![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একজন মুক্ত চিন্তা ধারার মানুষ।
ধ্বংস স্তূপের বাহিরে অনেক মানুষ। হটাৎ বাহির হয়ে আসল একটা লাশ। একজন বোনের লাশ। হাতের মধ্যে সাদা কাগজে ২ লাইন লেখাঃ
“আম্মা-আব্বা আমারে মাফ
কইরা দিউ। তোমাগোরে আর ঔষুধ কিনে দিতে পারবনা। ভাই তুই আম্মা আব্বার দিকে খেয়াল রাখিছ”
হতভাগা মা চিঠি আর মেয়ের
ছবি নিয়ে একটু কাঁদছে আর বেহুঁশ পড়ছে। এরকম দৃশ্য দেখার পরে আর কোন মানুষ হয়ত চোখের পানিটুকু আটকিয়ে রাখতে পারবেনা।
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..
ক) ভাই আমার মাকে বইলেন,আমাকে মাফকরে দিতে,আমার বাড়ি পিরোজপুর,হুলার হাট। ভাই আমি মারা গেলে লাশ টা বাড়িতে পাঠাইয়েন…
খ) ভাই দরকার হলে আমার পা কেটে বের করেন,তবুও আমাকে বাচান,আমি আরএই যন্ত্রনা সইতে পারিনা।
গ) ভাই আমাকে একটা হাতুড়ে দেন,আমি নিজেকে বের করতে পারব…
ঘ) শ্বাস নিতে পারছিনা,লাশের গন্ধে মারা যাবো,ভাই একটু অক্সিজেন আনতে পারবেন।
চ) ভাই আমাকে এখান থেকে বের করেন,আমার একটা ২ বছরের ছেলে আছে,ওর জন্য আমাকে বাচান,ওরে দুধ খাওয়াতে হবে। এগুলো রানা প্লাজার ভেতরে আটকা পড়া কিছু অতি সাধারন মানুষের বাচার আকুতি..…
ওরা কোটি টাকা,বাড়ি ও গাড়ি চায় না। শুধু প্রিয় মুখ গুলোরকাছে ফিরে যেতে চায়। আমরা কি আগামীতে এই দৃশ্য বার বার দেখার অপেক্ষায় আছি?
নাকি আমরা পারবো এই ইতিহাস এখানেই থামিয়ে দিতে..…
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………
রানা প্লাজার মৃত্যুগহ্বর থেকে উদ্ধার পাওয়া অনেকেই শুনিয়েছেন এ রকম একেকটি মর্মস্পর্শী আর শিউরে ওঠার মতো কাহিনি।
হাসপাতালে নেওয়ার পর একটু সুস্থ হয়ে রত্না বেগম বললেন, ‘মাথার উপরেই ছাদ। কান্দে আর হাতে গরম পাইপ লাইগা রইছে। পুইড়া যাইতেছিলাম। তয় নড়বার পারতেছিলাম না। অন্ধকার। ছোড ছোড নিঃশ্বাস নিছি। চোখ বুইজা খালি কানছি।’
উদ্ধার পাওয়ার বর্ণনা দিয়ে রত্না বলেন, ‘হঠাৎ খটখট আওয়াজ আসে। ‘কেউ আছেন?’ ‘কেউ আছেন?’ বইলা কারা জানি চিৎকার করতেছিল। আমিও ‘বাঁচান’ ‘বাঁচান’ বলে চিল্লান দেই। পরে কয়েকটা ছেলে দেওয়াল কাইট্যা আমারে হাসপাতালে নিয়া আসে।’
ভবনধসের দিন বুধবারই উদ্ধার হন পোশাককর্মী নূপুর বেগম (২৫), ভারের নিউ দ্বীপ ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন তিনি। বাঁচার তীব্র আকাঙ্ক্ষায় একপর্যায়ে নিজের আটকে পড়া হাত কেটে ফেলবেন বলে ঠিক করেছিলেন নূপুর। সাহসী এই নারী তাঁর অভিজ্ঞতা শোনালেন এভাবে: ‘এক হাতেরও কম জায়গায় আইটকা ছিলাম। মাথা দিয়া রক্ত পড়তেছিল। আমার ডান হাতের ওপর একটা লাশ। আর লাশটার উপরে দেওয়াল। হাত বাইর করতে পারতেছিলাম না। ছোট একটা ফাঁক দিয়া দেখি, অনেকেই হাঁটতেছে। বাম হাত একটু বাইর কইরা আমি চিৎকার দিয়া কইলাম, ভাই কিছু একটা দেন, ডাইন হাতটা কাটি।’
নূপুর জানান, তাঁকে বাইরে থেকে একটা ছোট বঁটি দেওয়া হয়। কিন্তু তা দিয়ে হাত কাটতে পারেননি। অনেকক্ষণ পরে দেওয়াল তুলে কয়েকজন তরুণ তাঁকে উদ্ধার করেন।
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………
একটা মহিলা… নাম তার রোজিনা…
এত বড় বিল্ডিং ধসে পড়লো… অথচ, তার হাত ভাঙ্গে নি, পা ভাঙ্গে নি… সামান্য আহতও হয় নি….
তবে সে এমনভাবে আটকা পড়েছে যে, সে বিপরীত দিকে কাত হতে পারছে না.. চিত্ হতে পারছে না… সামান্য শরীর চুলকাতে পারছে না.. চিন্তা করুন তো, আপনি নিজে একদিকে কাত্ হয়ে কতক্ষণ শুয়ে থাকতে পারবেন ??
কাল থেকে সেই মহিলা কারো সাথে কথা বলতে পারে নি… হয়তো মৃত্যুর প্রহর গুনছিলো.. চোখ দিয়ে অর্নগল পানি পড়ছিলো.. সেই পানি কানের ভিতর ঢুকে গেলেও সে কিছু করতে পারছিলো না… এমন অবস্থায় আপনি কি কি চিন্তা করতেন ??
মহিলাটি হয়তো চিন্তা করছিলো, সারা জীবন কি কি করেছে… তার মা এখন কি করছে ?? বাপ এখন কি করছে ?? বাচ্চাটা কি করছে ??
