নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধে অসামান্য অবদান রয়েছে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের। সঠিক খবর ও অনুষ্ঠান প্রচারের মাধ্যমে তৎকালীন সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালীকে উৎসাহ, উদ্দীপনা, সাহস ও অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল এই বেতার কেন্দ্র। অনেক ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধকেও পরিচালিত করত স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র। দীর্ঘ নয় মাস ধরে তেজস্বিনী ভাষা আর দৃপ্তকণ্ঠের প্রচারনা মুক্তিকামী বাঙ্গালীদের বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেয়। বিশ্বের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের বিপুল অবদান অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র একটি অস্থায়ী বেতার সম্প্রচার কেন্দ্র যা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকালে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ৬ ডিসেম্বর ভারত বাংলাদেশকে সার্বভৌম স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেবার পর এর নাম বদলে বাংলাদেশ বেতার করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ২২ ডিসেম্বর স্বাধীন বাংলাদেশে ঢাকা থেকে সম্প্রচার শুরু করে বাংলাদেশ বেতার যা এতকাল রেডিও পাকিস্তানের ঢাকা কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ছিল। যুদ্ধের সময়ে প্রতিদিন মানুষ অধীর আগ্রহে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অনুষ্ঠান শোনার জন্য অপেক্ষা করত।
১৯৭১ এর ২৫ মার্চের কালোরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঢাকা শহরের কয়েক হাজার নিরস্ত্র বাঙালি নিধন করে এবং একই সাথে শেখ মুজিবকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের আগে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা এবং একটি সংক্ষিপ্ত বার্তা প্রদান করে যান। বার্তাটি ঢাকা ইপিআর ওয়ারলেস স্টেশন থেকে চট্টগ্রামে ২৫ শে মার্চ মধ্যরাতে পৌঁছলেও পাকিস্তানীরা ইপিআর ওয়ারলেস ধ্বংস করে দেয়। ভোর হবার আগেই বার্তাটির শত শত কপি তৈরী করা হয় একটা সাইক্লোষ্টাইল মেশিনের সাহায্যে। ২৬ মার্চ দুপুর বেলা চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগ নেতা এম এ হান্নান চট্টগ্রামের কালুরঘাট ট্রান্সমিশন কেন্দ্র হতে বঙ্গবন্ধুর ঐ বার্তা পাঠ করেন।
বেলাল মোহাম্মদ এবং আবুল কাশেম সন্দীপসহ তৎকালীন চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্রের কয়েকজন বেতারকর্মী চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্রকে যুদ্ধে কাজে লাগানোর চিন্তা করেন এবং তার নতুন নাম দেন ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র’। নিরাপত্তার কারণে তারা চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্রকে কাজে না-লাগিয়ে শহর থেকে কিছু দূরে কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে চলে যান এবং ২৬ মার্চ সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে প্রথম প্রচার করেন স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র। সে সময়েও এম এ হান্নান বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণাটি পাঠ করেন। তবে তা খুব কম লোকেই শুনতে পায়। প্রায় ১ ঘণ্টা অনুষ্ঠান প্রচার করার পর তারা পরদিন সকাল ৭টায় পরবর্তী অনুষ্ঠান প্রচারের ঘোষণা দিয়ে সেদিনের পর্ব শেষ করেন।
