নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।
১. ১৬ অক্টোবর পার্লামেন্ট ডাকা হল। সদস্যরা খুনি মোশতাককে অবৈধ প্রেসিডেন্ট হিসেবে আখ্যায়িত করলে তার পায়ের তলায় মাটি সরে যায়। এ ঘটনা খুনি মোশতাকের রাজনৈতিক কৌশল ব্যর্থ করে দেয়। খুনি মোশতাক ও তার দোসরদের প্রতি এমপিদের সার্বিক অনাস্থা এবং ছাত্র আন্দোলন ব্যাপকতর দানাবাঁধার পরিপ্রেক্ষিতে সামরিক বাহিনীর মধ্যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এ সুযোগে তিনটি শক্তি ও গ্রুপ ক্ষমতা দখলে এগিয়ে আসে।
২. মাত্র কয়েকজন অফিসার ও সেনাসদস্যের ক্ষুদ্র অংশ ‘চেইন অব কমান্ড’ ভেঙে ফেলায় সেনাবাহিনীর মর্যাদা ও শৃংখলার প্রতি আঘাত হিসেবে বিবেচিত হয়। বিভিন্ন গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল, ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ, ব্রিগেডিয়ার নাজমুল হুদা, ব্রিগেডিয়ার নূরুজ্জামান, কর্নেল শাফায়াত জামিল, কর্নেল হায়দার- এরা ছিল খুনিদের থ্রেট। খুনি চক্র ও সেনাপ্রধান জিয়ার পরিকল্পনা ছিল এদের বিদেশে পাঠিয়ে দেয়া।
৩. ফারুকের পিতার সঙ্গে জিয়ার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। জিয়াউর রহমান ছিলেন ফারুক-রশীদের পছন্দের লোক। জিয়ার সম্মতি নিয়ে তারা ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার ব্লুপ্রিন্ট চূড়ান্ত করে। বঙ্গভবনে রশীদ-ফারুক খুনি চক্রের চাপে জিয়া সেনাপ্রধান নিযুক্ত হন। সফিউল্লাহকে তার অপসারণ বার্তা তখনও জানানো হল না। অন্যদিকে নিয়োগ পেয়ে পরদিন ঢাকা স্টেশনের সব ইউনিটে অফিসার ও সৈনিকদের একত্র করে মঞ্চে উঠে জিয়াউর রহমান গর্জন করে ঘোষণা দিলেন, ‘আজ থেকে আমি চিফ অব স্টাফ।’ জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডে খুনিদের এগিয়ে দিয়ে তার বেনিফিট নেয়ার যথার্থ সময়টি তিনি নির্ধারণ করতে পেরেছিলেন।
৪. ৪৬ ব্রিগেড কমান্ডার কর্নেল শাফায়াত জামিল জিয়ার কাছে গেলেন প্রথমে। জিয়া বিচলিত হলেন না। কেননা খুনি রশিদ যা করতে যাচ্ছে বা করবে জিয়া তা জানতেন। খুনি খন্দকার মোশতাক জিয়াকে সেনাপ্রধান করলেও একচ্ছত্র ক্ষমতা দেননি। তার ওপর প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা হিসেবে বসিয়ে দিলেন এমএজি ওসমানীকে। তিন বাহিনীর মধ্যে সমন্বয়ের জন্য বাহিনী প্রধানের ওপর বসিয়ে দিলেন চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ হিসেবে মেজর জেনারেল খলিলুর রহমান যিনি পাকিস্তান প্রত্যাগত। কিন্তু এতদসত্ত্বেও সবার ওপর খুনি রশিদ-ফারুক ও অন্য মেজররা বঙ্গভবনে বসে ছড়ি ঘুরাচ্ছিলেন।
