নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শিরোনামহীন কথকতা

দীপ্তিহীন সূর্য

আমি হয়ত মানুষ নই...

দীপ্তিহীন সূর্য › বিস্তারিত পোস্টঃ

''অনন্ত নীলিমার বুকে সোনালী পালক''

২৪ শে অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১১:০০

দুই ঘণ্টা পার হয়ে প্রায় তিন ঘণ্টা হতে চলল। কিন্তু কিছুতেই ঘুম আসছে না। ঘুমের ঔষধ অবশ্য খেয়েছে, কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। অনেকবার বিছানায় গড়াগড়ি করে না পেরে অবশেষে উঠে বসল। পাশের টেবিল ঘড়িটার রেডিয়াম কাঁটা বলছে সময় এখন প্রায় তিন টা। কিছুতেই সিধান্তে আসতে পারছে না কি করবে এখন। ভাবল একটু ছাদে হেঁটে আসলে সব ঠিক হয়ে যাবে। ছাদে যেতেই পুর্নিমার আবছা আলোতে মনটা কিছুটা ভালো হল। চারিদিকে কি সুনশান নিরবতা, মাঝে মাঝে নিশাচার পাখির ডাক শোনা যাচ্ছে। সবকিছু মিলিয়ে এক মায়াময় পরিবেশ।





দূরের শিমুল গাছটার দিকে চোখ পড়তেই অদ্ভুত এক শিহরণে কেঁপে উঠল। এই চন্দ্রালোকে সেটাকে ডানা মেলে আকাশের বুক ছুঁয়ে উড়ে বেড়ানো পাখির মত দেখাচ্ছে। এই গাছের কাছে জমা আছে ওর অনেক স্মৃতি, অনেক না বলা কথা। এই শিমুল গাছের নিচেই প্রথম দেখা হয় ওদের। প্রথম দেখাতেই মুগ্ধ হয়ে যায়। হাল্কা নীল টি শার্ট, সাদা টাউজার্স, কনভার্স, কানে হেডফোন লাগিয়ে জগিং করতে যাচ্ছে। কি অপরূপ সুন্দর!





ধ্রুবও প্রতিদিন জগিং এ বের হয়, আশে পাশের সবাইকে সে কম-বেশি চেনে। কিন্তু একে তো কোনদিন দেখিনি। কে হতে পারে এ ভাবতে ভাবতে পার্কে এসে পড়ে। দেখে সেই মেয়েটিও এখানে। ওর তারুন্ন্যপূর্ন চেহারায় এ রকম কিছু একটা আছে যা ওকে সবার থেকে আলাদা করেছে, প্রথম দেখায় সেই ‘‘কিছু একটা” অপার্থিব বলে মনে হয় ধ্রুবর।



এভাবে প্রায় প্রতিদিন ভোরে ওদের দেখা হত। বলতে গেলে সেদিনের পর থেকে ধ্রুব ওর জন্যই অপেক্ষা করত। দূর থেকে যখন দেখত ও আসছে ঠিক তখনই ধ্রুব বাসা থেকে বের হত।



এভাবে বেশ কিছুদিন পর একদিন ও সাহস করে কাছে এসে বলল, আমি ধ্রুব, আপনি? প্রথমে কোন উত্তর এল না। ভাবল মেয়েটার ভাব বেশি বোধ হয়। ধ্রুবও যে কম সুদর্শন তা নয়। একটু পরে যখন ফিরে আসার জন্য পা বাড়াল তখন বলল, আমি পৃথিলা। কি ভাবছিলেন আমি অনেক বেশি মুডি, তাই না! আমি তো অবাক, শুধু বললাম আপনি কি মনের কথা পড়তে পারেন? ও একটু হাসল। বলল কাল দেখা হবে, আজ অনেক দেরি হয়ে গেছে।





জানতে পারল ওরা এখানে নতুন এসেছে। পরদিন যখন আসল তখন অনেক কথা হল। এভাবে প্রতিদিন ওদের দেখা হতে লাগল। আস্তে আস্তে অনেক ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠল। কখনও ভাবেনি এভাবে কিছু একটা হয়ে যাবে। বসন্তের শুরুতে প্রকৃতির পরিবর্তনের মত ধ্রুবর ভিতরেও যে পরিবর্তন ঘটেছে সেটা বুঝতে পেরেছিল সেদিন, যেদিন পৃথিলা একগুচ্ছ রজনীগন্ধা এনে ধ্রুবর হাতে দিয়ে বলল, শুভ জন্মদিন। ও তো ভেবে পাই না ওর জন্মদিনের কথা কিভাবে জানল। পৃথিলার চোখের দিকে অপলক ভাবে তাকিয়ে থাকল। কুশলী পটুয়া কারও ছবি আঁকলে তার চেহারায় যে রকম একটা প্রসন্ন ভঙ্গি ফুটে ওঠে এই মেয়ের কথায়, চেহারায়, পুরো সত্তায় সে রকম একটা ভাব যেন টের পাচ্ছে সে।





