![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বিশ্ব যখন এগিয়ে চলে আকাশ জয়ের পথে , আমরা তখন নিকাতলায় ফতোয়া খুঁজি পুখি পুস্তুক চুষে ।
বোরলি রেকটোরি ছিল একটি ভিক্টোরিয়ান ম্যানশন। বাড়িটি ১৯৩৯ সালে আগুনে পুড়ে মারাত্বক ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবং ১৯৪৪ সালে এটি পুরুপুরি ভেঙ্গে ফেলা হয় ।১৯২০ থেকে ১৯৩০ সাল পর্যন্ত ভুতুড়ে কর্মকাণ্ডের জন্য এটি ইংলেন্ডের বিখ্যাত ভুতুড়ে বাড়ি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে ।
ইংল্যান্ডের এসাক্স এর বোরলি গ্রামে অবস্থিত এই বাড়িটি নিয়ে অনেক ভূতুরে গল্প প্রচলিত আছে। কিন্তু ১৯২৯ সালের দিকে এই গল্প হঠাৎ করেই ছড়িয়ে পরে যখন ডেইলি মিরর পত্রিকায় তখনকার বিখ্যাত ভৌতিক গবেষক হ্যারি প্রাইস এর এই বাড়িতে যাওয়ার খবর প্রকাশিত হয়। প্রাইস ভৌতিক বিষয় নিয়ে দুটি বিখ্যাত বই লেখার জন্য সেখানে গিয়েছিল। ১৯৫৬ এর সেপ্টেম্বরে বিবিসিতে বোরলি রেকটরি নিয়ে একটি অনুষ্ঠান প্রচার কথা ছিল কিন্তু রেকটরের স্ত্রী মারিয়ানি ফয়েস্টারের আইনি পদক্ষেপের কারনে সেটি প্রচার করা হয় নি।
ইতিহাস
১৮৬২ সালে শ্রদ্ধেয় হেনরি দাওসন এলিস বাল বোরলি গির্জার কাছে বোরলি রেকটরি বাড়িটি নির্মান করেন।এক বছর পর তিনি রেকটর নাম গ্রহন করেন ও বাড়িটিকে যাজক পল্লীতে রুপান্তর করেন এবং ১৮৪১ সালের এক অগ্নিকান্ডে বাড়িটি ধংস্ব হলে গির্জার কাছে বাড়িটি সরিয়ে আনা হয়। আর কালক্রমে বলের পরিবারের লোকজন এই বাড়িটি বড় বানাতে শুরু করেন।
অনেকেই মনে করতেন সেণ্ট বেনিডিক্টের সম্প্রদায়ভুক্ত সন্ন্যাসীদের এ আশ্রমটি এই এলাকায় ১৩৬২ সালে তৈরী করা হয়েছিল। কিংবদন্তী মতে আশ্রমের এক যাজকের সাথে একজন সন্ন্যাসীনীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। তাদের এ সম্পর্কের কথা জানাজানি হলে যাজককে সেখান থেকে অপসারন করা হয় এবং সন্ন্যাসীনীকে পাথর নিক্ষেপ করে মারা হয়। ১৯৬৩ সালে প্রমান হয় এই ঘটনার কোন ওইতিহাসিক প্রমান নেই এটা সম্পূর্ন রেকটর পরিবারের বানোয়াট কাহিনী। এছাড়া ধারনা করা হয় সন্ন্যাসীনীর মতবাদ রাইডর হেগার্ড-এর উপন্যাস মনতেজুমা’স ডটার (১৮৯৩) অথবা ওয়াল্টারের বিয়োগান্তক কবিতা মারমিয়ন (১৮০৮) থেকে এসেছে। তাছাড়া সংবাদপত্রে প্রকাশের আগে পর্যন্ত এসব ঘটনা কোন স্থানীয় পত্রিকা অথবা লিখিত কোন দলিলে পাওয়া যায় নি অথবা অস্বাভাবিক কোন ঘটনার কথা প্রকাশ হয় নি।
অস্বাভাবিক ঘটনা
১৮৬৩ সালের দিকে কিছু স্থানীয় বাসিন্দারা জানায় তার বাড়িটির চারপাশে অদ্ভুত কিছু পায়ের চিহ্ন দেখেছে। ২৮ জুলাই ১৯০০ সালে রেকটরের চার মেয়ে জানায় তারা এক রাতে তাদের থেকে ৪০ কদম দূরে সন্ন্যাসীনীর ভূত দেখেছে এবং তারা যখন কাছে যাওয়ার চেষ্ঠা করেছিল তখন ছায়ামূর্তিটি মিলিয়ে যায়।আরো অনেক লোক অনেক অস্বাভাবিক ঘটনার কথা বর্ননা করেন যেমন, কেউ কেউ নাকি দেখেছেন দুইজন মাথাহীন ঘোড়ার গাড়ি চালক টমটম নিয়ে যাচ্ছেন। একই ঘটনা পরবর্তী চল্লিশ বছর পর্যন্ত ঘটেছে। হেনরি দাওসন এলিস বাল ১৮৯২ সালে মারা যান এবং তার পুত্র হ্যারি বাল উত্তরাধিকার সূত্রে বাড়িটি পান।
