![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একটা দেশকে এগিয়ে নিতে খুব বড় কিছু করার দরকার নেই। সবাই যদি নিজ নিজ অবস্থান থেকে নিজের দায়িত্বটুকু ঠিকভাবে পালন করে তবে সেটাই অনেক বড় হয়ে দাঁড়ায়।
এক
সবে মাত্র স্কুল থেকে ফেরে তিন্নি । দারোয়ান আংকেল নিয়ে এসেছে স্কুল থেকে ৷ প্রতিদিন নিয়ে আসে ৷ ওনার কাছ থেকে ছাড়া পেয়ে সোজা মায়ের কাছে ছুটে যায় তিন্নি । মা রান্না করছিলেন । তিন্নি পিছন থেকে গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে । মা কিছুটা চমকে যান ৷ কণ্ঠ শুনে ঠোঁটজোড়া প্রসারিত হয় ৷ পাজিটা এসেছে ৷ কড়াইয়ের গরম তেলে মশলা মাখানো মাছ ছাড়তে ছাড়তে বলেন, “কিরে তিন্নি, এখন তোর আসার সময় হল?”
“হ্যাঁ মা, টিচাররা খুব খারাপ । ছুটি দিতেই চায় না ।”
“ও আচ্ছা, টিচারের দোষ? তুই যে বান্ধবিদের সাথে খেললি, তোর দোষ নেই?”
“এই যাহ! তুমি বুঝে গেছ? কি হবে এখন?” তিন্নির মায়াবী মুখটায় অপরাধবোধ ফুটে ওঠে ৷
“কি আবার হবে?" বলে তিন্নির দিকে ফিরে একটু মুচকি হেসে দেন মা, "এখন বল কি কি করলি?”
“এই...”, তিন্নি হাত দুটো প্রসারিত করে যতদূর পারা যায়, “অনেক কিছু । অনেক মজা হইছে । ম্যাডাম না হাঁটতে হাঁটতে পড়ে যাইতে ধরছিল । আমরা সবাই হেসে দিছি । তারপর ম্যাডামের কি রাগ! আমরা আরও হাসি ৷ রাগলে ম্যাডামকে চোর চোর লাগে ৷"
এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলে একটু থামে তিন্নি ৷ অল্পক্ষণ হেসে নেয় ৷ এরপর আবার বলতে শুরু করে, "তারপর অংক স্যার আমাদেরকে অনেক বকা দিছে ৷ আমরা নাকি অংক পারি না । খালি নাকি দুষ্টামি করি ৷ স্যার এমন বকা দিছে যে বকার চোটে আমরা কেঁদে দিছি ৷”
“তাই নাকি?” মুখে একটু বিস্ময়ের ভাব ফুটে ওঠে মায়ের ৷
“হু । তারপর কি হইছে জানো ? রাইমা আর আমি চকলেট ভাগাভাগি করে খাইছি । আমরা টিফিন টাইমে সারা মাঠ দৌড়াইছি ।”
“ওরে পাজি, তাই? এত দৌড়াদৌড়ি করছিস ? খিদে লাগেনি?” বলতে বলতে মশলা মাখানো হাত পানিতে ধুয়ে ফেলেন মা ৷ ভেজা হাত শাড়ীর আঁচলে মুছে তিন্নিকে কোলে নেন ।
“হ্যাঁ, অনেকগুলা ক্ষুধা লাগছে । বড় একটা হাতি খেয়ে ফেলব ।”
“তুই হাতি খেতে পারবি? তোর পেট তো এইটুকুন ।”
তিন্নি নিজের পেটের দিকে তাকায় । তারপর চিন্তিত হওয়ার ভান করে ৷ বলে, “তাইতো, আমি তো খেতে পারব না । আচ্ছা যা আছে তাই দাও । হাতি খাব না ৷”
তিন্নির মায়াবী মুখটায় এক চিলতে স্বর্গীয় হাসি খেলা করে । সেই হাসি এমনই এক হাসি যা শুধু ছোট বাচ্চাদের মুখেই ধরা দেয় । সে হাসির পরতে পরতে জড়িয়ে থাকে সারল্য ৷ নিষ্পাপ ওই হাসি অতি নিষ্ঠুর কোন ব্যক্তিরও বুকটা কাঁপিয়ে দিতে পারে ৷
রান্না নামিয়ে তিন্নিকে গোসল করান মা । তারপর জামা কাপড় পরিয়ে মাথার চুল আঁছড়িয়ে দেন । তিন্নিকে তখন ছোট পরী ছোট পরী লাগে । চোখের নিষ্পাপ চাহনি, মুখের কোমল হাসি কেমন যেন একটা মায়া গড়ে তোলে । ঘোর লেগে যায় চোখে ৷
