![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
[img|http://cms.somewhereinblog.net/ciu/image/169273/small/?token_id=8de54403e106d6ea36663013bd4915cd
মেয়েদের মতো আমার একটা অভ্যাস আছে। আমি বইয়ের ভেতর এক্সট্রা টাকা রাখি। প্রয়োজনের সময় বের করে খরচ করি।
আজ রাজুর ছোটবোন মীরার জন্মদিন। কতো টাকা আজ বের হয়ে যাবে। সম্ভবত বইয়ের পাতা ওল্টালে পাচশ টাকার একটা নোট পাবো, নাও পেতে পারি। আমার যে ভুলো মন! কখন খরচ করে ফেলেছি কে জানে।
ক্ষীণ আশা নিয়ে পাতা উল্টিয়ে চমকে গেলাম। দুইটা পাচশ টাকার নোট কেমন লুটোপুটি খাচ্ছে। আশ্চর্য! টাকা থাকলে একটা নোট থাকতে পারে, দুটা আসবে কোত্থেকে! নাকি এই আমার আগের রাখা নোটটি মেয়ে নোট ছিল! তা এখন বাচ্চা দিয়েছে। নিজ মনে খানিকক্ষণ হেসে তৈরি হয়ে নিচে নেমে এলাম। দেখলাম, নিচ তলার বসার ঘরে মিলি টিভি দেখছে।
আমি নিশ্চিত, আমাকে দেখেই মিলি উল্টা-পাল্টা কিছু বলবেই। ও আমাকে দুই চোখে দেখতেই পারে না। এই দেখতে না পারাটা ওদের বাসায় বসে বসে খাই বলেই কি না কে বলবে!
বসার ঘর পার হওয়ার আগেই ফস করে মিলি বলে ফেললো, লাল কটকটে শার্ট পরে কোথায় যাচ্ছেন? আপনাকে তো বলেছি, এই বিশ্রী শার্টটা আর পরবেন না। আপনি জানেন, আপনাকে কতো বাজে লাগছে?
আমার মন খারাপ হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু আমি মন খারাপ করলাম না। মিলির এসব কথায় আমি অভ্যস্ত। একটা হাসি দিয়ে বললাম, জানিস মিলি, আমার পাচশ টাকার নোট বাচ্চা দিয়েছে।
মিলি এ কথায় অন্যদিকে তাকিয়ে হেলাফেলা সুরে বললো, আজে-বাজে রসিকতা করবেন না। যেখানে যাচ্ছেন যান।
আমি রাস্তায় নেমে এলাম। মিলির কথায় সত্যিই আমি কিছু মনে নিইনি।
ও আমার বড় খালার মেয়ে। আমার মা যেদিন মারা যান তার ঠিক সতেরো দিনের মাথায় আমি খালাদের বাসায় এসে উঠি। খালারা বেশ টাকাওয়ালা ।
আমার বড়আপা লজ্জা ভুলে খালাকে একদিন বলে ফেললো, খালা, আসিফ ঢাকায় কোথায় থাকে না থাকে। মা মারা যাওয়াতে ও খুব ভেঙে পড়েছে। আপনাদের পল্লবীর বাসাটা তো অনেক বড়। ওকে ওখানে রাখতে পারবেন না?
খালা খুব হাসি মুখেই আমাকে এখানে নিয়ে এলেন। প্রথম প্রথম খালা, মিলি, সবাই খুব সমাদর করতো। এখন আমার প্রতি ওদের নজর একটু কমই বলা যায়।
সন্ধ্যার একটু পর আমি রাজুদের বাসায় গেলাম। রাজু আমার বন্ধু। ভালো মানুষের এক সের। শপিংয়ে গিয়ে ওর যদি কোনে টিশার্ট পছন্দ হয় তাহলে দোকানি কে বলবে, ভাই এ রকম টিশার্ট কি একটাই?
