![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রথম থেকে যে কোন পর্ব পড়ুন এখানে- Click This Link
দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছে রমানাথ। ভেতর থেকে খুব মিষ্টি একটা মেয়ে গলা শোনা যাচ্ছে। নিশ্চয়ই তনয়ার গলা। রমানাথ বাইরে থেকে কথা কিছুই শুনতে পাচ্ছে না। শুধু কথা যে হচ্ছে সেটাই বুঝতে পারছে। হাতে একটা হারিকেন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে। বার দুয়েক গলা খাঁকাড়ি দিয়েছে। কিন্তু কেউ সেই শব্দ শুনতে পেয়েছে বলে তার মনে হচ্ছে না। সে একটা কাশি দিয়ে দরজা বেয়ে ওপরের দিকে উঠতে থাকা একটা টিকটিকির দিকে তাকিয়ে থাকল। একটা পোকার দিকে সন্তপর্নে এগিয়ে যাচ্ছে টিকটিকিটা। এই ধরল বলে। বিপরীত দিক থেকে আরেকটা টিকটিকি এগিয়ে আসল তখন। পোকাটা অসহায়ের মতো মাঝখানে পড়ে গেছে। রমা আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে। পোকাটার জন্য তার একটু দুঃখ হচ্ছে। একটু পরেই বেচারা এদের যে কোন একটির খাদ্য হয়ে যাবে। কিন্তু রমার অনুমান ভুল প্রমাণিত হল। দুটো টিকটিকিই একসাথে পোকাটার উপর ঝাপিয়ে পড়ল। আর পোকাটা তখন কীভাবে যেন বের হয়ে গিয়ে সুড়ুত করে একটা ফোঁকরে ঢুকে গেল। টিকটিকি দুটোর মধ্যে ধ্বস্তাধ্বস্তি শুরু হয়ে গেছে এখন। রমানাথ বলল,
-সাবাশ!
একটু জোরেই বলা হয়ে গেছে। ভেতর থেকে সেই শব্দ শুনতে পেয়েই হাসান সাহেব বললেন,
-কে ওখানে? রমা নাকি?
রমানাথের পেটের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠল। সে কাঁপা গলায় বলল,
-জ্বে সাব, রমা।
-ভেতরে আয়।
রমানাথ ভেতরে ঢুকল। হাসান সাহেবের পাশেই তনয়া বসে আছে। তার কোলে একটা বালিশ। হাসান সাহেব একটা বালিশ ঘাড়ের নিচে দিয়ে আধশোয়া অবস্থায় আছেন। রমানাথ ঘরে ঢুকেই তনয়ার দিকে তাকাল। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে সে বুঝতে পারল, মায়ের সাথে অনেক মিল আছে মেয়েটার। কিন্তু চট করে সেটা ধরতে পারা যায় না। ঐ তো, চিবুকের তিলটাও তো আছে। সে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকল সেদিকে। চোখের কোনে একটু অশ্রুও দেখা দিল। হাসান সাহেব সামনে আছেন সেটা যেন ভুলেই গেছে সে।
হাসান সাহেব গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,
-রমা।
রমানাথ চমকে উঠল। তিনি তাকে বসবার নির্দেশ দিলেন ইশারায়। কিন্তু সামনে কোন চেয়ার-টেয়ার নেই। টেবিলের সাথে দুটা চেয়ার অবশ্য আছে। কিন্তু সাহেবের সামনে চেয়ার টেনে তার বসতে ইচ্ছে করছে না। রমানাথ মেঝেতে বসল। তনয়া তাকিয়ে আছে তার বাবার বয়েসী এই লোকটার দিকে। তার খুব খারাপ লাগছে লোকটাকে মেঝেতে বসে থাকতে দেখে। দৃশ্যটা দেখতে তার একদমই ভালো লাগছে না। তনয়া বলল,
-চাচা, আপনি একটা চেয়ার টেনে বসুন।
হাসান সাহেব তনয়ার কথায় সায় দিয়ে বললেন,
-হ্যাঁ হ্যাঁ, চেয়ার টেনে বোস। এই শীতে মেঝেতে বসে আছিস কেন?