৫. জিয়া ব্লুপ্রিন্ট নিয়ে এগোচ্ছিলেন। মোশতাক-ওসমানী-খলিল চক্রকে ক্ষমতাচ্যুত করতে না পারলে তার পক্ষে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা গ্রহণ সম্ভব নয়। তিনি মনে করতেন না, খুনি মেজরদের ক্যান্টনমেন্টে ফিরিয়ে নিলেই সমস্যার সমাধান হবে। বরং এদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যাওয়ার ব্যাপারে তিনি শাফায়াত জামিলকে বলেন, আরও কয়েক মাস সময় লাগবে। শাফায়াত দেখলেন সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে। জিয়া সময় চেয়েছিলেন তার অনুগত সৈনিককে সুসংহত করার জন্য। নিজের শক্তি বৃদ্ধির জন্য।
৬. খালেদ মোশাররফ ও শাফায়াত জামিল অ্যাকশনে যাওয়ার কথা বললে জিয়া নিরুত্তর থাকেন। জিয়ার কৌশল ছিল, একদিকে ফারুক-রশীদের সঙ্গে উষ্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা, অন্যদিকে শাফায়াত জামিলের সঙ্গে লেগে থাকা। জিয়া গোপনে তাহেরের সঙ্গে সম্পর্ক ও কথাবার্তা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। জিয়া জানতেন জাসদের আর্মস উইং আন্ডারগ্রাউন্ড রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে বেশ সক্রিয়। তারা ভারতবিদ্বেষ উসকে দিয়ে সেনা-অফিসারদের বিক্ষুব্ধ করে তোলে ১ নভেম্বর। বৈঠকে বসেন শাফায়াত জামিল, খালেদ মোশাররফ ও ব্রিগেডিয়ার নূরুজ্জামান। সিদ্ধান্ত হয় ২ নভেম্বর রাত দুটোয় বঙ্গভবনে নিয়োজিতরা ক্যান্টনমেন্টে ফিরে আসবে সেটিই হবে অভ্যুত্থানের সূচনা।
৭. খুনি মেজর ডালিম বর্ণনা করেছেন, তিনি রাজনৈতিক দলের সর্বহারা পার্টির মাহবুব, জাসদের মেজর জলিল ও গণবাহিনীর নেতা কর্নেল তাহেরের সঙ্গে যোগদান রাখতেন। তাহের বলেন, এ মুহূর্তে জেনারেল জিয়ার বিরোধিতা করা দেশদ্রোহিতার সমান। খালেদ যদি কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করে তবে গণবাহিনী সেনা পরিষদের সঙ্গে তারা ঐক্যবদ্ধভাবে তাদের প্রতিহত করবে। কিন্তু ৩ নভেম্বর দেশ থেকে খুনিরা পালিয়ে যায়। মার্কিন রাষ্ট্রদূত বোস্টারের সঙ্গে মাহবুব আলম চাষী খুনিদের বিদেশ যাওয়ার বিষয়ে কয়েক দফা টেলিফোনে কথা বলেন। এ কথাও চাষী বলেন, প্রেসিডেন্ট বিদেশে রাজনৈতিক আশ্রয় চান। বোস্টার বলেন, পরিস্থিতি ‘ভয়ংকর’ হলে মার্কিন দূতাবাসে চলে আসতে পারেন। খুনি মোশতাককে কড়া গার্ড দিয়ে পাহারায় রেখেছিলেন মইন ইউ আহমদ যিনি পরবর্তীকালে সেনাপ্রধান হন।
৮. শুরু হয় ক্ষমতার দ্বন্দ্ব। খালেদের লক্ষ্য ছিল জিয়াকে হটিয়ে প্রধান সেনাপতি হওয়া। এর জন্য খালেদ মোশাররফের দাবিনামায় খন্দকার মোশতাক রাষ্ট্রপতি হিসেবে বহাল থাকবেন। ‘চেইন অব কমান্ড’ পুনরুদ্ধার করার জন্য ফারুক-রশীদ ও অন্য কর্মকর্তাদের সেনাছাউনিতে ফিরিয়ে আনতে হবে। এর সঙ্গে ব্রিগেডিয়ার রউফ যুক্ত করলেন, খালেদ মোশাররফকে সেনাপ্রধান করতে হবে। বঙ্গবভনে দুই পক্ষের দরকষাকষি চলল। শর্তানুসারে ৩ নভেম্বর সন্ধ্যায় জাতির পিতার খুনিদের পরিবারসহ দেশ ছেড়ে চলে যেতে দেয়া হল। তাদের পরিবার নিয়ে তারা ব্যাংককে গেলেন। মার্কিন দলিল বলছে, সেখানে তারা পাকিস্তান-মার্কিন সহযোগিতা পায়।
