। জয় আমাদের হবেই। পবিত্র মাতৃভূমি থেকে শেষ শত্রুকে বিতাড়িত করুন। সব আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী এবং অন্যান্য দেশপ্রেমিক প্রিয় লোকদের কাছে এ সংবাদ পৌঁছে দিন। আল্লাহ আপনাদের মঙ্গল করুন। জয় বাংলা।’
বঙ্গবন্ধুর এই বার্তা তাৎক্ষণিকভাবে বিশেষ ব্যবস্থায় সারা দেশে পাঠানো হয়। সর্বস্তরের জনগণের পাশাপাশি চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও যশোর সেনানিবাসে বাঙালি জওয়ান ও অফিসাররা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খান এক ভাষণে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন এবং বঙ্গবন্ধুকে দেশদ্রোহী বলে আখ্যায়িত করেন। এর বিপরীতে ওই তারিখেই অর্থাৎ ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ চট্টগ্রাম স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা এম এ হান্নান বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণাপত্রটি পাঠ করেন।
১৯৭১-এর ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি অপারেশন সার্চ লাইটের কার্যক্রম শুরু করেছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পিলখানা ইপিআর, রাজারবাগ পুলিশ লাইন, জগন্নাথ হল প্রভৃতি স্থানে নির্বিচারে নিরস্ত্র মানুষের ওপর হামলা শুরু হয়েছিল। বাঙালিদের মুক্তি সংগ্রাম শুরু হওয়ার চূড়ান্ত মুহ‚র্তে বঙ্গবন্ধু বিভিন্ন মহলের পক্ষ থেকে বলা সত্ত্বেও তাঁর ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের বাসভবন ছেড়ে যাননি। এরপর পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে। ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধুর বাসভবন থেকে পাকিস্তানি সেনা সদস্যরা ভোর রাত ১.১০টায় বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা সেনানিবাসে নিয়ে গিয়েছিল। পরদিন ২৬ মার্চ তাঁকে বিমানে করে পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল কারাগারে বন্দি করে রাখার জন্য। ১৯৭১ সালের আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা লায়ালপুর কারাগারে গোপনে বঙ্গবন্ধুর বিচার করা হয়। এতে তাঁকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছিল। একাত্তরের ১০ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি করে বিপ্লবী সরকার গঠন করা হয়। ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে (মুজিবনগর) বাংলাদেশ সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলাম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দিন আহমদ প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।
১৯৭১ সালের ২৩ আগস্ট, সোমবার বিশ্বখ্যাত টাইম ম্যাগাজিনের একটি হেড লাইন ছিল ‘পাকিস্তান : মুজিব’স সিক্রেট ট্রায়াল’। এখানে বলা হয়েছে, ‘যদিও বিচারের ব্যাপারে সবকিছুই ছিল গোপন রহস্যাবৃত, গত সপ্তাহে জানা গিয়েছে যে রাওয়ালপিন্ডি থেকে ১৫০ মাইল দক্ষিণে, টেক্সটাইল নগরী লায়ালপুরে একটি নতুন, একতলা লাল ইটের তৈরি দালানে বিচার কাজ হয়েছে। ইসলামাবাদের উৎসগুলো দাবি করছে যে মুজিবকে উদ্ধার করে নিয়ে আসতে বাঙালি বিদ্রোহীদের চেষ্টাকে প্রতিরোধ করার জন্য কঠোর গোপনীয়তা প্রয়োজন। আরো কারণ হচ্ছে ইয়াহিয়া মুজিবকে একটি পাবলিক প্লাটফরম দিতে অনিচ্ছুক ছিলেন। শেখ মুজিব যখন ১৯৬৮ সালে সাজাপ্রাপ্ত হয়েছিলেন, যেটিও ছিল পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে বিদ্রোহের কারণে, তখনো বিচার প্রক্রিয়া ব্যাপক-বিস্তৃত সরকার বিরোধী প্রতিবাদের কারণে বাতিল করা হয়েছিল। পরে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান একজন পরিদর্শককে বঙ্গবন্ধুর সাজা সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘My generals want a trial and execution.’
