নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবন থেকে যদি পালাই ছুটে …

মোঃ তামিম হাসান

বিশ্ব যখন এগিয়ে চলে আকাশ জয়ের পথে , আমরা তখন নিকাতলায় ফতোয়া খুঁজি পুখি পুস্তুক চুষে ।

মোঃ তামিম হাসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

তান্ত্রিক ও মৃত্যু রহস্য ( ১ম খন্ড )

০৫ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ১১:৩০





বছরখানেক আগের ঘটনা। আমাদেরই এক বন্ধু সিহাব

গিয়েছিলো তার গ্রামের বাড়ি শ্রীপুরে। সেখান

থেকে এসে সে আমাদের এক রোমহর্ষক ঘটনা শোনালো।

ঘটনাটা ঐ গ্রামের এক মাঝবয়সী লোককে নিয়ে। উনার নাম ছিল

মন্নান মিয়াঁ। ছিলো বলছি কারন লোকটা এখন জীবিত নেই।

সে যাই হোক, আমাদের এই ঘটনার মূল অংশ মন্নান

মিয়াঁকে নিয়ে। মন্নান মিয়াঁ শ্রীপুর গ্রামের স্থানীয় কেউ নন।

বছর পাঁচেক আগে গ্রামে এসেছিলেন ঘুরতে ঘুরতে। এরপর গ্রামের

লোকজন তাকে পছন্দ করে ফেলে। একটা ঘরও তুলে দেয়া হয় তার

জন্য। লোকটা খুবই মিশুক প্রকৃতির ছিল।

কারো যেকোনো সাহায্যে তাকে ডাকলেই সাড়া দিতো। গত

২০০৯ সালের গ্রীষ্মের এর দুপুরে মন্নান মিয়াঁ মারা যায়।

লোকমুখে শোনা যায়, ঐদিন বাজার করে এসে মন্নান হটাৎ

করে অসুস্থ হয়ে পড়ে। বারবার বলতে লাগে, রাস্তায় তার

সাথে খুব খারাপ কিছু হয়েছে। কিন্তু সেই খারাপ

কিছুটা কি তা সে পরিষ্কার করে বলতে পারেনি। তার আগেই

সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। তার লাশ সেদিনই দাফন

করে দেয়া হয়। গ্রাম্য রীতি অনুযায়ী, মানুষজন তাদের

কবরস্থানে শুধু নিজেদের ফ্যামিলি মেম্বারদের জন্যই

জায়গা রাখেন। মন্নানের সেই গ্রামে কোন পরিচিত ছিল না বিদায়

তার কবর দেয়া হয় রাস্তার পাশেই একটা বেল গাছের নিচে। তার

মারা যাওয়ার কারন কেও আবিস্কার করতে পারেনি।

হয়তো পারেনি। আমি হয়তো বলছি কারন মূলত এখান থেকেই

আমাদের কাহিনী শুরু হতে যাচ্ছে।

আমার এক বন্ধুর নাম জাবেদ। আমাদের মাঝে ও

বলতে গেলে দুঃসাহসী। জীবনের একটা বড় সময় সে প্যারানরমাল

একটিভিটি নিয়ে গবেষণা করে কাটিয়ে দিয়েছে। বেচারার খুব কষ্ট

যে, জিন-ভুত কিছুই কখনও তার দেখা হয়নি। সিহাবের

কাছে ঘটনাটা শুনেই সে লাফিয়ে উঠলো। যে করেই হোক

তাকে সেখানে জেতেই হবে। এর পিছনে একটা বড় কারন ছিল

সিহাবের শেষ কথাটি। মন্নান মিয়াঁর কবরের রাস্তায়

নাকি প্রায়ই রাতের বেলা কাউকে বসে থাকতে দেখা যায়।

কয়েকজন তো হলপ করে বলেছে তারা মন্নান

মিয়াঁকে দেখতে পেয়েছে। এরচেয়ে ও ভয়ঙ্কর ব্যাপার হল, মন্নান

মিয়াঁর কবরের উপর নাকি একটা কুকুরকে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।

