![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বিশ্ব যখন এগিয়ে চলে আকাশ জয়ের পথে , আমরা তখন নিকাতলায় ফতোয়া খুঁজি পুখি পুস্তুক চুষে ।
আমাদের সবচেয়ে বড় পরিচয় হল আমরা মানুষ।অতীত আর বর্তমান নিয়ে যতটা উদ্বিগ্ন তার থেকে ,ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তার প্রয়াস খানিকটা বেশী।ভবিষ্যত নিয়ে ভাবতে শুধু ভালবাসি বললে ভুল হবে ,এখন ভাবনাটা গবেষণায় রুপ নিয়েছে ।
ভবিষ্যতে আমাদের প্রজাতি কতটুকু নিরাপদ অথবা বিলুপ্তির সম্ভাবনা আছে কি ??
আমার মনে হয়, একটি নির্দিষ্টি প্রাকৃতিক পরিবেশে অভ্যস্থ প্রজাতিরা বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে, যদি পরিবেশ বদলে যায়। এমনটা মানুষের ক্ষেত্রে ঘটার সম্ভাবনা শূন্যের কাছাকাছি। কারণ মানুষের প্রাকৃতিক বিভিন্ন পরিবেশ খাপ খাওয়ানোর উচ্চক্ষমতা আছে। যেমন, বাংলাদেশের গড়ে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় অভ্যস্থ একজন ছাত্র যখন উচ্চ শিক্ষার্থে কানাডা যায় তখন সে কানাডার মাইনাস ২০ ডিগ্রিতেও অভ্যস্থ হয়ে যায়, আবার কানাডার মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে অভ্যস্থ একজন কর্মসুত্রে আফ্রিকার তীব্র গরমেও বেঁচে থাকতে পারেন।
এছাড়াও সম্পূর্ন পৃথিবীজুড়েই এখন মানুষ ছড়িয়ে আছে। সুতরাং একটা বড় উল্কাপাতে অধিকাংশ মানুষ ধ্বংস হয়ে গেলেও সম্পূর্ণ প্রজাতি ধ্বংস হয়ে যাবে না, যারা বেঁচে থাকবেন তারা বংশবৃদ্ধির মাধ্যমে ঠিকই আবার মানব সভ্যতার দৌড় অব্যাহত রাখবেন।
আমরা কিছুটা অবগত যে, প্রকৃতির পরিবর্তন হচ্ছে বন উজাড় , কার্বন- ডাই- অক্সাইড দূষণ ইত্যাদি কারণে । ফলে এমনটা হতে পারে যে, বদলাতে বদলাতে এমন অবস্থা তাতে আমাদেরই বাঁচার কোন উপায় থাকবে না।
অনেক সময় একটি প্রজাতি আরেক প্রজাতির দ্বারা বিতাড়িত হয়। যেমন আমরা হোমোসেপিয়েন্সরা পৃথিবীর বুক থেকে নিয়ান্ডার্থালদের বিতাড়িত করেছি। অর্থাৎ প্রকৃতির বুকে আমাদের সাথে প্রতিযোগীতায় নিয়ান্ডার্থালরা টিকে থাকতে পারে নাই, তারা হারিয়ে গেছে।
এখন কথা হলো, প্রকৃতিতে এখন এমন কোন প্রজাতি নেই যারা মানুষের সাথে পাল্লা দেবার সামর্থ্য রাখে। তবে এমন একটা সম্ভাবনা আছে যে, মানুষ থেকেই আরেকটি প্রজাতির উদ্ভব ঘটবে যার পাল্লা দেবার যোগ্যতা থাকবে। তবে সেক্ষেত্রে মানুষ হারিয়ে যাবে না, বরঞ্চ যোগ্যরা হবে মানুষের পরিবর্তিত একটি রূপ।
প্রাকৃতিক নির্বাচন মূলত কাজ করে ভৌগলিক ভাবে স্বতন্ত্র অঞ্চলে বসবাসকারী সংখ্যালঘু জনসংখ্যা বিশিষ্ট প্রজাতির উপর। আর এই কারণেই সারা পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়ে থাকা হোমোসেপিয়েন্সদের উপর প্রাকৃতিক নির্বাচনের প্রভাব কম। যাতায়াত ব্যবস্থার ব্যপক উন্নতি আজ পৃথিবী মূলত একটা গ্রামে পরিনত হয়েছে। সকল জনগোষ্ঠি একে অন্যের সান্নিধ্যে আসছে, তাদের মধ্যে বিয়ে হচ্ছে। ফলে জিনেটিক মিক্সিং হচ্ছে অহরহ।
