![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নরসিংদী জেলার শিবপুর থানার সবু-পাহাড়ি অঞ্চল জয়নগরের অপূর্ব নয়ানাভিরাম কামরাবো গ্রামের আলো-বাতাসের মধ্য দিয়ে আমি বড় হয়েছি ।পেশায় একজন মেরিন অফিসার ।
যতদূর আমার মনে আসিতেছে সেইদিন শনিবার ছিল ।একাডেমীর চিরচেনা শৃঙ্খল ভাঙিয়া মানুষিক প্রশান্তির আশায় আমরা তিন বন্ধু শহীদ জিয়া স্মৃতি কমপ্লেক্স এর অভিমুখে যাত্রা করিলাম ।জনমুখে শুনিয়াছিলাম,ঐখানে বাংলাদেশের বড় বড় স্থাপত গুলোর নমুনা রহিয়াছে ।ইহা শুনিবার পর থেকেই তাহা দেখিবার আকুলতা ক্রমশ বাড়িতে থাকিলো ।টিকেট কাউন্টারের কাছে পৌছাইয়া জানিতে পারিলাম,ইহার দ্বার অতিক্রম করিতে চাহিলে প্রত্যেককে আশি টাকা করিয়া গনিতে হইবে ।ইহা শুনিয়া আমার বুকের কোথায় যেন ছেৎ করিয়া উঠিল ।কাউন্টারের ভদ্রলোককে কি করে বুঝাই,আমাদের মতো শিক্ষানবিশ যুবকদের পকেট বিধাতা যথেষ্ট পাতলা করিয়া রাখেন ।আশি টাকার টিকেট ৫০ টাকায় খরিদ করার ব্যর্থ চেষ্টার পর ২৪০ টাকা দিইয়া প্রবেশ করিবার ৩টি কাগজ খরিদ করিলাম।
প্রবেশ করিয়া চোখের সামনে আমাদের স্মৃতি সংসদ দেখিয়া বুকে ছেৎ করিয়া উঠা ব্যথাটা কিছুটা লাঘব হইল ।একে একে স্থাপত্যগুলো দেখিতে দেখিতে মন প্রশান্তিতে ভরিয়া উঠিল ।কিন্তু আহসান মঞ্জিলের কাছে যাইতেই আমদের চোখ কপালে উঠিয়া গেল ।দেখিলাম কয়েক জোড়া তরুন তরুণী মঞ্জিলের ভিতর অন্ধকারে বসিয়া রহিয়াছে ।বাইরে এত আলো বাতাস থাকিতে উহাদের অন্ধকারে বসিয়া থাকার কারণ বুঝিতে না পারিয়া সামনের দিকে অগ্রসর হইলাম ।কার্জন হলের ভিতরে যাইতেই আমি নিজের অজান্তেই হোঁচট খাইলাম ।এখানেও দেখিতেছি অনেকগুলো কপোত-কপোতি খুব কাছা কাছি বসিয়া মনের আনন্দে কপোত তাহার কপোতীর মাথার চুল হাতিয়ে দিচ্ছে।আমাদের বুঝিতে আর অন্ত রইলনা যে ঐ কপোতীর মাথায় যথেষ্ট উকুন রহিয়াছে বলিয়া কপোতের ঐ পরিশ্রম । যাহা হোক,একটু দূরে আরেক জোড়া দেখিয়া আমরা থমকে গেলাম ।ওহাদিগকে আমরা এমন অবস্থায় দেখিয়াছি যে,কিছুতেই বুঝিতে পারিলামনা,এই তরুণির মাথার উকুন ঠিক কোন জায়গায় ।ওহাদের দিকে আমাদের চোখ পরিতেই তরুণি এক ফোকলা হাসি মারিল ।লজ্জায় শেষ অবধি আমরাই আমাদের চোখ ফিরাইয়া নিলাম ।৮০ টাকার ব্যথাটা মনের মধ্যে আবারও অনুভূত হইতে লাগিল ।হঠাত খুব বড় একটা টাওয়ার দেখিতে পাইলাম ।টাওয়ারের লোক বলিতে লাগিল যে ঐ টাওয়ারে উঠিয়া পুরো কমপ্লেক্স দেখা যায় ।শুনিয়া খুবই আনন্দ অনূভব করিলাম ।ভাবিতে লাগিলাম ঐ খানে দাঁড়াইয়া পুরো কমপ্লেক্স দেখিতে পারলে ঐ ভয়ানক উকুন বিলানোর খেলা আর দেখিতে হইবেনা ।কিন্তু টিকেটের দাম শুনিয়া মাথা ঘুরিতে লাগিল ।অনেক অনুনয় করিয়া শেষে ১০০ টাকা দিয়া টাওয়ারে উঠিবার কাগজ খরিদ করিলাম ।টাওয়ারের চূড়ায় উঠিয়া উকুনের কষ্ট দূর হইয়া গেল ।কিন্তু হঠাত,চোখে পড়িল আরেক দল উকুন বাহিনী ।এবার মনে হচ্ছে উহারা শুধু উকুন নয়,আরো দূর চলে গেছে ।উহারা আমাদিগকে দেখিতে পারিয়া ও কোনরকম ভ্রুক্ষেপ করিলনা বুঝিতে পারিয়া শেষ অবধি আমাদের টিকেটগুলো টাওয়ারের চূড়া থেকে সজোরে নিক্ষেপ করিয়া পুরো কমপ্লেক্স দেখিবার ইচ্ছাকে বুকে চাপাইয়া টাওয়ার হইতে নামিয়া বাহির হইতে মনস্থ করিলাম ।আর মনে মনে ভাবিতে লাগিলাম,হায়রে আধুনিক প্রেম,হায়রে আধুনিক তরুন-তরুণি ,কত সুন্দর আর পবিত্র জায়গাকে তোরা কি করিয়া রাখিলে ।যদি তোদের জোড়ায় জোড়ায় বিবাহ না হইয়া অন্য কাহারও সহিত হয়,তাহলে ঐ অভাগার জন্য তুই আর কিবা অবশিষ্ট রাখিলি?ভাবিতে ভাবিতে আবার সেই একাডেমীর চিরচেনা শৃঙ্খলে আবদ্ধ হইয়া গেলাম,আর নিজেই নিজেকে বলিতে লাগিলাম,প্রশান্তির আশে কি অশান্তিই না পাইলাম ।(গল্পের বাস্তবতা ফুটিয়ে তুলতে কিছু অনাকাঙ্ক্ষীত ভাষার জন্য দুঃখিত)
©somewhere in net ltd.