১৯২৮ সালের ৯ জুন হ্যারি বাল মৃত্যুবরন করলে রেকটরিটি খালি হয়ে যায়। একই বছরের ২ অক্টোবর গাই এরিক স্মিথ ও তার স্ত্রী এই বাড়িতে আসে। মিসেস স্মিথ আসার কিছুদিন পরই যখন আলমারি পরিষ্কার করছিলেন তখন তিনি বাদামী কাগজে মোড়ানো একটি যুবতী মহিলার মাথার খুলি দেখতে পান। তার পর থেকে তাদের পরিবার অস্বাভাবিক কিছু ঘটনার সম্মুখীন হন, যেমন হঠাৎ করেই বেল বেজে উঠত যদিও বেলের তার ছেড়া ছিল, জানালায় আলো ও অদ্ভুত পায়ের চিহ্ন। মিসেস স্মিথ অরো বলেন তিনি ঘোড়ায় - টানা গাড়িও দেখতে পেতেন। তাদের এই ঘটনা ডেইলি মিররকে জানান। তারপর মিরর রিপোর্টারকে সেখানে পাঠায় যিনি সেখান থেকে ফিরে একটি সিরিজ রচনা করেন। ডেইলি মিরর অস্বাভাবিক ঘটনার গবেষক হ্যারি প্রইসকেও সেখানে নিয়ে আসে এবং এখান থেকেই তার নাম বিখ্যাত হয়ে উঠে। হ্যারি সেখানে পৌঁছার পর নতুন ঘটনা ঘটতে থাকে যেমন, পাথর ছুড়ে মারা, পাত্র ছুড়াছুড়ি এবং আয়নাতে প্রেতাত্মাদের চিরকুট ইত্যাদি। তারপর সেখান থেকে হ্যারি সবকিছু বাদ দিয়ে চলে আসে।
স্মিথরা ১৪ জুলাই ১৯২৯ সালে বোরলি থেকে চলে যান এবং থাকার সমস্যার কারনে বলের চাচার ছেলে লিওনেল ফয়েস্টার, তার স্ত্রী মারিয়ানি এবং পালিত কন্যা অ্যাডিলাইড ১৬ অক্টোবর ১৯৩০ সালে বাড়িটিতে উঠেন। ফয়েস্টার উঠার পরও সেখানে অনেক অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটে যেগুলো তিনি প্রাইসকে লিখে পাঠান। প্রাইস বলেন তারা বাড়িতে উঠার পর থেকে ১৯৩৫ সাল পর্যন্ত বেল বেজে উঠা, জানালায় আলো ও অদ্ভুত পায়ের চিহ্নসহ আরো অনেক ঘটনা ঘটে এবং একবার তাদের মেয়ে একটি ঘরের মধ্যে আটকে যান কোন চাবি ছাড়াই। মারিয়ানি একবার তার স্বামীকে জানায় তাকে তার বিছানা থেকে নিচে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। এছাড়া একবার ফয়েস্টার তার বাহুতে বড় একটি ছুড়ে মারা পাথর দ্বারা আঘাত পান। ডেইলি মিররের কল্যানে এই ঘটনা অনেক ভৌতিক গবেষকদের দৃষ্টি আকর্ষন করে এবং তারা এটাকে মারিয়ানির উপর অভিশাপ বলে মত দেন। পরে মারিয়ানি এক বিবৃতিতে বলে কিছু কিছু ঘটনা তার স্বামীর উপর অভিশাপ এর কারনে ঘটেছে। কিন্তু কেউ কেউ এটাকে সত্য বলে ধরে নেন। অবশ্য পরে মারিয়ানি স্বীকার করেন তার সাথে তার বাড়ির ভাড়াটে ফ্রেক পিয়ারলেস এর যৌন সম্পর্ক ছিল এবং এটাকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য সে কিছু কিছু ঘটনা রটিয়েছিল। ফয়েস্টারের স্বাস্থ্য খারাপ হওয়ার জন্য ১৯৩৫ সালের অক্টোবরে তারা বোরলি ছেড়ে চলে যান।
©somewhere in net ltd.