দোকানি প্রবল উৎসাহ নিয়ে যখন বলবে, জি ভাই একটাই। আর কারো গায়ে এ রকম টিশার্ট খুজে পাবেন না।
সঙ্গে সঙ্গে রাজুর মন খারাপ হয়ে যায়। কারণ একই রকম টিশার্ট রাজুর দুইটা দরকার। একটা আমার জন্য, আর একটা ওর জন্য।
রাজুদের বাসায় ঢুকেই আমি অবাক হলাম! কারণ অতিথি আমি একা। ভেবেছিলাম আজ মীরার জন্মদিনে ওদের বাসা ভর্তি লোকজন থাকবে।
আমাকে দেখেই মীরা সবার আগে এগিয়ে এলো। মেয়েটা সব সময়ই আমাকে একটু বেশি গুরুত্ব দেয়।
আমি লক্ষ্য করেছি, মীরা আমার বড় খালার মেয়ে মিলির সম্পূর্ণ বিপরীত। মীরা কোনো সংকোচ না করে আমার হাত ধরে বললো, , শ্যামবর্ণের ছেলেদের লাল রঙে এতো সুন্দর লাগে তা আপনাকে না দেখলে বুঝতামই না!
কোনো মেয়েমানুষ আমার হাত ধরে আছে! আমার লজ্জা লাগে। আমি ব্যস্ততার ভঙ্গিতে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললাম, এবার তো বুঝলি। এখন যা, ভাগ।
রাজু আর আমি একদম সমবয়সী। জানুয়ারিতে আমাদের বয়স চব্বিশে পড়বে। আমার ৭ তারিখে, রাজুর ২৫ তারিখে। এতো বড় হয়ে গেছে। তবু রাজুর পাগলামি যায়নি।
রান্নাঘরে খালাম্মার সঙ্গে রাজু কাজ করছিল। আমাকে দেখে ছুটে এসে সারা বাড়ি মাথায় করে ফেললো। শালা, তুই এক সপ্তাহ পর আমাদের বাসায় এলি। আজ থেকে যাবি। মীরা, আসিফকে লুঙ্গি এনে দে। ও আবার লুঙ্গি ছাড়া ঘুমাতে পারে না। বলে হাসছিল।
এক ফাকে মীরা এসে বললো, আমার গিফট কোথায় আসিফভাইয়া?
আমি মানিব্যাগ থেকে পাচশ টাকার নোট মীরার হাতে গুজে দিয়ে বললাম, আমার পছন্দ ভালো নয়। তুই কিছু কিনে নিস।
মীরা টাকা নিয়ে চলে যাচ্ছিল। কি মনে হতে ফিরে এসে বললো, জানেন ভাইয়া, প্রতিবার জন্মদিন এলে আমার মন খারাপ হয়ে যায়। কারণ আমার জন্মদিন আজ নয়। আমার আসল বার্থডে ১৩ মার্চ। সার্টিফিকেটে কেমন কেমন করে যেন ১৫ নভেম্বর হয়ে গেছে।
আমি হেসে ফেললাম। বললাম, তো কি? ১৩ মার্চ জন্মদিন করলেই হয়।
এ কথায় মীরা মন ভার করে বললো, তাই তো করতাম। কিন্তু আমার বান্ধবীরা কলেজে এসব নিয়ে ঠাট্টা করে। বলে, কিরে, পৃথিবীতে তোর জন্ম দুইবার নাকি?
মীরার সহজ-সরল কথা-বার্তা আমার বেশ লাগে। মাঝে মধ্যে মনে হয়, আমি যদি পর পর দুই দিন মীরার সঙ্গে দেখা করি তাহলে ওর প্রেমে পড়ে যাবো। মীরার মতো কেউ একজন আমার পাশে আজীবন থাকলে জীবনটা খুব খারাপ যাবে না।
সেদিন একটু রাত করে বাসায় ফিরলাম। রাতে আমি খাবো না, খালাকে এ কথা বলে আমার রুমে এলাম। শার্ট ছাড়তে যাবো, হঠাৎ আমাকে চমকে দিয়ে মিলি এলো। মিলি আমার ঘরে কখনো আসে না। আজ হঠাৎ ওর উপসি'তি আমার উত্তেজনা বাড়িয়ে দিল। আমি আবার শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে বললাম, কি রে মিলি? আমার কোনো দোষ ধরেছিস? আচ্ছা, এখন যা সকালে ক্ষমা চেয়ে নেবো।
মিলির চোখ ধক করে জ্বলে উঠলো। মনে হলো, এখনই আমাকে ছিড়ে খাবে।
আপনি আমাদের আপন ভাবেন না?
