নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।
বঙ্গবন্ধুর মধ্যে এক জাদুকরী সম্মোহনী শক্তি ছিল। বঙ্গবন্ধু রাশিয়া সফরে গেলে পরাশক্তিধর সোভিয়েত প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী সব প্রটোকল ভেঙে বঙ্গবন্ধুকে অভ্যর্থনা জানাতে বিমানবন্দরে হাজির হয়েছিলেন। লন্ডনে বঙ্গবন্ধুর আগমনের খবর পাওয়া মাত্র ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ সব কর্মসূচি বাতিল করে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে ছুটে এসেছিলেন। বিশ্বের বাঘা বাঘা রাষ্ট্রনায়ক-সরকারপ্রধানরা বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্য পেতে ব্যাকুল হয়ে উঠতেন। মাত্র সাড়ে তিন বছরের শাসনকালে বঙ্গবন্ধু যে রাষ্ট্রীয় কাঠামো গড়ে তুলেছিলেন, জাতি গঠনে তিনি যে দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছেন, শিক্ষা, জ্ঞানবিজ্ঞানে আধুনিক ও উন্নত জীবন গঠনে তিনি যে পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন তার চেয়ে উন্নততর নীতি, কাঠামো, পরিকল্পনা কেউ দিতে পারেননি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব লেখক ছিলেন না, কিন্তু লেখার বিষয়বস্তু হয়েছেন। মার্কিন লেখক রবার্ট পেইনের ‘দি টর্চার্ড অ্যান্ড দ্য ডেমড’, সালমান রুশদির ‘মিড নাইটস চিলড্রেন’ এবং ‘শেইম’, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের পূর্ব-পশ্চিম, জাপানি কবি মাত্সুও শুকাইয়া, গবেষক ড. কাজুও আজুমা, প্রফেসর নারা, মার্কিন কবি লোরি এ্যান ওয়ালশ, জার্মান কবি গিয়ার্ড লুইপকে, বসনিয়ান কবি ইভিকা পিচেস্কি, ব্রিটিশ কবি টেড হিউজের কবিতায় বঙ্গবন্ধু উপজীব্য হয়েছেন। মার্কিন অধ্যাপক স্ট্যানলি উলপার্ট, ব্রিটিশ লেখক-সাংবাদিক মার্ক টালি, মাইকেল বার্নস, মার্কিন লেখক জেমস জে. নোভাক, লরেন্স জারিং, সাংবাদিক অ্যান্থনি মাসকারেনহাস, সাংবাদিক-ঔপন্যাসিক এ্যানি লোপা, ফ্রান্সের আঁদ্রে মালরোসহ আরো অনেকে তাঁকে নিয়ে লিখেছেন।
প্রশ্ন হচ্ছে, যারা নিজেদের বঙ্গবন্ধুর সৈনিক বলে দাবি করে তারা সবাই বঙ্গবন্ধুর প্রকৃত সৈনিক কি? ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার পর বেলজিয়ামের তত্কালীন রাষ্ট্রদূত সানাউল হক বঙ্গবন্ধুর সৈনিক থেকে নিজেকে বদলে হয়ে যান তত্কালীন খুনিদের দোসর। সেদিন বেলজিয়াম দূতাবাসের বাসায় অবস্থানকারী বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয় এই কুলাঙ্গার। তখন জার্মানিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী জার্মানির সীমান্ত পর্যন্ত শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারকে দূতাবাসের গাড়ি দিয়ে পৌঁছে দিতে অনুরোধ করলে সানাউল হক তাতেও রাজি হয়নি। সেই সানাউল হকই পরবর্তীকালে ঢাকায় ফিরে বঙ্গবন্ধু পরিষদের সদস্য হয়েছিল।