তিন্নিকে খাইয়ে দাইয়ে ঘুম পারানোর পর গোসল আর খাওয়া দাওয়া সেড়ে নেন মা । দুপুরে ঘুমানো তিন্নির প্রতিদিনের অভ্যাস । সেভাবেই অভ্যাসটা তৈরি করে নিয়েছেন মা । এবার তিনি কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেবেন । তিন্নির বাবা দুপুরে বাসায় থাকেন না । অফিস থেকে আসেন একেবারে সন্ধ্যার পর । তাই মায়েরও আর কিছু করার থাকে না । তিনি এ সময় বিশ্রাম নেন, বই পড়েন ৷ মাঝে মাঝে রবীন্দ্র সঙ্গীতও শোনেন । তবে আজকে খুব ক্লান্ত লাগছে । কদিন থেকেই শরীরটা খারাপ যাচ্ছে । একটুতেই হাঁপিয়ে যান । সন্ধ্যায় আজ ডাক্তার দেখানোর কথা আছে । তিন্নির বাবা এসে নিয়ে যাবেন । সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় এ্যাপয়েন্টমেন্ট ।
দুই
রুমে মৃদু আলো জ্বলছে । তিন্নির বাবা দোল চেয়ারটায় বসে পত্রিকা পড়ার চেষ্টা করছেন । তিন্নির মা বিছানায় আধশোওয়া হয়ে ছাদের দিকে তাকিয়ে । দুজনের মুখেই কেমন যেন একটা বিষণ্ণ ভাব । তিন্নির মায়ের চোখে অশ্রু । সে অশ্রু গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে । তিন্নির বাবা পেপার পড়ার ভান করলেও পেপার পড়তে পারছেন না । চোখের কোণা দিয়ে তিন্নির মাকে দেখছেন । ভয়ংকর এক আশঙ্কায় বারবার তার বুকটা দুমরে-মুচরে যাচ্ছে । তিন্নির মাকে চিরতরে হারানোর আশঙ্কা । মেডিকেল রিপোর্টে তিন্নির মায়ের ক্যান্সার ধরা পরেছে । ডাক্তার বলেছেন, প্রাইমারি স্টেজ অনেক আগেই পার হয়ে গেছে । এখন আর কোনমতেই কিছু করা সম্ভব না । এমনিতেও বাঁচানো যেতো না । শুধু চেষ্টা করে বেঁচে থাকার মেয়াদটা বাড়ানো যেতো । এখন আর সেটাও সম্ভব না । ডাক্তার দেখানোয় অনেক দেরি করে ফেলেছেন তারা । আর দু থেকে আড়াই মাসের মধ্যেই তিন্নির মায়ের মৃত্যু অনিবার্য ।
কিন্তু তিন্নির মা ভাবছেন, তিনি না থাকলে তিন্নির কি হবে? তিন্নি কার হাতে খাবে? তিন্নিকে গল্প শোনাবে কে? কে ঘুম পারিয়ে দেবে? তিন্নির সাথে খেলবেই বা কে? তিনি ছাড়া যে আর কেউ মেয়েটিকে বুঝতে পারবে না । তিন্নির বাবাকে তো অফিসে যেতে হয় । তিন্নিকে কে দেখে রাখবে... নিজের জন্য কোন চিন্তা নেই তার । শুধু যত চিন্তা, এই পাঁচ বছরের মেয়েটিকে নিয়ে । কি দোষ করেছিল মেয়েটি? সৃষ্টিকর্তা ওকে এত বড় শাস্তি কেন দিচ্ছেন? তিন্নির মায়ের নিজেকে বড় অসহায় মনে হয় । জগতের নিয়মের কাছে সবাই কতই না অসহায় ।
তিন্নির মা উপর থেকে চোখ নামিয়ে তিন্নির বাবার দিকে তাকালেন, “জাহিদ, আমাকে একটা কথা দিতে পারবে?”
“হ্যাঁ, বল সুহা ৷” তিন্নির বাবার বুকটা অজানা আশঙ্কায় ভরে ওঠে । চোখ দুটো টলটল করতে থাকে ।
“তুমি তিন্নিকে সবসময় দেখে রাখবে তো?” চোখ থেকে এক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে তিন্নির মায়ের, "তিন্নিকে কখনও মায়ের অভাব বোধ করতে দেবে না তো?"