ভাবি তো।
তাহলে এসব বাজে কথা কেন বলেন? এর আগেও আপনি এমন করেছেন। যেদিন বড়চাচি এলো সেদিন ডাইনিংয়ে আপনি মায়ের পছন্দের মগ ভেঙে ফেললেন এবং সঙ্গে সঙ্গে সবার সামনে মাকে বললেন, আমাকে মাফ করে দেন খালা। কেন, মা কি আপনাকে ধরে মারতেন? আপনি জানেন, মা আপনাকে কতো ভালোবাসেন। এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো মিলি বললো।
আমি চুপ থাকলাম।
তারপরই মিলির চোখ-মুখ কোমল হয়ে গেল। নরম স্বরে বললো, রাতে খাবেন না কেন?
রাজুদের বাসায় খেয়েছি। মীরার জন্মদিন ছিল।
আমার এ কথার পর মিলি যা বললো তার জন্য আমি প্রস'ত ছিলাম না।
আমাকে হতবাক করে দিয়ে মিলি বললো, আপনি মীরাকে বিয়ে করবেন, তাই না?
আমি হতবাক ভাব কাটিয়ে হো হো করে হেসে উঠলাম। হাসতে হাসতে বললাম, হ্যা করবো। কেন, মীরাকে তোর পছন্দ না?
মিলি উঠে যেতে যেতে বললো, খাবার টেবিলে আসেন। আমি আজ নিজ হাতে শর্ষে ইলিশ রেধেছি। না খান না খাবেন, একবার চেখে যান।
ডাইনিংয়ে গিয়ে দেখি মিলি ভাত খাচ্ছে আর চোখ মুছছে। আমি অবাক হওয়া ভঙ্গিতে বললাম, কাদিস কেন মিলি?
এ কথায় মিলি বাম হাতে চোখ মুছে বললো, তরকারি খুব ঝাল হয়েছে, তাই।
দে দেখি, তোর ঝাল তরকারি দিয়ে একটু ভাত খাই। খেয়ে দুজন সমবেত কাদি। বলে হেসে ফেললাম।
মিলি ওর প্লেটে গ্লাসের সব পানি ঢেলে বেসিনে হাত ধুয়ে কিছু না বলে আমার সামনে থেকে চলে গেল।
কাহিনী বুঝলাম না। এই মেয়ের সমস্যা কি?
সমস্যা ধরা পড়লো পরদিন সকালে। শুনলাম মিলির বিয়ে ঠিক হয়েছে। ছেলে ডাক্তার। ঢাকা শহরে ছেলের দুইটা বাড়ি। দেখতেও ছেলে খারাপ নয়।
আমি এক ফাকে মিলিকে ডেকে বললাম, মিলি, ছেলে তো রাজপুত্র পেয়েছিস।
আমার ধারণা ছিল, মিলি এ কথায় অস্বাভাবিক রাগ দেখাবে। কিন্তু ও তা করলো না।
কিছুদিন হলো আমার প্রতি মিলির মমতা বেড়ে গেছে মনে হচ্ছিল। আমার কথার উত্তরে মিলি বললো, জি আসিফভাই। কিন্তু খেয়াল করেছেন, লম্বায় তিনি ঠিক আমার সমান হবে। নির্ঘাত আমাকে আপনারা বল্টুর বৌ বলে ডাকবেন।
মিলির সঙ্গে সব কথা-বার্তায় সারাংশ যা পেলাম তার মানে হচ্ছে, ছেলে মিলির বেশ পছন্দ। তাকে বিয়ে করতে মিলির কোনো সমস্যা নেই।
এর তেরো দিন পর ইংল্যান্ড থেকে মিলির বাবা আর বড়ভাই এলেন। তারা দুজনই প্রবাসে থাকেন। অঢেল টাকা কামান। প্রচুর টাকা-পয়সা হাতে থাকার কারণে কি না জানি না, মিলির বাবা আর ভাই কঠিন মানুষ হয়ে গেছেন। তাদের ভাব-সাব দেখে মনে হলো, আমি এ বাড়িতে আছি, ব্যাপারটি তারা পছন্দ করছেন না।