ধ্রুব ওকে কখনই মিথ্যা বলতে পারেনি। এভাবে দু’জনার মাঝে খুব ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠল। ওদের মধ্যেকার কথা এখন নিজেদেরকে ছাড়িয়ে অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত। আস্তে আস্তে বুঝতে পারল ওর সেই একান্ত ভালোলাগার মুহুর্তগুলো অজান্তেই রূপ নিয়েছে ভালবাসায়। কিন্তু শত চেষ্টা করেও পৃথিলাকে বলতে পারেনি। হয়ত ধ্রুবর মনের কথা ও জানত। এসব ক্ষেত্রে মেয়েরা কিভাবে জানি সবকিছু বুঝতে পারে। এই ক্ষমতা হয়ত সৃষ্টিকর্তার অশেষ দান। কিন্তু ধ্রুবও বুঝত ওদের দেখা হলেই সবসসময় পৃথিলার মাঝে একটা ঘোর লাগা অনুভূতি বিরাজ করত। একদিন না পেরে বলেই ফেলল, তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে, তোমার কি একটু সময় হবে? সেদিনও ও আগের মতই হাসতে হাসতে বলেছিল আজ নয় অন্য কোন দিন।





সেদিন রাতে ওর একটা টেক্সট পেল, ‘‘কাল ভোর ৬ টায় শিমুল গাছটার নিচে আমি অপেক্ষা করব”। সেই রাতটা যে কিভাবে কেটেছে তা বলে বোঝানো দুষ্কর। সবসময় শুধু মনে হয়েছে ভোর হতে আর কত দেরি। ভোর হতেই ছুটল, গিয়ে যা দেখল তা অবর্ননীয়। মেরুন রঙের শাড়িতে ওকে তুষারের উপর প্রথম ভোর হবার মত সুন্দর লাগছে। মুখটা দেখার মত। এক বার নয়, হাজার বার নয়, চিরজীবন শুধু চেয়ে থাকার মত। কপালের ছোট্ট কালো টিপটা মনে হচ্ছে ওর সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে দিয়েছে পাহাড়ের চূড়া ছাপিয়ে সন্ধ্যা তারার মত। মায়োপিক চোখের মনি দু’টো অপূর্ব নীল, আর তাতে যেন রাজ্যর গভীর রহস্যময়তা। ঘনকালো পাপড়ির কারনে সেই নীল যেন আরও বেশি পূর্নতা পেয়েছে। চুলগুলো সামান্য কোঁকড়া যা ওকে আরও সুন্দরী করে তুলেছে। সবকিছু বিচারকের দৃষ্টিতে দেখল। মনে হল সারাজীবন বিচারকের দায়িত্বটা পেলে জীবনে আর কিছু চাওয়ার থাকবে না। এমন একটা প্রস্ফুটিত ফুল কখন যে কৈশোরের নিস্পাপ সময়টুকু কাটাইনি......একেবারেই পরিনত হয়ে গেছে।





ধ্রুবকে নিশ্চুপ থাকতে দেখে বলল, এটা তোমার জন্য। হাত বাড়িয়ে একটি খাম এগিয়ে দিয়ে কোন কিছুর জন্য অপেক্ষা না করেই চলে গেল ও। খামটা দেখল, ধ্রুবর সবচেয়ে প্রিয় নীল রঙের, আর খুলতেই ভেসে এল রজনীগন্ধার সেই মনমাতানো সুবাস। আর সাদা কাগজের উপর নীল কালিতে লেখা,



“অনন্ত নীলিমার বুকে যদি সোনালী পালক হয়ে উড়ে আসি, বুক পেতে ধরবে কি আমায়? ভয় নেই নীলিমাকে আঁধারে ঢেকে দেব না, সোনালী আলোয় উদ্ভাসিত করব অনন্ত কাল ধরে”।





মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১২:০৬

বোধহীন স্বপ্ন বলেছেন: ভালো লাগল । ছবিগুলোও সুন্দর +++

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.