নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বপ্নহীন

Fahim H Sagor

আমাকে আমার মতন থাকতে দেও, আমি নিজেকে নিজের মতন গুছিয়ে নিব।

Fahim H Sagor › বিস্তারিত পোস্টঃ

হিন্দুরা যে অসুর হত্যা বিচারে উল্লাসের পূজা করে

২৩ শে অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:২০

অসুর নামে ব্যক্তিকে হত্যা করে হিন্দুরা উল্লাসের পূজা
করে, পড়ুন সে অসুর সমপ্রদায়ের কাহিনী।
কোচবিহারের 'অসুর' গ্রামের কথা
“অসুর থাকবে কতক্ষণ অসুর যাবে বিসর্জন।”- এই
বিসর্জনের জ্বালা কতটা তা বুঝতে বা বোঝাতে প্রাচীন
গল্পকথার অসুররা আজ আর নেই, নেই তাদের সেই দাপট
দেখানোর চেহারাও। পুরাণে কথিত মিশমিশে কালো বিকট
প্রকৃতির এই প্রাণীগুলির কথা মনে পড়লেও ভয়ে শিউরে
উঠতে হয়।
গ্রামটির নাম শুকানুকুটি। মাথাভাঙ্গা মহকুমা থেকে উত্তর
দিকে ১২ কিমি ভেতরে গ্রামটির অবস্থান। প্রত্যন্ত এক
আদিবাসী গ্রাম। সব মিলিয়ে ১৮টি পরিবারের বাস। গ্রামটির
জনসংখ্যা ১৪২। কল্পকথা, প্রাচীন পুরাণ, কৃষ্ণযুগ, রামযুগের
বাইরে এসেও বাস্তব জীবনে এরাই ‘অসুর’। কথায় কথায়
গ্রামটির নাম হয়ে গেছে অসুর গ্রাম। এরা ভোট দেন।
ভোটার কার্ডে এই ‘অসুর’ শব্দটি যেন তাদের অনন্য
ঐতিহ্য বহন করে।
এই অসুররা জীবন্ত, স্পর্শ করা যায় এদের। এরা
মাথাভাঙ্গা বিধানসভা কেন্দ্রের ‘অসুর’ পরিবার। কি করেন
এরা, কিভাবে জীবন ধারণ করেন, কি ভাবেই বা পদবীর
বিড়ম্বনায় বেঁচে থাকেন লড়াই করে- জানতে পৌঁছে গেছিলাম
তাদের গ্রামেই। তাদের আনন্দ, উৎসব থেকে শুরু করে দুঃখ
যন্ত্রণার খবর জানতে।
অসুর সম্প্রদায়ের প্রধান, ভালু অসুরের সাথে কথা বললাম -
মাথায় মুকুট নেই, নেই রাজ পোশাকও - তবে রয়ে গেছে
অসুরের গাম্ভীর্য। তা সম্বল করেই তিনি বললেন বেশ কয়েক
বিঘা কৃষি জমি আছে তাদের, এতেই চলে কৃষিকাজ। বিশেষ
করে ধান, গম, কাউন জাতীয় দানা শস্যের চাষ করেন তারা।
তারা অসুর, তাই মাংস এদের নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য
সামগ্রী। ফলে পশুপালন এদের অন্যতম জীবিকা। ভেড়া,
মুরগি, হাঁস, ছাগল, পাঠা, শুকর প্রভৃতি পালন করে তারা।
তবে একথা স্বীকার করতেই হবে যে তাদের অবস্থান
দারিদ্রসীমার নিচে। শুধু ‘দিন আনা, দিন খাওয়া’ই নয়, খাদ্য
উপকরণ, যেমন ডাল ভাত জোটে কিছুদিন পর পর। এইভাবেই
বেঁচে আছে ১৮টি পরিবারের ১৪২ জন জীবিত 'অসুর'। পরিবার
আছে তাদেরও। পরিবারের সদ্যোজাতটি এই বসুন্ধরার মুখ
দেখছে মানুষের লাঞ্ছনার অবহেলার মধ্য দিয়ে, কারণ সে-ও
তো ‘অসুর’।
ভাবলেও চোখে জল আসে। এই রকম জল ভরা চোখে ভালু
অসুর ও খুশবু অসুর জানালেন যে তাদের গ্রামের পাশে রয়েছে
শুকানুকুটি প্রাথমিক স্কুল। কিন্তু সেখানে যাওয়ার অধিকার
নেই এই সম্প্রদায়ের কচিকাঁচাদের। বই বগলে অনেকবার
যাওয়ার চেষ্টা করেছিল তারা কিন্তু পদবীর লাঞ্ছনায় বারবার
ফিরে আসতে হয়েছে শিক্ষার জগৎ থেকে। অসুর এই দম্পতির
জীবনের একটাই ইচ্ছে-- অন্তত মৃত্যুর আগে তাদের
সম্প্রদায়ের ভবিষ্যৎ প্রজন্মদের যেন স্কুলে জায়গা হয়।
শারদোৎসব তাঁদের কাছে ভীষণ কষ্টের বলে জানালেন বেণু
অসুর, বুলা অসুররা। তাঁরা নিজেদের মনে পুরাণে বধিত
অসুরদের বংশধর বলে মনে করেন। পুরাণ অনুসারে দেব-
দেবীর হাতে মহিষাসুরের মৃত্যু ঘটেছিল। এই পুজোয় কিভাবে
আনন্দে মেতে উঠতে পারে সেই বধিতের বংশধরেরা?
তাই মহালয়া থেকে তাদের শোক পালন শুরু হয়। কারও ঘরে
সন্ধ্যের পর প্রদীপ জ্বলে না এই কয়দিন। যখন ঢাকের
আওয়াজে চরাচর মুখরিত তখন সন্ধ্যার অন্ধকারে গ্রামের
কোন এক বাড়ির দাওয়া থেকে ভেসে আসা ক্ষীণ কান্নার
রোল হয়তো শুনতে পারে না আনন্দে মসগুল সাধারণ
মানুষজন। এই কান্না কাউকে শোনানর জন্য নয়, নয়
সান্ত্বনা পাওয়ার জন্য নয়। এ কান্না স্বজন হারানোর
যন্ত্রণার, এ কান্না সমাজে লাঞ্ছনার, এ কান্না ব্যথার,
বেদনার--- তা সে কেউ বুঝুক আর নাই বুঝুক। এইভাবেই
হয়তো কাটবে অসুরদের জীবন --- শীর্ণ হয়ে যাওয়া
বলিরেখা পূর্ণ মুখমণ্ডলে তাদের এই কষ্টের ছাপ স্পষ্ট। এই
কষ্ট মানুষ হয়েও অসুর নামে সমাজে বেঁচে থাকার। রক্ত
মাংসের মানুষ হয়েও আদিবাসী এই সম্প্রদায়---- এরা
‘অসুর’।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:২১

Fahim H Sagor বলেছেন: এ বিষয়ে আরো পড়তে Click This Link

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.