তারা ২৭ মার্চ সকালে বেতার কেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য পটিয়ায় মেজর জিয়ার কাছে গিয়ে এ ব্যাপারে সাহায্য চান। সেখান থেকে তারা জিয়াউর রহমানকে সাথে করে কালুরঘাট ফেরত আসেন। সেদিন ২৭ মার্চ রাত ৮টায় এক নতুন লিখিত ও সম্প্রসারিত বক্তব্যের মাধ্যমে মেজর জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর পক্ষ থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। যা বিশ্বের গণমাধ্যমগুলো শুনতে পায়।
এর পরদিন ২৮ মার্চ মেজর জিয়ার পরামর্শে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র হতে ‘বিপ্লবী’ শব্দ বাদ দিয়ে নাম হয় ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র’। ২৮ মার্চ প্রথম অধিবেশনে বিমান হামলায় করণীয় সম্পর্কে নির্দেশমালা প্রচারিত হয় এবং দ্বিতীয় অধিবেশনে প্রথম একটি কথিকা পাঠ করা হয়। ৩০ মার্চ প্রভাতী অধিবেশনে প্রথম বারের মত ‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’ গানটি প্রচারিত হয়। এদিন দুপুর ২টার পরপর বেতার কেন্দ্রে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী বিমান হামলা করে। এতে কেউ হতাহত না হলেও বেতার কেন্দ্র এবং সম্প্রচার যন্ত্র ক্ষতিগ্রস্থ হয় ও সম্প্রচার বন্ধ হয়ে যায়।
৩১ মার্চ সকালে কয়েক জন বেতারকর্মী বেতার কেন্দ্রে অবস্থিত একটি এক কিলোওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ছোট সম্প্রচার যন্ত্র উদ্ধার করেন। এই সম্প্রচার যন্ত্র সাথে করে নিয়ে তারা ঐদিনই পটিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেন এবং ১ এপ্রিল পটিয়ায় পৌঁছেন। এরপর তারা ৩ এপ্রিল সম্প্রচার যন্ত্রটি পটিয়ায় রেখে রামগড়ে চলে যান। তারা ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স তত্ত্বাবধানে ভারতীয় সীমান্তে অবস্থিত ভারত প্রদত্ত একটি শর্ট ওয়েভ ট্রান্সমিটার থেকে আবার অনুষ্ঠান সম্প্রচার করেন।
তারপর ৪ এপ্রিল তাদের একটি দল এক কিলোওয়াট সম্প্রচার যন্ত্রটি আনার জন্য পটিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেন এবং অপর দল বাগফায় চলে যান। তারা বাগফা হতে ৪-৮ এপ্রিল পর্যন্ত একটি ৪০০ ওয়াট সম্প্রচার যন্ত্র দিয়ে সম্প্রচার চালাতে থাকেন। এরপর তারা ১১ এপ্রিল আগরতলায় পৌঁছান। অন্যদিকে দ্বিতীয় দলটি তখন ১ কিলোওয়াট ট্রান্সমিটারটি নিয়ে ১০ এপ্রিলে বাগফা-বেলোনিয়া সড়কের পাশে বাংলাদেশ সীমান্ত হতে ১০ মাইল দূরে স্থাপন করেন এবং ১২ এপ্রিল তারা সেখান থেকে অনুষ্ঠানও সম্প্রচার করেছিলেন। এ সময় অনুষ্ঠান রেকর্ড করে সম্প্রচার কেন্দ্র থেকে শর্ট ওয়েভে প্রচার করা হতো।
এর মধ্যে ১০ এপ্রিল অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয় এবং প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ ১১ এপ্রিল অল ইন্ডিয়া রেডিও’র শিলিগুড়ি কেন্দ্রকে ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র’ হিসাবে উল্লেখ করে সেখান থেকে ভাষণ প্রদান করেন এবং এরপরেও বেশ কিছুদিন ঐ কেন্দ্র হতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ভাষণসহ আরো নানাবিধ অনুষ্ঠান প্রচারিত হয়।