আমি মাথা ঘামালাম না। এসবে আমার অভিজ্ঞতা আছে।
ধুমধাম করে ২৮ ডিসেম্বর বিয়ের আয়োজন হলো। আমি ভেবেছিলাম, আমার ঘাড়ে প্রচুর কাজের দায়িত্ব পড়বে। আসলে তা হলো না। সারা দিন কপট ব্যস্ততায় এঘর-ওঘর ছোটাছুটি করেই আমার কাটলো।
সন্ধ্যার পর পর মিলি আমাকে ডেকে পাঠালো।
গেলাম মিলির রুমে। সেখানে কেউ ছিল না তখন। দেখলাম, পরীর মতো একটা মিলি বসে আছে। মিলি যে এতো সুন্দরী তা আমি জীবনে প্রথম লক্ষ্য করলাম। খুব উচ্ছ্বাস নিয়ে বললাম, আল্লাহর কসম মিলি, তুই যে পরীর মতো সুন্দরী তা আজ প্রথম লক্ষ্য করলাম।
এ কথায় মিলি বলে বসলো, আসিফভাই, মীরার সঙ্গে আপনার বিয়ে দেয়ার দায়িত্ব আমার। আপনি খুশি তো?
মীরাকে আমি বিয়ে করবো এ কথা তোকে বলেছে কে?
আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই মিলির বড়ভাই মানে, আসাদভাই মিলির রুমে এলো। চমকে দিয়ে আসাদভাই শক্ত করে আমার হাত ধরে প্রায় টেনে-হেচড়ে আমাকে বের করলো। আমাকে ছাদে এনে কোনো কথা না বলে আমার হাতে ভাজ করা একটি কাগজ ধরিয়ে দিয়ে আসাদভাই ছুটে বেরিয়ে গেল।
আমি ভয় পেয়েছিলাম। কাগজটা পড়ে আমার হাত-পা কাপা শুরু হলো। দেখলাম, আমাকে লেখা মিলির একটা চিঠি। মিলি লিখেছে :
আসিফ ভাই
আপনি আমাদের বাড়িতে আসার পর থেকে সত্যি সত্যিই আমি আপনাকে সহ্য করতে পারতাম না। আপনার মনে আছে, আমি যেদিন কলেজের পিকনিক থেকে ফেরার সময় অ্যাকসিডেন্ট করলাম এবং ঠিক দুই দিন পর জ্ঞান ফিরলো সেদিন আপনি আমাকে দেখতে এলেন। জ্ঞান ফিরে চোখ মেলে আমি প্রথম কি দেখলাম জানেন? দেখলাম, আমার জন্য আসিফভাই কাদছে। তার গাল ভরা পানি। এতো বড় একটা ছেলে কাদছে, দৃশ্যটি যে কতো মায়াভরা তা আপনি উপলব্ধি করতে পারবেন না এবং পরে শুনলাম আমার শরীরে যে তিন ব্যাগ রক্ত লেগেছে তার দুই ব্যাগ আপনি দিয়েছেন। এ ব্যাপারে আপনার সঙ্গে আমি কোনোদিন কথা বলিনি। এরপর থেকে আপনার প্রতি আমার মায়া পড়ে যায়।
আরেকটা কথা বলি, আমি সুস' হওয়ার পর একদিন রাত দেড়টায় ছাদে যাই। এ সময় আমার ছাদে যাওয়ার কথা নয়। তবু আকাশে জ্যোৎস্না থাকায় সাহস করে গেলাম এবং গিয়েই চমকে উঠলাম। দেখলাম, আপনি ফুপিয়ে কাদছেন আর ব্যাকুল হয়ে মা মা করে ডাকছেন।
