নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।
দেশে অবৈধভাবে বসবাসরত বিদেশিরা ভয়ংকর হয়ে উঠেছে। পৃথিবীর নানা দেশ বিশেষ করে আফ্রিকা থেকে এ দেশে এসে অবৈধভাবে বাস করে নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড ঘটাচ্ছে তারা। অস্ত্র, সোনা ও মাদক চোরাচালান, জাল মুদ্রার কারবার, এটিএম কার্ড জালিয়াতি এমনকি জঙ্গি কর্মকাণ্ডে মদদ দেওয়ার অসংখ্য অভিযোগ আছে ওই সব বিদেশি ব্যক্তির বিরুদ্ধে। সম্প্রতি বন্ধু সেজে ফেসবুকে ও লটারির নামে প্রতারণার বেশ কিছু ঘটনায় তাদের নাম উঠে আসে। অবৈধ বিদেশিদের এমন কর্মকাণ্ড বেড়ে চললেও প্রতিরোধে নেই কোনো কার্যকর ব্যবস্থা। এমনকি অবৈধ বিদেশিদের ব্যাপারে কোনো তথ্য-উপাত্তও নেই সরকারের কোনো সংস্থার কাছে। কতজন অবৈধ বিদেশি এখানে বসবাস করছে, তারা কোথায় থাকছে, কত দিন ধরে থাকছে—এসব তথ্য কারো জানা নেই। তাদের বিরুদ্ধে কোনো জোর ব্যবস্থা নিতেও দেখা যায় না। এই সুযোগে অবৈধ বিদেশিরা রীতিমতো চক্র গড়ে তুলে এখানে ঘাঁটি গেড়ে বসেছে। এদের মধ্যে আন্তর্জাতিক প্রতারকচক্রের সদস্যও আছে।
নানা প্রশাসনিক সীমাবদ্ধতার সুযোগে দেশে অপরাধের আস্তানা গেড়ে বসেছে বিদেশি অপরাধীচক্র। যথাযথ তদারকির অভাবে ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও দেশে ফিরে যাচ্ছে না অনেক বিদেশি। এরপর তারা নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। সাম্প্রতিক ঘটনার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বাংলাদেশে অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়িত বলে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তাদের মধ্যে নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, ক্যামেরুন, কঙ্গো, মিয়ানমার, ফিলিপাইন, ঘানা, তাইওয়ান, লিবিয়া, ইরাক, আফগানিস্তান, আলজেরিয়া, চীন, তানজানিয়া, উগান্ডা ও শ্রীলঙ্কাসহ কয়েকটি দেশের নাগরিক আছে। অপরাধে জড়িতদের প্রায় সবাই অবৈধভাবে এ দেশে বসবাস করছে। সম্প্রতি নতুন ধরনের প্রতারণায় জড়িয়ে সংবাদের শিরোনাম হয়েছে নাইজেরিয়ার নাগরিকরা। সর্বশেষ গত রবিবার রাজধানীর উত্তরা এলাকা থেকে মোবাইল ফোনে লটারির পুরস্কার দেওয়ার নামে প্রতারণার অভিযোগে চার নাইজেরিয়ানকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, রাজধানীর উত্তরা, গুলশান, বনানী, বারিধারা, রামপুরা, বনশ্রী, ধানমণ্ডিসহ কয়েকটি এলাকায় বসবাস করছে কয়েক হাজার অবৈধ বিদেশি নাগরিক (যাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে)। তারা খেলোয়াড়, ব্যবসায়ী বা পর্যটক পরিচয়ে দিনের পর দিন এ দেশে অবস্থান করছে এবং ঘুরে বেড়াচ্ছে। মাঝেমধ্যে অভিযান চালিয়ে নানা অপরাধে জড়িত কিছু অবৈধ বিদেশিকে ধরা হলেও চক্রগুলোর অপতৎপরতা বন্ধ করা যাচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথ্য মতে, দেশে কতজন অবৈধ বিদেশি নাগরিক আছে, এমনকি কে কত দিন ধরে এ দেশে অবস্থান করছে এই পরিসংখ্যান নেই কারো কাছে। তবে এক হাজারেরও বেশি অবৈধ অভিভাসী অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িত বলে তথ্য মিলেছে। ফুটবলার, গার্মেন্ট ব্যবসায়ী, ছাত্র ও পর্যটক হিসেবে তারা দেশে আসে। ভিসার মেয়াদ শেষ হলেও তারা নিজ দেশে ফিরে যায়নি।