আপনারা যাঁরা নিজেদের বঙ্গবন্ধুর সৈনিক বলে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করেন তাঁরা আসলেই বঙ্গবন্ধুর সৈনিক কি না তা যেভাবে বুঝবেন, তা হলো—এক. যদি আপনার মধ্যে যেকোনো মূল্যে বাড়ি-গাড়ির মালিক হওয়ার সাধ জাগে, তাহলে বুঝবেন আপনি বঙ্গবন্ধুর সৈনিক নন। ধারকর্জ, বন্ধুবান্ধবের সহযোগিতা ও হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন থেকে ঋণ নিয়ে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাড়িটি নির্মাণ হয়। ঢাকায় বঙ্গবন্ধু পরিবারের মাথা গোঁজার কোনো ঠাঁই ছিল না বিধায় বেগম মুজিব পিডাব্লিউডি থেকে বরাদ্দ পাওয়া জায়গায় বাড়ি নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। দুই. আপনি যদি টেন্ডারবাজ, চাঁদাবাজ, দখলবাজ হয়ে থাকেন, আপনার কারণে যদি কেউ খুন-জখম হয়ে থাকে, তাহলে বুঝবেন আপনি বঙ্গবন্ধুর সৈনিক নন। বঙ্গবন্ধুর নামে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, দখলদারি, খুন-জখমের অভিযোগ ওঠেনি কখনো। তিন. শিক্ষক সেবিলে উন্নতি হয় নীতির পরিবর্তে আপনি যদি ‘শিক্ষক ছেঁচিলে উন্নতি হয়’ নীতির চর্চা করে থাকেন, তাহলে আপনি অবশ্যই বঙ্গবন্ধুর সৈনিক নন। বঙ্গবন্ধু শিক্ষকদের খুবই সম্মান করতেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বাংলাদেশ আণবিক শক্তি কমিশনের প্রথম চেয়ারম্যান প্রফেসর ইন্নাস আলী স্মৃতিচারণা করে লিখেছেন, ‘বঙ্গবন্ধু উপাচার্যদের প্রায়ই ডাকতেন। বিভিন্ন বিষয়ে তাঁদের মতামত চাইতেন। বঙ্গবন্ধু আমাকে খুব সম্মান দেখাতেন। ওনার রুমে ঢুকলেই দাঁড়িয়ে যেতেন। অনেক সময় হয়তো মিটিং চলছে তখনো এ রকম দাঁড়িয়ে সম্মান করতেন।’ চার. দুর্নীতিবাজ-অর্থপাচারকারীদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকলে আপনি বঙ্গবন্ধুর সৈনিক নন। মৃত্যুর পর বঙ্গবন্ধুর ব্যাংক হিসাবে পাঁচ হাজার টাকা পাওয়া গিয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর শাসনামলের কট্টর সমালোচক অ্যান্থনি মাসকারেনহাসও তাঁর সততার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে লিখেছেন, কেউ প্রমাণ করতে পারবে না যে তিনি বিদেশে সম্পদ জমা করেছিলেন।’ পাঁচ. নিজ ধর্ম ছাড়া অন্য ধর্ম ও ধর্মাবলম্বীদের বিরুদ্ধে যদি আপনার অসম্মান, বিদ্বেষ, ঘৃণা থাকে আপনি বঙ্গবন্ধুর সৈনিক নন। বঙ্গবন্ধু মনেপ্রাণে মুসলমান হয়েও আমৃত্যু অসাম্প্রদায়িক চেতনা ধারণ, লালন ও চর্চা করেছেন। ছয়. ঈদ, পূজা, নববর্ষ, বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী, মৃত্যুবার্ষিকী নানা উপলক্ষে ব্যানার, পোস্টার, দেয়াললিখনে আপনার ছবি, বাণী, শুভেচ্ছা প্রচার করে যদি নেতা হতে চান, তাহলে আপনি বঙ্গবন্ধুর সৈনিক নন। বঙ্গবন্ধু এমন কোনো শর্টকাট পথে নেতা হননি। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে, সাইকেলে করে বাড়ি বাড়ি ঘুরে রাজনৈতিককর্মী সংগ্রহ করে ধাপে ধাপে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছেন। সাত. প্রতিপক্ষের নেতাকর্মী দেখলেই যদি আপনার হাত নিশপিশ করে, তাদের মর্যাদা হানি করে যদি আপনি লাইমলাইটে আসতে চান, তাহলে বুঝবেন আপনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসারী নন। বঙ্গবন্ধু