তিন্নির বাবা কিছু একটা বলতে গিয়েও থমকে গেলেন । কিছু বলতে পারছেন না তিনি ৷ মুখের শব্দ থেমে যেতে চাইছে । গলাটা ধরে আসছে ৷ অনেক কষ্টে বললেন, “আমি দেব না, সুহা ।”
এই সাধারণ কথাটা বলতে গিয়েই গলার স্বরটা কেঁপে গেল তিন্নির বাবার । বুকটা ভেঙ্গে যেতে চাইছে ৷ যেন ভারী কিছু চেপে ধরেছে বুকটায় ৷
“দেখো, কখনও এমন কোন সিদ্ধান্ত নিয়ো না যা তিন্নির জন্য খারাপ হয় ।”
“আমি নেবো না সুহা ।”
খানিকক্ষণ নিস্তব্ধতা ৷ গভীর বেদনা নিয়ে আবার ছাদের দিকে তাকান তিন্নির মা । একরাশ হতাশা নিয়ে অপলক দৃষ্টে তাকিয়ে থাকেন তিন্নির বাবা ৷ যেনো আর কোনদিনই তিন্নির মাকে দেখতে পারবেন না তিনি । ভাবতে অবাক লাগে, সাদা কাগজের পাতায় সাজানো কতগুলো নিস্পৃহ কালচে বর্ণ কিভাবে একটা মানুষের জীবন নির্ধারণ করে দিতে পারে?
তিন
দূরে বাগানের সবচেয়ে বয়স্ক গাছটায় দুটো শালিক পাখি খেলা করছে । তিন্নি একা একা বারান্দায় দাঁড়িয়ে সেই খেলা দেখছে । দুটো শালিক দেখা নাকি সৌভাগ্যের লক্ষণ । কিন্তু পাখি দুটো তিন্নির সৌভাগ্য নিয়ে এসেছে কিনা বোঝা মুশকিল । এমনিতে তিন্নি বেশ দুষ্টু । তবে আজকে কোন দুষ্টুমি করছে না । চুপচাপ একা একা দাঁড়িয়ে আছে । আপন মনে বিড়বিড় করে কি যেন বলছে । একটু ভাল করে কান পাতলেই শোনা যায় তিন্নি কি বলছে । তিন্নি আসলে বিড়বিড় করে নিজের সাথেই কথা বলছে । একবার প্রশ্ন করছে, আরেকবার নিজেই উত্তর দিচ্ছে ।
“তিন্নি বাবু, তুমি মন খারাপ?”
“হু ।”
“আম্মু মারছে?”
“না, আম্মু পচা । আম্মু চলে গেছে ।” তিন্নির মুখে গভীর বেদনার একটা ছাপ পড়ে । থেকে থেকে কেঁপে ওঠে মেয়েটা ৷ দেখে মনে হয় ওর বুকটা বুঝি দুমরে মুচরে যাচ্ছে ।
“কোথায় গেছে আম্মু?”
“জানি না ৷ অনেকগুলা লোক আম্মুকে সাদা কাপড় পড়ায় নিয়া গেছে ।”
“কেন?”
“জানি না । আম্মু অনেক পচা... আমাকে রেখে গেল ।” তিন্নির চোখে পানি টলটল করে । গলার স্বর কাঁপতে থাকে ।
“আর আসবে না?”
“জানি না । আমাকে এখন কে খাওয়ায় দেবে? কে গল্প বলবে? ভূত এসে যদি ভয় দেখায় তাহলে আমি কার কোলে লুকাবো?” তিন্নির চোখজোড়া থেকে কয়েক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে । তিন্নি কাঁপতে থাকে কান্নার দমকে । চেষ্টা করে কান্না আটকিয়ে রাখতে । কিন্তু পারে না । গলা ফাটিয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে ওর । প্রথমবারের মত আম্মু ওকে ছেড়ে কোথাও গেল ।
কাল রাতেও মা অনেক কথা বলেছিল তিন্নিকে । বলেছিল, নিজের খেয়াল রাখতে, কান্নাকাটি-দুষ্টামি না করতে, ঠিকঠাক মত খেয়ে নিতে । তিন্নির মাথায় হাত বুলিয়ে মা বলেছিল, “তুই আমাকে ছাড়া থাকতে পারবি না, মা?”