কুকুরটা কোথা থেকে আসে, রাত শেষে কোথায় যায়, তা আজও

কেউ জানতে পারেনি। এমনকি দিনের বেলা কুকুরটাকে কেউ

কখনো দেখেও নি। প্রতি পূর্ণিমা রাতে কুকুরটা মন্নান মিয়াঁর

কবরের পাশে বসে কাঁদে। যারা রাতের বেলা গ্রামের বাজার

থেকে আসেন তারা অনেকেই ঐ কুকুরকে দেখেছেন। মন্নান মিয়াঁর

কবর যেই রাস্তায় ঐ রাস্তাটা এখন প্রায় বন্ধের উপক্রম। এই

কথাগুলোই আসলে জাবেদের মাথাটা খারাপ করে দিলো।

সিহাবের এক কথা। সে কোন অবস্থাতেই জাবেদ

কে নিয়ে যাচ্ছে নাহ। জাবেদ অনেকটা নাছোড়বান্দা পাবলিক।

অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে শেষমেশ সিহাবকে রাজি করলো যাওয়ার

ব্যাপারে। আমার নিজেরও যাবার ইচ্ছে ছিল, কিন্তু সেই সময়

মিডটার্ম পরীক্ষা চলছিলো দেখে যাওয়া সম্ভব হয়নি। যাই

হোক, জাবেদের প্ল্যান ছিল পূর্ণিমা রাতে উক্ত

স্থানে উপস্থিত থাকা। এতে কুকুরটার দেখা পাওয়া যাবে,

পাশাপাশি ছবি তোলার জন্য ভালো আলোও থাকবে।

বাংলা ক্যালেন্ডার দেখে সময় নির্ধারণ করে রওনা দিলো তারা।

তারা মানে, জাবেদ আর সিহাব। সাথে আর ২জনের যাওয়ার

কথা ছিল, কিন্তু শেষ মুহূর্তে ২ জনই যাওয়া বাদ করে দেয়।

পারিবারিক কিছু ঝামেলার কারনেই ২জনের যাওয়া বাতিল

হয়ে যায়। সে যাই হোক, জাবেদরা নির্দিষ্ট সময়েই

গ্রামে পৌঁছায়। আদর আপ্যায়নে তাদের বরন করে নেয় সিহাবের

আত্মীয়স্বজনরা। মোটামুটি ফ্রি হবার পর জাবেদ, সিহাবের

ছোট কাকাকে খুলে বলে আসার আসল উদ্দেশ্য। শুনে ছোট

কাকা কিছুটা গম্ভির হয়ে যান। শেষমেশ জাবেদ আর সিহাবের

প্রবল অনুরোধের মুখে নতি স্বীকার করতে হয় তার। যাওয়ার

অনুমতি দেন তিনি কিন্তু সাথে তার দেয়া পরিচিত

একজনকে নিয়ে যেতে হবে। জাবেদ চাচ্ছিল একাই যেতে। কারন

এইসব ব্যাপারে বেশি মানুষ থাকলে নাকি “প্যাঁচ”

লেগে যেতে পারে। কিন্তু ছোট কাকার শর্ত একটাই। হয়

সাথে তার দেয়া গাইড যাবে নাহলে যাওয়া বাতিল।

অগত্যা জাবেদকে রাজি হতেই হল।

সেদিন ছিল রবিবার। সন্ধার পর পরই আকাশ উজ্জ্বল

করে পূর্ণিমার চাঁদ উঠলো। চাঁদের আলোতে চারপাশে যেনও

আলোকিত হয়ে উঠলো। বিপত্তি শুরু হল ঠিক তখনি। সিহাব

তাড়াহুড়ো করে বের হতে গিয়ে দরজার চৌকাঠে ধাক্কা খেলো।

সাথে সাথে মাথা ধরে বসে পড়লো। হাত সরাতেই

দেখে গেলো ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরুচ্ছে। বাসা ভরতি মানুষের