পুলিশের তদন্তকারীরা বলছেন, অবৈধ বসবাসের সুযোগ পেয়ে আন্তর্জাতিক প্রতারকচক্রের সদস্যরা বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে। আফ্রিকান নাগরিকরাই এই চক্রের হোতা। গত এক বছরে পুলিশ ও র্যাবের অভিযানে এক ডজনেরও বেশি আফ্রিকান অপরাধী ধরা পড়েছে, যারা মূলত নিত্যনতুন কৌশলে প্রতারণায় জড়িত।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বিদেশিদের অবৈধভাবে এ দেশে বসবাস ও ভয়ংকর অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে হুমকিতে পড়ছে দেশের নিরাপত্তা। এর ফলে দেশের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে নতুন মাত্রাও যুক্ত হচ্ছে।
মূলত ট্যুরিস্ট ও অন অ্যারাইভাল ভিসায় বিদেশিরা এ দেশে আসে। এদের বেশির ভাগই নানা ধরনের চাকরিতে নিয়োজিত হয়। আয়কর ফাঁকি দিতে এদের বড় একটি অংশ আর ভিসার মেয়াদ বাড়ায় না। এরাই পরে নানা অপরাধে জড়িয়ে যায়। আবার এখানে অপরাধ সংঘটিত করবে—এ টার্গেট নিয়েও অনেক বিদেশি এ দেশে ঢোকে। কিন্তু সরকারের কোনো বাহিনীর কাছেই এ ধরনের কোনো তথ্য মেলে না। বিদেশি নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ ও যথাযথ তদারকির জন্য ‘বিদেশি নাগরিক নিবন্ধন আইন ২০১৫’ বিল সংসদে পেশ করা হলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। এই আইন বাস্তবায়ন করা হলে সব বিদেশিই নজরদারিতে চলে আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দাবি, বিদেশিদের গতিবিধি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। যারা অপরাধে জড়াচ্ছে তাদের আইনের আওতায়ও আনা হয় বলে দাবি করেন তিনি।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশিদ বলেন, দেশের অগ্রগতির সঙ্গে বিদেশিদের আনাগোনাও স্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। তবে এখানে নজরদারির অভাব রয়েছে। যার ফলে অনেকে অবৈধভাবে থেকে যাচ্ছে। তারা অপরাধ করছে। আবার অর্গানাইজড ক্রাইম করার মতো অপরাধীরাও আসছে। এখন ভাড়াটিয়া তথ্য নেওয়া হচ্ছে। এতে বিদেশিরা নজরদারিতে আসবে বলে মনে হচ্ছে। আফ্রিকান দেশগুলোর নাগরিকদের দিকে বেশি নজর দেওয়া দরকার। ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের মাধ্যমে অপরাধীদের তথ্য নিয়ে তাদের আগমন ঠেকানো যেতে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. জিয়া রহমান বলেন, ‘ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর উন্নত বিশ্বে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির পেছনে লেগে থাকা হয় বা তাদের আইডেনটিফাই করার ব্যবস্থা করা হয়। ইলিগ্যাল ভিসায় ওভার স্টে (বেশি দিন থাকলে) হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে আটক করা হয়। আমাদের এখানে এমন নজরদারির ব্যবস্থা তেমন নেই বলেই বিদেশি অপরাধীরা সুযোগগুলো পাচ্ছে।’
তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, কেউ ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য আসে, কেউ বা চাকরির সন্ধানে আসে, কেউ আবার লেখাপড়ার জন্য আসে। এদের মধ্যে দু-চারজন অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। অপরাধ করলে তারা সাজা পাবে। পুলিশের এসবি এই বিদেশিদের সব সময় তদারক করে থাকে, এদের ভিসার মেয়াদ আছে কি না তা দেখে থাকে।