![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ঢাকায় থাকি। জন্ম বাংলাদেশের শ্যামল গ্রামে। শাহবাগে আড্ডা দিই মাঝেমাঝে। কবিতা লিখে আনন্দ পাই। লেখার চেষ্টা করি।
যাত্রাগানের যাত্রাকথা
তপন বাগচী
যাত্রা বিষয়ে বিচ্ছিন্ন যে আলোচনা পাওয়া যায়, তাতে এর ঊন্মেষকাল নিয়ে ব্যাপক মতভিন্নতা পরিলতি হয়। নগেন্দ্রনাথ বসু (১৮৬৬-১৯৩৮) ‘অতি প্রাচীনকাল হইতে ভারতবর্ষের সকল স্থানেই প্রকাশ্য রঙ্গভূমে’ যাত্রা প্রচলিত ছিল জানিয়েছেন। একাদশ শতাব্দীর রাধা-কৃষ্ণলীলাই জয়দেবের ‘গীতগোবিন্দে’ রূপায়িত হয় কাব্য-সংগীত-অভিনয়গুণ ধারণ করে। ‘গীতগোবিন্দে’র আঙ্গিক নিয়ে পণ্ডিতদের নানান অভিমত রয়েছে। তবে এই ‘গীতগোবিন্দ’ যে যাত্রা ছাড়া আর কিছুই নয়, তা জানা যায় ডক্টর নিশিকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের মন্তব্য থেকে। তিনি এই উপমহাদেশের প্রথম পিএইচডি অর্জনকারী গবেষক। এবং তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল বাংলাদেশেল তিনটি যাত্রাপালা। ১৮৮২ সালে সুইজ্যারল্যান্ডের জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘The Yatras or the Popular Dramas of Bengal' শিরোনামে অভিসন্দর্ভ রচনা করে তিনি পিএইচ.ডি. ডিগ্রি অর্জন করেন।
রাজা লক্ষ্মণ সেনের সভাকবি জয়দেবের ‘গীতগোবিন্দম’কে ডক্টর আহমদ শরীফ ‘একটি নৃত্য সম্বলিত গীতিনাট্য’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। সুকুমার সেন ‘গীতগোবিন্দম’কে ‘পালাগান’ বলেছেন এবং একে যাত্রাগানের আদিরূপ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। জয়দেবের স্ত্রী পদ্মাবতী এতে নাচতেন বলে জানিয়েছেন। সংস্কৃত নাট্যশাস্ত্রের ইতিহাস-প্রণেতা এবি কিথ ‘গীতগোবিন্দম’র মধ্যে যাত্রার উপাদান খুঁজে পেয়েছেন। ফোকলোরবিদ আশরাফ সিদ্দিকীও যাত্রার নিদর্শন খুঁজে পেয়েছেন দ্বাদশ শতাব্দীতে। তিনি বলেছেন, ‘কবি জয়দেবের গীতগোবিন্দ এবং পরবর্তীকালে শ্রীকৃষ্ণকীর্ত্তনের মধ্যেই যাত্রার নিদর্শনটি পাওয়া যাবে।’
ত্রয়োদশ ও চতুর্দশ শতাব্দীতে সাহিত্য-সংস্কৃতির কোনও শাখারই বিস্তৃত বিবরণ পাওয়া যায় না। ‘গীতগোবিন্দ’র অনুকরণে চতুর্দশ শতাব্দীর শেষ দিকে অথবা পঞ্চদশ শতাব্দীর শুরুর দিকে রচিত ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্ত্তনে’ও অনেক অভিনয়যোগ্য উপাদান খুঁজে পাওয়া যায়। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস-সন্ধানী গবেষক ডক্টর অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য থেকে আমরা শ্রীকৃষ্ণকীর্ত্তনে যাত্রার উপস্থিতি সম্পর্কে তথ্য পাই। তিনি একে লোকনাট্যের আদি-অবস্থা বলতে চেয়েছেন। বাংলাসাহিত্যের ইতিবৃত্ত, ৪র্থ খণ্ডে তিনি বলেছেন, ‘বেশধারী যাত্রাচরিত্রের ঈষৎ পূর্বাভাস শ্রীকৃষ্ণকীর্ত্তনে মিলবে; এতে কিঞ্চিৎ পরিমাণে নৃত্য গীতাত্মক লোকনাট্যের পূর্বরূপ ফুটে উঠেছিল এরকম অনুমান নিতান্ত অসম্ভব নয়। পরে যে সমস্ত কৃষ্ণযাত্রা অনুষ্ঠিত হত, তাতে এ-ধরনের লোকনাট্য পালাই অনুসৃত হয়েছিল।’