রমানাথ আরেকবার তাকাল তনয়ার দিকে। তার চোখ আবার ভিজে উঠতে শুরু করেছে। সে মনে মনে ‘হরি’ নাম জপ করছে। এভাবে কাঁদতে দেখলে সাহেব কী বলবেন কে জানে। সে মনে মনে প্রার্থনা করছে কান্না যেন না আসে।
হাসান সাহেব আবার বললেন,
-কী হল, একটা চেয়ার টেনে নে।
রমানাথ একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসল। হাসান সাহেব তনয়াকে দেখিয়ে বললেন,
-এই হল তনয়া। আমার তনয়া।
রমানাথ বলল,
-জানি সাব।
তনয়াকে বললেন,
-তনু মা, ইনি তোমার রমা কাকু। আমাদের বাড়িতে থাকেন।
তনয়া জিজ্ঞেস করল,
-আপনি ভালো আছেন, রমা কাকু?
রমা এবার আর তনয়ার দিকে তাকাল না। সে নিচের দিকে তাকিয়ে বলল,
-হ্যাঁ গো মা, বালো আছি। তুমি বালো আছ?
সে শুদ্ধতে কথা বলার চেষ্টা করছে। আঞ্চলিক ভাষায় বললে হয়তো মেয়েটা নাও বুঝতে পারে। জন্মের পর থেকেই যে মেয়ে বিদেশে বড় হয়েছে সে যে এতো সুন্দর করে বাংলা বলছে-এটাই এখনো তার বিশ্বাস হচ্ছে না। রমানাথ শুদ্ধ বলতে গিয়ে তার মুখের ভাষাটা আরও জটিল করে ফেলল। উচ্চারনে একটু গড়বড় হলে তনয়া বাংলা বুঝতে পারে না। কিন্তু এটা সে বুঝেছে। আগের কথার সূত্র ধরে বুঝে নিয়েছে। সে হাসি মুখে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ল। হাসান সাহেব বললেন,
-রমা, তোরা সবাই ভালো আছিস তো?
-আছি সাব। আপনেগো দোয়া।
হাসান সাহেব কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন,
-এই ঘরটা আমার মেয়ের পছন্দ হয়েছে। আমি তাকে বলেছি, এই ঘরে আমি আর তার মা থাকতাম। সে মায়ের ঘরে থাকতে চায়।
রমানাথ বলল,
-তাইলে সাব, এর পাশের গরে আপনে থাকিয়েন। ঝাড়াপোঁছা করি রাইখছি।
-ঠিক আছে, এখনই চল।
কথাটা বলেই তিনি তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে নেমে গেলেন। তনয়াকে বললেন,
-তুমি ভয় পাবে না তো? ভয় পেলে আমাকে ডেকো। আমি পাশের ঘরে আছি।
তনয়া জানাল যে সে ভয় পাবে না।
হাসান সাহেব তড়িঘড়ি করে রমাকে নিয়ে পাশের ঘরে চলে এলেন। দরজা আটকে দিয়ে বললেন,
-তোর চোখে পানি কেন, রমা?
-এম্নেই।
তিনি শান্ত, কিন্তু কঠিন স্বরে বললেন,
-যা বলেছিলাম, সব মনে আছে তো?