এসব ভাবতে ভাবতে অবশেষে হঠাত্ একজন মানুষ চিত্কার করে বললো, কেউ কি বেঁচে আছেন ??
মহিলা বললো, হ্যাঁ.. আমি বেঁচে আছি… অথচ, উদ্ধারকারী মানুষটাও তাকে খুঁজেই পাচ্ছে না…
সে যাই হোক… অবশেষে যখন খুঁজে পেল…. তখন দেখল মহিলাকে উদ্ধার করতে হলে পুরো বিল্ডিংটাই ভাঙ্গতে হবে !! আর বিল্ডিং ভাঙ্গতেও যে ৬ দিন লাগবে !! উদ্ধারকারী টিম আসার পরও সকাল থেকে রোজিনা ঐ অবস্থাতেই গোঙাচ্ছে…..
বলুন তো, এই অবস্থায় কার চোখে পানি আসবে না ??
খোদার কসম.. এনটিভিতে রোজিনার কিম্ভুতকিমাকার টাইপের আটকা পড়ার দৃশ্য দেখে আমি রোজিনার কষ্টের কথাই ভাবছিলাম… আর, এই পোস্টটা রেডি করছি, কাঁদছি আর ঘরের ছাদের দিকে তাকাচ্ছি… এই বুঝি ছাদটা ভেঙ্গে পড়লো !!
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..
আচ্ছা সাভারে উদ্ধার কাজে ভিতরে যাচ্ছেন বা কাজ করছেন কয়জন …… ???
ধরলাম সর্বোচ্চ ২০০০ জন ।
তো আসেন একটা হিসাব করি
ফেসবুকে সহ বিভিন্ন জায়গায় দেখছি বলা হচ্ছে এই মুহূর্তে জুরুরি দরকার
দরকার অক্সিজেন ,টর্চ ,জুস ,মেডিকেল গ্লোভস ও মাস্ক ।
এখন ধরলাম ভিতরে জীবিত মানুষ ২০০০ আর বাইরে কাজ করছেন ২০০০ ( জানি ১০০০ করেও হয়তো হবে না )
এখন এই ৪০০০ মানুষের জন্য যদি জনপ্রতি ৩ টা করেও যদি ১২০০০ অক্সিজেন সিলিন্ডার কেনা হয় , যার প্রতিটার সর্বোচ্চ মূল্য ৮৩০ টাকা করেও হয় টাকা সর্বোচ্চ ১ কোটি ২০লাখ টাকা খরচ হয়
এবার আসি টর্চে , চার্জের টর্চে চার্জ থাকে না , বিধায় ব্যাটারির টর্চের কথা বলছেন অনেকেই ; আচ্ছা ব্যাটারির টর্চ আর মনে করেন ডজনখানেক বা ২ দিন চলার মত ব্যাটারি কিনলেও সর্বোচ্চ খরচ ৫০০ আর ২০০০ উদ্ধারকারীর জন্য মোট ব্যাটারি খরচ ১০ লাখ টাকা
জুস এইখানে আহত আর উদ্ধারকারী সবার জন্য না হয় জনপ্রতি ৫০০ টাকার করে জুস কিনলে খরচ ২০ লাখ টাকা
মেডিক্যাল গ্লাভস আর মাস্কের দাম মিলিয়ে ১০+৫ = ১৫ টাকা । এইগুলো ও নাহয় ২০০০ উদ্ধারকারীর জন্য ৫ টা করে অর্থাৎ ১০০০০ পিসের দাম ১.৫ লাখ টাকা
মোট খরচ সর্বোচ্চ = ১,২০,০০০০ + ১০,০০,০০০ + ২০,০০,০০০ + ১,৫০,০০০ = ১,৫১,৫০,০০০ = দেড় কোটি একান্ন লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা
আমি তো সর্বোচ্চ হিসেব দিয়েছি ; আসলে এর অর্ধেক ও হয়তো লাগত না ।
BGMEA তে শোনা যায় এরকম কমপক্ষে ১০ জন গার্মেন্টস ব্যসসায়ী আছেন যাদের মাসিক আয় ১৫ কোটি টাকার উপরে ; অর্থাৎ এইটা দিতে হয়তো তাদের একজনের ৩ দিনের আয় যেত । কিন্তু দেন নি
আর সরকার নাকি ৪ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন , এইটাকা থেকে কি এগুলো দেওয়া যেত না ????
অক্সিজেন না পারুক জুস , টর্চ আর গ্লাভসের ৩১.৫ লাখ টাকা , তাও না পারলে টর্চ আর মাস্ক এবং গ্লাভসের টাকা তো দিতে পারত …… নাকি ????
কেন এগুলোর অভাবে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হয় ???
শুনলাম বাজেটে দুর্যোগ মন্ত্রনালয়ে বরাদ্দ ৪৫০০ কোটি টাকা …… এইখান থেকে কেন মাত্র ৪ কোটি টাকা খরচ হল …. আর এই বছর দুর্যোগ মন্ত্রনালয়ের এমন কি খরচ হল , যে এর কম বরাদ্দ দেওয়া হল এখানে …. আর সরঞ্জামের অভাবে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হল …
আর আমাদের সাধারন মানুষকে নিজের পকেট থেকে মানুষের কাছে চেয়ে চেয়ে এগুলো করতে হল বা হচ্ছে ?????
কেন কেন কেন ……… এত বড় দুর্ঘটনা , এত লাশ , এত মানুষের বাচার আকুতি ….. এই সময়ে কেন সেই সব ধনীরা মাত্র নিজেদের ৩ দিনের আয় দান করতে পারে না ……… আর কেন এইসময়েও কুলাঙ্গার আমলারা মানুষের জীবনের আকুতি দেখেও তাদের উদ্ধারের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহ না করে টাকা মারার ধান্দায় থাকে
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..
একাই ৩০ জনের প্রাণ বাঁচালেন বাবু !!