৯. অন্যদিকে জিয়াকে বন্দি করা হলেও তার প্রহরায় ছিল তারই অনুগত কোম্পানি। শয়নকক্ষের টেলিফোন চালু ছিল। জিয়াউর রহমান কর্নেল তাহেরের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে একটি চিরকুট পাঠান এই বলে, ‘আমি বন্দি আমাকে উদ্ধার কর।’ জিয়ার প্রতি তাহেরের বিশ্বাস ছিল প্রচণ্ড। জাসদের গণবাহিনীর সভায় অধিকাংশ সদস্য জিয়ার ব্যাপারে আপত্তি তোলে। কর্নেল তাহের বলেন, ‘আমাকে বিশ্বাস করলে জিয়াকে বিশ্বাস করেন।’ সর্বশেষে গণবাহিনী বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা জিয়াকে মুক্ত করতে মাঠে নেমে পড়েন।
১০. ৩ নভেম্বর ’৭৫ অভ্যুত্থানে ‘রক্তপাত পরিহার করার উদ্দেশে’ আপস আলোচনার নামে কালক্ষেপণ করে খুনি খন্দকার মোশতাক চক্র এবং খালেদ মোশাররফের বিরোধী অন্যান্য শক্তি দেশের বিভিন্ন ক্যান্টনমেন্টে দ্রুত যোগাযোগ করে পাল্টা অভ্যুত্থানের জন্য চেষ্টা করতে থাকে। এ পর্যায়ে আবারও মাহবুব আলম চাষী মার্কিন-পাকিস্তান দূতাবাসে যোগাযোগ করেন। যোগাযোগ হয় মার্কিন রাষ্ট্রদূত বোস্টারের সঙ্গে। জানা যায়, জনৈক বাচ্চু করিম পাকিস্তান প্রত্যাগত পাকিস্তানপন্থী সিপাহিদের, জেনারেল (অব.) এমএজি ওসমানী সেনাবাহিনী কর্মরত সাবেক মুক্তিবাহিনীর সদস্যদের এবং কর্নেল (অব.) তাহের সেনাবাহিনীতে জাসদপন্থী সিপাহিদের এ জাতীয় অভ্যুত্থানের ব্যাপারে সংঘবদ্ধ করার চেষ্টা চালাতে থাকেন। এ সময় মার্কিন-গণচীন-পাকিস্তানপন্থী শক্তিগুলো সর্বা-ক অপপ্রচার তৎপরতায় লিপ্ত হয়। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলও (জাসদ) এ প্রচার অভিযানে শামিল হয়। ঢাকা এবং দেশের অন্যান্য শহর ও বন্দরে তারা একটার পর একটা প্রচারপত্র বিতরণ করে প্রচার করতে থাকে, ভারতের প্ররোচনা ও অর্থেই খালেদ মোশাররফ সামরিক অভ্যুত্থান করেছেন। এমনও প্রচার করা হয়। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ‘বাকশাল’ নেতারা ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করে এ অভ্যুত্থানের ব্যবস্থা করেছিলেন। ঢাকা থেকে প্রেরিত খবরের বরাত দিয়ে মার্কিন ও ব্রিটিশ পত্রপত্রিকা প্রচার করতে থাকে যে, নিহত হওয়ার আগে জেলখানায় আটক নেতারা খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে অভ্যুত্থান ঘটানোর পাশাপাশি ভারতীয়দের পক্ষে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করেছিলেন। লন্ডনের ‘অবজারভার’ পত্রিকায় প্রকাশিত একটি সংবাদে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ মুজিব হত্যার পেছনে কোনো বিদেশী হস্তক্ষেপ ছিল না। কিন্তু ৩ নভেম্বর খন্দকার মোশতাকবিরোধী অভ্যুত্থানে বিদেশী হস্তক্ষেপ ছিল এবং এ অভ্যুত্থানের সমর্থনে ভারতীয় সেনাবাহিনী বাংলাদেশের চার মাইল ভেতরে ঢুকে গিয়েছিল। যদিও এ বিষয়টি সীমান্ত বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত জেনারেল জ্যাকব সরাসরি অস্বীকার করেন।