মধ্য-পঞ্চদশ থেকে ষোড়শ শতাব্দীর সাহিত্য-সংস্কৃতি ও সমাজজীবনে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর (১৪৮৬-১৫৩৩) ব্যাপক অবদান রয়েছে। তিনি নিজে যাত্রাভিনয় করেছেন বলে তাঁর জীবনীপাঠে জানা যায়। কেউ কেউ একে যাত্রা না বলে নাটগীত বা লীলানাট্য বলতে চেয়েছেন। কিন্তু শ্রীচৈতন্যের গীত, অভিনয়, আর নৃত্যের সমন্বিত পরিবেশনা ‘গীতাভিনয়’ কিংবা প্রকৃত অর্থে ‘যাত্রা’রই নামান্তর। চন্দ্রশেখরের গৃহে শ্রীচৈতন্যের অভিনয়ের বিবরণ পাওয়া যায় কবি কর্ণপুর পরমানন্দ সেনের ‘চৈতন্যচন্দ্রোদয়ম্’ নাটকে। ষোড়শ শতাব্দীতেই প্রথম অভিনয় অর্থে ‘যাত্রা’ শব্দের সাাৎ পাওয়া যায় বাংলার উত্তর-পূর্ব অঞ্চল অসমের শঙ্করদেবে ‘অঙ্কীয়া নাটে’।
কবি চণ্ডীদাস নিজে যাত্রা করতেন। কথিত আছে যে, যাত্রা করার সময় মণ্ডপ ভেঙে তার তলায় চাপা পড়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এরপর আসে শ্রীচৈতন্যদেবের যাত্রাভিনয় প্রসঙ্গ। নবদ্বীপে চন্দ্রশেখর আচার্যের গৃহে কৃষ্ণলীলার অভিনয় করার সময়কে ১৫০৯ খ্রিস্টাব্দ অথবা ১৫৩৯ খ্রিস্টাব্দ হিসেবে অনুমান করা হয়।
ধর্মীয় উৎসব উপলে বাঙালির প্রাচীন সংস্কৃতির অন্যতম বাহন ‘যাত্রাগান’-র উন্মেষ। দেববন্দনার অংশ হিসেবে গীতবাদ্য-অভিনয়ের উপস্থাপনা যাত্রাগান নামে পরিচিত হলেও অধ্যাপক মন্মথমোহন বসু বলেছেন যে, ‘পাঁচালীগানের ক্রমিক পরিণতির ফলে যাত্রাগানের উৎপত্তি হইয়াছে’। বাংলাসাহিত্যের ইতিহাসকার বিশিষ্ট গবেষক ডক্টর সুকুমার সেন যাত্রার উদ্ভবের কোনও নির্দিষ্ট সময় উল্লেখ করেননি তবে এর পুর্বরূপ হিসেবে পাঁচালিকে বিবেচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘পাঁচালি হইতেই যাত্রার উদ্ভব। যাত্রার সঙ্গে পাঁচালির পার্থক্য এইমাত্র ছিল যে পাঁচালিতে মূল গায়েন বা পাত্র একটিমাত্র, যাত্রায় একাধিক, সাধারণত তিনটি।’ আমরা দেখেছি যে, যাত্রায় এখন আর তিনটি চরিত্রটি নেই, বিশ-বাইশটি চরিত্রও অভিনয় করে। অর্থাৎ তিনি যে যাত্রার কথা বলেছেন তা মূলত নৃত্যগীতাভিনয়। রামলীলা কিংবা কৃষ্ণলীলা পরিবেশনের জন্যে এই ধরনের নৃত্যগীতাভিনয় আঙ্গিক ব্যবহৃত হত। পরবর্তীতে যা রামযাত্রা বা কৃষ্ণযাত্রা হিসেব পরিগণিত হয়।
সময়ের বিবর্তনে যাত্রার বদল হয়েছে আঙ্গিকে ও উপস্থাপনারীতিতে। তবে নগর-সভ্যতার বাইরে এখনও সামাজিক বিনোদন, জ্ঞাপন, শিণ এবং প্রভাবনের ফলে প্রায়োগিক যোগাযোগ-মাধ্যমের দায়িত্ব পালন করে চলছে। তবু যাত্রা আমাদের গবেষকদের কাছে বিশেষ গুরুত্ব পায়নি বলেই মনে হচ্ছে।