‘আমরা ঝুঁকি নিয়ে ভবনের একেবারে ভেতরে চলে গেছি। দেয়ালের ফাঁক দিয়ে একটা একটা করে ইট সরিয়ে ভেতরে ঢুকতে হয়েছে। মোবাইলের আলো জ্বালাতেই অনেক আহত মানুষের মুখ দেখতে পেলাম। কেউ কেউ হাত বাড়িয়ে বাঁচার আকুতি জানালো।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইটের স্তুপ সরিয়ে ৮ তলা থেকে একেবারে ৬তলা পর্যন্ত নেমে আসি। সঙ্গে আরও দুজন ছিল। সেখানে৫০ থেকে ৬০ জনের লাশ দেখতে পেলাম। লাশের স্তুপের মধ্য থেকেই একজন হাত ধরে বললো, আমাকে বাঁচান। টেনে তাকে বাইরে বের করে নিয়ে আসি।’
ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়ে বাবু বলেন, ‘খুব অবাক লাগে! বাইরেএতো মানুষ, উদ্ধার করে আসা এতো বাহিনী। অথচ একটু ভেতরেই কেউ ঢুকতে সাহস পায়না। আমরা কয়েকজনই ভেতর থেকে আহত কয়েকজনকে বের করেআনি। আমি একাই ৩০ জনকে উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের হাতে দেই। তারপর তারা আহতদের বের করে নিয়ে আসে।’
উদ্ধার করতে গিয়ে জমাটবাধা রক্তের গন্ধে একসময় বমি করে দেন বাবু। মাথা ঝিম ধরে ওঠে তার। চোখ আবছা হয়ে আসে। তারপরও বাবুউদ্ধার থামাননি। মনোবল নিয়ে আবারও নেমে পড়েন উদ্ধার কাজে।
একসময় কেঁদে উঠেন বাবু। কান্নাজড়িত কণ্ঠেই বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিস আর সেনাবাহিনীর লোকজন ভেতরে ঢুকছে না। তারা যদি সাহস করে ভেতরে ঢুকতো, তাহলে অনেক মানুষই বাঁচতে পারতো।’
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..
এই পৃথিবীতে ছিলো খুব গরিব একটা রাষ্ট্র তাদের সরকার গরিব, মন্ত্রীরা গরিব রাজনীতিবিদরা গরিব ….
তারা এতই গরিব ছিলো যে একটা বিমানবন্দর এর নাম পরিবর্তন করতে মাত্র ১২০০ কোটি টাকা খরচ করেছিলো
তাদের দেশের প্রধানমন্ত্রীর প্রতিদিনকার মেহমান আপ্যায়ন খরচ ছিলো মাত্র আড়াই লক্ষ টাকা
তাদের দেশের মন্ত্রী এমপিরা সরকারী টাকায় কোটি টাকা দামের ভাঙ্গাচুড়া গাড়ীতে চলাফেরা করতো ,বিশালবহুল বাড়ীতে কষ্টে বসবাস করতো ………
সে দেশের সরকার সত্যিই গরিব ছিলো তাই তারা সামান্য কিছু গরিব মানুষদের জন্য ৬০০ টাকা দামের অক্সিজেন সাপ্লাই দিতে পারেনি ,১০০ টাকা দামের টর্চ লাইট কিনে দিতে পারেনি ,৩০ টাকা দামের পানির বোতল দিতে পারেনি …….
সে দেশের জনগণ গরিব হলেও মন থেকে তারা ধনী ছিলো তাদের দেশের মানুষ যেন কষ্ট না পায় তাই তারা চাদা তুলে গরিব মানুষগুলোকে বাচানোর ব্যবস্হা করেছিলো …..তবে সরকারও ধনী ছিলো তবে সেটা মুখের পটপটানিতে শুধু …..
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..
ভবন ধসের পর মেয়ের সঙ্গে কথা বলেছি। ও বলেছে ‘বাবা আমি জীবিত। কিছুই দেখতে পাচ্ছি না। আমরা সাত বান্ধবী চারতলায় একটি পিলারের নিচে আটকে আছি। একজনের বুকের ওপর দেয়ালের একটি খণ্ড পড়ায় ও খুব অসুস্থ। মারা যেতে পারে।’ একটু আগেও মেয়ের সঙ্গে কথা বলেছি। ও বলেছে, ‘বাবা, আমরা মরে যাচ্ছি। আমাদের বাঁচাও।’ কথাগুলো বলছিলেন রংপুর থেকে ছুটে আসা রানা প্লাজার গার্মেন্টকর্মী ফাতেমার বাবা মোজাম্মেল হোসেন।
মোজাম্মেল বলেন, ‘আমার মেয়ে ফাতেমা, তিন বোনের তিন মেয়ে, দুই ভাইয়ের দুই মেয়ে ও পাশের বাড়ির এক মেয়ে-এই সাত বান্ধবী এক সঙ্গে একই রুমে কাজ করে। ভবন ধসের পর পরই মেয়ে আমাকে ফোন দিয়ে বলেছে, বাবা সব শেষ। আমি মনে হয় আর বাঁচব না। কোথায় আছি কিছুই বলতে পারব না। চারদিকে শুধু অন্ধকার। আমাদের নিঃশ্বাস নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি রংপুর থেকে এখানে এসে পৌঁছানো পর্যন্ত মেয়ের সঙ্গে কথা বলেছি। ধসে যাওয়া ভবনের পাশে এসে ঢুকতে চাইলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আমাকে মারধর করে। আমি মার খেয়েও চার তলায় আমার মেয়েকে উদ্ধার করতে যাব। একটু আগে থেকে মেয়েকে আর মোবাইলে পাচ্ছি না। মনে হয় মারা গেছে।’ এটুকু বলেই অজ্ঞান হয়ে পড়েন তিনি।
জ্ঞান ফিরে আসার পর আবার বলেন, ‘সাত বান্ধবী এক সঙ্গে আছে। যদি সাত বান্ধবী বেঁচে না থাকে আমি তাহলে কী নিয়ে বাঁচবো। সাত জনই ঢাকায় এলে আমাকে ‘বাবা বাবা’ বলে ডাকে।’
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..
রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপের ভেতর নবজাতকের কান্নার আওয়াজ শোনা গেল। ধ্বংসস্তূপের কোন একটু ফাঁক গলে ভেতরে ঢুকতেই ‘ওয়া ওয়া’ কান্নার আওয়াজ শুনতে পান এক স্বেচ্ছাসেবক। নবজাতকদের ঐ কান্নাই স্বেচ্ছাসেবক সুজনকে আরও কৌতূহলী করে তোলে। বন্ধুর খোঁজে স্বেচ্ছাসেবক হয়ে ওঠা সুজন এক পর্যায়ে নবজাতকের কাছ পর্যন্ত পৌঁছে যান এবং দেখতে পান ধ্বংসস্তুূপের ভেতর একটু ফাঁকা জায়গায় দুজন শ্রমিক সন্তান প্রসব করেছে। সন্তান প্রসবের সময় তাকে সহযোগিতা করেন আধমরা হয়ে এখনও বেঁচে থাকা তার সহকর্মীরা। বাইরে বেরিয়ে এসে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকা সুজন যখন ভয়াবহ সেই দৃশ্যের বর্ণনা করছিলেন তখন সবাই অবাক বিস্ময়ে তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকেন। সুজন বলেন, বুধবার রাত ১১টায় আমি ভেতরে প্রবেশ করি এবং বৃহস্পতিবার সকাল সাতটা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করি। এ সময় দেখতে পাই দুটো কক্ষে মা এবং নবজাতকরা রয়েছে। তাদের ছাড়াও ৩ শতাধিক জীবিত ও মৃত মানুষ সেখানে আটকা পড়ে আছে। যারা জীবিত তাদের কারও হাত নেই, কারও নেই পা। তারা সবাই আধমরা অবস্থায় পড়ে আছে। ‘ভবনের ৪ তলায় দু’জন মা সন্তান প্রসব করেছেন। তবে মা ও বাচ্চারা ভাল আছে। উদ্ধারকর্মী সুজন জানান, ভবন ধসের খবর শুনে আমার বন্ধুকে খুঁজতে কামরাঙ্গীর চর থেকে ছুটে আসি। আমার বন্ধু চারতলার গার্মেন্টস কর্মী। ঘটনাস্থলে পৌঁছতেই বিকেল হয়ে যায়। ধ্বংসস্তুূপ দেখে আমি হতবিহ্বল হয়ে যাই। জীবন বাজি রেখে উদ্ধার অভিযানে ঝাঁপিয়ে পড়ি। সন্ধ্যা ছ’টায় ভবনে প্রবেশের চেষ্টা করি এবং রাত ১১টার দিকে ধ্বংসস্ত’পের ভেতর চারতলায় একটি কক্ষে পৌঁছাই। সেখানে দুটি কক্ষে ৩ শতাধিক গার্মেন্টসকর্মীকে আটকা পড়ে থাকতে দেখি। অক্সিজেনের অভাবে কয়েকজনকে চোখের সামনে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে দেখেছি। রুমের এক কোণায় বড় দুটো খ-ের মাঝখানে দুমা বাচ্চা প্রসব করেছেন। তিনি বলেন, সেখানকার দৃশ্য বলে বোঝানোর ভাষা আমার জানা নেই। আমি প্রথমে দশ মিনিট বসে বসে কেঁদেছি। কিন্তু আমি যে ছিদ্র দিয়ে ঢুকেছি সেখান দিয়ে মা ও বাচ্চাদের বের করা সম্ভব নয়। সুজন বলেন, অনেক কষ্টে রাত সাড়ে চারটার সময় আমি বাইরে খবর দেই। তবে বের হওয়ার সময় অনেক কষ্টে ৪০-৫০ জনকে উদ্ধার করে আনি।
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..
মুনিয়া (২০)। মাত্র ১২ বছর বয়সে কাজের সন্ধানে চট্টগ্রাম থেকে সাভার আসেন। কর্মস্থলেই পরিচয় হয় বেলায়েত হোসেনের সঙ্গে। তারপর ভালোবেসে বিয়ে। প্রথম সন্তান জন্মের আগে তিনি চাকরি থেকে অব্যাহতি নেন। কিন্তু একজনের আয়ে সংসার চলে না। বাধ্য হয়েই আবার গার্মেন্টে চাকরি নেন।
এখন তিনি ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। আগামী মাসে ছুটি নেবেন। সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। কিন্তু ছুটি নেওয়া হবে না মুনিয়ার। গত দু’দিন ধরে তিনি চাপা পড়ে আছেন রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপের নিচে।
উৎকণ্ঠিত স্বজনদের যেন চোখের পানি ফেলা ছাড়া আর কিছুই করার নেই। ভবনের পাশেই অপেক্ষা করছেন স্বামী।
সমকালের সঙ্গে আলাপকালে বেলায়েত বলেন, সংসারে সচ্ছলতার জন্যই তারা দু’জনে চাকরি করছেন। প্রথম সন্তান জন্মের পর মুনিয়ার চাকরিতে খুব বেশি আগ্রহ ছিল না। সন্তান দেখাশোনা-সংসার সামলানো সব মিলিয়ে হিমশিম খাচ্ছিল সে। বাধ্য হয়েই একমাত্র সন্তানকে দাদা-দাদির কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এখন বাচ্চার বয়স সাড়ে ৪ বছর।
তিনি বলেন, ‘ঘটনার দিন মুনিয়া যেতে চায়নি। মালিকের নির্দেশ অমান্য করে কর্মস্থলে না গেলে চাকরি থেকে ছাঁটাই করা হবে এমন আশঙ্কা থেকেই ও (মুনিয়া) সেদিন কাজে গিয়েছিল।
চোখের পানি আটকে রাখতে পারেন না বেলায়েত। তিনি বলেন, ওই ভবন শুধু আমার স্ত্রীকেই কেড়ে নেয়নি; আমার অনাগত সন্তানকেও কেড়ে নিয়েছে। বেঁচে থাকা একমাত্র সন্তানের কাছে আমি কী জবাব দেব?
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..