প্রতিপক্ষ দলের নেতাদের কেবল সম্মানই করতেন না, বরং সাধ্যমতো সহযোগিতাও করতেন। বঙ্গবন্ধুর কট্টর সমালোচক মওলানা ভাসানীকে বঙ্গবন্ধু নিয়মিত অর্থ সাহায্য ও জিনিসপত্র পাঠাতেন। আট. আপনার বিরুদ্ধে লেখার জন্য যদি আপনি সাংবাদিক ধোলাই করে থাকেন, তাহলে বুঝবেন আপনি বঙ্গবন্ধুর সৈনিক নন। যে সাংবাদিকরা তাঁদের লেখনীতে বঙ্গবন্ধুর চরিত্র হনন করেছেন, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, নীতি-আদর্শের সমালোচনার বাইরেও তাঁর সম্পর্কে কুৎসাপূর্ণ লেখা লিখেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধেও বঙ্গবন্ধু কোনো প্রতিশোধ গ্রহণ করেননি। নয়. আপনার যদি মন্ত্রীদোষ থাকে অর্থাৎ আদালত, জনমতের তোয়াক্কা না করে যেকোনো মূল্যে মন্ত্রিত্ব ধরে রাখার খায়েশ থাকে, তাহলে আপনি বঙ্গবন্ধুর সৈনিক নন। বঙ্গবন্ধু মন্ত্রিত্ব আর দলের দায়িত্বের মধ্যে দলের স্বার্থে মন্ত্রিত্ব ত্যাগ করে দলের দায়িত্বকে বেছে নিয়েছিলেন।
মুজিব কোট গায়ে চাপানো বঙ্গবন্ধুর সৈনিকদের বিস্ফোরক বৃদ্ধি ঘটেছে। এদের অনেকেই হাইব্রিড সৈনিক। এদের দাপটে আসল সৈনিকদের নাজুক অবস্থা। হাওয়া পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এদের বদলে যাওয়ার সম্ভাবনা শতভাগ। দলের কাউন্সিল সামনে। কে জানে দলের নেতৃত্বে শতকরা কত ভাগ হাইব্রিড সৈনিকের আগমন ঘটবে। দলের নিষ্ঠাবান নেতৃত্ব এ ক্ষেত্রে সজাগ থাকবেন—এমন প্রত্যাশাই করছি।
সূত্র
২| ১৯ শে অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ৯:১৪
শুপ্ত বলেছেন: আমি বলবো যারা সমসাময়িক নেতা হিসেবে কাজ করে তারাই বড় নেতা বনে যায় কিন্তু যারা দলের জন্য বিপদকালে নিজের প্রান বিসর্জন দিতেও পিছপা হয়না শেষ পর্যন্ত তারাই হয়ে যায় সবচেয়ে খারাপ।
৩| ১৯ শে অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ৯:৩৮
ফরিদ আহমদ চৌধুরী বলেছেন: চমৎকার লিখেছেন।
৪| ১৯ শে অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৩:৩৫
চাঁদগাজী বলেছেন:
আপনি নিজেও হাইব্রীড
৫| ১৯ শে অক্টোবর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৫৫
খায়রুল আহসান বলেছেন: তাঁরা আসলেই বঙ্গবন্ধুর সৈনিক কি না তা যেভাবে বুঝবেন.... চমৎকার লিখেছেন।
দলের নিষ্ঠাবান নেতৃত্ব এ ক্ষেত্রে সজাগ থাকবেন—এমন প্রত্যাশাই করছি। -- আপনার প্রত্যাশা পূরণ হোক!
৬| ২০ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১:২৯
মো: হাসানূর রহমান রিজভী বলেছেন: পাঁচ নম্বরটা বাদ দিলে সারা বাংলাদেশে খুব বেশি হলে ২-৩ শত নেতাকর্মী পাওয়া যাবে।শুধু পাঁচ নম্বরটা সব নেতাকর্মীর মধ্যে আছে বলেই আমার মনে হয়।
৭| ২৬ শে অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ৮:৪৬
ডঃ এম এ আলী বলেছেন: লিখাটির মধ্যে অনেকেরই অনেক কিছু অনুধাবনের বিষয় আছে ।
©somewhere in net ltd.
১| ১৯ শে অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ৮:৫১
চাঁদগাজী বলেছেন:
শেখ সাহেবকে মানুষ ভুল বুঝেছিলেন, উনি ছাত্রলীগের মাঝে সবচেয়ে বুদ্ধিমান নেতা ছিলেন