ব্রিটেনের সংবাদপত্র দ্য সানডে টেলিগ্রাফ-এ ১৯৭২ সালের ৯ জানুয়ারি ‘শেখ মুজিব ফ্লাইস এন্ড সিছ হিথ, প্লিয়া ফর হেল্প’ শিরোনামে একটি সংবাদ পরিবেশিত হয়। এই সংবাদটির উপশিরোনাম ছিল, ‘জেলর হিড শেখ’। এই রিপোর্টে বলা হয়, ‘একজন বাংলাদেশি অফিসিয়াল গতরাতে লন্ডনে বলেছেন যে একজন জেলরের সাহায্যে শেখ মুজিবুর রহমান সাজা এড়িয়েছিলেন। তিনি (সেই জেলর) জানতেন যে ইয়াহিয়া খান তাঁকে অপহরণ করে নিয়ে যাবে এবং তিনি তখন শেখকে তাঁর ব্যক্তিগত কোয়ার্টারে দুই দিন লুকিয়ে রেখেছিলেন।’ বাংলাদেশ ডেলিগেশনের একজন মুখপাত্র ক্লারিজেস হোটেলে (লন্ডনে বঙ্গবন্ধু যে হোটেলে ছিলেন) বলেন, ‘একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের একেবারে শেষ দিকে শেখকে যে কারাগারে রাখা হয়েছিল সেখানের সিমেন্টের মেঝেতে একটি কবর খনন করা হয়েছিল। পরবর্তীকালে বঙ্গবন্ধুকে বলা হয়েছিল যে, সাজা কার্যকর করার জন্য প্রস্তুত করা ইয়াহিয়ার স্কোয়াড মিথ্যা দলিল-দস্তাবেজ নিয়ে উপস্থিত হয়েছিল, যাতে দেখানো হয়েছে যে শেখকে অক্টোবরের শেষ দিকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে।’
দেশ যখন ঐতিহাসিক বিজয়ের আনন্দে ভাসছিল তখনো বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি ছিলেন। সমগ্র জাতি বঙ্গবন্ধুর জীবন নিয়ে শঙ্কিত ছিল এবং অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল কখন বঙ্গবন্ধু স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করবেন। ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি রাওয়ালপিন্ডি থেকে রয়টার পরিবেশিত একটি বার্তায় বলা হয়েছিল যে, পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ার লাইনসের একটি বিশেষ বিমান বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একটি অপ্রকাশিত গন্তব্যের তিকে রওয়ানা দিয়েছে। তবে পরবর্তী কয়েক ঘণ্টাব্যাপী কোনো ফলোআপ নিউজ ছিল না। স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশ অশেষ ভীতি ও আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছিল। সবশেষে জানা গেল যে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান থেকে লন্ডন পৌঁছেছেন। বঙ্গবন্ধু সম্পর্কিত সংবাদ পরিবেশনে নীরবতা ভেঙে রেডিও পাকিস্তান সেদেশ থেকে বঙ্গবন্ধুর রওয়ানা দেয়ার কথা প্রচার করল। এতে বলা হয়েছিল প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টো বিমানবন্দরে বঙ্গবন্ধুকে বিদায় জানিয়েছেন। লন্ডন হয়ে বাংলাদেশ যাওয়ার পথে ১৯৭২ সালের ৯ জানুয়ারি সাইপ্রাসের নিকোশিয়ায় একটি বিমানবন্দরে বঙ্গবন্ধুকে দেখা গিয়েছিল। যখন খবর পাওয়া গেল যে বঙ্গবন্ধু নিরাপদে লন্ডন পৌঁছেছেন তখন সমগ্র দেশ বিজয়োল্লাসে মেতে উঠেছিল। লন্ডন পৌঁছেই তিনি ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। ঢাকায় তিনি ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছিলেন। এ সময় ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী লক্ষেèৗ থেকে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন। লন্ডন থেকে যখন ঢাকা আসার পথে বঙ্গবন্ধু দিল্লি বিমানবন্দরে যাত্রা বিরতি করেন। এ সময় মুক্তিযুদ্ধে সর্বাত্মক সহয়োগিতা ও সমর্থন করার জন্য তিনি ভারতের জনগণ ও সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তবে এ সময়েও তিনি তাঁর দেশের সার্বভৌমত্ব ও জনগণের অনুভূতি সম্পর্কে সতর্ক ছিলেন। তখনো বাংলাদেশ থেকে ভারতীয় সেনাবাহিনী ফিরিয়ে নেয়াটাই যে প্রধানতম প্রয়োজন একথা বলতে বঙ্গবন্ধু ক্ষণিকের জন্যও ভুলে যাননি। সুতরাং সাক্ষাতের প্রথম সুযোগেই বঙ্গবন্ধু শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে ভারতীয় সৈন্য কবে ফিরিয়ে নেয়া হবে?’ সঙ্গে সঙ্গে ইন্দিরা গান্ধী উত্তর দিয়েছিলেন, ‘আপনি যখনই বলবেন, তখনই তা করা হবে।’ এরপর বঙ্গবন্ধু ঢাকা ফিরে আসেন।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে মার্চ, ২০১৬ সকাল ৯:৪৫

বিজন রয় বলেছেন: ভাল লাগল।
+++

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.