![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
১৪ই ফেব্রুয়ারী, ২০১৫, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস......
রোজ বিকেলের মতন আজ বিকেলেও লাবিব অফিস শেষে প্রতিদিনের চেনা পান্থপথের ফুটপাথ দিয়ে এক গুচ্ছ গোলাপ ফুল হাতে নিয়ে হেঁটে বাসায় যাচ্ছে। চারিদিকে আজ যেন প্রেমিক-প্রেমিকাদের মেলা বসেছে। লাবিব হাঁটছে.......আর ভাবছে...... ঠিক দুই বছর আগেও ও কায়ার হাতে হাত রেখে ভালোবাসা দিবস পালন করতো। মনে থাকতো অনেক বলা না বলা কথা, চোখে হাজার স্বপ্ন। কিন্তু কোন দিন কল্পনায়ও ভাবেনি এইসব না বলা কথা, চোখ ভরা স্বপ্ন সুধুই কিছু মিথ্যা প্রতিশ্রুতি যা মনে ক্ষণিকের দোলা দিয়ে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষত রেখে যায়। দীর্ঘ চার বছরের প্রেমের পর আজ কায়া অন্য কারো স্ত্রী। শুধুমাত্র টাকার জন্য, বিলাসিতার জীবনের জন্য। শেষ দেখার দিন কায়া বলেছিল অভাব যখন দরজা দিয়ে ঘরে ঢুকে প্রেম তখন জানালা দিয়ে পালায়। লাবিব সেইদিনই জীবনে প্রথমবারের জন্য বুঝেছিল জীবনে টাকার গুরুত্ব কি। সেদিন কটা সামান্য টাকার জন্য কায়া যাকে বিয়ে করেছিল সেই লোকটা আজ সাধারন দুই চারজনের মত লাবিবের অধীনে কাজ করে, সারাদিন স্যার স্যার করে মুখে ফেনা তুলে রাখে।
লাবিব আজ এক গুচ্ছ গোলাপ ফুল হাতে নিয়ে হেঁটে বাসায় যাচ্ছে। কিন্তু কার জন্য?!!! কায়ার জন্য? নাহ..... কায়া ওর জীবনের অতীত। একটা ভুল অধ্যায় শুধুমাত্র। তাহলে কার জন্য?!!!!!
লাবিব ওর বাবা-মার একমাত্র সন্তান। সারা জীবন বাবা-মার আদরে ছিল। ওদের পরিবারটা মোটা-মুটি মানের মধ্যবিত্ত ছিল। তারপরো লাবিবের বাবা হাজারো কষ্টে ওর প্রত্যেকটা ইচ্ছা পুরন করেছিল। লাবিব যেদিন একটা নামকরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়, সেদিন ওর বাবা-মা তাদের হজ্জের জন্য কষ্ট করে জমানো টাকা থেকে দুই লক্ষ টাকা দিয়ে ছেলেকে ভর্তি করায়। নিজেদের হাজার কষ্ট, ইচ্ছাকে মাটি চাপা দিয়ে তারা ছেলের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছিল। লাবিব প্রায় ভাবে আল্লাহ-এর সবথেকে আশ্চর্য সৃষ্টিই মনে হয় বাবা-মা। তিনি সব বাবা-মাকেই মনেহয় এভাবেই সৃষ্টি করেছেন। নিজেদের সুখ, আরাম, ইচ্ছা, বিলাসিতা সব বিসর্জন দিয়ে কোন স্বার্থ ছাড়া সন্তানকে ভালোবাসা একমাত্র তাদের দিয়েই সম্ভব।
লাবিব আজ এক গুচ্ছ গোলাপ ফুল হাতে নিয়ে হেঁটে বাসায় যাচ্ছে। কিন্তু কার জন্য?!!! বাবা-মার জন্য? নাহ..... নির্মম সড়ক দুর্ঘটনায় ওর বাবা-মা মারা গেলো আজ প্রায় দেড় বছর। তাহলে কার জন্য?!!!!!
কায়ার চলে যাওয়ার পর প্রেম-ভালোবাসার উপর থেকেই বিশ্বাস চলে গিয়েছে লাবিবের। আজ পর্যন্ত আর কারো প্রেমে পড়েনি, বিয়েও করেনি। বন্ধুদের সাথেও খুব বেশী যোগাযোগ নেই। কিন্তু তার পরো লাবিব আজ এক গুচ্ছ গোলাপ ফুল হাতে নিয়ে হেঁটে বাসায় যাচ্ছে। কিন্তু কার জন্য?!!!
নিজের জন্য। কারন এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে ওর শরীর আর আত্মা, দুটিই একটি অন্নটির পরিপুরক হয়ে আছে। শরীর সব সময় কাজ করে যাচ্ছে আত্মাটা ঠিক রাখার জন্য, আর আত্মা কষ্ট করে যাচ্ছে শরীরটা ভালো রাখার জন্য। তাই আজ ভালোবাসা দিবসে লাবিব ওর আত্মা এবং শরীরকে উপহার দেয়ার জন্য এক গুচ্ছ গোলাপ ফুল কিনে নিয়েছে।
©somewhere in net ltd.