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, দেশে বিদেশি নাগরিক হত্যার পর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিদেশিদের তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। এতে বেশ কিছু অবৈধ বিদেশির অবস্থান জানা গেছে। ধারণা পাওয়া গেছে, এক হাজারেরও বেশি অবৈধ বিদেশি অপরাধী গা ঢাকা দিয়ে আছে। সম্প্রতি রাজধানীর রামপুরা, গুলশান ও উত্তরার ১৪৭টি বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে অবৈধভাবে থাকা ৩১ বিদেশিকে ধরে পুলিশ। এদের মধ্যে প্রায় সবাই আফ্রিকান। তারা শিক্ষার্থী ও ভ্রমণ ভিসায় বাংলাদেশে আসে। এ ছাড়া গত বছর এটিএম বুথে স্কিমিং ডিভাইস জালিয়াতির ঘটনায় বনানী থানায় প্রতারকচক্রের বিরুদ্ধে মামলার পর ডিবি পুলিশ বিদেশি চক্রের ব্যাপারে তথ্য পেয়েছে। কয়েক মাস আগে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে এটিএম বুথে জালিয়াতি করতে গিয়ে ধরা পড়ে চীনা নাগরিক।
পুলিশের সংশ্লিষ্ট বিভাগের এক কর্মকর্তা পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, স্পেশাল ব্রাঞ্চ ইমিগ্রেশন পুলিশের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বিদেশিদের এ দেশে আসা এবং অবস্থানের সময় বের করে প্রতিবেদন দিচ্ছে। তবে বিদেশি অপরাধীরা অবস্থানের সময় ঠিকানা ও নাম বদল করে ফেলছে। ফলে কেউ গাঢাকা দিয়ে থাকলে বা ভুয়া পরিচয়ে চললে তা যাচাই করার ব্যবস্থা নেই। ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, এসব দুর্বলতা দূর করতে বিদেশি নাগরিকদের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করে আইন প্রণয়ন করা জরুরি। গত বছর ওই আইনের খসড়া তৈরি করা হলেও তা এখনো অনুমোদন করা হয়নি। এ ছাড়া বিদেশিদের ওপর গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো জরুরি বলে মনে করেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি জানান, ২০১৩ সালে দেশে আসেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক তামিম আহমেদ চৌধুরী। দীর্ঘ প্রায় তিন বছর তিনি দেশে অবস্থান করে জঙ্গি কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছেন। তবে পুলিশ বা কোনো গোয়েন্দা সংস্থা এ সময় তাঁর অবস্থান ও কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তথ্য পায়নি। এ থেকে সহজেই অনুমেয়, এ দেশে ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে অবৈধভাবে থেকে যাওয়া ব্যক্তিদের ধরতে কোনো তৎপরতা এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে তথ্যও থাকে না সংশ্লিষ্টদের হাতে।
লটারির নামে প্রতারণা :
‘ডিয়ার কাস্টমার, কনগ্রাচুলেশনস। ইয়োর মোবাইল নাম্বার ওন ফাইভ লাখ পাউন্ড অ্যান্ড ৫১ ইঞ্চি এলইডি টিভি ফ্রম স্যামসাং লটারি। টু ক্লেইম সেন্ড ইয়োর নেম, সেক্স, এজ, মোবাইল নাম্বার অ্যান্ড অ্যাড্রেস টু...’—এই এসএমএস এসেছিল গৃহবধূ নাদিয়া রহমানের মোবাইল ফোনে। তিনি এক বিশিষ্ট ব্যবসায়ীর স্ত্রী। পরে আরেক এসএমএসে নাদিয়াকে জানানো হয়, তাঁর নামে একটি পার্সেল এসেছে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। নির্ধারিত ৫০ হাজার টাকা জমা দিয়ে কাস্টমসের কাছ থেকে পুরস্কারের পার্সেলটি ডেলিভারি করাতেও অনুরোধ করা হয়। এ জন্য একটি বিকাশ নম্বর দেওয়া হয়। এসএমএস পাওয়ার দুই ঘণ্টার মধ্যেই বিকাশ নম্বরে ৫০ হাজার টাকা পাঠান তিনি। এর পরই সেই ‘লটারির ফোন’ নম্বরটি বন্ধ হয়ে যায়। নাদিয়া ছুটে যান শাহজালাল বিমানবন্দরে। সেখানে গিয়ে দেখেন, কাস্টমসে তাঁর নামে কোনো পার্সেলই আসেনি। বুঝতে পারেন এক ভয়াবহ প্রতারণার শিকার হয়েছেন তিনি।
