নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দ্য েস্লভ

দ্য েস্লভ › বিস্তারিত পোস্টঃ

সৃষ্টার অস্তিত্ব !!!

১১ ই জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১:৪২





স্রষ্টার অস্তিত্বের যৌক্তিক প্রমান







প্রতিটি মানুষের মধ্যেই অন্য (নিজের থেকে বৃহৎ, শক্তিশালী, শ্রেষ্ঠ) কারো কাছে নিজেকে সমর্পণ করার প্রবণতা থাকে, যা সহজাত। মানুষ নিজেকে এভাবে সঁপে দিয়ে বা সমর্পণ করে আত্মতৃপ্তি লাভ করে। মানব সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকেই এ প্রবণতা মানুষের মধ্যে ছিল এবং এটি মানুষের এমন একটি উপাদান যা প্রত্যেকটি মানুষ জন্মগত ভাবে লাভ করে থাকে। আস্তিক, নাস্তিক উভয় শ্রেণীর মানুষের মধ্যেই এ প্রবণতা রয়েছে। একজন আস্তিক তার ধর্মের রীতি অনুযায়ী সে যাকে সর্বশক্তিমান বলে মনে করে, তার উদ্দেশ্যে নিজেকে সমর্পণ করে। নাস্তিকরা এ কাজটিই করে, তবে তা কোন ধর্মীয় রীতি বা পদ্ধতি অনুযায়ী নয়। তারা মানুষের মধ্যে বিশেষ কোন শ্রেণীকে বা মানুষের তৈরী কোন বিধানের নিকট আত্মসমর্পণ করে।



যেমন নাস্তিকদের কাছে কোন সমস্যার সমাধান চাইলে, তারা যে কোন একটি উৎস থেকে উৎসরিত চিন্তা দিয়ে উক্ত সমস্যার সমাধান করার কথা বলেন। এখানে তিনি উক্ত চিন্তার উৎসকে (ব্যক্তি, তার চিন্তা, বস্তু) সর্বশক্তিমান মনে করেন এবং তার কাছে মাথা নত করেন (সমাজতন্ত্রীরা স্রষ্টা বিশ্বাস না করলেও কার্ল মার্কস, লেনিন’কে এজাতীয় অবস্থানে রেখে নিজেদেরকে তার/তাদের কাছে নত করেছেন এমনকি সমাজতন্ত্রের পতনের পরও এ মতবাদের প্রভাবকে জনতার মনে দীর্ঘস্থায়ী করার মানসে লেলিনের লাশ তারা সযতেœ সংরক্ষণ করেছেন। মুখে স্রষ্টাকে অস্বীকার করলেও লেনিনকে তারা মৃত্যুর পরও স্রষ্টার আসনে আসীন রেখেছেন)। কোন নাস্তিকের কাছে কোন সমস্যার সমাধান চাইলে তিনি এমন বলেন না যে, ‘আমি কিছুই মানি না বা কিছুই বিশ্বাস করি না, তাই কিছুই বলব না বরং তিনি তার এক জাতীয় বিশ্বাস (এখান থেকে জন্ম নেওয়া কনসেপ্ট) থেকে কথা বলা শুরু করেন। মূলতঃ তিনি তার এই বিশ্বাসের কাছে আত্মসমর্পন করেছেন, যার কারণে তিনি বার বার উক্ত উৎসের কাছে ফিরে যান। এ ব্যাপারে অমুক এ রকম বলেছেন,তমুক ওরকম বলেছেন করতে করতে লোকটা আসলে একটি কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিত্ব করে। আমরা একটু লক্ষ্য করলেই দেখব ব্যাপারটা সহজাত অর্থাৎ সবার ক্ষেত্রে ঘটে।