মায়ের কথা শুনে তিন্নি বুঝতে পেরেছিল কিছু একটা ঠিক নেই । তাই মাকে জড়িয়ে ধরে, গলা ফাটিয়ে তিন্নি বলেছিল, “না, আমি পারব না ।”
মায়ের চোখেও পানি চলে এসেছিল । আর কিছুই বলতে পারেননি তিনি । কিভাবে এই পাঁচ বছরের মেয়েটাকে বলতেন, তার কিছু করার নেই । সৃষ্টিকর্তা তাকে আর অধিকার দেন নি পৃথিবীতে বাঁচার । আর কোনদিন তিন্নিকে আদর করতে পারবেন না তিনি । কোনদিন তিন্নির সাথে খেলতে পারবেন না । তিন্নিকে খাওয়াতে পারবেন না । পারবেন না তিন্নিকে কোলে নিয়ে মাথায় বিলি কেটে দিতে । তাই তিনি শেষ সুযোগটা হারাতে চাননি । শক্ত করে তিন্নিকে বুকে জড়িয়ে রেখেছিলেন । তিন্নিও চুপচাপ মুখ গুঁজে ছিল মায়ের উষ্ণ পরশে । নিকষ নীরবতায়, খোলা জানালা দিয়ে শুধু রাতের শিরশিরে বাতাস ঘরে প্রবেশ করছিল । আর সেই বাতাসে জানালার পর্দাটা মৃদু কাঁপছিল । চারিদিক ছিল নিস্তব্ধ, নীরব । রাতের ঝিঁঝিঁরাও যেন ডাকতে ভুলে গিয়েছিল ।
চার
এরপরের কয়েকদিন ঠিকঠাক মত খায় নি তিন্নি । ওর এক কথা, মাকে ছাড়া খাবে না । জোর করেও খুব একটা লাভ হয় না । শুধু তিন্নির বাবা যখন থাকেন, বুঝিয়ে সুজিয়ে, ভুলিয়ে ভালিয়ে, একটু আধটু খাওয়াতে পারেন । ঠিকমত না খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে তিন্নি । ভীষণ অসুস্থ । ঘোরের মাঝে চলে যায় । আবোল তাবোল প্রলাপ বকতে থাকে । ডাক্তার স্যালাইন লাগিয়ে দেন । তিন্নির অবস্থা খারাপ হতে থাকে । ডাক্তার তিন্নির বাবাকে বলেন তিন্নিকে দেখে রাখতে, ঠিকঠাক মত খাওয়াতে । তিন্নির বাবা বিষণ্ণ মুখে সব শোনেন । কিছু বলেন না ।
আস্তে আস্তে সুস্থ হয় তিন্নি ৷ কিন্তু ওর মাঝে কিছু একটার পরিবর্তন হয়ে যায় । কেউ বুঝতে পারে না ।
এক রাতে বুয়া যখন তিন্নিকে খাওয়ানোর চেষ্টা করছে, তিন্নি কিছুতেই খেতে চায় না । বুয়া কাঁপা কাঁপা গলায় বলে, “তিন্নি বাবু, খায়া নাও ।”
“না আমি তোমার হাতে খাব না । আম্মুর হাতে খাব ।” চিৎকার করে বলে তিন্নি ।
“খাও না একটু তিন্নি সোনা । তোমার মায় এখন খাওয়ায় দিবার পারব না ।” অনুনয়ের স্বরে বলে বুয়া ৷ গলায় শব্দ আটকে যেতে চাইছে তার ।
“না, আমি খাব না । তুমি আম্মুকে ডাকো ।”
“না বাবু, আমি পারুম না । তুমি খায়া নাও একটু ।” গলা কাঁপতে থাকে বুয়ার । এই পাঁচ বছরের শিশুটিকে ভোলানোর মত কিছু জানা নেই তার ।
“না, আমি আম্মুর হাতে ছাড়া খাব না ।”
“তিন্নি বাবা...” তিন্নির বাবা এসে দাঁড়ান তিন্নির পাশে, “বুয়া, তুমি যাও । তিন্নিকে আমি খাওয়াচ্ছি ।”
খাবারের প্লেট বাবার হাতে দিয়ে ঘর থেকে চলে যায় বুয়া । কিন্তু সাথে করে চোখের কোণে নিয়ে যায় অশ্রু । বাচ্চাটার এত কষ্ট সে আর দেখতে পারে না । কেন খোদা বাচ্চাটাকে এত বড় শাস্তি দিলেন?