র্যাব কর্মকর্তারা জানান, নাইজেরিয়ান প্রতারকচক্রের সদস্যরা নাদিয়ার মতো অনেকের সঙ্গে একই রকম প্রতারণা করেছে। গত রবিবার রাজধানীর উত্তরা থেকে এই চক্রের কেলচি প্রিন্স জন, নিকেম স্যামুয়েল আজুইকি ও ডেনিস ওসিউডিরি চিফকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। তাদের কাছ থেকে ১৪টি মোবাইল ফোন, ২৪টি দেশি-বিদেশি সিম, তিনটি ল্যাপটপ, পাঁচটি মডেম, পাঁচটি ক্রেডিট কার্ড, একটি ডেবিট কার্ড জব্দ করা হয়। র্যাব-১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ বলেন, নাইজেরিয়ান নাগরিক কেলচি প্রিন্স জন ও নিকেম স্যামুয়েল আজুইকি গত ১২ অক্টোবর বাংলাদেশে আসে। তারা এ দেশে গার্মেন্ট ব্যবসা ও ফুটবল খেলতে এসেছিল। দেশি চক্রের সঙ্গে মিলে তারা বিকাশ এজেন্ট নম্বর ব্যবহার করে গত ৩০ অক্টোবর থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন মোবাইল ফোন গ্রাহকের কাছ থেকে ১১ লাখ দুই হাজার ৩৮০ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
ফেসবুকে বন্ধু সেজে প্রতারণা :
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে বন্ধুত্ব করেও প্রতারণা করছে নাইজেরিয়ার নাগরিকরা। তারা নিজেদের ইউরোপ বা আমেরিকার নাগরিক বলে পরিচয় দিয়ে বন্ধুত্ব গড়ে তোলে। এরপর কখনো কুরিয়ারে পার্সেলে উপহার পাঠানোর ‘খরচ’ পরিশোধ করতে অনুরোধ করে। চলতি বছরের শুরুতে রাজধানীতে এমন চারটি ঘটনায় ১২ জন নাইজেরিয়ানকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গত ৩০ এপ্রিল উত্তরা ও বনানী থেকে নাইজেরিয়ান ওজোমিনা নোনসো মারভিন ইকে ইকসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। ডিবির উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি, উত্তর) শেখ নাজমুল আলম বলেন, ওজোমিনা নোনসো মারভিন ইকে ইক বাংলাদেশে গার্মেন্ট ব্যবসার কথা বলে আসে। সে নিজেকে ব্রিটিশ ও আমেরিকান পরিচয় দিয়ে ফেসবুকের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলে। পরিচয়ের সূত্র ধরে ‘গিফট’ পাঠানোর নাম করে মেয়েদের ঠিকানা সংগ্রহ করে। পরবর্তী সময়ে পার্সেল এসেছে এবং তা খালাস করতে কিছু টাকা লাগবে বলে অনুরোধ জানায়। এভাবে প্রতারণার ফাঁদে আটকে হাতিয়ে নেয় টাকা।
গত ৩ এপ্রিল শাহ আলী থেকে মোহাম্মদ আউয়ালু আদামুু, ওবায়দুবাহিমেন, ওলোনোফেমি ডানিয়েল, আদামু নামে চার নাইজেরিয়ান শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সদস্যরা। গ্রেপ্তারকৃত চার নাইজেরিয়ান ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিল। পিআইবির বিশেষ পুলিশ (এসএস) আহসান হাবীব পলাশ বলেন, সংঘবদ্ধ এসব চক্র মোবাইল ফোন ব্যবহার করে গ্রাহকদের কোকা-কোলা লটারি, ইউনাইটেড ন্যাশন্স পুরস্কার, আইসিটি পুরস্কার, ইউএনডিপি পুরস্কারসহ বিভিন্ন পর্যায়ের পুরস্কার জেতার বার্তা দিয়ে প্রতারণা করে। তারা প্রথমে ফেসবুক, মোবাইল ফোন ও ই-মেইল আইডিতে বার্তা পাঠায়। নাইজেরিয়ানরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এসএমএস বা ই-মেইলের মাধ্যমে প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণার (স্ক্যাম) মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত বলে প্রচার আছে। আউয়াল আদামুও আন্তর্জাতিক প্রতারকচক্রের সদস্য। তার মতো আরো কয়েকজন বাংলাদেশে সক্রিয় বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