১১. বিভিন্ন বিদেশী পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত এসব খবরাখবর বিবিসি এবং ভয়েস অব আমেরিকার মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়। দেশী-বিদেশী সুপরিকল্পিত এসব প্রচারাভিযানের মোকাবেলায় রাজনৈতিক লক্ষ্য ও সম্পর্কহীন খালেদ মোশাররফ এবং তার সমর্থকদের কার্যকরী কোনো প্রচার তৎপরতাই ছিল না। সোমবার, মঙ্গলবার ও বুধবার টিভি, বেতার নিশ্চুপ ছিল। স্বাধীনতাবিরোধী চক্র মোশতাক গং এবং জাসদ ও বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা এমন বিভ্রান্তি প্রচার করে, খালেদ ভারতের কাছে দেশ বেচে দেবে। তাকে হটাও। এ বিভ্রান্তির সুযোগে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের সুপরিকল্পিত উদ্যোগ নিয়ে মঞ্চে ও নেপথ্যে সর্বা-ক তৎপরতায় ঝাঁপিয়ে পড়ে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)। জাসদের গণবাহিনী প্রধান কর্নেল তাহেরের সহায়তায় তারা সেনাবাহিনীর শ্রেণী-সংগ্রাম ও বিপ্লবের বিভ্রান্তিকর লিফলেট ছড়িয়ে দেয়। বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীতে বিশেষত সিপাহিদের যেসব অভাব-অভিযোগ এবং অর্থনৈতিক দাবি-দাওয়া ছিল জাসদ তারই পূর্ণ সুযোগ গ্রহণ করে। সিপাহিদের অবহেলিত অনুভূতিকে উসকে দিয়ে তাদের কাজে লাগানোর জন্য বাংলাদেশ বিভিন্ন ক্যান্টনমেন্ট ও ব্যারাকে প্রচারপত্র বিলি করে। এমন একটি প্রচারপত্রে বলা হয়, ‘অফিসাররা ক্ষমতা ও পদের লোভে অভ্যুত্থান ঘটাচ্ছে। আর প্রাণ দিচ্ছে সাধারণ সিপাহিরা। নিগৃহীত, অধিকারবঞ্চিত সিপাহিরা আর কামানের খোরাক হবে না। সিপাহি-জনতার ভাগ্য এক। তাই সিপাহি-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমেই ক্ষমতা দখল করতে হবে। সুতরাং বিপ্লবের জন্য, শ্রেণী-সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত হোন।’
১২. বিভিন্ন সূত্রে ৬ নভেম্বর রাতে বাংলাদেশে সংঘটিত সিপাহি বিপ্লব সম্বন্ধে নিুরূপ তথ্য পাওয়া যায়। ৬ নভেম্বর মধ্যরাত্রির পর, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সিপাহিরা অফিসারদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যান এবং পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণভার নিজেদের হাতে তুলে দেন। ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের সিপাহিদের সঙ্গে খালেদ মোশাররফের সমর্থনে ব্রিগেডিয়ার নাজমুল হুদার নেতৃত্বে রংপুর ক্যান্টনমেন্টের যেসব সিপাহি ঢাকা এসেছিলেন তারাও খালেদ মোশাররফবিরোধী সিপাহিদের সঙ্গে যোগদান করেন। ট্যাংকগুলো ৩ নভেম্বর স্বল্পকালের জন্য ক্যান্টনমেন্টে ফিরে গেলেও ৬ নভেম্বর রাতে সেগুলো আবার রাজপথে নেমে আসে। ৬ নভেম্বর মধ্যরাত্রির পর ঢাকা নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গোলাগুলির আওয়াজ শোনা যায়। এ সময় খালেদ মোশাররফ বঙ্গভবনে ছিলেন। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফ ব্রিগেডিয়ার নাজমুল হুদা ও কর্নেল হায়দারকে সঙ্গে নিয়ে শেরেবাংলা নগরে রংপুর ক্যান্টনমেন্ট থেকে আগত সেনা ইউনিটের কাছে চলে যান। এর কিছুক্ষণ পর বিদ্রোহী সিপাহির গুলিতে খালেদ মোশাররফ, ব্রিগেডিয়ার নাজমুল হুদা এবং কর্নেল হায়দার নিহত হন। প্রায় একই সময়ে বঙ্গভবনে কর্নেল শাফায়াত জামিল গুলিবিদ্ধ অবস্থায় গ্রেফতার হন এবং ব্রিগেডিয়ার নূরুজ্জামান ঢাকার বাইরে চলে গিয়ে আ-রক্ষা করতে সমর্থ হন।