ময়না আক্তার মুক্তি। রানা প্লাজায় ছয়তলায় একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। ভবনটি ধসের পর আহত ও নিহতদের এক এক করে বের করে আনছিলেন উদ্ধারকর্মীরা।
দুপুর পর্যন্ত মুক্তির সন্ধান না পেয়ে তার মা সালমা বেগমের আর্তনাদে ভারী হয়ে ওঠে সেখানকার পরিবেশ। তিনি বিলাপ করছিলেন আর বলছিলেন, “এত মানুষ বাহির অইল। মাগো, তুই কত তলে পইড়্যা রইলি।”
শুধু সালমা বেগম নন, স্বজনহারাদের কান্নায় সাভার বাজারের আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে ওঠে।
পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সাভারের জামশীপাড়ায় থাকতেন মুক্তি। মেয়েকে না পেয়ে বৃদ্ধ মায়ের বিলাপে উপস্থিত অনেকের চোখই অশ্রুসিক্ত হয়ে ওঠে। সালমা বলেন, “আমি বেঁচে থেকে কী লাভ। আমারে কবর দাও। আমাকে গার্মেন্টের ভেতরে চাপা দাও।”
বোনের জন্য ভাই, ভাইয়ের জন্য বোন। স্ত্রীকে না পেয়ে স্বামী। আবার স্বামীকে না পেয়ে স্ত্রীর আহাজারি। শত শত শোকার্ত মানুষের কান্না। চারদিকে উদ্বিগ্ন মুখ। শোকার্ত মানুষকে সান্তনা দিচ্ছিলেন হাজারো গ্রামবাসী।
স্ত্রী সেলিনা বেগমকে না পেয়ে বুকফাটা আহাজারি করছিলেন ২৭ বছরের সিরাজ মিয়া। তিন ছেলে আর এক মেয়ে নিয়ে সিরাজের সাজানো সংসার। বিভীষিকাময় এক ঝড়ে সেই সংসারের ছন্দপতনে পাগলপ্রায় সিরাজ। তিনি জানান, অভাব-অনটনের সংসার তার। খরচ কুলাতে না পারায় মাস চারেক আগে স্ত্রীকে পোশাক কারখানায় কাজে দেন। এখন তার লাশও পেলেন না।”
খালাতো বোন সোনিয়াকে খুঁজতে আসেন খোরশেদ আলম। বোনের জন্য ছিল তার আহাজারি।
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..
ধসেপড়া ভবনের ফাঁকফোকরে একেকটি পরিশ্রমী হাতের ইশারা। পুরো শরীর কংক্রিটের নিচে চাপা পড়েছে। হাতের ইশারায় বাঁচার নীরব আকুতি।
নিপুণ পোশাক কারিগর আর দক্ষ শ্রমিকের শক্ত যে হাতের কারুকাজে বাংলাদেশের অর্থনীতি সচল থাকে, মুহূর্তেই নিস্তেজ হয়ে আসছিল সেই হাতগুলো। বাঁচার আকুতি থাকলেও অনেককেই বাঁচানো যায়নি।
ধ্বংসস্তূপ থেকে একেকটি মানুষ ক্ষীণকণ্ঠে ফিসফিস করে বলছিলেন, ‘আমাকে উদ্ধার না করে তোমরা যেও না।’
উদ্ধারকর্মী ও সাধারণ মানুষের সর্বাত্মক চেষ্টা সত্ত্বেও অনেককেই বাঁচানো যায়নি। একসময় স্তব্ধ হয়ে যায় সেই কণ্ঠ। কিছু সময় আগেও যাদের কর্মচাঞ্চল্যে ভরে উঠেছিল রানা প্লাজার পোশাক কারখানা, তা মুহূর্তেই মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়। দিনভরই ধ্বংসস্তূপ থেকে কারও চোখ, কারও মুখ, কারও হাত দেখা যাচ্ছিল। ধসেপড়া ভবনের পেছনের অংশে একটি কক্ষের ভেতরই দেখা যায় চার-পাঁচটি নিথর দেহ। চারদিকে মানবদেহের ছিন্নভিন্ন অংশ। দেয়ালে দেয়ালে রক্তের দাগ। এত বড় মর্মান্তিক ট্র্যাজেডির খবর সংগ্রহ ও লেখা ছিল সংবাদকর্মীদের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ।
বাঁচার জন্য শুধু নীরব আর্তনাদই নয়, অনেকেই সাহায্য চেয়ে ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে মোবাইল ফোনে স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
সকাল ১০টায় রানা ভবনের ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে বাঁচার আকুতি জানিয়ে ফোন করেছিলেন লালমনিরহাটের আবদুল হামিদের একমাত্র ছেলে হাফিজুল ইসলাম। বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তার নম্বরে আর কেউ যোগাযোগ করতে পারেননি।
ভবনের আটতলায় কাজ করতেন বরিশালের বাবুগঞ্জের পারভেজ। সকাল থেকে ছয় ঘণ্টা ধ্বংসস্তূপের মধ্যে আটকা পড়ে তিনি তার মা পারভিন বেগম আর খালাতো ভাই মামুনের কাছে আকুতি জানিয়েছেন তাকে বাঁচানোর জন্য। বিকেল ৩টার দিকে তাকে উদ্ধার করা হয়। পরে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যান স্বেচ্ছাসেবকরা।
ফরিদপুরের টেপাখোলার রাকিব আর জেসমিনকে খুঁজতে রানা ভবনের সামনে এসে বিলাপ করছিলেন বোন হোসনে আরা। গলানপাড়ার মনিরুলকে খুঁজতে এসেছেন তার বোন মিতু।
১৯ বছরের রাজিবুল। ভবন ধসেপড়ার পর মামা হোসেনকে ফোন করে প্রাণে বাঁচার আকুতি জানান। ভাগ্নের খোঁজে ছোটাছুটি করেন হোসেন।
রানা প্লাজার সামনে আহাজরি করছিলেন শের আলী। তিনি বলেন, ‘তার বোন পারভীন আক্তার রানা প্লাজার পঞ্চম তলায় কাজ করছিলেন। বিল্ডিং ভাইঙ্গা যাওয়ার খবর শুইনা আমি ছুইটা আসি। তারপর আমার বোনেরে রিং দিই, কল করি। কল রিসিভ করে। শুধু হাউকাউ শুনি। আমার বোনের আওয়াজ শুনি, এরপর ফোন কাইটা যায়। মোবাইল আর ঢোকে না। আমার বইনেরেও পাই না।’
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..