মধ্যে হট্টগোল বেঁধে গেলো। একে তো গ্রাম অঞ্চল, তার উপর

এখনও ফ্রিজ জিনিসটা এতোটা জনপ্রিয় হয়ে উঠেনি।

সিহাবকে ধরাধরি করে নলকূপের পাড়ে নিয়ে যাওয়া হলে। প্রায় ২০

মিনিট লাগলো রক্ত বন্ধ হতে। এদিকে জাবেদ

তো টেনশনে মারা যাচ্ছে। শেষমেশ বুঝি যাওয়াটাই বাতিল

হয়ে গেলো! ঐ অবস্থায় সিহাবের পক্ষে যাওয়া একদমই সম্ভব

ছিল নাহ। কিন্তু জাবেদ কাকাকে বলে তার নিজের যাওয়া নিশ্চিত

করে নিলো। সাথে থাকবে গাইড রতন আলী। (অনেকেই

হয়তো ভ্রু কুঁচকাতে পারেন যে, চেনা নেই জানা নেই

একটা ছেলেকে ঐ অবস্থায় তার বাসা থেকে কিভাবে বের

হতে দিলো? তাও যখন ছেলেটা তাদের অথিতি। ভাই,

জাবেদকে আমি চিনি।

সে যদি বলে সে যাবে তাহলে তাকে আটকানো কারো পক্ষেই

সম্ভব নাহ। এমনকি সে তখন নিজের বাবা মার কথাও শুনবে নাহ।)

রতন আলী ঐ গ্রামের সবচেয়ে সাহসী মানুষদের মাঝে একজন।

ছোট কাকা রতনকে বুঝিয়ে দিলেন যেনও কোন অবস্থাতেই

জাবেদকে ফেলে চলে না আসে। গ্রামে ছোট কাকার

ভালো প্রতিপত্তি ছিল। রতন আলী নিজের বুকে চাপর

দিয়ে বলল, সে কাউকে ভয় করে নাহ। ভুতের ভয় তার নেই।

বরং শহুরে ভাইয়ের সাথে সেও আজকে দেখবে কিসের ভূত, কার

ভূত!

রতনের হাতে একটা ব্যাটারি চালিত টর্চ লাইট। জাবেদ

ঢাকা থেকেই একটা শক্তিশালী টর্চ আর একটা ভালো মানের

ডিজিটাল ক্যামেরা নিয়ে যায়। ক্যামেরাটা গলায় ঝুলিয়ে,

টর্চটা হাতে নিয়ে হাঁটতে লাগে সে। পাশেই রতন আলী। রতন

তাকে গ্রামের বিভিন্ন ঘটনা জানাতে লাগলো। কোন বাড়ির

কে কবে কার হাতে খুন হয়েছে, কে কোথায় ফাঁস

নিয়ে মারা গেছে এইসব। জাবেদের বিরক্ত আর ভয় দুটোই

লাগছিল(ভয় লাগার ব্যাপারটা আমার অনুমান, কারন সে যখন

গল্পটা বলছিল তখন বলেছিল তার শুধু বিরক্ত লাগছিল আর

অদ্ভুত একটা অনুভুতি হচ্ছিল। আমি ধরে নিয়েছিলাম সেই

অনুভূতিটা ভয়)।

বাড়ি থেকে জায়গাটার দূরত্ব ২ মাইলের মত। গ্রামের নিরবতায়

নাকি ভূত দেখার টেনশনে কে জানে, জাবেদের ভীষণ বাথরুম চাপল।

রতন আলীকে সে টর্চটা ধরতে বলে নিজে গেলো একটা গাছের

নিচে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে। কাজ শেষ

করে ফিরে এসে তারা আবার হাঁটতে লাগলো। কিছুক্ষণ চুপচাপ

হাঁটার পর হটাৎ রতন আলী জাবেদ কে জিজ্ঞেস করে বসলো,

মন্নান মিয়াঁ সম্পর্কে কতটা কি জানে সে।

জাবেদ একটু চমকে গেলো। কারন কিছুক্ষণ আগে যেই গলায় রতন

আলী কথা বলছিল তার সাথে এখনকার গলা যেনও একটু অমিল

লক্ষ্য করা যায়। তবে ঘাবড়ে না গিয়ে সে বোঝার

চেষ্টা করলো ব্যাপারটা কি আসলেই তাই নাকি তার দুর্বল মনের

চিন্তা। জাবেদ মন্নান মিয়াঁ সম্পর্কে যা জানত তা বলল রতন

আলীকে। শুনে রতন আলী কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল,

“মন্নান মিয়াঁ কেমনে মারা গেছে জানতাম চান??”

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.