নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যাহা বলিব সত্য বলিব

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।

তালপাতারসেপাই

লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।

তালপাতারসেপাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রভাব

২৮ শে মার্চ, ২০১৬ সকাল ১০:০০

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ দক্ষিণ এশিয়ায় অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এক শক্তিশালী, রক্তাক্ত ও ইতিহাসের মোড় ঘোরানো ঘটনা। প্রাথমিকভাবে মুক্তিযুদ্ধ হচ্ছে পাকিস্তানি সাম্প্রদায়িক মতাদর্শের অভিশাপ থেকে মুক্তিলাভের জন্য (পূর্ব) বাঙালিদের যুদ্ধ! তাই আপাত দৃষ্টিতে এটি শুধু স্বাধীন বাংলাদেশেরই জন্ম দিয়েছে! তবে একটু গভীরে লক্ষ্য করলেই বোঝা যাবে যে, দক্ষিণ এশিয়ায় একটি নতুন অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র উদ্ভবের ফলে একদিকে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র পাকিস্তানের সংকীর্ণ মতাদর্শের ভিত দুর্বল হয়ে পড়েছে; অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধে আন্তরিক সহযোগিতার মধ্য দিয়ে, অসাম্প্রদায়িকতার প্রতি দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম রাষ্ট্র ভারতের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত হয়েছে। দৃশ্যত দক্ষিণ এশিয়ার রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে পাকিস্তানে হিন্দু ও খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীরা সংখ্যালঘু; ভারতে মুসলমান, খ্রিস্ট, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন প্রভৃতি; বাংলাদেশে হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীরা সংখ্যালঘু; এবং শ্রীলংকায় তামিল ও মুসলমানরা সংখ্যালঘু। দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর সংখ্যালঘুদের বিষয়টি আলোচনার পাদপ্রদীপে তেমন একটা আসে না। তবে শ্রীলংকার তামিলদের সমস্যা নিয়ে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষ হয়েছে। সে দেশের সরকার এ বিষয়ে জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে বিভিন্নমুখী আলাপ-আলোচনা করছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি নিয়ে সংঘটিত হলেও অসাম্প্রদায়িক ও আধুনিকমনস্কতাসম্পন্ন রাজনীতি এখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি, এজন্য আরো অনেক পথ অতিক্রম করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালে সংঘটিত হলেও, প্রকৃতপক্ষে সাম্প্রদায়িকতার সংকীর্ণ রাজনীতি থেকে মুক্তির সংগ্রাম এখনো শেষ হয়নি। এ প্রসঙ্গে লন্ডনের কিংস কলেজের ইন্ডিয়া ইন্সটিটিউটের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো শ্রীনাথ রাঘবনের ১৯৭১ : অ এষড়নধষ ঐরংঃড়ৎু ড়ভ ঃযব ঈৎবধঃরড়হ ড়ভ ইধহমষধফবংয শীর্ষক গ্রন্থের বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য। রাঘবন বলছেন, ঋড়ৎ ঃযব ঢ়বড়ঢ়ষবং ড়ভ ঝড়ঁঃয অংরধ, ঃযব পড়হভষরপঃ যধং হড়ঃ ৎবধষষু ভরহরংযবফ. ঋড়ৎ যরংঃড়ৎরধহং, রঃ যধং নধৎবষু নবমঁহ. ঞড় নব ংঁৎব, ঃযব মঁহং যধফ যধৎফষু ভধষষবহ ংরষবহঃ যিবহ ঃযব ভরৎংঃ ধপপড়ঁহঃং নু লড়ঁৎহধষরংঃং ধহফ ধহধষুংঃং নবমধহ ঃড় নব ঢ়ঁনষরংযবফ. (ঢ়.