নিকষ অন্ধকার! খসেপড়া পলেস্তারা, ধুলো ভেদ করে নিজের হাতের তালুটি পর্যন্ত দেখা যায় না। মাথার ওপরে ছাদ ভেঙে পড়েছে। দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া সেলাই মেশিন। দেয়ালের মাঝে রুদ্ধশ্বাস বন্দিজীবন। নড়াচড়া করার সামান্য জায়গাটিও নেই। বেঁচে আছেন, নাকি মারা গেছেন-সেটাও বুঝতে পারছেন না। নিজের গায়ে চিমটি কাটেন বাবুল শেখ। নাহ! বেঁচে আছেন।
এরপর উদ্ধার পাওয়ার আশায় ধ্বংসস্তূপের নিচে অপেক্ষা। প্রতীক্ষার প্রহর দীর্ঘ থেকে দীর্ঘ হয়। অন্ধকার চোখে সয়ে যাওয়ার পর ক্ষীণ আলোয় দেখতে পান, এদিক-সেদিক লাশ হয়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছেন সহকর্মীরা। দীর্ঘদিনের প্রিয় কর্মস্থলটা যেন তখন সাক্ষাৎ নরক।
প্রায় ১০ ঘণ্টার নরকবাসের পর বাবুল শেখকে উদ্ধার করা হলো। দীর্ঘ লাশের মিছিল পার হয়ে জীবিত অবস্থায় ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে প্রাণ নিয়ে বেরিয়ে এলেন বাবুল শেখ। নতুন জীবনের জন্য পরম করুণাময় সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞতায় দু’হাত তুলে প্রার্থনা করেন তিনি।
সাভারে ধসেপড়া ভবনের ধ্বংসস্তূপে বাবুল শেখের মতো আরও হাজারো শ্রমিক আটকা পড়েছিলেন। বৃহস্পতিবার রাত ৯টা পর্যন্ত সৌভাগ্যবান ৬০০ জনকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। শতাধিক হতভাগ্যের নিথর দেহ উদ্ধার করা হয়।
বাবুলের জবানিতে জানা গেল, তার নতুন জীবন ফিরে পাওয়ার বাস্তব গল্প। বাবুল শেখের বাড়ি পিরোজপুরের স্বরূপকাঠিতে। ভবনমিস্ত্রি বাবুল বলেন, আর দশ দিনের মতোই কাজ করছিলেন। হঠাৎ বিকট শব্দ! সব অন্ধকার! কী হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারলেন না। সেকেন্ডের ভগ্নাংশে ঘটে গেল প্রলয়। শুরু হয়েছে রোজ কেয়ামত। মাথার ওপর হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ল ছাদ। থামগুলো গুঁড়িয়ে গেল চোখের পলকে। ধুলোয় ঢেকে গেল চারদিক। এর পর থেকেই নিকষ অন্ধকার!
জীবনের আশা ছেড়েই দিয়েছিলেন। মায়ের মুখটা মনে পড়ে। স্ত্রীর মুখটা মনে পড়ে। আর কি কোনো দিন দেখতে পারবেন না প্রিয় মেয়ের মুখটা। এই তো, গেল বৈশাখেই মেয়েটা লাল জামা পরেছিল। কী অদ্ভুত সুন্দর লাগছিল মেয়েটাকে।
রাত ৯টার দিকে উদ্ধারকারীদের সাড়াশব্দ পেলেন বাবুল শেখ। নিজের অবস্থান জানাতে প্রাণপণে চিৎকার করলেন। দুরুদুরু বুকে ভয়, শুনবে তো? আসবে তো আমাকে উদ্ধার করতে? অবশেষে জীবিতই উদ্ধার করা সম্ভব হলো বাবুলকে।
বাবুল বলেন, “আমার পাশেই একজন গর্ভবতী মহিলা আটকে পড়েছিলেন। বাঁচার জন্য কাকুতি-মিনতি করছিলেন। অনেক চেষ্টা করেও তাকে উদ্ধার করতে পারিনি।” কান্নায় ভেঙে পড়েন বাবুল শেখ।
বের হওয়ার পথে অনেক লাশ পড়ে থাকতে দেখেছেন তিনি। কারও মাথা থেঁতলে গেছে, কারও চেহারাই বোঝা যাচ্ছিল না।
ধসেপড়া ভবনটির দক্ষিণ পাশের দেয়াল ভেঙে রাত পৌনে ৯টার দিকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে আরও তিনজনকে। ১০ ঘণ্টা মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে নতুন জীবন পেলেন যারা, তাদের একজন শাহীন হাওলাদার। তিনি সমকালকে বলেন, “জীবিত ফিরে আসতে পারব, ভাবতেই পারিনি। আমার মায়ের দোয়া ছিল আমার সঙ্গে, তাই পৃথিবীর মুখ আবার দেখতে পেলাম।” বলতে বলতে অঝোর ধারায় কাঁদতে থাকেন তিনি।
সন্ধ্যার পর উদ্ধার হওয়া জেসমিন সমকালকে জানান, তার চোখের সামনে অনেক লাশ ঝুলে থাকতে দেখেছেন। লতা নামের তার এক বান্ধবীর সঙ্গে সকালে অফিসে এসেছিলেন। চোখের সামনে লতাকে দেখেছেন হাত-পা থেঁতলে দেয়ালের সঙ্গে আটকে থাকতে। সেই ভয়ঙ্কর দৃশ্য মনে পড়লেই আহাজারি করে উঠছেন জেসমিন।
সন্ধ্যার পর ভেতরে আটকেপড়াদের কাছে পানি ও টর্চলাইট সরবরাহ করা হয়। অন্যদিকে বিকেলে আশপাশের গার্মেন্ট ছুটি হলে বিপুলসংখ্যক কর্মী ঘটনাস্থলে এসে ভিড় জমায়। অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে উদ্ধারকাজে অসুবিধার সৃষ্টি হয়। ওয়ালটনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান শুকনো খাবারসহ নানা সাহায্য উপকরণ নিয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হয়।
