| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নও হেলাল
আপনি অনবরত বকবক শুনতে শুনতে বিরক্তবোধ করেন। তাহলে কি আপনাকে কারো বকে চলা অনবরত ‘বকবক’ প্রভাবিত করল? হয়তো। নয়তো আপনি বিরক্ত হলেন কেন। এখানে আপনি চাননি কেউ বকবক করুক এরপর আপনি বিরক্তিবোধ করবেন। বরং আপনার পক্ষ থেকে এই বিরক্তবোধের জন্য কোন প্রকার কর্মতত্পরতা ছাড়াই সম্পূর্ণ ‘উড়ে এসে জুড়ে বসার মতো’ কারো বকবক আপনাকে ‘বিরক্তিবোধ’ এর ভাবে প্ররোচিত করতে সক্ষম হয়েছে। এমনকি কখনো আপনাকে উত্তেজিত করতে আবার কখনো কোন স্বার্থের হিসাব-নিকেশ ছাড়াই মারামারি করতেও। শুধু এক অর্থহীন বকবকই আপনার ইচ্ছা না থাকা সত্তে¡ও আপনাকে যদি এতটা প্ররোচিত করতে পারে তাহলে যা ‘বকবক’ নামের অর্থহীন প্রলাপ নয় তা কতটা করতে পারে!
হ্যাঁ, আপনি চান বা না চান, চারপাশের কথা, লেখা, আর ঘটনাবলী দ্বারা আপনি এভাবেই প্ররোচিত হন। চারপাশের ঘটনাবলী, আলাপচারিতা এভাবেই আপনাকে প্ররোচিত করে। প্ররোচিত না হওয়ার জন্য মানুষের সামনে কতগুলো বাধা থাকে। আপন বিশ্বাস, আস্থার সংকট, এক ধরণের কথা, লেখা ও ভাবনার সাথে সাথে ভিন্নধর্মী কথা, ভাবনা ও লেখার অবস্থান ইত্যাদি। আর এই সবগুলো সংকট কাটিয়ে দিতে পারে আর কাটাতে না পারলেও অন্তত দুর্বল করতে পারতে অনবরত ‘আধিক্য’। অর্থাৎ কোন বিশ্বাস, বিষয় বা বক্তব্যের অনবরত উপস্থিতি, উপর্যুপরি আঘাত, প্রচার প্রাচুর্য দুর্বল করে দিতে পারে বিপরীত মেরুর অবস্থান, বিশ্বাস, ভাবনা ও বক্তব্যকে।
হ্যাঁ, বিশ্বাস বা বক্তব্যকে শানিত করার জন্য অন্তত রক্ষার জন্য পর্যাপ্ত রসদ-যোগান যদি ব্যক্তি নিজের থেকেই তৈরি করে নিতে পারে, এই পরিমাণ মেধা বা খোদাপ্রদত্ত আত্মশক্তি যদি ব্যক্তির নিজের ভেতরেই থাকে, অথবা নিজেকে রক্ষার জন্য পর্যাপ্ত জানাশোনা, প্রশিক্ষণ যদি ব্যক্তির কোথা হতে গ্রহণ করা থাকে তাহলে অবশ্য ভিন্ন কথা। কিন্তু এটাই বাস্তবতা যে, সমাজের সিংহভাগ লোক এই দুই শ্রেণির কোন শ্রেণিরই নয়। অধিকাংশই সাধরণ শ্রেণির, আম মানুষ। অতএব তত্ত¡কথা যাই হোক সমাজে প্রচার-প্রাচুর্যেরই জয়জয়কার। বলব না সে প্রচার-প্রাচুর্য কেবল মিডিয়ার মাধ্যমেই হতে হবে। বরং অন্য অনেকভাবেই হতে পারে। তবে এটা অবশ্য বলতেই হবে, মিডিয়া ছাড়াই প্রচার-প্রাচুর্যে আপনি জয়ী হয়ে যাবেন, আর হতে পারলে পরিণামে টিকেও যাবেন হাল যামানা মে এ বহুত দূর কী বাত হে!
