নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।
আমাদের ইলেকট্রনিক মিডিয়াগুলো সংবাদ প্রচারে আওয়ামী লীগ-বিএনপি নেতৃবৃন্দের বক্তব্য প্রচারে ভারসাম্য রক্ষার নীতি অনুসরণ করে থাকে। এটা কতটা ভালো-মন্দ সেই তুলনামূলক বিশ্লেষণ করতে আজ বসিনি। তবে উভয় দলের নেতৃবৃন্দের মতামত শোনার ফলে দর্শক হিসেবে আমরা উভয় দলের রাজনৈতিক অবস্থান কিছুটা হলেও বুঝতে পারি। দেশ-বিদেশের নানা উল্লেখযোগ্য ঘটনা সম্পর্কে যে সব প্রতিক্রিয়া নেতৃবৃন্দ প্রকাশ করেন, টিভি চ্যানেগুলো দিনের খবর প্রচারে তা গুরুত্ব দিয়ে শুনিয়ে থাকে। আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম মিডিয়ার সম্মুখে খুব কমই দাঁড়াতেন, কথা বলতেন। তখন যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এবং খাদ্যমন্ত্রী এড. কামরুল ইসলাম নিয়মিত কথা বলতেন। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম ভারপ্রাপ্ত থাকা অবস্থাতেও নিয়মিত কথা বলতেন, এখনো বলছেন। তবে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বরাবরই মিডিয়ায় বক্তব্য দেয়ার ক্ষেত্রে দলের মহাসচিবের চাইতে অনেক বেশি উচ্চকণ্ঠ। বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ও কম যান না। জীবিত থাকাকালে হান্নান শাহও অনেক বেশি নিয়মিত ছিলেন।
এখন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দলের মুখপাত্র হিসেবে নিয়মিত সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেয়ায় অন্যদের বক্তব্য খুব বেশি প্রয়োজন পড়ে না। ওবায়দুল কাদের যা বলেন তার গুরুত্ব বিবেচনা করে মিডিয়াগুলো প্রচার করে থাকে। তিনি লাইনচ্যুত বক্তব্য খুব একটা দেন বলে মনে হয় না। সে কারণে তার বক্তব্য সবাই শোনার চেষ্টা করেন। অন্যদিকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, গয়েশ্বর রায় এবং অন্যরা যে সব বক্তব্য প্রদান করেন তাতে বাকপটুতার ছাপ বেশ স্পষ্ট। যে কোনো ইস্যুতেই তারা যা বলেন তা হয়তো সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য করে থাকেন। কিন্তু তাতে দল হিসেবে বিএনপির রাজনীতিও যে স্পষ্ট হয়ে পড়ে তা বলাই শ্রেয়। সম্প্রতি কিছু বিষয় নিয়ে বিএনপির নেতৃবৃন্দের মুখ থেকে যেসব কথা উচ্চারিত হয়েছে তা রাজনৈতিক বিশ্লেষণের দাবি রাখে, সেই চেষ্টাই এই লেখায় করা হচ্ছে।
গণহত্যা দিবস সম্পর্কেই শুরু করা যেতে পারে। জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন। একজন সাংবাদিক জাতীয় গণহত্যা দিবস বিএনপির পক্ষ থেকে পালন না করার কারণ জানতে চাইলে বাকপটু নেতা মির্জা ফখরুল উত্তরে বললেন, ‘এই নিয়ে আমাদেরই তো পাল্টা প্রশ্ন হচ্ছে কেন এ বছর গণহত্যা দিবস পালনের প্রয়োজনীয়তা পড়ে গেল?’ এককালের বামরা নিজেদের অনেক বেশি বিজ্ঞ মনে করেন- তা মির্জা সাহেবের কথায়ও অনেক কিছু থাকে, তা কেউ ধরতে পারেন, কেউ হয়তো পারেন না। কিন্তু এমন একটি ইস্যু নিয়ে কথা বলার ক্ষেত্রে আদর্শিক নৈকট্য যার রয়েছে তিনি ‘চালাকি’র কোনো আশ্রয় নেবেন- এমনটি ভাবার কোনো কারণ নেই। কিন্তু উগ্র বামরা আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, জাতীয় ইতিহাস ইত্যাদিকে যে সব ‘তত্ত্বে’ ব্যাখ্যা করতেন তা শেষ বিচারে হঠকারীদের বিশ্বাসের জগতে তাদের ঠেলে দিয়েছে, মির্জা সাহেবের অনেক বক্তব্যের ফাঁক-ফোকর বেয়ে সেই সব হঠকারী বিশ্বাসের নির্গত লালাই বের হয়ে যায়- যা তিনি কতটা বোঝেন, জানি না। আমরা বুঝতে পারি গণহত্যা দিবস সরকার এ বছরের জন্য ঘোষণা করেনি, এখন থেকে সম্মুখের বছরগুলোতে এই দিবসটি পালিত হবে, দেশের নতুন প্রজন্ম ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানের সেনাবাহিনী কিভাবে অপারেশন সার্চলাইটের নামে গণহত্যা শুরু করেছিল তা জানার সুযোগ পাবে। দলগতভাবে বিএনপি আমাদের জাতীয় ইতিহাসের প্রকৃত ইতিহাসকে কতটা স্বীকার করে, কিংবা মানে তা নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নানা বিকৃতি ও বিভ্রান্তি সৃষ্টির দায় বিএনপি কোনোকালেই অস্বীকার করতে পারবে না। মুক্তিযুদ্ধকে দখল করার মনোবৃত্তি থেকে বিএনপি মুক্ত হতে পাওয়ার সুযোগ রাখেনি। দলটি জিয়াউর রহমানকে প্রধান নেতা সাজিয়ে মুক্তিযুদ্ধের যে ইতিহাস উপস্থাপন করতে চায়- সেটি ইতিহাসের প্রতি অবজ্ঞা, মুক্তিযুদ্ধের প্রতি অবমাননার শামিল। বিএনপির মহাসচিবসহ অন্যান্য নেতারা যখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং আদর্শের সবক দেন, কথা বলেন, তখন সেই ইতিহাস জিয়াউর রহমানকে প্রধান করার বিকৃত ইতিহাস, নাকি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সূচিত স্বাধীনতার আন্দোলন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সংবলিত ইতিহাস- তা স্পষ্ট করার প্রয়োজন রয়েছে। মির্জা ফখরুলসহ বেশির ভাগ বিএনপি নেতাই ১৯৭১ সালে বা পরবর্তীকালে মুক্তিযুদ্ধকে মূলধারার আদর্শ থেকে পৃথক করে দেখেছেন, বিএনপি প্রতিষ্ঠার পর মূল চেতনার ধারেকাছে দল ও রাজনীতিকে নেননি। ফলে মুক্তিযুদ্ধের অনেক কিছু নিয়েই বিএনপির অস্বস্তি রয়েছে, নানা ধরনের বাকপটুতা দিয়ে তারা তা কাটিয়ে বা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেন। অবশ্য ড. মঈন খান ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন না করা নিয়ে কোনো উত্তর দিতে চাননি, তবে এটি কেন আগে করা হয়নি সেই দায় সবারই ওপর চাপালেন, এমনকি জনগণের ওপরও। বস্তুত বিএনপির নেতৃবৃন্দ যখন জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিতে যান তখন তারা কি মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে ধারণ করে সেখানে যান বা এর বাস্তবায়ন ঘটানোর জন্য মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে যান- সেই প্রশ্ন অনেকের মধ্যে ঘুরপাক খায়। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতিই শুধু নয়, মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীদের রাজনীতি এবং দলে পুনর্বাসন, জামায়াতকে রক্ষার আড়ালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরোধিতা ইত্যাদি কর্মকাণ্ড কোনো গোপন বিষয় নয়, বিএনপির প্রকাশ্য অবস্থান হিসেবেই দৃশ্যমান। বস্তুত বিএনপি একটা বড় ধরনের দ্বিচারিতার নীতি মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে অনুসরণ করছে- যা বর্তমান মেধাবী ও আদর্শবান তরুণ প্রজন্মের কাছে স্পষ্ট হচ্ছে। এটি বিএনপির জন্যও এক ধরনের নেতিবাচক বাস্তবতা তৈরি করতে যাচ্ছে- যা বিএনপির নিজেরই সৃষ্টি। বিষয়টি চিএনপির অভ্যন্তরে যারা আছেন- তারা ভাববেন, না ভাবলে আমাদের করার তেমন কিছু নেই।
দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে জঙ্গিবাদ নিয়ে। বিএনপির উল্লিখিত নেতৃবৃন্দ দাবি করছেন, সরকার জঙ্গিবাদকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে বিরোধী দল ও মতকে দমনের জন্য ব্যবহার করছে। এটি কতটা যুক্তিবাদী মানুষ গ্রহণ করছে বা যথার্থ মনে করছে তা আমাদের জানা নেই। তবে বর্তমান সরকার জঙ্গিদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি শুরু থেকেই অনুসরণ করার বড় ধরনের সংকট দেশে ঘটতে পারেনি। শুরু থেকে যদি জঙ্গিদের প্রতি সরকার কোনো শৈথিল্য প্রদর্শন করত তাহলে বিশ্ব বাস্তবতা এবং দেশীয় নানা