-জ্বে সাব, মনে আছে।
-হুম, মনে থাকে যেন। মনে থাকলেই ভালো।
জয়ন্ত চুলায় মাংসের ডেকচিটা তুলে দিল। ধোঁয়ায় ঘর আচ্ছন্ন হয়ে গেছে। কিছুক্ষণ পর পর আগুন নিভে যাচ্ছে, আর সে ফুঁ দিয়ে আগুনটা ঠিকঠাক জ্বালানোর চেষ্টা করছে। ধোঁয়ায় তার চোখ জ্বালা করছে। নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু খাবারগুলো তো গরম করতে হবে। সাহেব আর তাঁর মেয়ে কখন থেকে না খেয়ে আছেন কে জানে। সে চুলায় কয়েকটা শুকনো নারিকেলের পাতা ঢুকিয়ে দিয়ে নিজের মনে বলল,
-উফ! আগুন জ্বালানি এতো কষ্ট ক্যান?
রান্না-বান্না সব তার বোন কাননই করে। কিন্তু কানন আজ বাড়িতে নেই। সে গেছে তার কোন বান্ধবীর বাড়ি, বান্ধবীর বড় বোনের বিয়ের নিমন্ত্রণ পেয়ে। তাই রান্না সব তাকেই করতে হয়েছে। অবশ্য রান্নার সময় মাকে জিজ্ঞেস করে করেই করেছে সবকিছু। তবু জয়ন্ত ভয়ে ভয়ে আছে। খাবারটা খেয়ে সাহেব কী বলবেন কে জানে।
মায়ের কথা মনে হতেই জয়ন্তের একটু আগের ঘটনা মনে পড়ল। মা এমন করল কেন সেটা এখনো বুঝতে পারছে না সে। কোন দুঃস্বপ্ন দেখেছে কি? কিংবা কোন কিছু দেখে কি ভয় পেয়েছে? নাকি মাথাটাই খারাপ হয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। জয়ন্ত চিন্তিত মুখে আরেকটা ডেকচী তুলে দিল চুলায়। মায়ের সমস্যাটা তার মাথায় ভালো করে চেপে বসেছে। সেদিন দুপুরে হঠাত করে ডেকে বলল,
-জয়ন্ত রে, কত্ত দামড়া এক পোঁক। দৌড়াই দে রে বাপ, ডর লাগের।
জয়ন্ত মশারি টানিয়ে দিয়ে গিয়েছিল। ভাবল, হয়তো মশারিতে কোন ফুটো পেয়ে কোন পোকা ঢুকে গেছে। তাই সে পুরো মশারি খুব ভালো করে দেখল। কিন্তু অনেক খুঁজেও কোন পোকা-টোকা পেল না। সে জিজ্ঞেস করল,
-কই পোক?
খুকু একটা আঙ্গুল দিয়ে চোখ বরাবর দেখাল,
-এইত্তো।
জয়ন্ত দেখল, আঙুল বরাবর কোন পোকা নেই। খুকুরানী তখন আঙ্গুলটা আরেক দিকে দিয়ে বলল,
-এইত্তো। এই দিগে চলি আইছে।
এইভাবে জয়ন্ত যত বারই বলল, কোন পোকা নেই; খুকুরানী তত বারই আঙুল দিয়ে বিভিন্ন জায়গা দেখিয়ে দিতে লাগল। এখন তার মনে হচ্ছে এটাও সেরকম কিছু। জয়ন্ত চিন্তিত মুখে চুলার সামনে বসে থাকল। কখন আগুন নিভে গেছে সেই খেয়ালই রইল না তার।
(চলবে)
১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৪:৪৩
তাশমিন নূর বলেছেন: আপনার মন্তব্য পড়েও মনে হচ্ছে আপনি প্রতিটি শব্দ-বাক্য মন দিয়ে পড়েছেন। আমার মাথায় যে প্লটটি আছে সেটাকেই মোটামুটি বেশ কিছু পর্বে ভাগ করে একটা পূর্ণাংগ রূপ দেয়ার চেষ্টা করছি। অনেক ধন্যবাদ সাথে থেকে উৎসাহ দিয়ে যাওয়ার জন্য।
২| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১০:২৯
ধীমান অনাদি বলেছেন: আপনার লেখনী ভালো। চালিয়ে যান
১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৪:৪৬