মানুষ যদি এমন কোন কঠিন বিপদে পড়ে, যেখান থেকে উদ্ধার পাওয়া প্রায় অসম্ভব বা কেউ নেই সে বিপদ থেকে উদ্ধার করার, তাহলে এ অবস্থায় মানুষ অসহায় হয়ে এমন এক শক্তির উপর নির্ভর করে, যে শক্তি তাকে সে বিপদ থেকে উদ্ধার করবে (উক্ত শক্তি সম্পর্কে তার জ্ঞান থাকুক বা না থাকুক, ব্যপারটি এভাবেই ঘটে)। মানুষ তার শক্তির সর্বোচ্চ প্রয়োগেও যখন সফল হতে পারেনা বা উদ্ধার পেতে পারে না,তখন সে নিজের অজান্তেই এক মহা শক্তির দ্বারস্থ হয়ে পড়ে। এটা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি,যা প্রত্যেকটি মানুষের ক্ষেত্রেই এক।



এটা যদি সহজাত প্রবৃত্তি হয় তাহলে মানুষের উচিৎ এমন কারো কাছে আত্মসমর্পণ করা যিনি অনাদী, অনন্ত, অসীম, সর্বশক্তিমান, যিনি সকল কালেই বর্তমান। কিন্তু এমন কারো কাছে নিজেকে সমর্পণ করার আগে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে যে, এমন কারো অস্তিত্ব সত্যিই আছে কিনা বা থাকাটা জরুরী কিনা ?



আমরা সৃষ্ট বিভিন্ন জিনিসের দিকে তাকাতে পারি। এখানে আমাদের কিছু মৌলিক প্রশ্ন আছে যেমনঃ এগুলো এখানে ছিল ? নাকি এগুলোকে এখানে আনা হয়েছে ? যে সমস্ত বিষয়ের ক্ষেত্রে আমাদের জ্ঞান আছে, সে সমস্ত বিষয়ের ব্যাপারে আমরা একেবারে দ্বিমত পোষণ করব, যদি বলা হয়- এগুলো এখানে ছিল এবং আছে। বরং আমরা বলব কেউ এগুলোকে এখানে এনেছে। যেমন টেবিলের উপর মোবাইল সেটটি পড়ে থাকতে দেখে আমরা বুঝতে পারি যে, এটা এখানে রাখা হয়েছে। এখানে এটা এমনিতেই ছিলনা বা আসেনি। একই সাথে আমরা এমন একটা কিছুর অস্তিত্ব অনুভব করতে পারি যে, কেউ এই জিনিসটাকে এখানে রেখে গেছে। এভাবে চিন্তা করাটা মানুষের পক্ষে খুবই স্বাভাবিক এবং এটি মৌলিক প্রশ্ন বা চিন্তা।



এই একই জাতীয় প্রশ্ন আমাদের নিজেদের ক্ষেত্রেও আমরা করতে পারি। যেমনঃ আমি এখানে কেন ? কিভাবে আসলাম ? আমার এখানে আসার উদ্দেশ্য কি ? কোথায় যাব বা গন্তব্য কোথায় ? ইত্যাদি। আমরা যদি একটু চিন্তা করি তাহলে বুঝতে পারব যে- যখন বলছি টেবিলের উপর গ্লাসটা,মোবাইলটা,কলমটা কেউ রেখেছে তখন বিজ্ঞান বলছে এটি একটি সাধারণ ব্যপার, এটাতো জিজ্ঞাসা করার মতো বিষয় নয়। আবার যদি বলি টেবিলের উপর গ্লাসটা কেউ আনেনি, এটা এমনিতেই এখানে ছিল এবং সে কারনেই এটা আছে। তখন বিজ্ঞান বলছে, আমার মতো মূর্খ ইহজগতে নেই। কারণ একটা বাচ্চাও এটা বুঝতে পারে যে, এমনিতে এটা এখানে আসতে পারে না।