জীবন বিধ্বংসী কোন ব্যাকটিয়ে বা ভাইরাসে সৃষ্টি হতে পারে। তবে সেই ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস প্রতিরোধের ব্যবস্থা মানুষ নিমেষেই করে ফেলতে পারবে। আর না পারলেও এই কারণে পৃথিবীর সকল মানুষ বিলুপ্ত হয়ে যাবে না।
যখন প্রজাতির অবস্হান এতটা শক্ত ভীতের উপর দাঁড়িয়ে আছে ,তখন চিন্তাকামী মানুষের দূরন্ত পদচারণা ঘটে ভবিষ্যত জানার মুক্ত ভাবনার ভীড়ে ।
চার্লস ডারউইনের বিবর্তনবাদ অনুযায়ী অতীতে মানুষ দেখতে বানরের মতো ছিল। কিন্তু ভবিষ্যতের মানুষ দেখতে কেমন হবে এ নিয়ে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। এ নিয়ে রীতিমত গবেষণাও হয়েছে। আমেরিকার দুই গবেষকের দাবি, এক লাখ বছর পর মানুষ দেখতে হবে ভিডিও গেমের চরিত্র পোকেমনের মতো। পোকেমনের মতোই ভবিষ্যৎ মানুষের থাকবে বড় মাথা, বড় বড় চোখ ।বিশাল আকারের সেই চোখ বিড়ালের মতো রাতের আঁধারেও জ্বলজ্বল করবে। চোখে গুগলের প্রযুক্তি চশমার মতো কন্টাক্ট লেন্স থাকবে। এ ভাবনার পেছনে কারণ আছে বলেও জানিয়েছেন ওই দুই গবেষকের একজন নিকোলাই ল্যাম।
গবেষক ল্যাম ও অ্যারন কাউন ভবিষ্যদ্বাণী করে বলেন, ভবিষ্যতে জাইগোটিক জেনোম প্রকৌশল উদ্ভাবন করবে মানুষ। যার ফলে ভবিষ্যতের মানুষ নিজের বিবর্তন নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হবে। মানুষের প্রয়োজনে দেহের কাঠামোতে ও বিবর্তনে পরিবর্তন আনবে তারা। আমরা বর্তমানে যেভাবে ইলেকট্রন নিয়ন্ত্রণ করতে পারি ভবিষ্যতে সে উপায়ে নিজের বিবর্তনের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ আনবে মানুষ।
গবেষকেদের ধারণা, জিন নিয়ন্ত্রণে সফল ভবিষ্যতের মানুষেরা তাঁদের মুখে অতিরিক্ত বৈশিষ্ট্য যুক্ত করবে। যে বৈশিষ্ট্যগুলো মানুষকে সুন্দর করে তোলে বলে তাঁদের মনে হবে সে বৈশিষ্টগুলো তাঁরা তাঁদের চেহারায় যুক্ত করবে। শরীরের গঠনের দিক থেকেও আসবে পরিবর্তন।
গবেষক কাউনের ধারণা বিশাল জ্ঞান মস্তিষ্কে ধারণ করার জন্য মানুষ বড় আকারের মস্তিষ্কের প্রয়োজন বোধ করবে। তাই মস্তিষ্কের আদলে পরিবর্তন এনে মাথার আকার বড় করে নেবে তারা। ভবিষ্যতে মহাকাশের অন্যান্য গ্রহেও বসবাস করবে মানুষ এবং সেখানকার পরিবেশে মানিয়ে নিতে চোখের আকার বাড়িয়ে নেবে তারা। অতি বেগুনি রশ্মি ও তেজস্ক্রিয়তার সঙ্গে মানিতে নিয়ে শরীরের ত্বকেও পরিবর্তন আনবে। এখনকার সময়ে পেঁচা যেভাবে পাশ থেকে চোখের পাতা ফেলে ভবিষ্যতে মহাজাগতিক রশ্মি থেকে রক্ষা পেতে চোখের পাতা পাশ থেকে খোলা ও বন্ধ করার ব্যবস্থাও করে নেবে মানুষ।
গবেষক ল্যাম জানিয়েছেন, বৈজ্ঞানিক ভিত্তির চেয়ে অস্তিত্ববাদের দৃষ্টিকোণ থেকে তাঁদের গবেষণা করা হয়েছে। অবশ্য শুধু বিনোদনের উদ্দেশ্য নিয়েই এ গবেষণা করা হয়েছে বলেই জানিয়েছেন তাঁরা।
প্রজাতিগত ভাবে শ্রষ্ঠ হওয়ায় আমাদের অস্তিত্ব টিকে আছে লক্ষ্যলক্ষ্য বছর ।পরিবর্তনের ধারাতে গঠনগত, মনস্তাস্তিক ও বুদ্ধির বিকাশ দূরন্ত ঘোড়ার গতিতে না হলেও পরিবর্তন যে হচ্ছে সেটা সুনিশ্চিত ।
©somewhere in net ltd.