৪)। অর্থাৎ দক্ষিণ এশিয়ার জনগণ বুঝতে পেরেছে, সংঘাতটি আসলে শেষ হয়নি। ইতিহাসবিদরা মনে করছেন, এটি কেবল শুরু হয়েছে। নিশ্চিতার্থেই, বন্দুক খুব অল্পই নীরব হয়েছে, যখন সাংবাদিক ও বিশ্লেষকদের প্রথম বিবরণ প্রকাশ হওয়া শুরু হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের মধ্য থেকে শব্দান্তর করে একটি বাক্যের মর্মার্থ অনুধাবনের চেষ্টা করতে পারি, বঙ্গবন্ধু বলছেন, 'আমরা যখন', অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি প্রতিষ্ঠার জন্য, 'মরতে শিখেছি, তখন কেউ আমাদের দাবিয়ে রাখতে পারবে না!' এ বক্তব্য শুধু (পূর্ব) বাঙালিদের জন্যই নয়, এটি দক্ষিণ এশিয়া তথা বিশ্বের যেসব রাষ্ট্রে সাম্প্রদায়িকতা কিংবা অন্যবিধ কারণে মানুষ বৈষম্যের শিকার হচ্ছে তাদের পক্ষে সংগ্রামের এক জোরালো বার্তা। অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি, ধর্মীয় পরিচিতির কারণে, কারো প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণকে প্রশ্রয় দেয় না। বস্তুত অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি ধর্মীয় বৈষম্য প্রতিহত করতে সদা তৎপর। এভাবে অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি প্রকৃতপক্ষে গণতান্ত্রিক রাজনীতি! তাই অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি গণতন্ত্রের জন্য অপরিহার্য উপাদান হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে। স্বাধীন বাংলাদেশে অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির চর্চা হয়েছে মাত্র সাড়ে তিন বছর। কিন্তু '৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকে এ দেশে পুনরায় পাকিস্তানের ঐতিহ্য অনুসারে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির চর্চা শুরু হয়েছে। সাম্প্রদায়িক রাজনীতির কারণে এ দেশ থেকে ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেতে পেতে ১৯৪৭-এর শতকরা ৩০ ভাগ থেকে বর্তমানে শতকরা মাত্র ৯.৫০ ভাগে এসে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী যেহেতু সাম্প্রদায়িক রাজনীতির কারণে হ্রাস পাচ্ছে সেহেতু একে মানদ- হিসেবে রেখে আমরা দক্ষিণ এশিয়ায় সাম্প্রদায়িক বা অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির ক্রিয়াশীলতা বিবেচনা করতে পারি। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে ১৯৪৭ সালের পর থেকে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের যে দেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুর সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে নিঃসন্দেহে বলা সংগত যে সে দেশে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি অত্যন্ত শক্তিশালী। সে ক্ষেত্রে কারণ যাই থাক। অতএব আমরা এ পর্যায়ে অনুকল্প তৈরি করছি যে, 'দক্ষিণ এশিয়ার যে দেশে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি শক্তিশালী সে দেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ক্রমাগতভাবে হ্রাস পাচ্ছে। বিপরীতক্রমে, যে দেশে অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি ক্রিয়াশীল সে দেশে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে হ্রাস তো পাচ্ছেই না বরং তা (ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী) ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে।'