যাত্রার আধুনিক যুগের শ্রেষ্ঠ রূপকার পালাসম্রাট ব্রজেন্দ্রকুমার দে যাত্রা বিষয়ে বেশ কিছু প্রবন্ধ লিখেছেন পঞ্চাশ দশকের শুরু থেকে। যাত্রার চলমান অবস্থা পর্যবেণের পাশাপাশি তিনি অতীত উদ্ধারের চেষ্টাও করেছেন। তাঁর মতে যাত্রার জন্ম শ্রীচৈতন্যদেবের জন্মের আগে থেকেই। ‘যাত্রার পূর্বকথা’ নামের একটি প্রবন্ধে তিনি লিখেছেন, ‘যাত্রা ঠিক কোন্ সময়ে যাত্রার সূচনা হয়েছিল, এই আত্মভোলা জাত সে ইতিহাস রাখেনি। তবে সে যে শ্রীগৌরাঙ্গের জন্মের বহু পূর্বের, তাতে সন্দেহ নেই। দেবদেবীর প্রতিমা নিয়ে রাজপথে যে শোভাযাত্রা বেরুত, তার মধ্যে বিভিন্ন কণ্ঠের গান ও বিভিন্ন ব্যক্তির নাচের অনুষ্ঠান হত। এই শোভাযাত্রাই একসময় পথ থেকে উঠে এল মাঠে, বাগানে বা ধনীর প্রাঙ্গণে। শোভাযাত্রা তখন যাত্রায় নামান্তরিত হল। ক্রমে বিচ্ছিন্ন নাচগান দানা বাঁধল এবং একএকটি পৌরাণিক কাহিনী আশ্রয় করে পালায় গ্রথিত হল; গ্রন্থনার জন্যে ততটুকুই গস্যসংলাপ আমদানি করা হল। গীতপ্রধান এই পালাগুলো কয়েক শতাব্দী পরে গীতাভিনয় নামে পরিচিত হয়েছিল।’
মন্মথ রায় (১৮৯৯-১৯৮৮) কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর ডি.এল. রায় রিডারশিপ স্মারক বক্তৃতায় শ্্রীচৈতন্য জীবনী পর্যালোচনা করে দেখিয়েছেন যে, ‘ষোড়শ শতাব্দীর প্রথম দশকে নবদ্বীপে চন্দ্রশেখর আচার্যের বাসভবনে শ্রীচৈতন্যদেব স্বয়ং কৃষ্ণলীলায় অভিনয় করেছেন।’ তাঁর মতে এসময় থেকেই অভিনয়কলা হিসেবে যাত্রার শুরু।
যাত্রাগান অতি প্রাচীন শিল্পমাধ্যম বলেই এর উৎস সম্পর্কে যৌক্তিক মতভেদ রয়েছে। প্রভাতকুমার দাসের মতে, ‘এ ঘটনাটি ঐতিহাসিক সত্য যে, ষোড়শ শতাব্দীতে বৈষ্ণব ধর্মের উত্থানের সময় মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যদেবের উদ্যোগে ধর্মপ্রচারের বাহন হিসাবে যে অভিনয় অনুষ্ঠান সর্বপ্রথমে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ব্যবহৃত হয়েছিল, তাকে যাত্রাগান হিসেবে অভিহিত করা হলেও, তখনও পর্যন্ত এই বিশেষ অর্থে যাত্রা শব্দটির ব্যবহার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। প্রেম ও ভক্তির উদ্বোধনের ল্েয, বহু বাধা-বিছিন্ন সমাজের মধ্যে ঐক্য ও সাম্যবোধের প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যেই এই লোকমাধ্যমটি ব্যবহার করেছিলেন শ্রীচৈতন্য’। সময়ের বিবর্তনে যাত্রা এখন ‘অপেরা’ নামেও পরিচিত হয়ে উঠেছে। বিশিষ্ট গবেষক প্রভাতকুমার গোস্বামী যাত্রা ও থিয়েটারের একটি তুলানামূলক আলোচনার মধ্য দিয়ে যাত্রার উন্মেষকাল চিহ্নিত করেছেন এবং বিকাশের প্রসঙ্গও নির্দেশ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘ষোড়শ শতাব্দীতে যাত্রার বীজ বাংলার মাটিতে উপ্ত হয়েছিল; তা অষ্টাদশ শতাব্দীতে অঙ্কুরিত হয় এবং ঊনবিংশ শতাব্দীতে তা নানা শাখা-প্রশাখা সমন্বিত বৃে পরিণত হয়। ‘যাত্রা’র জন্মটা আগে হলেও তার বিকাশটা ঘটেছে থিয়েটারের পাশাপাশি।’