অপশক্তির ইন্ধনে দেশে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার বিষয়কে ঠেকানো সম্ভব হতো কিনা বলা মুশকিল। জঙ্গিবাদের কালো থাবার বিষয়টি আমরা এখনো অনেকেই খুব বস্তুনিষ্ঠভাবে অনুভব করতে পারছি বলে মনে হয় না। নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, ইয়েমেন, সিরিয়া, ইরাকসহ অনেকগুলো দেশের অবস্থা এখন কোন পর্যায়ে চলে গেছে তা বলাই বাহুল্য। এককালের সমৃদ্ধ নাইজেরিয়া এখন দুর্ভিক্ষকবলিত দেশ, গোকো হারাম নিয়ন্ত্রিত উত্তর নাইজেরিয়ায় এখন নারী-পুরুষরা না খেয়ে মরছে, সোমালিয়াতেও অবস্থা একই। ইয়েমেন ধ্বংসের কিনারে দাঁড়িয়ে আছে, সিরিয়া, ইরানের মানবিক বিপর্যয়ের কথা কতটা আমরা বুঝতে চেষ্টা করছি জানি না। সে ধরনেরই জঙ্গিবাদী গোষ্ঠী বাংলাদেশে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। এমন পরিস্থিতিতে বিএনপির নেতৃবৃন্দরা কখনো বলছেন দেশে গণতন্ত্র নেই বলে নাকি জঙ্গিগোষ্ঠী প্রতিবাদস্বরূপ আবির্ভূত হচ্ছে! জঙ্গিরা গণতন্ত্রের কথা কাউকে বলেছে- এমন কথা কেউ শুনেছে বলে মনে হয় না। বিএনপির নেতৃবৃন্দ জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার কথা মুখে বলেন, কিন্তু তাদের নিজেদের তেমন কোনো উদ্যোগ রয়েছে- এমনটি প্রমাণ হওয়ার মতো কিছু খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
মির্জা ফখরুল সাহেব বিএনপিকে উদারবাদী গণতান্ত্রিক ধারার দল বলেও দাবি করছেন। মির্জা ফখরুলের দাবি সত্য হলে বলতে হবে, উদারবাদী দলের সংজ্ঞায় বোধহয় নতুন কোনো পরিবর্তন এসেছে! এটি কি তার নিজের মনগড়া সংজ্ঞা, নাকি বাকপটুতার নমুনা- বোঝা গেল না। উদারবাদী গণতান্ত্রিক কোনো দল এমন কোনো জোট করতে পারে কি যেখানে জামায়াতসহ সব দক্ষিণপন্থীর শক্তি অবস্থান করছে। বিএনপির জন্মের পর থেকে জামায়াতসহ দক্ষিণপন্থার শক্তিসমূহের সঙ্গেই তাদের রাজনৈতিক সখ্য সৃষ্টি হয়েছে, সেটি এখন ২০ দলীয় জোটে প্রগাঢ় হয়েছে। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি যে ধারায় দেশকে রাজনৈতিকভাবে নিয়ে গিয়েছিল সেটি ছিল চরম প্রতিক্রিয়াশীল, চরমপন্থার জঙ্গিবাদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করা, উদারবাদী ব্যক্তি ও গোষ্ঠীকে হত্যা করা, দেশ ছাড়া করাসহ হেন কোনো অপকর্ম নেই যার তখন রাষ্ট্রীয়ভাবে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া হয়নি। এরই নাম যদি ‘উদারবাদী গণতন্ত্রে’ বিশ্বাসী দলের রাজনীতি হয় তাহলে বাংলাদেশের জন্য মহাবিপদ। ২০০১-২০০৬ সালে যেমন ছিল, ২০১২-১৫ সালে তা পিছু ছাড়েনি, ভবিষ্যতেও ছাড়বে বলে মনে হয় না। বাকপটুতা দিয়ে অনেককে বিভ্রান্ত করা যায়, এমন কি বেশি সংখ্যক মানুষকে বিভ্রান্ত করে ক্ষমতায়ও যাওয়া যায়- যা হিটলার জার্মানিতে পেরেছিল। কিন্তু এর পরিণতি কত ভয়াবহ হয়েছিল তা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে দেখা যায়, সতর্কও হওয়া যায়। বাংলাদেশে আমরা এমন বাকপটুতার রাজনীতি সম্পর্কে সতর্ক হলে দেশ বড় ধরনের অপশক্তির কবলে পড়বে না এটি নিশ্চিত করে বলা যায়।
সুত্র
২| ৩০ শে মার্চ, ২০১৭ সকাল ১০:৫০
আস্তিক কমরেট বলেছেন: এতো দিবসেরই বা কি দরকার?? গণহত্যা বা স্বাধীনতার ঘোষনা যাই বলি না কেন তাতো ২৫ মার্চ গভীর রাত অর্থাৎ ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরেই ঘটছে সে জন্য তো স্বাধীনতা দিবসই আছে। আবার দিবসের কি প্রয়োজন ?? কথায় কথায় দিবস......।
©somewhere in net ltd.
১| ৩০ শে মার্চ, ২০১৭ সকাল ১০:৪৪
মোস্তফা সোহেল বলেছেন: আপনার সব পোষ্টই তো হিট ! আজকেরটা কেই পড়তেছে না ?