নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

তৌফিকতুহিন

আমার ব্লগ হবে গঠনমুলক ও সুশীল।

তৌফিকতুহিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

মামা কাহিনী-২

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:০৪

আমি যে কিঞ্চিৎ বই পড়তে ভালোবাসি এবং আরামপ্রিয় এটা সম্ভবত আমার বড় মামার থেকে আমি পেয়েছি,না ভুল বললাম আমার নানাও বেজায় পড়ুয়া লোক ছিলেন।ঐ যে কথা আছে না নরানং মাতুলক্রম,তেমনি আর কি।আমার মামা এমনিতে খাটি কুমিল্লাইয়া ভাষায়ই কথা বলেন ,কিন্তু কেউ যখন কোন প্রশ্ন উনার কাছে জানতে আসেন,তখনি উনার মাঝে একটা ব্যাপক জ্ঞানী ভাব এসে যায়(এটা আমারও আছে,কি করবো রক্তের তাছির)উনি হঠাত করে শুদ্ধ ভাষার সাথে ইংরেজীর একটা প্রবল মিক্স দেন।



উদাহরন স্বরুপ কেউ উনাকে প্রশ্ন করলেই উনি যথাবিহিত ভাব-গাম্ভীর্য সহকারে বলতো- না, আসল সেরকম না,প্লাস ঘটনাকে অন্যভাবে দেখলে,মানে ইন দ্য মিন টাইম এমনি আরো অনেক জিনিস আসতো।আমি খুবই বিরক্ত হতাম,কিন্তু মামা আমাকে আসলে খুবই ভালোবাসতো।মাঝে মাঝে উনি কিছু কথা বলতো,সেটা ঠিক গ্রামের মানুষের কাছ থেকে আমি কখনো শুনিনি।উনি প্রায় বিরক্ত বোধ করলে বলতো,এই তোঁরা এখন যা,আমাকে একা থাকতে দে। তখন দু-একজন ঠাঠ্যা করে বলতো,আয় আয় উনি এখন একা থাকবেন।



একদিনের কথা মনে আছে নানার বাড়ির পাশে একটা পুরাতন ব্রীজ আছে,সেটার রেলিং এর একপাশ সম্পুর্ন ধসে গেছে,শুধু মাঝের লোহায় এক খন্ড কংক্রিটের টুকরো কিভাবে যেনো ঝুলে আছে।আমার মামার সঙ্গী একজন বললো-বৈরাম খাঁ ভাই(আমার মামার নাম)দেখছেন পুরা রেলিং ধইস্যা গেছে কিন্তু এই হালার টুকরাডা কেমনে জানি একা একা ঝুইল্লা আছে।হেই বেডাই ও আমনের লাহান একা থাকতে চায়।আমি সাথে থাকায় মামা প্রচন্ড রেগে গিয়েছিলেন,কারন আমি হাসি দিয়ে ফেলছিলাম।



উনি যে খুব আলসে ব্যাপারটা আসলে তা না।উনার জমি-জিরাত থেকে ভালোই উনি পেতেন।কিন্তু কোন উচ্চাশা ছিলো না।গোয়ালঘর এ সবসময় আমি গরু-ছাগল দেখেছি,কিন্তু কোন বানিজ্যিক উদ্দেশ্য ছিলো না।পশু-পাখি গুলো অনেকদিন ধরে দেখতাম একিই থাকতো,পরিবারের সদস্যের মতো।বছরের পর বছর একিই গুলাকে দেখতাম।বাজারে দোকান যেটা ছিলো সেটাও দায়সারা গোছে চলতো।খুব বেশি মালামাল তাতে থাকতো না।উনি মন চাইলে বসতেন নয়লে নয়।



কিন্তু যেহেতু রাজার ভাণ্ডারও অসীম নয়, আর উনিও নানার কাছ থেকে যা পেয়েছেন তাতে উনার মোটামুটি চলে যেতো।কিন্তু উনি কখনো দুরবস্থায় পড়েননি কারন উনার দুই ছেলেই প্রবাসী।আর তারাই পরিবারকে একটা স্বচ্ছল অবস্থায় নিয়ে আসে।



আর মেজোমামা,উনার নাম সাঁদত খাঁ।উনি চিরকালই বেশ সৌখিন ছিলেন।বেশ কেতাদুরস্তভাবে চলতেন।উনার সবচেয়ে আকর্ষনীয় জিনিস ছিলো উনার শিখদের মত পাকানো গোঁফ।আর উনার রাঁগী চোখগুলো। অনেকটা পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হকের মত ছিলো উনার লুকিং।আমার মামাতো ভাইয়েরা উনাকে যমের মতো ভয় খেতো।কিন্তু উনি আমাদের অত্যান্ত স্নেহ করতেন।আমার মনে আছে আমরা যদি বেড়াতে যেতাম উনি নৌকা ভর্তি বাজার নিয়ে আসতেন।আপ্যায়ন করতে উনি খুবই ভালোবাসতেন।আমরা বাধ্যতামুলকভাবে তার এখানে থাকতে এবং খেতে হতো।উনি আমাদের কোথাও এমনকি বড় মামার ঘরে থাকাও মেনে নিতেন না।



আমার মামাতো ভাইয়েরা বলতো,জানেন তুহিন ভাই,চোর উঠছিলো আমাদের নারকেল গাছে।আব্বা টের পেয়ে গাছের তলায় গিয়ে রেগে চুরমার হয়ে চোরের দিকে এক ঠায় তাকিয়ে ছিলেন চোখ পাঁকিয়ে আর মোঁচে তা দিচ্ছিলেন ক্ষনে ক্ষনে।চোর যখন চোখাচুখি হলো তখন সে শুধু পাকানো চোখ দেখেই তিনতলা সমান উচু গাছ থেকে পড়ে পা ভেঙ্গে ফেলেছে।



এই আমার বড় দুই মামা।আরো কিছু যদি মনে আসে লিখে রাখবো।না হলে সব একদিন ভুলে যাবো।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.