মণীন্দ্রলাল কুণডুর ধারণা হচ্ছে, খ্রিস্টীয় ষোড়শ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধ থেকেই বাংলা দেশে প্রচলিত নাটগীতের ধারাটি ঈষৎ পরিবর্তিতরূপে যাত্রা নামে অভিহিত হতে থাকে। তিনি বলেছেন, ‘ষোড়শ শতাব্দীর আগে নাটক বা নাট্যাভিনয় অর্থে ‘যাত্রা’ শব্দের প্রয়োগ আমরা পাই না। অবশ্য অভিনয় ছাড়া অন্যান্য অর্থে ‘যাত্রা’ শব্দটির প্রয়োগ প্রাচীনকাল থেকেই ছিল’।
এখানে মধ্যযুগে জন্ম নেয়া যাত্রাকে বাংলাদেশের নিজস্ব সম্পদ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। যাত্রার শুরুতে যে গানের আধিক্য ছিল, এ নিয়ে কারও দ্বিমত নেই। বিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে এসে গানের সংখ্যা কমে সংলাপের সংখ্যা বেড়ে গেল। শোভাযাত্রায় ব্যবহৃত অভিনয়কলাই স্বতন্ত্র যাত্রামাধ্যম হিসেবে রূপান্তরিত হয়। বিশিষ্ট সংগীত-গবেষক ডক্টর করুণাময় গোস্বামী বলেন যে, ‘বড়– চণ্ডীদাসের শ্রীকৃষ্ণকীর্ত্তনের দৃষ্টান্তেই যাত্রা রচিত হয়’।
নাট্যগবেষক ডক্টর সৈয়দ জামিল আহমেদের বিবেচনায় প্রায় পাঁচ শতাব্দী আগে থেকেই পেশাদার যাত্রাদলের অভিযাত্রা শুরু হয়েছে। অর্থাৎ যাত্রার উন্মেষ ষোড়শ শতকে। তিনি লিখেছেন, ‘ওহ রঃং হবধৎষু ভরাব-পবহঃঁৎু-ষড়হম যরংঃড়ৎু, ঔধঃৎধ যধং বহাড়ষাবফ ভৎড়স ধ ংরসঢ়ষব ফবাড়ঃরড়হধষ ঢ়বৎভড়ৎসধহপব যবষফ রহ ঃযব ড়ঢ়বহ পড়ঁৎঃুধৎফং ড়ভ যড়সবংঃবধফং ঃড় বষধনড়ৎধঃব পড়সসবৎপরধষ াবহঃঁৎবং ড়ভ রঃরহবৎধহঃ ঢ়ৎড়ভবংংরড়হধষ ঃৎড়ঁঢ়বং মরাবহ রহ ঃবসঢ়ড়ৎধৎরষু পড়হংঃৎঁপঃবফ ঢ়বৎভড়ৎসধহপব ংঢ়ধপব’.
মধ্যযুগের বাংলানাট্য নিয়ে ব্যাপক গবেষণা করেছেন সেলিম আল দীন। তিনি অবশ্য অষ্টাদশ শতকের আগে যাত্রার কোনও নমুনা পাওয়া যাবে না বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘অষ্টাদশ শতকের মধ্যভাগ থেকে ‘যাত্রা’ কথাটার অর্থ সঙ্কুচিত হতে থাকে এবং ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরু থেকেই মূলত ‘যাত্রা’ নাট্যাদি অর্থে পরিচিতি লাভ করে’। ‘পাঁচালী থেকে যাত্রার উদ্ভব’সুকুমার সেনের এই অভিমতকে তিনি মানতে পারেননি। তিনি বলেছেন, ‘যাত্রা নাট্য হিসেবে রূপলাভের পূর্বেই, যাত্রা-উৎসবে মধ্যযুগে, লীলানাটকের অভিনয় হতো। কৃষ্ণ জন্মযাত্রা বা জগন্নাথের রথযাত্রা উপলে লীলানাট্যের অভিনয় স্বয়ং চৈতন্যদেব দ্বারা সাধিত হয়েছিল। কিন্তু লীলানাট্য যে শুধু যাত্রা উপলইে অভিনীত হতো তা নয়। এর একটা আনুষ্ঠানিক রূপও ছিল। ‘চৈতন্যভাগবতে’ নিত্যানন্দের কৃষ্ণ ও রামলীলা বিষয়ক অভিনয় ছিল অনানুষ্ঠানিক, আচার্য চন্দ্রশেখরের গৃহপ্রাঙ্গণে চৈতন্যদেবের নাট্যানুষ্ঠানও তিথি নত্র বা যাত্রা উপলে পরিবেশিত হয়নি। কাজেই একথা বলা যায় যে, লীলানাট্য আনুষ্ঠানিক শোভাগমন বা উৎসব উপল ব্যতিরিকেও স্বতন্ত্রভাবে সেকালে অভিনীত হতো।’