প্রথমেই ধরা যাক পাকিস্তানের কথা। গত ১৭ মার্চ বাংলাদেশ যখন স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৭তম জন্মদিন পালন করছিল তখন ধর্মীয় ঔপনিবেশিক রাষ্ট্র পাকিস্তানে ঘটে গেছে এক ঐতিহাসিক ঘটনা। সে দেশের পার্লামেন্টে ওইদিন সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় উৎসবের দিনগুলোয়_ হোলি, দিওয়ালি ও ইস্টার সানডে সরকারি ছুটি ঘোষণার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এর আগে অবশ্য 'হিন্দু বিবাহ আইন ২০১৫' পাকিস্তান পার্লামেন্টে পাস হয়েছে। তবে তা ছিল শুধু হিন্দুদের জন্য। সার্বিকভাবে সংখ্যালঘু তথা হিন্দু ও খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের জন্য পাকিস্তান পার্লামেন্টে ১৭ মার্চ পাসকৃত বিলটিই এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সরকারি পদক্ষেপ। উপমহাদেশের সংখ্যালঘুদের স্বার্থ রক্ষায় চ্যাম্পিয়ন হিসেবে পরিচিত ও দক্ষিণ এশিয়ার সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর পাকিস্তান ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট স্বাধীনতা পেলেও সে দেশে সংখ্যালঘুদের স্বার্থে, দীর্ঘ সাত দশক পরে প্রথবারের মতো কোনো আইন প্রণীত হলো! তবে সংখ্যালঘুদের প্রয়োজনে এ বিলটি আইনে পরিণত হওয়ার পথে কেবল প্রথম পদক্ষেপটি অতিক্রম করেছে। পুরোপুরি আইনে পরিণত হতে হলে ইনটেরিয়র মিনিস্ট্রিকে অবশ্যই একে অনুমোদন দিতে হবে। সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় উৎসবে সরকারি ছুটিসংক্রান্ত বিলটি পার্লামেন্টে উত্থাপন করেন রমেশকুমার বঙ্কওয়ানি। তিনি সংখ্যালঘুদের জন্য সংরক্ষিত আসনে পাকিস্তান মুসলিম লীগ (নওয়াজ) দল থেকে নির্বাচিত একজন এমপি। সংরক্ষিত আসন থেকে যখন নির্বাচিত হয়েছেন তখন তো বোঝাই যাচ্ছে ভোট দেয়ার মতো যথেষ্টসংখ্যক সংখ্যালঘু সে দেশে নেই। এমনকি দেশ বিভাগের সময় যারা ছিল তাদেরও ঘরবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। সংবাদমাধ্যমেও বলা হয়েছে, হিন্দু ও খ্রিস্টানদের ধর্মীয় উৎসবের দিনগুলোয় ছুটি দেয়ার সরকারি স্বীকৃতি এমন সময় দেয়া হলো যখন ধর্মীয় সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলো পাকিস্তানে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। ২০১৫ সালে পাকিস্তান সম্পর্কে মানবাধিকার সংস্থার রিপোর্টে সংখ্যালঘুদের প্রতি বিচার বিভাগীয় অন্যায্যতা ও সহিংস আক্রমণের কথা বলা হয়েছে। সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়ন-নির্যাতন সে দেশের একটি স্বাভাবিক ব্যাপার। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, পাকিস্তানে ধর্ম নিন্দা আইন (বস্নাসফেমি ল) কার্যকর আছে যার দ্বারা ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণকে কোনো কোনো ক্ষেত্রে বৈধতা দেয়া হয়। জানা যায়, করাচির একটি মন্দিরে পূজারিদের যেতে দেয়া হয় না, ধর্মীয় সংখ্যালঘু মেয়েদের জোর করে ধর্মান্তরিত করা হয়। এজন্য সে দেশের সর্বোচ্চ আদালতকে পর্যন্ত হস্তক্ষেপ করতে হয়। এতসব কিছুর পরে স্বাধীনতার ৬৮ বছর পর পাকিস্তানে প্রথমবারের মতো সংখ্যালঘুদের স্বার্থে পার্লামেন্টে একটি আইন প্রণীত হলো।
পাকিস্তানের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী যেখানে ক্রমাগতভাবে হ্রাস পাচ্ছে, ভারতে সংখ্যালঘু মুসলিমদের সংখ্যা ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর থেকে ভারতে মোটামুটি মুসলিম জনসংখ্যা জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে, অন্যদিকে হিন্দু জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে গাণিতিক হারে। ১৯৬১ থেকে ২০০১-এর মধ্যে ভারতে হিন্দু জনসংখ্যা ৩৬৬ মিলিয়ন থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৮২৭ মিলিয়নে পেঁৗছেছে। এখানে প্রবৃদ্ধির হার হচ্ছে শতকরা ১২৬ ভাগ। একই সময়ে মুসলিম জনসংখ্যা ৪৭ মিলিয়ন থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩৮ মিলিয়নে। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধির হার শতকরা ১৯৩ ভাগ। হিন্দু জনসংখ্যার তুলনায় মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে শতকরা প্রায় ৫০ ভাগ বেশি। বিগত দশকগুলোতে হিন্দু জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার শতকরা ২৫ ভাগ থেকে হ্রাস পেয়ে শতকরা ২০ ভাগে দাঁড়িয়েছে। ক্রমবর্ধমান সংখ্যালঘু মুসলিম জনগোষ্ঠীসহ ভারতের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীগুলোর স্বার্থ সংরক্ষণের লক্ষ্যে সে দেশের সরকার অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে সংখ্যালঘুবিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা, সংখ্যালঘু কমিশন গঠন। সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় ও কমিশন কর্তৃক সংখ্যালঘুদের অভাব-অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখার জন্য প্রায়ই সর্বোচ্চ আদালতের বিচারক বা সমাজের বিভিন্ন জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তির সমন্বয়ে কমিটি গঠন করা হয়। এসবই চলমান প্রক্রিয়া। সংখ্যালঘুদের স্বার্থে সরকারি নীতি ও পদক্ষেপ গ্রহণের ব্যাপারে ১৯৪৭ সালের পর থেকে ভারত যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, দক্ষিণ এশিয়ার অন্য কোনো দেশ তা গ্রহণ করেনি।
দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলো বিশেষত বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মতো না হলেও, ভারতে প্রায়ই সাম্প্রদায়িক সহিংসতা দেখা যায়। তবে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে অন্যান্য দেশের তুলনায় ভারত সরকার এসব স্বীকার করে এবং তা নিরসনের ব্যাপারে সদাতৎপর। পাশাপাশি ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ সে দেশে সরকারিভাবেই উৎসাহিত করা হয়। আর সে কারণেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজন সমস্যার সম্মুখীন হওয়া সত্ত্বেও সরকারের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ গ্রহণ সম্পর্কে নিশ্চিত জেনেই দেশত্যাগ করে পাকিস্তান কিংবা বাংলাদেশে চলে আসে না।
অন্যদিকে বাংলাদেশ সম্পর্কে অতিসম্প্রতি প্রকাশিত জাতিসংঘের ধর্মীয় র‌্যাপোর্টিয়ারের বক্তব্য উল্লেখ করলেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যাবে। আমরা জানি জাতিসংঘ তার সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সরকারের সঙ্গে কাজ করে। সে হিসেবে জাতিসংঘের কোনো অফিসিয়াল বক্তব্যকে সঠিক বলে ধরে নেয়া যায়। র‌্যাপোর্টিয়ার হাইনার বিলেনফোল্ড বলেছেন, কিছু আইনি ও প্রশাসনিক পদক্ষেপের কারণে বাংলাদেশে ধর্মীয় কিংবা রাজনৈতিক মতপ্রকাশের ক্ষেত্র সংকুচিত হচ্ছে। বাংলাদেশ সফরের ওপর জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে দেয়া এক মূল্যায়ন প্রতিবেদনে তিনি এ মন্তব্য করেন। জাতিসংঘের ওয়েবসাইট থেকে এ প্রতিবেদন সম্পর্কে জানা যায়। এ প্রতিবেদনে হাইনার বিলেনফোল্ড বলছেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে অনেক আগে থেকেই আন্তঃধর্ম সহাবস্থানের পাশাপাশি সমাজের উদার মনোবৃত্তির দৃষ্টান্ত খুঁজে পাওয়া যায়। বাংলাদেশে ১৯৭২ সালের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতাকে মূল আদর্শ হিসেবে ধরা হয়েছে, যা কারো প্রতি বৈষম্য না করে ধর্মীয় বহুমত ধারণের ক্ষেত্র করে দিয়েছে। মৌলিক ও রাজনৈতিক অধিকারের মতো আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদ অনুসমর্থনের মাধ্যমে বাংলাদেশের এ অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বিলেনফোল্ড মনে করেন, ধর্মনিরপেক্ষতা, যা ধর্মীয় ও বিশ্বাসের স্বাধীনতার ভিত্তিতে বৈচিত্র্যের সমাহারকে ধারণ করার