আমি লুকিয়ে রুমে চলে এলাম। বিশ্বাস করেন আসিফভাই, সে রাতে আমি এক ফোটাও ঘুমাইনি। সারা রাত কেদেছি। সকালে আবিষ্কার করেছি, আমি আপনাকে প্রচণ্ড রকমের ভালোবাসি। আপনাকে আমি এ কথা কোনোদিন বলতে পারিনি। কারণ এ কথা যদি বাবা কোনো রকমে জানতে পারেন তাহলে আমাকেও কিছু বলবেন না, নিজেরও কিছু ক্ষতি করবেন না। আপনাকে শুধু বলবেন, আসিফ চোখ বন্ধ করে সোজা হয়ে দাড়াও তো। বাবার কথা মতো আপনি ঠিকই সোজা হয়ে দাড়াবেন। আর বাবা খুব স্বাভাবিক ভাবে আপনাকে গুলি করে মেরে ফেলবেন।
আমি আপনাকে জীবন সঙ্গী করে পাবো না ভেবে আমার অনেক কষ্ট লাগছে। আমার মনে হচ্ছে, আপনাকে ছাড়া বাকি জীবন আমি কাটাতে পারবো না। আসিফভাই, আমার জন্য দোয়া করবেন। অনেক কিছু ভেবে আমি ডাক্তারকে বিয়ে করছি। আমি এখন কাদবো। তাই আর কিছু লিখছি না।
মিলি
চিঠি পড়েই আমি সোজা মিলির রুমে গেলাম।
আমার বড়আপা, খালাসহ অনেকেই সেখানে ছিলেন।
আমি সবাইকে অনুরোধ করলাম বাইরে যেতে।
সবাই চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মিলি এগিয়ে এসে শক্ত করে আমার হাত ধরে ফেললো। যেন এ হাত আজীবন আর সে ছাড়বে না। আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই মিলি ব্যাকুল হয়ে কাদতে শুরু করলো। কান্নার ফাকে মিলি বলতে লাগলো, আসিফভাই কিছু একটা করেন।
আমি নিজে যেমন দিশাহারা হয়ে ছাদে গিয়ে মা মা করে কাদতাম, মিলির সে রকম দিশাহারা ভাব আমাকে ভেঙে-চুরে ফেললো। কিছু না বুঝেই আমি মিলির প্রেমে পড়ে গেলাম। পরিণতি চিন্তা না করে মিলিকে বলে ফেললাম, চল মিলি, আমরা পালিয়ে যাই!
এ কথায় মিলি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে হাউমাউ করে কেদে ফেললো।
দোতলায় আমার রুমের পাশেই স্থায়ীভাবে আটকানো বাইরে বের হওয়ার একটা পেচানো সিড়ি ছিল। আমি আর মিলি তালা খুলে সেখান দিয়ে বের হবো, ঠিক তখনি আসাদভাই আমাদের ধরে ফেললো।
আমাকে আর মিলিকে উদ্দেশ করে আসাদভাই বললো, কলেজের সামনে গাড়ি ঠিক করে রেখেছি। আসিফ, তুই মিলিকে নিয়ে ফরিদপুর চলে যা। আমি এদিক ঠিকঠাক করে দুই-তিন দিন পর তোদের নিয়ে আসবো।
রাত দশটা। একটি প্রাইভেট কার আমাদের নিয়ে ছুটে যাচ্ছিল।
মিলি রাত একটার আগে ঘুমায় না। অথচ আজ দশটা না বাজতেই ঘুমে ওর চোখ জড়িয়ে আসছিল।
প্রশান্তিতে?
হঠাৎ কি মনে হতেই মিলি জড়ানো গলায় বললো, তোমার পাচশ টাকার নোট বাচ্চা দিতো না। আমি টাকাগুলো রেখে আসতাম। তুমি তো মরে গেলেও টাকা চাইবে না।
আমি মুচকি হেসে বাইরে তাকালাম।
গাড়ি তখন নদীর ওপর।
জ্যোৎস্নার আলো পানিতে ঝিকমিক করছে।
আমার চিৎকার করে দুটি কথা বলতে ইচ্ছা করলো।
এই মেয়েটা এতো বাচ্চা কেন?
পৃথিবীটা এতো সুন্দর কেন?
©somewhere in net ltd.