![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার এক বছর আগেই অভাবী বাবা তাঁর ১৪ বছর বয়সী মেয়ে দীপ্তি রানী দের বিয়ে দেন। বিয়ের পর গ্রামসুদ্ধ মানুষ ভেঙে পড়েছিল দীপ্তিময় চেহারার বালিকাবধূটিকে দেখার জন্য। বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ি এসে সবাইকে আপন করে নিয়েছিলেন দীপ্তি। কিন্তু একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ পাল্টে দেয় তাঁর জীবনচিত্র।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়নের হোসেনপুর গ্রামের ধরণী কান্ত দাসের সঙ্গে বিয়ে হয় দীপ্তি রানীর। দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে দীপ্তি ছিলেন সবার বড়। তিন মেয়ে ও দুই ছেলের জননী তিনি।
মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ধরণী কান্ত দাসের বাড়ির ১১টি পরিবারের মধ্যে ৯টিই বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যায় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দালালদের ভয়ে। বাড়িতে থেকে যায় ধরণী কান্ত দাস ও তাঁর ভাইয়ের পরিবার। অগ্রহায়ণ মাসের শেষ দিকে এক সকালের ঘটনা। স্থানীয় রাজাকাররা দুজন খান সেনাকে নিয়ে আসে ধরণী কান্ত দাসের বাড়ি। বাড়ি দেখিয়েই তারা চলে যায় আড়ালে। ঘরে ঢুকেই অস্ত্রের মুখে ধরণী কান্ত ও তাঁর ছোট ভাই দয়াল দাসকে পিঠমোড়া করে বেঁধে ফেলে।
দয়াল দাস (৬৭) ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘আমাদের হাত-পা বেঁধে ফেলে পাকিস্তানি সেনারা আমার ভাবির ওপর অত্যাচার চালায়। যাওয়ার সময় আমাকে ওরা গুলি করতে চেয়েছিল। আমার এক মুসলমান বন্ধু সামনে পড়ে আমাকে দানবদের কাছ থেকে রক্ষা করে।’
অত্যাচারের আগে হানাদাররা বন্দুকের বাঁট দিয়ে দীপ্তির কোমরে আঘাত করে। পরে নির্যাতনের কারণে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়ায় তাঁকে আর ক্যাম্পে নিতে পারেনি ওরা। সন্ধ্যায় জ্ঞান ফেরে দীপ্তির।
ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বীরাঙ্গনা দীপ্তি রানীর মুখের বলিরেখা ক্ষোভ, অভিমান আর কষ্টে ফুলে ওঠে। গাল বেয়ে অঝোরে ঝরতে থাকে দীর্ঘদিনের চেপে রাখা কষ্টগুলো। তিনি জানান, জ্ঞান ফেরার পর দেখতে পান পল্লী চিকিৎসক চান্দ আলী তাঁকে ওষুধ দিচ্ছেন। পরদিনই তাঁকে গ্রামের একটি মুসলিম পরিবারে আশ্রয় দেওয়া হয়। এর পরও পাকিস্তানি সেনারা কয়েক দিন দীপ্তিদের বাড়ি আসে। আরেক দিন আসার আগে খবর পেয়ে সবাই পাশের জঙ্গলে লুকিয়ে পড়ে। সারা দিন ছিল জঙ্গলে।
মাসখানেক পরেই দেশ স্বাধীন হয়। খবর পেয়ে এলাকার অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান ছুটে যান দীপ্তিদের বাড়ি। সব ঘটনা শোনেন তিনি। মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান বীরাঙ্গনার তালিকায় দীপ্তির নাম অন্তর্ভুক্তির কথা তুললে তিনি লোকলজ্জা ও সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে নিষেধ করেন।