সন্ধ্যা ৭টার দিকে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ জনকে উদ্ধার করা হয়। ধসেপড়া ভবনের দ্বিতীয় তলায় তারা আটকে পড়েছিলেন। ভেন্টিলেটরের গ্রিল কেটে এবং দেয়াল কেটে তাদের উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে ৮ থেকে ১০ নারীও ছিলেন। এ সময় পাঁচজনের মৃতদেহও উদ্ধার করা হয়।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে আটকেপড়ারা দ্রুত তাদের উদ্ধারের অনুরোধ জানাতে থাকেন। ভবনের দ্বিতীয় তলা ড্রিল করে ছিদ্র করা হলে ভেতর থেকে ভেসে আসছিল বেশ কয়েকজন নারীর চিৎকার আর অঝোর ধারার কান্না। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়ায় আটকেপড়া মানুষ অক্সিজেন সরবরাহের আকুতি জানান। অনেকে বলতে থাকেন, খাবার চাই না, আমাদের একটু নিঃশ্বাস নেওয়ার ব্যবস্থা করেন।
ভবনের তিনতলা থেকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় সবুরা নামের এক নারীকে। চিকিৎসার জন্য তাকে হাসপাতালে পাঠাতে চাইলেও তিনি ঠায় দাঁড়িয়ে থাকেন ভবনের সামনে। আহাজারি করতে থাকেন। কারণ, তার স্বামী রাকিবুল তখনও আটকে রয়েছেন তৃতীয় তলায়।
রাত সোয়া ১১টার দিকে ধ্বংসস্তূপের সামনে হঠাৎ করতালি, সাময়িক উল্লাস। এ উল্লাস পোশাককন্যা সাবিনা ও শ্যামলীর জন্য। ঘটনার ১৫ ঘণ্টা পর জীবন্ত বেরিয়ে এসেছে এ দুই তরুণী। দু’জনই উদ্ধারকর্মীদের কাঁধে ভর করে নিজের পায়ে ধ্বংসস্তূপ থেকে বেরিয়ে আসেন। এমন দৃশ্য দেখে অনেকের চোখে আনন্দের অশ্রু চলে আসে। করতালি দিয়ে এ দুই পোশাককন্যাকে অভিবাদন জানান সবাই। দু’জনই সাভারের গেণ্ডা এলাকার সীমা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
শ্যামলী আর সাবিনার শরীরের বিভিন্ন অংশ থেঁতলে গেছে। সারাদিন না খেয়ে ওদের মুখ একেবারে শুকনো। মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে গিয়ে হাসপাতালে শুয়ে তখনও কাঁপছিল মেয়ে দুটি।
রানা প্লাজার সপ্তম তলায় ছিলেন শ্যামলী। তিনি জানান, ভেতরে অনেক লোক আটকে আছে। কারও শরীরের ওপর পড়ে আছে ধ্বংসস্তূপ। পানির জন্য অনেক কষ্ট করেছেন বলে জানান শ্যামলী। সাবিনা বলেন, ভেতরে শুধু লাশ আর লাশ। সারাদিনই হামাগুড়ি দিয়ে লাশের সঙ্গে কাটিয়েছি। মনে হয়, এই বুঝি আমিও মারা গেলাম।
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..
ধ্বংসস্তূপ থেকে ১৬ ঘণ্টা পর উদ্ধার হওয়া ইতির জ্ঞান ফিরলে বীভৎসতার কথা মনে হতেই বলে ওঠে, মনে অইল গজব আইতাছে। কিভাবে ঘটলো আর কেনইবা তাদের সেদিন কাজে যোগ দিতে হলো এমন প্রশ্নে ইতি জানান, ‘আমরা জানতাম না, বিল্ডিংয়ে ফাটল ধরছে। বুধবার আমাগো কারখানা থেকে বলা হয়, কারেন্ট ঠিক করবো, তাই তোমাগো ছুটি। দুপুরে লাঞ্চের পরে আহো। আমরা চইলা যাই বাড়িতে। দুপুরের পরে আসলে আমরা জানি যে, বিল্ডিংয়ে নাকি ফাটল ধরছে। পরে আমরা চইলা যাই। আমরা সবাই চিন্তা করছিলাম আর এইহানে আমু না। কিন্তু বেতন না পাইলে তো সংসারও টিকবো না। ভাবছিলাম কিছু না কিছু একটা তো করতেই পারুম। আর কিছু না হইলেও জানটা বাঁচলে তো মা আর ভাইডারে খাওয়াইতে পারুম।’ রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপ থেকে ১৬ ঘণ্টা পর প্রাণ বেঁচে আসা গার্মেন্ট কর্মী ইতির এনাম মেডিকেলে বীভৎসার বর্ণনায় গা শিউরে উঠছে সকলেরই। ভবন ধসের সময় ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে সহকর্মীদের কথা মনে হতেই অসহায় ইতি ডুকরে ডুকরে কেঁদে ওঠেন। যশোরের ইতি তিন ভাইবোনের মধ্যে মেজো। বড় বোনের বিয়ে হয়েছে। তাই ছোট ভাই আর মায়ের দায়িত্ব তার। ৪ হাজার ৭শ’ টাকা বেতন পান। সাভারে মামার বাসায় থাকেন। খাওয়া খরচ বাবদ মামাকে দেন ২ হাজার টাকা। বাকি টাকা মাকে দেন সংসার