নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যাহা বলিব সত্য বলিব

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।

তালপাতারসেপাই

লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।

তালপাতারসেপাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিএনপির কাউন্সিল প্রসঙ্গে

২৪ শে মার্চ, ২০১৬ সকাল ৯:৪০

প্রহসন দিয়েই শুরু করেছে বিএনপি তাদের কাউন্সিল অধিবেশন। গণতন্ত্রের চর্চার নামে একটি অতিনাটকীয় মহড়ার মাধ্যমে বেগম জিয়া ও তার সুপুত্র তারেক জিয়াকে সর্বোচ্চ শিখরে পুনরোধিষ্ঠিত করেছে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায়। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিঞ্চিৎ পরিহাস করেছেন দেখে বিএনপির কর্ণধাররা আগ্নেয়গিরির লাভা স্রোতের মতো উত্তপ্ত প্রতিবাদ করেছেন। আর কোনো পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতার মহড়া হয়নি। গণতন্ত্রের নমুনা এতটুকুই।
কয়েকদিন যাবৎ দেখছি পত্রপত্রিকায় বিএনপির কাউন্সিল অধিবেশন নিয়ে জাতীয় পত্রিকাগুলোতে বেশ গুরুত্বের সঙ্গেই আলোচনা হচ্ছে। হওয়ারই কথা। এক বড় দল! বিএনপির মহাসচিব আলমগীর সাহেব বলেছেন যে, কাউন্সিলের পরে বিএনপি ফিনিক্স পাখির মতো ঘুরে দাঁড়াবে। এবার তাদের স্লোগান, ‘দুর্নীতি দুঃশাসন হবেই শেষ : গণতন্ত্রের বাংলাদেশ।’ দুর্নীতির শিরোমণিদের মাথার ওপর বসিয়ে এমন স্লোগান শোভা পায় নাকি? আজকাল দেখি রাজনীতির ময়দানের এক ডেডহর্স, যিনি ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ, ডেমোক্রেটিক লীগ, জাতীয় পার্টির সাত সমুদ্দুর তের নদী পার হয়ে তারেক-খালেদা নিজামীর জোটে ভিড়ে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষুরধার বাকপটুতা দেখাচ্ছেন। তার বাকশৈলী পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে, তারপর আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে, বিএনপির বিরুদ্ধে এবং তার এক সময়ের পিতৃতুল্য ভক্তিভাজন নেতা ‘মহামান্য রাষ্ট্রপতি’ এরশাদের বিরুদ্ধেও ব্যবহার করেছেন। পতিত স্বৈরাচারের এই দোসর সেদিন আওয়ামী লীগ, শেখ হাসিনা এমনকি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বিরুদ্ধেও অশ্রাব্য কথা বলেছেন। বিএনপি দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য কি স্বৈরাচারের ওই দোসরকে ভাড়া করেছে? সর্বোচ্চ নীতিভ্রষ্ট একজন বাকপটু সাবেক নেতা শুধু গালাগালি করে বিএনপির কী উপকার করবে?
রাজনীতি একটি ধর্মনিরপেক্ষ শব্দ। ধর্মনিরপেক্ষ দর্শন ব্যতীত রাষ্ট্র হয় না, রাজনীতিও হয় না। ধর্মনিরপেক্ষতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে যে দল রাজনীতি করবে, তাদের স্ববিরোধিতা মুখ ব্যাদান করে প্রকাশিত হবে। বিএনপিও তেমনি একটি দল। বিএনপি ধর্মের দোহাই দিয়ে রাজনীতিতে ধর্মের ক্ষতি করেছে, রাষ্ট্রেরও ক্ষতি করেছে। এই কাউন্সিলেও তারা রাজনীতিতে ধর্মের অপব্যবহারের ক্ষতিকর দিকটি চিহ্নিত করেনি।