কথা বলেছে, তা নিশ্চিত করা উচিত। সবাইকে ধারণ করার ব্যাপারে ধর্মনিরপেক্ষতার এ মূল্যবোধের মাধ্যমে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বিতর্কের প্রক্রিয়ায় মূল্যবান ভূমিকা রাখতে পারে। বিভিন্ন সম্প্রদায় ও ধর্মীয় বিশ্বাসের লোকজনের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান এবং সম্ভাব্য সন্দেহ ও ভুল বোঝাবুঝি অবসানের জন্য আন্তঃধর্ম ও আন্তঃসীমান্ত যোগাযোগ বাড়ানোর জন্য সরকারকে তার উদ্যোগ দ্বিগুণ করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে এ প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অসহিষ্ণুতা, বৈষম্য ও উগ্রবাদের যে কোনো তৎপরতার বিরুদ্ধে সরকারকে ধারাবাহিক অবস্থান বজায় রাখতে হবে। বাংলাদেশে ধর্মীয় উগ্রবাদ ও সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে পরিচালিত হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর লোকেরা নিজেদের বিপন্ন বোধ করায় তাদের উদ্বেগ দূর করে সক্রিয় নাগরিক সমাজ ও বহুমতের সমাজ সুরক্ষায় সরকারকে সচেষ্ট থাকতে হবে।
অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির প্রতিশ্রুতি নিয়ে সৃষ্ট এ দেশ দক্ষিণ এশিয়ায় 'অসাম্প্রদায়িকতার অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত' হয়ে ওঠার কথা ছিল। কিন্তু তা হয়ে ওঠেনি। এর কারণ কী? এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা সমীচীন যে, বাংলাদেশে অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির চর্চা করার সুযোগ হয়েছিল ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত। কিন্তু '৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ পুনরায় পাকিস্তানিকরণের দিকে প্রবাহিত হতে থাকে। ফলে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার শত বাধাবিপত্তি অতিক্রম করে বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলার কাজ করে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে আদালতের রায় অনুযায়ী সংবিধানের 'ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি' সংযোজিত হলেও এখনো এ ক্ষেত্রে অনেক করণীয় রয়ে গেছে। দেশরত্ন শেখ হাসিনা কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া, অর্পিত সম্পত্তি আইন বাতিলসংক্রান্ত প্রণীত বিধান বাংলাদেশে তথা দক্ষিণ এশিয়ায় অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির প্রতিষ্ঠার উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। এত কিছু সত্ত্বেও দেশে সংঘটিত সাম্প্রদায়িক ঘটনা এ সম্পর্কে আরো কিছু করণীয়র কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। এজন্য ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের পাশাপাশি সংখ্যালঘুবিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা, সংখ্যালঘুবিষয়ক কমিশন গঠন, জাতীয় সংসদে সংখ্যালঘুদের জন্য আসন সংরক্ষণ, সরকারি চাকরিতে সংখ্যালঘু কোটা প্রবর্তন প্রভৃতি করা হলে তা দেশের সংখ্যালঘুদের মনে আস্থা ফিরিয়ে আনবে এই সঙ্গে অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির পথ উন্মুক্ত করবে। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের ৪৫ বছর পূর্তিতে মুক্তিকামী মানুষের একান্ত চাওয়া, বাংলাদেশ তথা দক্ষিণ এশিয়ায় অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি প্রতিষ্ঠিত হোক।সুত্র

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৩:২৯

বিজন রয় বলেছেন: অনেক প্রভাব আছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.