বাবা খাবারের প্লেট হাতে বলেন, “তিন্নি মামনি, চল ছাদে যাই । সুন্দর একটা চাঁদ উঠেছে । দেখবা না?”
তিন্নি চোখ তুলে তাকায় ৷ কাঁদ কাঁদ গলায় প্রশ্ন করে, “আম্মু যাবে না?”
এক মুহূর্তের জন্য থমকে যান তিন্নির বাবা । পরমুহূর্তে নিজেকে সামলে নিয়ে উত্তর দেন, “হ্যাঁ, তোমার আম্মুও আসবে । চল আমরা যাই । না হলে দেরি হয়ে যাবে ।”
এরপর তিন্নি আর বাবা দুজন মিলে ছাদে আসেন । আকাশে গোল রুটির মত বড় একটা চাঁদ উঠেছে । মনে হয় আজ পুর্ণিমা । চাঁদের আলোর জোয়ারে চারিদিক ভেসে যাচ্ছে । এই স্নিগ্ধ আলোয় কেমন যেন একটা অপার্থিব ভাব আছে । চারপাশটা কেমন যেনো অলৌকিক মনে হয় ।
“তিন্নি মামনি, দেখ কত সুন্দর একটা চাঁদ উঠেছে ।" চাঁদটার দিকে আঙ্গুল তুলে বলেন বাবা, "চাঁদটাকে হাই বলবা না?”
তিন্নি হাত তুলে হাই বলে চাঁদটাকে । তিন্নিকে কোলে নিয়ে বাবা ছাদের দোলনাটায় বসেন । তারপর বলেন, “চাঁদমামাকে কিছু বলবা না তিন্নি?”
তিন্নি সে কথার কোন উত্তর না দিয়েই জিজ্ঞেস করে, “কই আব্বু, আম্মুতো আসলো না?”
কি বলবেন বুঝতে পারলেন না বাবা ৷ শেষে বললেন, “আসবে ৷"
মিথ্যে আশ্বাসটা দিতে এক মুহূর্তের জন্য বুকটা কেঁপে গেল বাবার । কিন্তু তিন্নি দেখতে পেল, বাবার পেছনে মা এসে দাঁড়িয়েছেন । তিন্নিকে মুখে আঙ্গুল দিয়ে চুপ থাকার ইঙ্গিত দেন মা । তিন্নির ক্ষুদ্র ঠোঁটজোড়া একটু প্রসারিত হয় । এক চিলতে হাসি খেলে যায় ঠোঁটজোড়ায় ।
“তিন্নি মা, নাও খাও । ক্ষুধা লাগেনি তোমার?” বলে বাবা এক লোকমা ভাত তিন্নির মুখে তুলে ধরেন ।
তিন্নি মায়ের দিকে তাকায় । মা ইশারায় তিন্নিকে খেতে বলেন । তিন্নি খেয়ে নেয় । কিছুক্ষণের মাঝেই সব ভাত খেয়ে ফেলে তিন্নি । তারপর বাবা আর তিন্নি দুজন মিলে চাঁদ দেখে । কিন্তু তিন্নির কাছে এখন তিনজন ।
বাবা গল্প শোনান । তিন্নি ঘুমিয়ে যায় । বাবা তিন্নিকে রুমে এনে বিছানায় শুইয়ে দেন । তারপর কম্বলটা তিন্নির গায়ে তুলে দিয়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে যান । তিন্নি হারিয়ে যায় স্বপ্নের রাজ্যে ।
এরপর থেকে তিন্নির আর খেতে অসুবিধা হবে না । কার কাছ থেকে গল্প শুনবে, তা নিয়েও চিন্তা করতে হবে না । তিন্নির মা মারা গেলেও তার ছায়া রয়ে গেছে তিন্নির মাঝে । সেই ছায়া কল্পনায় ভর করে বাস্তবরূপে প্রতীয়মান হয় তিন্নির সামনে । এই ছায়া তিন্নির প্রয়োজনে, তিন্নির ভালবাসাতেই তৈরি করেছে ওর অবচেতন মন । ঠিক মায়েরই অনুকরণে গড়া ছায়া ।
-০-
০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:৪৭
মোঃ তানজিরুল ইসলাম হিমালয় বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই, জেনে ভাল লাগলো।
©somewhere in net ltd.
১|
০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:৪০
আমি মিন্টু বলেছেন: সুন্দর গল্প