নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যাহা বলিব সত্য বলিব

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।

তালপাতারসেপাই

লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।

তালপাতারসেপাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

অবশেষে স্বীকৃতিঃ "২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস"!

১২ ই মার্চ, ২০১৭ ভোর ৬:৪৩



একাত্তরের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বর্বরোচিত ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডকে স্মরণ করে 'গণহত্যা দিবস' পালনে সংসদে প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। গতকাল শনিবার সংসদের বৈঠকে দীর্ঘ আলোচনার পর এই প্রস্তাব সর্বসম্মতক্রমে গৃহীত হয়। সরকার ও বিরোধীদলীয় সদস্যরা টেবিল চাপড়ে প্রস্তাবের প্রতি সমর্থন জানান। প্রস্তাবটির ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, একাত্তরের গণহত্যা যারা

ভুলে যায় তাদের এ দেশে থাকার অধিকার নেই। এ গণহত্যার জন্য পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মতো সমান দায়ী দেশীয় রাজাকার-আলবদররা। এ ছাড়া জাতীয় সংসদের চতুর্দশ অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানিরা এখনও অপপ্রচার চালাচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধ বাঙালির যুদ্ধ ছিল না। এটি ছিল ভারতের ষড়যন্ত্র, 'র'-এর চক্রান্ত। মুক্তিযুদ্ধে ভারতসহ মিত্র দেশগুলোর সহযোগিতার জন্য গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।

বিকেল ৩টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়। দিনের কার্যসূচিতে থাকা অন্যান্য কার্যক্রম স্থগিত রেখে এ প্রস্তাবের ওপর সাধারণ আলোচনা শুরু করা হয়। প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও প্রায় ?৬ ঘণ্টাব্যাপী এ আলোচনায় ৫৫ জন সদস্য অংশ নেন।

সরকারের শরিক দল জাসদের শিরীন আখতারের উত্থাপিত এ প্রস্তাবে বলা হয়, 'সংসদের অভিমত এই যে, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে বর্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক সংঘটিত গণহত্যাকে স্মরণ করে ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস ঘোষণা করা হোক এবং আন্তর্জাতিকভাবে এ দিবসের স্বীকৃতি আদায়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা হোক।'

প্রস্তাবটি উত্থাপনের পরপরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফ্লোর নিয়ে স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, এখানে অনেক সদস্য আছেন যারা যুবক, একাত্তরের ভয়াল চিত্র তারা দেখেননি। তাই আমি ওই সময়কার কিছু ছবি-ভিডিও দেখাতে চাই, যেগুলো বিভিন্ন মিডিয়াতে প্রচারিত হয়েছিল। সেগুলো দেখাতে তিনি স্পিকারের অনুমতি চান। পরে সংসদ কক্ষে রাখা বড় পর্দায় একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনীর নির্মমতার বিভিন্ন চিত্র, ভিডিও দেখানো হয়। ১৮ মিনিটব্যাপী শরণার্থী হয়ে দেশ ত্যাগ, ২৫ মার্চ রাতে ঢাকায় পরিচালিত অপারেশন 'সার্চ লাইটের' খণ্ডচিত্র, দেশের বিভিন্ন স্থানে গণহত্যার ছবি দেখানো হয়। শুরুতে ৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণের ছবি দেখানো হয়। ২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুর গ্রেফতার হওয়ার আগ মুহূর্তের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রটিও দেখানো হয়। সংসদের বৈঠকে পিনপতন নীরবতায় এসব চিত্র প্রদর্শনের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অনেক সদস্য আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। প্রধানমন্ত্রীকে একাধিকবার চোখ মুছতে দেখা গেছে। পরে প্রধানমন্ত্রী আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেন, ২৫ মার্চ গণহত্যা নিয়ে সে সময় দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে। এরপর আর কোনো প্রমাণ লাগে না। ওই রাতের বিভীষিকা নিজের চোখেও দেখেছি।

রাজাকার-আলবদরদের তৎপরতার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানি বাহিনীর এ দেশের পথঘাট চেনার কথা নয়। এ দেশীয় দোসর রাজাকার, আলবদররা তাদের পথঘাট চিনিয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশের এমন কোনো গ্রাম নেই যেখানে একাত্তরের গণহত্যার চিহ্ন নেই। তিনি বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য কিছু দালাল রয়েছে যারা এখন মিথ্যাচার করছে। বিএনপি নেতা জেড এ খানের সমালোচনা করে সংসদ নেতা বলেন, ''এ লোকটাকে আমি অবসরে যাওয়ার আগে মেজর জেনারেল পদে পদোন্নতি দিয়েছিলাম, এখন নিজেরই লজ্জা হয়। তিনি লিখেছেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা না-কি ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা 'র'-এর ষড়যন্ত্রে এসেছে। দেশ স্বাধীন না হলে এই লোক কীভাবে মেজর জেনারেল হতে পারতেন। তার যদি এতটুকু লজ্জা থাকত, ঘৃণা থাকত, এটা লিখতে পারতেন না। দুঃখ লাগে এ ধরনের কিছু কুলাঙ্গার দেশে পয়দা হয়েছে। যারা পাকিস্তানের লাঠি-ঝাটা খেয়ে চলে। যতই লাথি খাক তারা তাদের পদলেহন করবে। তারপরেও তাদের পা চাটবে।''

অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা আরও বলেন, বিশ্বের যেসব দেশে গণহত্যা চলেছে, স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ হয়েছে, সে সব দেশের পাশেই অনেক মিত্রশক্তি দাঁড়িয়েছে। ভারতসহ অনেক দেশই মিত্রশক্তি হিসেবে মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন জানিয়ে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল। মিত্রশক্তি থাকাটা কোনো অপরাধ নয়, কিন্তু পাকিস্তানের কাছে সেটাই দোষ।

মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের মাত্র তিন মাসের মধ্যে এ দেশ থেকে ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সৈন্য প্রত্যাহারের প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের যেখানেই কোনো দেশ অন্য দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সহযোগিতা করেছে, সেখানেই মিত্রশক্তি ওই দেশে ঘাঁটি গেড়ে বসেছে। একমাত্র বাংলাদেশই এর ব্যতিক্রম। ভারতই একমাত্র দেশ যারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পরও এ দেশে ঘাঁটি গেড়ে বসেনি। জাতির পিতার অনুরোধে ইন্দিরা গান্ধী মাত্র তিন মাসের মধ্যে সৈন্য প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।

সংবাদপত্র কর্মীদের জন্য নবম ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়নের দাবি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অধিকাংশ সংবাদপত্রের মালিকই বেসরকারি। বেসরকারি মালিকরা কী করবেন সেটি তাদের বিষয়। এরপরও আমরা ওয়েজ বোর্ড করে দিচ্ছি, ব্যবস্থা নিচ্ছি।

আলোচনায় অংশ নিয়ে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ বলেন, ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস পালনের বিষয়ে আগেই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল। বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে পাকিস্তানিরা হামলা শুরু করেছিল। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক বঙ্গবন্ধু, এ নিয়ে বিতর্ক বন্ধ করতে হবে।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ বলেন, '২৫ মার্চ রাতে বাঙালি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চেয়েছিল বলেই আমরা একে গণহত্যা বলি। আমার বিশ্বাস আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আমরা আদায় করতে পারব। আমার বড় দুঃখ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে পারিনি। ১৯৭০ সালের ২৯ ডিসেম্বর পাকিস্তানের করাচিতে আমাকে বদলি করা হলো। যখন ছুটিতে ছিলাম তখন জেনারেল ওসমানীকে ফোন করে জানতে চেয়েছিলাম আমি কী করব, আমাকে তো পশ্চিম পাকিস্তানে বদলি করা হয়েছে। তিনি তখন বলেছিলেন, যুদ্ধ এখনও শুরু হয়নি। বদলির আদেশ তোমার পালন করা উচিত। দেশ স্বাধীনের পর বন্দিবিনিময় চুক্তির মাধ্যমে আমি দেশে ফিরে এসেছিলাম।'

শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না এলে খালেদা জিয়া আবারও চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রিসভায় স্থান দিতেন। এমনকি তারা রাজাকার হত্যার বিচারের প্রস্তাব পাস করত ।

বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, বিএনপি নেত্রী সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। আসলে শহীদের সংখ্যা নিয়ে কোনো সংশয় নেই। এ সংখ্যা নিয়ে যারা প্রশ্ন তুলে তাদের ধিক্কার জানাই। তিনি ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস পালনের প্রস্তাবটি সমর্থনের পাশাপাশি ১ ডিসেম্বরকে মুক্তিযোদ্ধা দিবস হিসেবে পালনের প্রস্তাব দেন।

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, পাকিস্তানিরা শুধু একাত্তরে আমাদের ওপর নয়, এখনও গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে বেলুচিস্তানে। জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, দেশে এখনও পাকিস্তানের প্রেতাত্মা রয়েছে। বাংলাদেশে আর কখনও যাতে স্বাধীনতাবিরোধীরা ক্ষমতায় আসতে না পারে সে জন্য এই দিবস পালন করতে হবে।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর ওই রাতে ঢাকায় অবস্থানের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, সেই রাতের গণহত্যা বিশ্বের সব ভয়াবহতাকে ছাড়িয়ে গেছে। জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ এই দিনে সরকারি ছুটি দাবি করেন।

আলোচনায় আরও অংশ নেন আওয়ামী লীগ দলীয় সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মোহাম্মদ নাসিম, মুহাম্মদ ফারুক খান, আবদুল মতিন খসরু, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, শাজাহান খান, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, আসাদুজ্জামান খান কামাল, আ ক ম মোজাম্মেল হক, অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া, শওকত আলী, অধ্যাপক আলী আশরাফ , চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, ডা. দীপু মনি, আবদুর রহমান, আবদুল মান্নান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম প্রমুখ ।

সংসদ অধিবেশন সমাপ্ত :প্রধানমন্ত্রীর সমাপনী ভাষণের পর স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সংসদের চতুর্দশ অধিবেশন সমাপনী সংক্রান্ত রাষ্ট্রপতির আদেশ পড়ে শোনান। এরপর সংসদের দীর্ঘতম চতুর্দশ অধিবেশন শেষ হয়। রাত পৌনে ১১টায় রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের অধিবেশন সমাপ্তি সম্পর্কিত ঘোষণা পাঠ করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। -
সুত্র

মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই মার্চ, ২০১৭ সকাল ১১:০৪

জাহিদ হাসান বলেছেন: সোজা প্রিয়তে নিলাম। এটাই ৪০ বছর ধরে চাইছিল বাঙ্গালী। ভয়াল কালো রাতে যারা তাদের প্রিয়জন হারিয়েছেন তাদের কষ্ট একটু হলেও উপশম হবে। ধন্যবাদ প্রধানমন্ত্রীকে।

২| ১২ ই মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৩:০৮

কানিজ ফাতেমা বলেছেন: প্রয়োজন ছিল- এ দিনটির স্বীকৃতি । তবে দিবসটি যেন শুধু দিবসের তালিকা বৃদ্ধিতেই সীমাবদ্ধ না থাকে ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.