তাশমিন নূর বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ, ধীমান অনাদি। ভালো থাকুন।
৩| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:৪৩
কম্পমান বলেছেন: খুব ভালো চালুক........... পরের পর্বের অপেক্ষায়।
১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৪:৪৮
তাশমিন নূর বলেছেন: সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ, কম্পমান। ভালো থাকুন, সুন্দর থাকুন।
৪| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:২০
দিশেহারা রাজপুত্র বলেছেন: যতই পড়ছি ততইই প্রশ্ন জমা হচ্ছে।
লেখার আগ্রহ তৈরিতে আপনার পারদর্শিতা ঈর্ষনীয়।
তবে আগের পর্বগুলোর তুলনায় এইটা কিছুটা ম্লান ছিল। যদিও একাধিক পর্বের গল্পে এটা স্বাভাবিক।
পরবর্তী পর্বের অপেহ্মায়।
ভালো থাকবেন।
১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৫
তাশমিন নূর বলেছেন: ধন্যবাদ, রাজপুত্র। একচুয়েলি, ব্লগে প্রকাশের স্বার্থেই একটি পর্ব ভেঙ্গে অনেকগুলো পর্ব করতে হচ্ছে। এখানে চারটা পর্ব মিলে খাতায় হয়তো দুটা পর্ব হয়েছে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
ভালো থাকুন।
৫| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ৮:০২
নূসরাত তানজীন লুবনা বলেছেন: শেষের অপেক্ষায়
১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৫ ভোর ৪:১৭
তাশমিন নূর বলেছেন: ধন্যবাদ, লুবনা। ভালো থাকুন।
©somewhere in net ltd.
১|
১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৫ ভোর ৫:৪৭
বিদ্রোহী বাঙালি বলেছেন: গত দুই পর্বে যা ধারণা করে আসছিলাম, এই পর্ব পড়ে আবার যেন নূতন করে ভাবতে হচ্ছে। আগের তিন পর্বে কাহিনীর গতিবিধি কিছুটা স্বচ্ছ মনে হলেও এই পর্বে এসে সেটায় কিছুটা অস্বচ্ছতা ভর করেছে। বিশেষ করে দুই টিকটিকি এবং এক পোকার ইংগিতবাহী অংশ। সাথে যোগ হয়েছে রমানাথের চোখের জল, আর হাসান সাহেবের একটা প্রশ্ন, যা তিনি শান্ত অথচ কঠিন স্বরে রমাকে করেছিলেন। প্রশ্নটা ছিল নিম্নরূপ।
-যা বলেছিলাম, সব মনে আছে তো?
রমার আচরণে জড়তাও বেশ লক্ষণীয়। মনে হচ্ছে হাসান সাহেব আর তনয়ার উপস্থিতিতে রমা কিছুটা অস্বস্তির মধ্যে পড়ে গেছেন। এই পর্বে জয়ন্ত আর খুকু কে তনয়া, হাসান সাহেব আর রমার কাছ থেকে কিছুটা বিচ্ছিন্ন মনে হল যদিও আদতে তারা বিচ্ছিন্ন নয়।
পাঠককে গল্পের কাহিনী নিয়ে নূতন করে ভাবতে বাধ্য করায় আপনাকে বাহবা দিতেই হয়। কারণ ধারাবাহিকে অনেক লেখক ধারবাহিক ভাবে পাঠক ধরে রাখতে পারেন না। কিন্তু আপনি কাহিনীতে নূতনত্ব এনে ঠিকই পেড়েছেন। আরও একটা ব্যাপার লক্ষণীয় হল আপনার লেখায় মেদবহুল কোন অংশ নাই। মনে হচ্ছে প্রতিটা শব্দ এবং বাক্যই গল্পের সাথে সম্পৃক্ত। অনেক ভালো লিখেছেন তাশমিন নূর। আমি সত্যিই উপভোগ করছি আপনার এই গল্পটা। নিরন্তর শুভ কামনা রইলো।