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে জখম করে, স্বাধীনতার প্রত্যক্ষ শত্রুদের সঙ্গে নিয়ে, হেফাজতের মতো মধ্যযুগীয় বর্বরদের সঙ্গে নিয়েই বিএনপি আগামী দিনগুলোতে পথ চলবে কিনা, সে সম্পর্কে কোনো বক্তব্য নেই বিএনপির। শুধুমাত্র প্রতিপক্ষকে পর্যুদস্ত করে ক্ষমতায় যাওয়ার উদগ্র চর্চা করবে না করে দলের মেনিফেস্টোকে আধুনিক, যুগোপযোগী, বিশ্বায়নমুখী, বর্ণবাদ, ফ্যাসিবাদ, সাম্প্রদায়িকতাবাদ বিরোধী কোনো বক্তব্য সামনে টেনে আনার কোনো পদক্ষেপ বিএনপি নিতে পারেনি। ক্ষমতায় যাওয়া এবং টিকে থাকার স্বার্থে রাষ্ট্রের সর্বজনীন চেতনাকে দ্বিখণ্ডিত করে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক পরিণত করার হীন রাজনীতি বিএনপি ত্যাগ করবে কিনা, তার প্রতিশ্রæতি কাউন্সিলে দেয়া হয়নি। তাহলে ধরে নিতে পারি, দায় ঠেকে, ঠোক্কর খেয়ে, ওপর কাঠামোতে কিছু পরিবর্তনের চুনকাম লাগালেও বিএনপি দলীয় অবকাঠামোর পরিবর্তন করেনি। দলে সদ্য আগত, বাকপটু নেতা শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন বলেছেন, ‘শেখ মুজিবুর রহমান একজন বড় নেতা। আমি তাকে সম্মান করি। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের সময় তার কোনো ভূমিকা ছিল না। কারণ সে সময় তিনি পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি ছিলেন। এ সময় জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।’ (যায় যায় দিন-১১/৩/১৬)।
কাউন্সিল সামনে রেখে বিএনপি শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনকে দিয়ে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে এই বিতর্কিত, বাহুল্য কথা বলিয়েছে। অর্থাৎ বিএনপি কখনো বঙ্গবন্ধুকে প্রাপ্য সম্মান দিয়ে রাজনীতি করবে না, টাগ অব ওয়ার চলতেই থাকবে, যেমন শিয়া-সুন্নীর দ্ব›দ্ব চলছে। শাহ মোয়াজ্জেম আরো বলেছেন, ‘বিএনপি ক্ষমতায় গেলে শাপলা চত্বরকে শাহাদাৎ চত্বর নামকরণ করবে। আমাদের দুর্ভাগ্য ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশে আমরা তাদের পাশে থাকতে পারিনি।’ (যায় যায় দিন ১১/৩/১৬)।
তাহলে বিএনপি ধর্মীয় উগ্রপন্থার রাজনীতি আর কখনো ত্যাগ করবে না, সেটা পরিষ্কার হলো। তেঁতুল হুজুরদের উস্কানি দেয়ার রাজনীতিই তারা করবে। তাহলে ধরে নিতে পারি, বিএনপি ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে, রাজনীতিতে হোঁচট খেয়ে, মুখে যা-ই বলুক স্বাধীনতার মূল্যবোধের রাজনীতি তারা করবে না, জামায়াত-হেফাজতকে তারা ছাড়বে না, যুদ্ধাপরাধীদের তারা ত্যাগ করবে না, অসাম্প্রদায়িক চেতনার পথে পা বাড়াবে না, জঙ্গি উগ্রপন্থীদের নিন্দা করবে না, অসাম্প্রদায়িক-মানবিক-ধর্মনিরপেক্ষ চেতনার চর্চা বিএনপির ছাউনিতে মূল্য পাবে না, শুধু আওয়ামী লীগকে দোষারোপ করার দরকার হলে তখন কোনো কথা বলা যাবে।