একাত্তরের ওই ঘটনার পর দীপ্তি রানী তিনবার আত্মহত্যার চেষ্টা চালান। কিন্তু তাঁর মাতৃতুল্য জা লবঙ্গ রানী দাসের কারণে তিনি রক্ষা পান। একবার গলায় ফাঁস দিয়ে মরতেই বসেছিলেন। হঠাৎ জা উপস্থিত হলে সেদিনও মরা হয়নি তাঁর। জা ঘটনার দু-তিন বছর চোখে চোখে রাখেন দীপ্তিকে। এ সময় তাঁর স্বামীও অনেকটা মনমরা হয়ে থাকেন। তাঁদের স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যাহত হয়।
মেয়ে দুটিকে বিয়ে দিয়েছেন দীপ্তি রানী। বড় ছেলেকে বিয়ে করিয়েছেন গত বছর। সবাই দিনমজুরি করে সংসার চালায়। অভাবের কারণে দীপ্তি রানীর শরীর ভেঙে গেছে। অসুখ-বিসুখ বাসা বেঁধেছে শরীরে। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারেন না। কোনো রকম স্বীকৃতি তো দূরের কথা, ভিজিডি, ভিজিএফসহ বয়স্ক ভাতা- এসবের কিছুই পান না তিনি।
এক দশক আগে বিশিষ্ট মুক্তিযুদ্ধ গবেষক দীপঙ্কর মোহান্ত তাঁর সম্পাদিত একটি গ্রন্থে দীপ্তি রানীর দীর্ঘ সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেন। যে কারণে তিনি সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে একাত্তরের নির্যাতনের কথা বলতে চাননি, সেটাই ঘটে গেছে। তাঁর বীরাঙ্গনা হওয়ার ঘটনা প্রকাশ পেলে সম্মানের পরিবর্তে চারদিক থেকে গ্লানি ঘিরে ধরে তাঁকে। জামাই তাড়িয়ে দেয় বড় মেয়েটিকে। তাই তিনি এখন বীরাঙ্গনার স্বীকৃতি চান।
সুনামগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার আবু সুফিয়ান বলেন, ‘হোসেনপুরের রাজাকার এলকাছ মাস্টার, পুরান লক্ষণশ্রী গ্রামের সিরাজ মিয়াসহ স্থানীয় রাজাকাররা এ গ্রামে পাকিস্তানিদের ডেকে এনেছিল। তারাই মানুষের ঘরবাড়ি পোড়ায়। নারীদের সম্ভ্রমহানি ঘটায়। বীরাঙ্গনা দীপ্তি রানী এখন স্বীকৃতি চান। আমরা সে চেষ্টা করছি।’
সুনামগঞ্জ মুক্তিযুদ্ধ চর্চা ও গবেষণা কেন্দ্রের আহ্বায়ক মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট বজলুল মজিদ চৌধুরী খসরু বলেন, ‘যুদ্ধের পরপরই এই নারীর কথা আমি সুফিয়ানসহ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার কাছ থেকে শুনেছিলাম। কিন্তু তার অনাগ্রহের কারণে তখন তাকে নিয়ে কাজ করা সম্ভব হয়নি।’
যে রাজাকাররা খান সেনাদের তাঁদের বাড়ি নিয়ে এসেছিল, তাদের পরিচয় জানতে চাইলে আঁতকে ওঠেন দীপ্তি রানী। পরে প্রকাশ না করার স্বার্থে নাম বলেন। চার রাজাকারের মধ্যে একজন এখনো বেঁচে আছে। হঠাৎ তিনি চেঁচিয়ে বলে ওঠেন, ‘বিচার চাই। যুদ্ধাপরাধীর বিচার চাই।’ যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি দ্রুত কার্যকর করার দাবি জানিয়ে আকুল হয়ে কাঁদতে থাকেন এই বীরাঙ্গনা। - See more at: Click This Link
২| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১:৫৩
পাঠক১৯৭১ বলেছেন: প্রতিটি গ্রামে পাকিদের নিয়ে গেছে শিবিরের বাবা রাজাকারেরা; ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর ৫৫ হাজার রাজাকারকে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিট করেছিলেন '৭১ ের জেনারেশন।
৩| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ৯:৩৬
নিজাম বলেছেন: হাজার স্যালুট তাঁকে। তাঁকে রাষ্ট্রীয় পুরস্কার দেয়া হোক ও জীবন যাপনের জন্য অর্থ দেয়া হোক।
©somewhere in net ltd.
১|
১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১:৪৯
পরিবেশ বন্ধু বলেছেন: বেশ গুরুত্ব পূর্ণ লেখা
অভিনন্দন