১৩. সেদিন মধ্যরাত্রির পর ভারি ও হালকা সব ধরনের আগ্নেয়াস্ত্রের অবিরাম গুলিবর্ষণ করতে করতে সিপাহিরা দলে দলে রাজপথে নেমে আসেন। বিনা বাধায় তারা বেতার কেন্দ্র দখল করে নেন এবং জাসদের বিপ্লবী গণবাহিনী প্রধান কর্নেল তাহের সাময়িকভাবে ওই বেতার ভবনের কর্তৃত্বভার গ্রহণ করেন। সে রাতে রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়কের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে যখন গোলগুলি চলছিল, শহরের বিভিন্ন প্রান্তে নিরাপদ জায়গায় সমবেত পাকিস্তানপন্থী উল্লসিত জনতা তখন সামনে স্লোগান দিয়ে যাচ্ছিল। ট্রাকে ট্রাকে সোল্লাসে ভ্রমণরত সশস্ত্র সিপাহিরাও বিভিন্ন রাজনৈতিক স্লোগান দেন। এসব স্লোগানের মধ্যে ছিল, ‘নারায়ে তাকবির- আল্লাহু আকবর, সিপাহি-জনতা এক হও, স্বৈরতন্ত্রের পতন হয়েছে, গণরাজ কায়েম হয়েছে, বিপ্লবী গণবাহিনী জিন্দাবাদ, কমরেড সিরাজ ভাই, লও সালাম ইত্যাদি। আরও খবর পাওয়া যায়, ৭ নভেম্বরের সিপাহি বিপ্লবের নামে পাকিস্তানপন্থী সিপাহি এবং সেনাবাহিনীতে জাসদের গণবাহিনীর সদস্যরা গুলি করে হত্যা করে ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সেনাবাহিনীর অনেক মুক্তিযোদ্ধা অফিসারকে। মার্কিন দলিলে বলা এদের সংখ্যা অন্তত চল্লিশ জন। ৭ নভেম্বর জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখল করলে তাকে পরাধীনতার পরিসমাপ্তি হিসেবে অভিহিত করে এনয়েতুল্লাহ খান বাংলাদেশ টাইমসে লেখেন, 'Bangladesh wins Freedom.'
সূত্র
©somewhere in net ltd.
১| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:১১
লাডল্লা পোলা বলেছেন: পুরান ঢাকার মোশতাক আহমেদের বাড়ির পাশেই আমার বাসা। সুতরাং এলাকা ভিত্তিক একটা খবর আমি জানি যা অনেক বিজ্ঞ মন্ত্রী মশাইরাও জানে নাহ । মোশতাক বঙ্গবন্ধু হত্যার হওয়ার আগের দিন বঙ্গবন্ধুকে নিজ বাসাই দাওয়াত দিয়েছিলেন বক এর মাংস দিয়ে ভাত খাওয়ার জন্য যা ছিলো জাতির পিতার প্রিয় খাবার। মৃত্যুর আগে নাকি ব্যাক্তির মনের ইচ্ছাপুরন করাতে হয় মোশতাক ও এখানে এই কাজটি করেছে তার মানে তিনি পুরোপুরি জাতিরপিতার হত্যা সম্পর্কে আগে থেকেই নিশ্চিত ছিলেন। এই দুষ্টু খুনি ছিলেন তখনকার মাস্টার প্লানার। এই মোশতাকই স্বাধীনতার পর সর্বপ্রথম বাংলায় হুন্ডি ব্যবসা শুরু করেন এবং দীর্ঘদিন তা একক ভাবে পরিচালনা করেছেন, যা তাকে রাজনৈতিক মহলে আরো শক্তিশালী করেছিলো। দুই নাম্বারী বলতে যা ছিলো এসবের মধ্যে মোশতাকের মেধা ছিল অসাধারণ।