নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।
জঙ্গিবাদ 'বহুত্ববাদ'-এর শত্রু; জঙ্গিবাদ 'বহুত্ববাদ'কে হত্যা করতে চায়; বাংলাদেশ একটি বহু জাতি, বহু ভাষা, বহু ধর্ম, বহু চিন্তা ও বহু সংস্কৃতির রাষ্ট্র। রাষ্ট্র পরিচালনায় এই যে বহুত্ববাদ, এর প্রতিফলন থাকতে হবে এবং এটিই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। গণতন্ত্র কেবল একটি সরকার ব্যবস্থা নয়, গণতন্ত্র একটি মূল্যবোধের নাম, গণতন্ত্র একটি দৃষ্টিভঙ্গি, একটি জীবনব্যবস্থা- যে মূল্যবোধের মূল কথা টলারেন্স, পরমতসহিষুষ্ণতা, অন্যের মতকে সম্মান দেওয়া, ভিন্ন মতকে শ্রদ্ধা করা। দার্শনিক ভলতেয়ার বলেছিলেন, 'আমি তোমার সঙ্গে দ্বিমত করতে পারি; কিন্তু তোমার কথা বলতে দেওয়ার জন্য আমি আমার জীবন দিতে পারি'- এর চেয়ে ভালো করে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের কথা, আমার মনে হয় আর কেউ বলতে পারেননি; সেই ভলতেরিয়ান ফিলসফি থেকে বর্তমান বাংলাদেশ কত দূরে? জঙ্গিবাদ সবাইকে এক করে ফেলতে চায়, কোনো 'ভিন্নতা' বা 'অন্যতা'কে সহ্য করতে চায় না। জঙ্গিদের নিহতের তালিকায় তাই আছেন বিদেশি নাগরিক, লেখক, প্রকাশক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, পুলিশ, পুরোহিত, সাধু, বৌদ্ধ ভিক্ষু, খ্রিস্টান ধর্মযাজক, শিয়া, বাউল, লালন-সাধক, পীরের অনুসারী, সমকামীদের অধিকারকর্মী, ব্লগার, মসজিদের মুয়াজ্জিন, ইমাম। এ তালিকা দীর্ঘতর। কে নেই এর ভেতরে? সবাই কোপ খাচ্ছেন, ক্ষত-বিক্ষত হচ্ছেন। বীভৎস সব হত্যাকাণ্ড! মুসলিম-অমুসলিম সবাই কোপ খাচ্ছেন; গত দুই বছরে অন্তত ৩০ জন ব্লগার নিরাপত্তা না পেয়ে বাধ্য হয়ে দেশ ছেড়েছেন, দেশ ছাড়ার প্রক্রিয়ায় আরও ঠিক কতজন আছেন, তার কোনো হিসাব নিরাপত্তার কারণেই জানাতে চান না কেউ; নিয়মিত হুমকি মাথায় নিয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন অনেকেই। এই যদি হয় বাংলাদেশের বর্তমান চিত্র, তবে আপনার-আমার নিরাপত্তা কোথায়? জননিরাপত্তা কি অরণ্যেই রোদন করবে? স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা তবে কে কাকে দেবে? সরকারের তরফ থেকে আগে বলা হতো, এসব বিচ্ছিন্ন ঘটনা। কিন্তু একের পর এক একই আদলে হামলা হতে থাকলে সেটা আর বিচ্ছিন্ন থাকে না, একই সূত্রে গাঁথা হয়ে যায়, হত্যার একটা প্যাটার্ন খুঁজে পাওয়া যায়। গোয়েন্দা সংস্থাও বলছে, একটির সঙ্গে অপরটির মিল আছে। 'প্লুরালিজমের' বিপরীতে জঙ্গিবাদ একটি 'মনোলিথিক' রাষ্ট্র বানাতে চায়- যেখানে কেবল বাঙালি, কেবল মুসলমানরা থাকবে; আবার সব বাঙালি নয়, যারা অসাম্প্রদায়িকতার কথা বলে, ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র নির্মাণের কথা বলে, প্রগতিশীলতা বা মুক্তচিন্তার কথা বলে, তারা বাঙালি হলেও বাঁচতে পারবে না। আবার সব মুসলমানও বাঁচতে পারবে না- শিয়া বা আহমদিয়ারা তাই হামলার শিকার হচ্ছেন। সুনি্ন মুসলিম, যারা মাযহাব মানেন, তারাও নিরাপদ নয়- ঈদের জামাতে হামলা তার বড় প্রমাণ; জঙ্গিবাদ নারীর ক্ষমতায়নকে ঘৃণা করে, নারীকে পুনরায় গৃহবন্দি করতে চায়, কাজেই নারীরাও তাদের হামলার শিকার। তারা চায় 'বাঙালি-পুরুষ-সালাফিপন্থি-মুসলিম'দের একটি রাষ্ট্র বানাতে। তাদের চিন্তার বাইরে আছে, এমন কারোর জন্যই কোনো স্পেস তারা রাখতে চাইছে না। বহুত্ববাদের বিপরীতে চূড়ান্ত মনোলিথিক রাষ্ট্র বানানোই তাদের মৌল-আকাঙ্ক্ষা; আর এই এজেন্ডা বাস্তবায়নের কৌশল হিসেবে তারা টার্গেট কিলিং, জিম্মি-হত্যা, হুমকি-ধমকি ও ত্রাসের সংস্কৃতি নির্মাণকে বেছে নিয়েছে; আইএসের নেতারা ইন্টারনেটে আহ্বান জানাচ্ছে, 'যুদ্ধ করার জন্য সিরিয়ায় আসার দরকার নেই; বরং তোমার অবস্থান থেকে হত্যা করো যাকে পারো এমন প্রত্যেককে এবং সবাইকে।' এ যেন এক 'ওয়ার অ্যাগেইনস্ট অল'- সবার বিরুদ্ধে এক অন্তহীন যুদ্ধ। ফলে চারদিকে সন্দেহ আর অবিশ্বাস- কে কাকে বিশ্বাস করবে? সপ্তদশ শতকে দার্শনিক টমাস হবস সমাজ-পূর্ব অবস্থার কথা বলতে গিয়ে বলেছিলেন, 'ইন এভরি সেকে- ম্যান ইজ ইয়োর এনিমি, পটেনশিয়াল এনিমি'- আমরা যেন আজ তারই অনুরণন পাচ্ছি।
©somewhere in net ltd.
১| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ৭:০৭
ডঃ এম এ আলী বলেছেন: খুব ভাল লিখেছেন । এ সমস্ত অঘটনের রুট টা কি সনাক্ত করা যায়না । তবে অআমার মনে হয় তারা সনাক্ত হয়েই আছে কিন্তু এতই প্রতাপশালী তাদের বিরোদ্ধে কিছু করাতো দুরের কথা কিছু বলাও যাচ্ছেনা ।
ধন্যবাদ শুভেচ্ছা জানবেন ।