অভিনয়-আঙ্গিকরূপে যাত্রার বিবর্তনের আগেও যাত্রা ছিল। তবে তা ছিল শোভাযাত্রা বা উৎসব অর্থে। কিন্তু সেই শোভাযাত্রা বা উৎসব উপলে আয়োজিত অভিনয়রীতিই পরে কেবল ‘যাত্রা’ নামে অভিহিত হতে থাকে। শোভাযাত্রা কিংবা উৎসব কিংবা তিথি-নত্র গৌণ হয়ে ‘নৃত্য-গীত-অভিনয়’ই মুখ্য হয়ে ওঠে। চৈতন্যদেবের সময়েই এই অআনুষ্ঠানিক অভিনয়-আয়োজনের তথ্য পাওয়া যায়। কিন্তু এটি যে তিথিনত্র মেনে-চলা শোভাযাত্রারই জনগ্রাহ্য রূপ, তাতে সন্দেহের অবকাশ থাকে না।
যাত্রার উদ্ধব বা উন্মেষকাল নিয়ে মতভেদ রয়েছে। বেশিরভাগ গবেষক ষোড়শ শতককেই যাত্রার উদ্ভবকাল হিসেবে মন্তব্য করেছেন। কারণ শ্রীচৈতন্যদেবের অভিনয়কে যথার্থ অর্থে যাত্রাভিনয় বিবেচনার সুযোগ রয়েছে। উৎসব অর্থে যাত্রা বা শোভাযাত্রার উন্মেষ হয়ত মানবসভ্যতার সঙ্গে সঙ্গে কিন্তু অভিনয়কলা অর্থে যাত্রার উন্মেষ ষোড়শ শতকে। এসময়ে যাত্রা ছিল আসরে বা চাঁতালে। আর অষ্টাদশ শতকে যাত্রা চাঁতাল বা আসর থেকে উঠে আসে মঞ্চে। যাত্রার মঞ্চকে এখনও আসর বলা হয়ে থাকে। অষ্টাদশ শতকের পর থেকে যাত্রা উৎসব কিংবা গীতাভিনয়ের আবরণ ঝেড়ে পরিণত হয় স্বতন্ত্র এক অভিনয়কলায়। থিয়েটারের প্রভাবে যাত্রা তার আঙ্গিক বদল করে সমকালীন হওয়ার চেষ্টা করেছে।
অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে শিশুরাম অধিকারীর হাত ধরে যাত্রাগানের মধ্যযুগের সূচনা। যাত্রার পূর্ণবিকাশ সাধিত হয় ঊনবিংশ শতকের শুরুতে। যাত্রার এখন যে রূপ টিকে আছে তা মূল থেকে অনেক বিবর্তিত, অধঃপতিত, যুগের দাবির কাছে সমর্পিত। তবু যাত্রা এখনো টিকে আছে। একে সুস্থতার পথে ফিরিয়ে আনার একটা উদ্যোগ শুরু হয়েছে সরকারি পর্যায়ে। সেটি সফল হলে যাত্রা আবার হয়ে উঠতে পারে নির্মল বিনোদনের এবং লোকশিক্ষার শক্তিশালী মাধ্যম।
Click This Link
০৮ ই জানুয়ারি, ২০১০ রাত ৯:১৭
তপন বাগচী বলেছেন: ঠিক বলেছেন! আর একসময় এমন ছিল যে সকল গ্রামেই যাত্রা হত। প্রায় সকলেই যাত্রা দেখত। তার মানে সকলেই ফাৎরা লোক। আর আমরা সেই ফাৎরাদেরই উত্তরাধিকার!
যাত্রা দেখে ফাৎরা লোকে
নাটক দেখে ফটকা লোকে।
আপনি এক লাইন বলেছেন, দ্বিতীয় লাইনটিও বলবেন। তাহলে অভিনয়শিল্প সম্পর্কে আপনার ধারণার ষোলকলা প্রকাশ পাবে! মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ।
২| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০১০ রাত ৯:১৪
ত্রিশোনকু বলেছেন: নাটকের সাথে ফটকা মেলে নাই। ওটা হবে ফাটক।
©somewhere in net ltd.
১|
০৮ ই জানুয়ারি, ২০১০ রাত ৮:৫৩
ত্রিশোনকু বলেছেন: যাত্রা দেখে ফাৎরা লোকেরা।