১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ১০ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠনের পর মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশ সরকার ও বেতারকেন্দ্রের কর্মীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ভারত সরকার বাংলাদেশ সরকারকে একটি শক্তিশালী ট্রান্সমিটার প্রদান করে। এসময় সকল বেতারকর্মীদের ধীরে ধীরে মুজিবনগরে নিয়ে আসা হতে থাকে। ঢাকা থেকেও ঢাকা বেতারের শিল্পী-কুশলীরাও আসতে থাকেন। প্রথম অধিবেশনের দিন ধার্য করা হয় কবি নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী ১১ জ্যৈষ্ঠ তথা ২৫ মে তারিখ।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের প্রতিটি কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন অসংখ্য শিল্পী ও কলাকুশলী। এরমধ্যে গীতিকার ছিলেন সিকান্দার আবু জাফর, আবদুল গাফফার চৌধুরী, নির্মলেন্দু গুণ, আসাদ চৌধুরী, টি এইচ শিকদার প্রমুখ। সংগীতশিল্পীদের মধ্যে সমর দাস, আবদুল জব্বার, আপেল মাহমুদ, রথীন্দ্রনাথ রায়, অরুন গোস্বামী, মান্না হক, মাধুরী চ্যাটার্জী, এম চান্দ, ইয়ার মোহাম্মদ, প্রবাল চৌধুরী, কল্যানী ঘোষ, উমা খান, নমিতা ঘোষ, স্বপ্না রায়, জয়ন্তী লালা, অজিত রায়, সুবল দাশ, কাদেরী কিবরিয়া, লাকি আখন্দ, ইন্দ্রমোহন রাজবংশী, বুলবুল মহলানবীশ, ফকির আলমগীর, মকসুদ আলী সাই, মিতালী মূখার্জী, মলয় গাঙ্গুলী, রফিকুল আলম প্রমুখ। সঙ্গীত কম্পোজ করতেন প্রনোদিত বডুয়া। যন্ত্র সঙ্গীতে ছিলেন শেখ সাদী, সুজেয় শ্যাম, কালাচাঁদ ঘোষ, গোপী বল্লভ বিশ্বাস, হরেন্দ্র চন্দ্র লাহিড়ী, সুবল দত্ত, বাবুল দত্ত, অবীনাশ শীল, সুনীল গোস্বামী, তড়িৎ হোসেন খান, দিলীপ দাশগুপ্ত, দিলীপ ঘোষ, জুলু খান, রুমু খান, বাসুদেব দাশ, সমীর চন্দ, শতদল সেন প্রমুখ। ঘোষক হিসেবে ছিলেন শেখ সাদী, শহিদুল ইসলাম, মোতাহের হোসেন, আশরাফুল আলম, অনিল কুমার, আবু ইউনুছ, জাহেদ সিদ্দিকী, মনজুর কাদের। লাইব্রেরিয়ানের দায়িত্বে পালন করতেন রঙ্গলাল দেব চৌধুরী ও স্টুডিও কর্মকর্তা ছিলেন এস এম সাজ্জাদ।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কিছু নিয়মিত অনুষ্ঠানের মধ্যে ছিলো পবিত্র কোরআনের বাণী, চরমপত্র, মুক্তিযুদ্ধের গান, যুদ্ধক্ষেত্রের খবরাখবর, রণাঙ্গনের সাফল্যকাহিনী, সংবাদ বুলেটিন, ধর্মীয় কথিকা, বজ্রকণ্ঠ, নাটক, সাহিত্য আসর এবং রক্তের আখরে লিখি। সবচেয়ে জনপ্রিয় ছিল আব্দুল মান্নানের পরিকল্পনায় ‘চরমপত্র’ অনুষ্ঠানটি। এখানে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর অসংলগ্ন অবস্থানকে পুরনো ঢাকার আঞ্চলিক ভাষার সংলাপে তুলে ধরা হতো। আরেকটি জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘জল্লাদের দরবার’ পরিচালনা করতেন কল্যাণ মিত্র। অনুষ্ঠানটিতে ইয়াহিয়া খানকে ‘কেল্লা ফতে খান হিসেবে’ ব্যঙ্গাত্মকভাবে ফুটিয়ে তোলা হত। ‘বজ্র কণ্ঠ’ অনুষ্ঠানে শেখ মুজিবর রহমানের ভাষণের অংশবিশেষ সম্প্রচার করা হত। বেতার কেন্দ্রে তরুণ শিল্পীরা দেশাত্মবোধক ও অনুপ্রেরণাদায়ক গান করতেন। সম্প্রচারের জন্য এসময় অনেক গান ও কবিতা লেখা হয়। এছাড়া বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলা, ইংরেজি ও উর্দুতে সংবাদ সম্প্রচার করা হত।
সুত্র
২| ২৭ শে মার্চ, ২০১৬ সকাল ৯:১০
মুজিব আলম বলেছেন: আপনার মতিভ্রম হয়েছে। জিয়া কখনও মুক্তিযোদ্ধা ছিলনা। ওনি তো রাজাকার ছিলেন।
৩| ২৭ শে মার্চ, ২০১৬ সকাল ১০:৩৫
রোষানল বলেছেন: কাদা ছোড়া ছুড়ি বন্ধ
৪| ২৭ শে মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১২:২৬
মারুফ তারেক বলেছেন: পাগলের সুখ মনে মনে
পাতা টুকায়, ট্যাকা গুনে।
মুজিব আলম- আপনি কবেকার ইতিহাসবিদ?
©somewhere in net ltd.
১| ২৭ শে মার্চ, ২০১৬ সকাল ৮:২২
বিজন রয় বলেছেন: আমরা জানি।