র্যাব-২-এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) মিজানুর রহমান জানান, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি গুলশান ও নিকেতন থেকে নাইজেরিয়ান ইজুচিউ ফ্রাংকিন, অবি হেছি, ইক ফ্লিস্ক, মোহাম্মদ আলী ও মঞ্জুর মাহমুদকে গ্রেপ্তার করা হয়। সচ্ছল তরুণ-তরুণীকে ফেসবুকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে টাকা আত্মসাৎ করে চক্রটি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এক নারী চিকিৎসকের সঙ্গে ফেসবুকের মাধ্যমে ব্রিটিশ নাগরিক ডেসমন্ড বি সামুয়েল পরিচয়ে প্রতারণা করে তারা। তিন বছর ধরে গার্মেন্ট ব্যবসার আড়ালে বাংলাদেশে অবস্থান করে প্রতারণা করে যাচ্ছিল ওই তিন নাইজেরিয়ান। পরবর্তী সময়ে আরো চার নাইজেরিয়ানকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এই চক্রও একই কৌশলে প্রতারণা করছে, যাদের কয়েক সহযোগী এখনো গ্রেপ্তার হয়নি।
আন্তর্জাতিক চক্রের সদস্য ওরা :
গত ৭ ফেব্রুয়ারি রাজধানী থেকে দুই নাইজেরিয়ান অ্যানাও আর্নিয়া ও ইসি আকা হিনলিকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। চক্রটি ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের এক নারী কর্মকর্তাকে বিয়ে করার ফাঁদে ফেলে সম্পর্ক গড়ে হাতিয়ে নেয় ২১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। ডিবির ডিসি (পশ্চিম) সাজ্জাদুর রহমান জানান, কথিত চিকিৎসক পরিচয়ে ইংল্যান্ড থেকে সিম রোমিং করে নারী ব্যাংক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রতারকচক্রের প্রধান। নাইজেরিয়ান অ্যানাও ব্যবসায়ী পরিচয়ে এবং ইসি আকা হিনলি ফুটবলার পরিচয়ে বাংলাদেশে আসে। হিনলি এক বছর আগে ঢাকার একটি ক্লাবের হয়ে ফুটবল খেলতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশে আসার পর সে একটি ম্যাচও ক্লাবটির হয়ে খেলেনি।
ডিবির সহকারী কমিশনার (এসি) মাহমুদ নাসের জনি জানান, এ চক্র শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বের ২০ থেকে ২৫টি দেশে একযোগে প্রতারণায় নেমেছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। আরো দুই নাইজেরিয়ান নাগরিক এবং এক বাংলাদেশি নারীও তাদের সঙ্গে জড়িত।
পুলিশ ও র্যাবের সূত্র জানায়, গত পাঁচ বছরে মাদকদ্রব্য, জাল টাকা, রুপি, ডলারসহ অর্ধশতাধিক বিদেশি নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়। এদের বেশির ভাগই আফ্রিকান ও পাকিস্তানি। গত ৭ আগস্ট বারিধারা এলাকা থেকে ৯ বিদেশিকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১, যাদের মধ্যে সাতজন ক্যামেরুন এবং দুজন কঙ্গোর নাগরিক। চক্রটি জাল টাকা ও মার্কিন ডলার তৈরি করছিল। এর আগে ২০১৩ সালে রাজধানীর উত্তরা, বনানী ও রামপুরার ডিএইচএল কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে হেরোইন পাচারের অভিযোগে সাত নাইজেরিয়ান নাগরিককে গ্রেপ্তার করে র্যাব। বনানীতে নাইজেরিয়ার নারী বেতসির কাছে ৫০০ গ্রাম কোকেন পাওয়ার পর পেরুর দুই নাগরিককে দুই কেজির চালানসহ গ্রেপ্তার করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)। উত্তরার ৪ নম্বর সেক্টরে এক অবৈধ আলজেরীয় নাগরিকের হাতে মর্মান্তিকভাবে খুন হয় ইংলিশ মিডিয়ামের ছাত্র জুবায়ের আহমেদ (১৭)। গত চার বছরে পাকিস্তানি দূতাবাসের দুই কর্মকর্তাসহ এক ডজন পাকিস্তানি নাগরিকের বিরুদ্ধে জাল রুপি তৈরি, জঙ্গি কর্মকাণ্ডে মদদ দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ ওঠে।
সুত্র
©somewhere in net ltd.