চালাতে। ইতি বলতে শুরু করেন, ‘সকালে ঘুম থেইকা ৬টার সময় ওঠার পর সাড়ে ছয়টার দিকে কারখানা থেইকা ফোন লাইন ম্যান রানা ভাই ফোন কইরা কইল, ডরের কিছু নাই। ইঞ্জিনিয়ার আইসা দেইখা গেছে। এই বিল্ডিং আরও একশ’ বছরেও কিছু হইব না। পরে সকাল আটটায় আমি কারখানায় যাই। আমাগো সাথের যারা (সহকর্মী) আসতে চায় নাই অগরে মালিক লোক দিয়া ফোন করাইয়া বেতন দিবো না বইলা ডর দেখাইয়া কাজে আনছিল। ভবন ধসের পরের ঘটনা মনে করে ইতি বলেন, কারখানায় কাজ শুরুর ঘণ্টা খানেক পরেই কিমুন জানি জোরে শব্দ হওয়া শুরু করল। মনে হইল গজব হইতাছে। সবাই কইতে লাগল, বাইর হ বাইর হ, বিল্ডিং ভাইঙ্গা যাইতাছে। আমি কিছু না ভাইবা নিচের দিকে দৌড় দেই। কয় সিঁড়ি নামছিলাম মনে নাই। তয় মনে হইল মাথার ওপর কিছু একটা ভাইঙ্গা পড়ছে। শেষ পর্যন্ত মনে হইল, আমিতো মইরা যাইতাছি, মায়েরে ভাত দিব কেডা। আর জ্ঞান নেই। চোখ খুইলা দেখলাম আমি হাসপাতালে। একজনের পরে একজন আইতাছে। কারও হাত কাটা, কারও পা। আমি দেখলাম আমার হাত পা সবই আছে। তয় অগো লাইগা কেমন জানি লাগে। আমারও তো এমন হইতে পারত।’ তিন বছর আগে পরিবারের অর্থনৈতিক অস্বচ্ছলতার কারণে ইতি কাজের জন্য ঢাকায় আসেন। কিন্তু সেই কাজই তাকে মৃত্যুর কাছাকাছি নিয়ে আসবে, এটা ছিল তার চিন্তারও অতীত। মেয়ের এমন দুর্ঘটনার কথা শুনেই পাগলপ্রায় মা ছুটে এসেছেন যশোর থেকে। হরতালও তাকে আটকাতে পারেনি।
……………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
সমস্ত মিডিয়া যে তথ্য হাইড করেছে । কেন ?
সাভারে বিধ্বস্ত ভবনে যে সব গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানে কর্মরত অবস্থায় দুর্ঘটনা ঘটে।
১/নিউ ওয়েভ বটমস লিমিটেড
২/নিউ ওয়েভ স্টাইল লিমিটেড
৩/ফ্যানটম অ্যাপারেলস লিমিটেড
৪/ফ্যানটম টেক লিমিটেড
৫/ঈথার টেক্স লিমিটেড ।
নিউ ওয়েভ বটমস্ (সদস্য নং-৪৫৭৯) ও নিউ ওয়েভ স্টাইলের (সদস্য নং-৩৬৭৯) কারখানা ছিল ধসে যাওয়া রানা প্লাজায়। তবে নিউ ওয়েভ অ্যাপারেলসের (সদস্য নং-১০৩১) কারখানার ঠিকানা লেখা আছে ৪৫, কল্যাণপুর, প্রধান সড়ক, ঢাকা। নিউ ওয়েভ বটমস প্রতিষ্ঠা করা হয় ২০০৮ সালে। এর আগে ২০০৩ সালে নিউ ওয়েভ স্টাইল প্রতিষ্ঠা করা হয়। এ গ্রুপের প্রথম কারখানা নিউ ওয়েভ অ্যাপারেল প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯২ সালে। বিজিএমইএর ডিরেক্টরিতে নিউ ওয়েভ বটমস লিমিটেডের চেয়ারম্যান হিসেবে বজলুস সামাদের নাম উল্লেখ আছে। অন্য দুটি কারখানার পরিচালক হিসেবে আছেন তিনি।
ফ্যানটম অ্যাপারেলস (সদস্য নং-১৮৯৬) ও ফ্যানটম টেকের (সদস্য নং-৪৬৩৩) চেয়ারম্যান হিসেবে আমিনুল ইসলামের নাম উল্লেখ আছে। এটির ওয়েবসাইটের তথ্য মতে, ফ্যানটম টেক বাংলাদেশের ফ্যানটম অ্যাপারেলস ও স্পেনের টেক্সটাইল অডিট কম্পানি এস এলের যৌথ মালিকানার প্রতিষ্ঠান। ঈথার টেক্স লিমিটেডের (সদস্য নং-৪৮৫৪) চেয়ারম্যান হিসেবে আনিসুর রহমানের নাম উল্লেখ আছে।
এরা কারা ? কোন যাদু মন্ত্রের বলে এরা নিজেদের হাইড করাতে সক্ষম হয়েছে ?
……………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
-শতকোটি টাকার মিগ-২৯ জঙ্গী বিমান কেনার সামর্থ্য আছে
-রাশিয়া থেকে ৮০০০ কোটি টাকার অস্ত্র কেনার সামর্থ্য আছে
-বাংলাদেশ গেমস এ ১০ কোটি টাকার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান করার সামর্থ্য আছে
-হাজার কোটি টাকার টিয়ারশেল, বুলেট, পিপার স্প্রে কেনার সামর্থ্য আছে
-ভারতকে ৩০০ কেজি ইলিশ মাছ গিফট দেবার সামর্থ্য আছে
-ভারতীয় কোম্পানীকে দয়া দেখিয়ে বিনাশুল্কে বাণিজ্য করতে দেবার সামর্থ্য আছে
-শতকোটি টাকা খরচ করে বিমান বন্দরের নাম পরিবর্তন করার সামর্থ্য আছে
-shaharukh khan কে এনে কনসার্ট করানোর ক্ষমতা আছে
অথচ, কয়েক লাখ টাকার কাটিং মেশিন কেনার সামর্থ্য নেই???
৫০ টা টর্চ লাইট কিনতেও চাঁদা তুলতে হয়।।!!
আফসোস !!!!!!!!!!!!!!!!!
সোসাল মিডিয়া থেকে সংগৃহীত
©somewhere in net ltd.