নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।
রাজধানীর মিরপুরে অবস্থিত বাংলাদেশ ইউনিভর্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির (বিইউবিটি) শিক্ষকদের বিরুদ্ধে জঙ্গি তৎপরতার অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় ১১ শিক্ষককে ইতিমধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশও দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নেতৃত্বেই জঙ্গি তৎপরতা চলছে। এসব কারণ দর্শানোর নোটিশ 'লোক দেখানো' ছাড়া কিছু নয়। তা ছাড়া ওই ১১ জনের বাইরে আরও অন্তত ২৫ শিক্ষক রয়েছেন, যাদের কর্মকাণ্ড জঙ্গিগোষ্ঠীকে সমর্থন করে।
নোটিশপ্রাপ্ত শিক্ষকরা হলেন- আইন বিভাগের চেয়ারম্যান সহকারী অধ্যাপক তরিকুল ইসলাম, প্রভাষক মো. রাইসুল ইসলাম রিয়াদ, পরিসংখ্যান বিভাগের চেয়ারম্যান সহকারী অধ্যাপক এসএম নাসিম খান, ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কাজী আবু বকর সিদ্দিকী, হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মোস্তাফিজুর রহমান, অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এসএম ওয়াহিদ মুরাদ, কম্পিউটার অ্যান্ড সায়েন্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মাহাবুবুর রহমান, ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. জহিরুল ইসলাম, মার্কেটিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আসলাম উদ্দিন ও মো. মাহবুবুল ইসলাম। বাকি একজনের নাম নিশ্চিত করা যায়নি।
গত ২৪ অক্টোবর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত পৃথক নোটিশে এই শিক্ষকদের ৫টি বিষয়ে শিক্ষার্থীদের করা অভিযোগ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। নোটিশে বলা হয়- শিক্ষার্থীরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অভিযোগ করেছে- 'আপনি ও আপনার আরও কয়েকজন সহকর্মীর সহায়তায় মিরপুর ১, ২, ১০, পল্লবী, রূপনগর আবাসিক এবং শিল্প এলাকা আক্রমণের পরিকল্পনা করেছেন'। সেই সঙ্গে 'ছাত্রদেরকে জামায়াত করার জন্য উদ্বুদ্ধ' করার পাশাপাশি 'গত ১৫ আগস্ট (বঙ্গবন্ধুর শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত জাতীয় শোক দিবস) জঙ্গিবাদবিরোধী বক্তব্য দেওয়ায় আপনি প্রকাশ্যে ভিসি, ট্রেজারার, প্রক্টর এবং ট্রাস্টের সভাপতির সমালোচনা করেন এবং জালিম বলে গালাগালি করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন মানেন না এবং কথায় কথায় আন্দোলন করেন।' এ ছাড়া 'ছাত্রদেরকে ইসলামের জিহাদ করতে' এবং তাদের মগজ ধোলাই করে সরকারবিরোধী হতে উদ্বুদ্ধ করছেন বলেও শিক্ষার্থীদের অভিযোগ রয়েছে। নোটিশে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের জবাব দিতে ১০ দিন সময় দেওয়া হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ বিষয়ে আরও তদন্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে। নোটিশপ্রাপ্ত এসব শিক্ষকের জবাব বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটি পর্যালোচনা করছে। এ পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ত্রিমুখী অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছেন। অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে আইন বিভাগের চেয়ারম্যান সহকারী অধ্যাপক তরিকুল ইসলাম সমকালকে বলেন, 'বিষয়টি তদন্তাধীন। এ বিষয়ে কথা বলার কোনো সুযোগ নেই।' মার্কেটিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আসলাম উদ্দিন বলেন, 'অভিযোগ মিথ্যা; নোটিশের জবাবেও সেটা বলেছি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দেখছে।'
এদিকে কয়েকজন সাধারণ শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষকের উগ্র ও আগ্রাসী মনোভাবের পরিচয় পাওয়া গেছে। শিক্ষার্থীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন কিছু বিষয় রয়েছে, যেটা নিয়ে বলাটাও বিব্রতকর। কারণ এই যুগেও ক্লাসরুমে ছেলে-মেয়েদের একত্রে বসতে দেওয়া হয় না। আবার প্রায়শ সবার সামনে মেয়েদেরকে পোশাক-পরিচ্ছদ নিয়ে কথা শোনানো হয়।
পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১ জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে জঙ্গি তৎপরতার অভিযোগ ওঠার পর কর্তৃপক্ষ প্রথমদিকে বিষয়টি এড়িড়ে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু সাধারণ শিক্ষার্থীদের চাপে পড়ে তাদেরকে শোকজ করা হয়েছে। কিন্তু দৃশম্যান কোনো ব্যবস্থা এখনও দেখছি না। অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে তদন্ত হলে অবশ্যই দায়িত্ব থেকে বিরত রাখার কথা। তা না করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ওইসব শিক্ষক তাদের মদদপুষ্ট শিক্ষার্থীদের সংঘবদ্ধ করার তৎপরতা চালাচ্ছেন। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।' অবশ্য অপর এক শিক্ষার্থী সমকালকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের মধ্যে চিহ্নিত জামায়াতপন্থি শিক্ষক রয়েছেন। মতাদর্শগত কারণে এদের কাছ থেকে ভালো কিছু আশা করাও কঠিন। তারা শিক্ষকতার চেয়ে রাজনীতিকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। তবে অভিযুক্ত শিক্ষকদের মধ্যে দুই-একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কারণে হয়রানি হচ্ছেন বলেও দাবি করেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন-সংশ্লিষ্ট আরও কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় তাদের ভাবর্মূতি রক্ষায় ১১ জন শিক্ষককে শোকজ নোটিশ ইস্যু করার পর আরও ১৪ জনের নাম সংগ্রহ করেছে। তাদের বিষয়ে প্রাথমিকভাবে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এর ভিত্তিতে ওই শিক্ষকদের বিরুদ্ধেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বক্তব্য: জঙ্গি তৎপরতার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আবু সালেহ সমকালকে বলেন, 'অভিযোগ পাওয়ার পরপরই ইতিমধ্যে কয়েকজন শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। অনেকের জবাবও আমরা পেয়েছি। অভিযোগ প্রমাণিত হলে শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
ব্যবস্থা নিতে বিলম্ব বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, "এটা তো আসলে অনেক বড় বিষয়। চাইলেই কোনো শিক্ষকের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। অভিযুক্ত শিক্ষকদের লিখিত জবাব বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটিতে পাঠানো হয়েছে। ওই কমিটি 'তদন্ত প্রতিবেদন' দেওয়ার পর বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় উপস্থাপন করা হবে।"
প্রসঙ্গত, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ততায় গত জুনে রাজধানীর গুলশানে আর্টিসান বেকারি ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতে নৃশংস জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে। এর পর একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা তাদের প্রতিবেদনেও জঙ্গি তৎপরতার অভিযোগ করে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করেছে। এর মধ্যে জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে গত ৮ সেপ্টেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে জঙ্গি তৎপরতা রয়েছে ঢাকা মহানগরীর এমন ১৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ ২১ প্রতিষ্ঠানকে বিশেষ নজরদারিতে রাখা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। নজরদারিতে থাকা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দুটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, চারটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, তিনটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল, নয়টি মাদ্রাসা ও তিনটি মসজিদ রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান বিষয়ে নজরদারি বাড়াতে এবং অধিকতর তদন্তের মাধ্যমে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, সরকারি-বেসরকারি এসব প্রতিষ্ঠানের উগ্রবাদী কিছু শিক্ষক-শিক্ষার্থী ভিডিও ফুটেজ, জিহাদি বই, জিহাদি বক্তব্য সংবলিত অডিওর প্রচারসহ নানা উপায়ে জঙ্গিবাদী তৎপরতার বিস্তার ঘটাচ্ছেন। তালিকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ও (বুয়েট) রয়েছে।
সুত্র
©somewhere in net ltd.