বলবেন টিকে তো আছি। কিন্তু এখনও যে পরিমাণ শক্তি-সামর্থ আপনার তা নিয়ে আপনার শুধুই কি ‘টিকে থাকা’র কথা ছিল। আপনি ভাবছেন, শুধু টিকে আছেন; এটা কি ভেবে দেখেছেন যে, পূর্বের চেয়ে আপনার টিকে থাকার সামর্থ কতটা কমেছে অথবা এখনও প্রতিনিয়ত, প্রতিদিন তা কমছে। ক্রমশ ক্ষয়ে যাওয়ার হিসাবটা আপনি করেন না, করলে বর্তমান নিয়েই তুষ্ট থাকার মানুষ আপনি হতেন না। বেঁচে থাকার জন্য, অতীতকে কেবল তুষ্টি লাভের জন্য সামনে না এনে হিসাবের জন্যও সামনে আনতে হয়। দেখতে হয় কতটুকু এগুলাম অথবা পিছু হটলাম। কতটা হওয়ার ছিল কতটা হয়েছে। কল্পিত চাহিদা দিয়ে নয় সময় বাস্তবতার চাহিদা দিয়েই মাপতে হয় অগ্র-পশ্চাতের হিসাব। এরপর খুঁজে বের করতে হয় পশ্চাদপদতার প্রকৃত কারণ ও তার প্রতিকার। কল্প-রাজ্যের অধিবাসীরা কোনদিনই যা পারে না। কল্পিত আত্মতুষ্টির ঘোরাটোপ এদেরকে এই বাস্তবতার নির্মমতা থেকে বিমুখ রাখে।
কি রাজনীতি, অর্থনীতি, আইন-আদালত, ব্যবসা-বাণিজ্য, সংস্কৃতি, আচার-অনুষ্ঠান, বোধ-বিশ্বাস, কোথায় নেই এই মিডিয়ার প্রভাব। প্রচারনার জাদু। প্রচার শক্তির ব্যবহার তো সৃষ্টির শুরু থেকেই। যেদিন থেকেই মানুষ ভাবতে শিখেছে। কিছু করতে শিখছে। কী করবে ও ভাববে তার জন্যই প্রয়োজন হয়েছে কিছু একটা প্রচারের। এরপর পৃথিবীতে যত ভাব, ভাবনা ও আদর্শের উদ্ভব ঘটেছে প্রচারণাতেই ঘটেছে তার বিস্তার। প্রচারহীন চিন্তা-ভাবনা ভাবুকের মনের আড়ালেই রয়ে গেছে। পৃথিবীর আলো-বাতাস দেখেনি। এই কিছুদিন পূর্ব পর্যন্তও এই প্রকাশ ও প্রচারণার একমাত্র মাধ্যম ছিল মানুষের মুখ ও হাতের লেখনি। সুতরাং প্রচারণার জন্য এই মুখ হাতের সংখ্যা যত বাড়ানো যাবে ততই বাড়বে প্রচার-প্রাশিদ্ধি। হ্যাঁ, কিছুদিন পূর্ব পর্যন্তও হিসাব নিকাশটা এমনই ছিল। লোকবলের বেড়ে চলার উপর নির্ভর করত প্রচার-প্রসারের প্রবৃদ্ধি। এরপরই মানুষ এক আধুনিক যুগে প্রবেশ করল। প্রযুক্তির কল্যাণে আবিস্কার করল একটি কণ্ঠকে লক্ষ্য কণ্ঠে রূপ দেওয়ার মাধ্যম। ফলে হিসাবটা চলে আসল প্রচারশক্তির কারিশমা দেখার জন্য লোকবল নয় এই প্রযুক্তি কার কতটা দখলে আছে। এই প্রযুক্তি কে কতটা মুন্সিয়ানায় ব্যবহার করতে পারছে। ফলে এখন একটি কণ্ঠ দিয়েই লক্ষ কণ্ঠের আওয়ার চুপসে দেওয়া সহজ। সহজ লক্ষ কণ্ঠের আওয়াজের উপর দশটি মানুষের কণ্ঠ গমগম করে বাজানো। প্রচার শক্তির দানবীয় এই মাধ্যমই পরিচিতি পেয়েছে গণমাধ্যম নামে। আরেক নামে এটাকে আমরা মিডিয়াও বলি।
আপনি রাজনীতি করেন, ব্যবসা-বাণিজ্য চালান, আইন-আদালতে যান অথবা করেন আদর্শের প্রসার ও প্রচারের কাজ; যাই করেন আপনার প্রচুরের পরিশ্রমকে পণ্ডশ্রমে পরিণত করতে পারে এই মিডিয়া। আবার এর ঘাড়ে যদি সওয়ার হতে পারেন তাহলে আপনার সামান্য শ্রমকেই বৃহৎ থেকে বৃহৎ শ্রমের বিনিময়ে সাধ্য ফল ও সুফল লাভের উপযুক্ত করে তুলতে পারে। আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন, অন্য আর কোন কিছুকেই এর বিকল্প আপনি দাঁড় করাতে পারবেন না। যদি এই বাস্তবতার ময়দানে কিছুমাত্র অভিজ্ঞতার সঞ্চয় থাকে বলবেন- বিকল্প? কল্পনাই করা যায় না।
এ দুনিয়ায় আপনি যাই করেন, সফলতার সর্বপ্রধান শর্ত হল, আপনি যে সময়টাতে অবস্থান করছেন সর্বাগ্রে সে সময়টাকে চেনা।
©somewhere in net ltd.