এই নীতি একটি দলের শিরা-উপশিরায় প্রবাহিত হলে সে দলের হুঙ্কার থেকে অপসংস্কৃতি জন্ম লাভ করবে কিন্তু গণতান্ত্রিক পথ নিষ্কণ্টক হবে না। জামায়াত হেফাজতের বৃক্ষে গণতন্ত্রের ফল ধরবে, কোনো পাগলেও এ কথা বিশ্বাস করবে না। পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা জিন্নাহ কখনো জামায়াত আর মোল্লা মওদুদীর নাম শুনতে পারতেন না, আর বিএনপি নাকি জামায়াতকে দোসর করে গণতন্ত্রের ফুল ফোটাবে! জামায়াতের চাপে পড়ে বিএনপি জাতীয় নির্বাচন বর্জন করে জ্বালাও-পোড়াও এবং বোমা মেরে মানুষ হত্যার নীতি গ্রহণ করে মানুষের বিরাগভাজন হয়েছে। ধর্মান্ধতা ছাড়তে পারে না তারা জামায়াতের কারণে। অন্তরে সাম্প্রদায়িক বিভেদ লুকিয়ে রেখে, রাজনীতিকে সেকুলারমুখী না করে বিএনপি ভঙ্গি দিয়ে ভাব ভুলাতে পারবে না। সরকারের বিরোধিতা করাই গণতন্ত্র নয়; সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করা, মুক্তিযুদ্ধের ম্যান্ডেটের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া, যে কোনো ধরনের পশ্চাৎপদ চিন্তা পরিহার করে বিজ্ঞানমনস্ক, আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি অবলম্বন করে রাজনীতির চর্চাকে প্রাধান্য দেয়াও গণতন্ত্র।
শুধু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে শো-হিসেবে ধরে রাখলেই দল অসাম্প্রদায়িক-সর্বজনীন হয় না। মুসলিম লীগেও যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল ছিলেন। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে বিএনপির রাজনীতি করার পথ উন্মুক্ত করে দিতে হবে। ভারত বিরোধিতা আর হিন্দুবিদ্বেষী বক্তব্য মনেপ্রাণে পরিহার করতে হবে। ইসলামপন্থী জঙ্গিদের বিষয়ে বিএনপির কোনো বক্তব্যই নেই। এই যে মধ্যপ্রাচ্যে আইএসআর বোকো হারামের বর্বরতা চলছে, এ ব্যাপারেও বিএনপির কোনো উদ্বিগ্নতা নেই। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও তার পশ্চিমা মিত্ররা সব সময় বিএনপি-জামায়াতকে মিত্র ভাবে, বিএনপি তাদের দুয়ারে বহুবার ধরনা দিয়েছে সরকারের চলৎশক্তি বাধাগ্রস্ত করার জন্য। এই দেশ বিরোধী চিন্তা পরিহার করা উচিত বিএনপির।
১৯৭২-এর সংবিধানে ফিরে আসার দৃষ্টিভঙ্গি বিএনপিরও থাকা উচিত। ক্ষমতা লাভের কৌশল হিসেবে বাংলার মাটি থেকে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি চিরতরে উৎখাত করার দৃষ্টিভঙ্গি বিএনপিরও থাকা উচিত। এই কাউন্সিলে এসব কোনো চিন্তা করেনি বিএনপি, পদক্ষেপ নেয়াতো দূরের কথা। ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে সামান্যতম বক্তব্য নেই বিএনপির। একজন বৃদ্ধ গোপনে খ্রিস্টধর্ম প্রচার করত তাকে হত্যা করেছে, পর পর দু’জন হোমিও চিকিৎসক শিয়া সম্প্রদায়ের লোক হওয়ায় তাদের হত্যা করা হয়েছে, অতিসম্প্রতি একজন পুরুহিত হত্যা করা হয়েছে। এসব মোটেও ভালো কথা নয়। ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা বিএনপি-জামায়াতকে কেন্দ্র করে বিস্তার লাভ করেছে। জঙ্গিরা মনস্তাত্তি¡কভাবে বিএনপি আশ্রিত। সুতরাং শনিবারের কাউন্সিলে বিএনপি দলকে সর্বজনীন-আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গিতে চলার কোনো প্রতিশ্রæতি জাতিকে দেয়নি। বিএনপির কাউন্সিলের ফলাফল দাঁড়াল যথা পূর্বং তথা পরং। সুত্র

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.