লক্ষ্য করুন ! আমি এই ছোট বস্তু সম্পর্কে বোকার মতো প্রশ্ন করার পর যখন গোটা মহাবিশ্ব সম্পর্কে প্রশ্ন করি অর্থাৎ গ্রহ, নক্ষ্যত্র, ব্লাকহোল, ছায়াপথ, ইত্যাদি বড় বড় বিষয় নিয়ে অথবা পৃথিবীর অভ্যন্তরের যাবতীয় বড় বড় বিষয় যেমন সাগর, পাহাড়, বাতাস, প্রকৃতি, ইত্যাদি বস্তুগুলো এমনিতেই এসেছে বা এগুলো ছিল, তখন এই একই বিজ্ঞান আমাকে বুদ্ধিমান বলে আখ্যায়িত করে। অন্যভাবে বলি ‘টেবিলের উপরের গ্লাসটা এমনিতেই আসতে পারে না’ এই জ্ঞান থেকে যখন গোটা মহাবিশ্ব সম্পর্কে প্রশ্ন করি যে, এগুলো এমনিতেই ছিল না, এগুলোকে আনা হয়েছে। ‘কেউ’ বা ‘কারা’ এটাকে এনেছে- তখন এই একই বিজ্ঞান যে একটু আগে আমাকে বুদ্ধিমান বলছিল সে’ই আমাকে এই গ্লাসের অস্তিত্বের জ্ঞান থেকে সাধারনীকরণ করার জন্য চরম বোকার ছাড়পত্র দিয়ে দেয় (অথচ ছোট বস্তু এবং বড় বস্তুর মধ্যে উপাদান ও বৈশিষ্টগত পার্থক্য নেই)। প্রশ্ন হচ্ছে কে বোকা ?



(মানুষ সর্বাপেক্ষা বুদ্ধিমান প্রাণী এবং বৈশিষ্ট্যের দিক দিয়ে শ্রেষ্ঠ তারপরও মানুষ স্রষ্টা নয়। মানুষ স্রষ্টা হলে তার মৃত্যু হত না এবং সীমাবদ্ধতা থাকতো না। আমরা যদি আকাশ, পাহাড়, নদী, সাগর, গ্রহ, নক্ষত্র, মহাবিশ্ব ইত্যাদী সকল বড় বড় বিষয়ের দিকে তাকাই, তাহলে দেখতে পাব তাদের আকৃতিগত বিশালতা ছাড়া মানুষের তুলনায় বৈচিত্রময় বৈশিষ্ট্য নেই। তাদের নিজস্ব চিন্তা-চেতনা বা বিবেক-বুদ্ধিও নেই। অর্থাৎ , এদের কেউ স্রষ্টা নয়। তাহলে, যুক্তি অনুসারে তাদের অবশ্যই একটি উৎপত্তিস্থল থাকা উচিত। আর সেই উৎসকে বা উৎপত্তিস্থলকে অবশ্যই সকল সীমাবদ্ধতা থেকে মুক্ত হতে হবে। তাকে অনন্ত, অসীম ও অনাদী হতে হবে। আর তাই, একটা অনন্ত-অসীম স্বত্ত্বার অস্তিত্ব আসলে আমাদের স্বীকার করে নিতেই হচ্ছে, কারণ- তাকে ছাড়া কোনভাবেই আমরা কোনকিছুর সৃষ্টি বা উৎপত্তি কল্পনা করতে পারছি না বা সম্ভব হচ্ছে না। )



কোন সৃষ্টি কি এমনিতেই হতে পারে ? স্রষ্টা ছাড়া কি কোন সৃষ্টির অস্তিত্বে আসা সম্ভব ? যার অস্তিত্বই ছিল না, সে নিজে থেকে কিভাবে অস্তিত্বে আসতে পারে ? যার অস্তিত্বই নেই তার ক্ষেত্রে “নিজে থেকে” কথাটার অর্থ কি ? নিজে নিজে এসেছে এটাতো বস্তু অস্তিত্বে আসার পরের কথা। “নিজে” বা বস্তু বা ব্যক্তি অস্তিত্বে আসার আগে কিভাবে ক্ষমতা অর্জন করলো- নিজেকে সৃষ্টি করার ? তাহলে কি বিষয়টা এই দাড়াচ্ছে না যে, কেউ বা কারা এটাকে সৃষ্টি করেছে বা করছে ? এটাই তো স্বাভাবিক চিন্তা, তাই নয় কি ?



এখন যে কোন ব্যক্তি বা বস্তু থেকে যদি আমরা পেছনের দিকে যাত্রা শুরু করি, যেমন ধরুন ‘আমি’ থেকেই যাত্রা শুরু করলাম। আমি কোথা থেকে আসলাম ? বাবা-মা থেকে। তারা কোথা থেকে ? দাদা-দাদী কিংবা নানা-নানী। তারা কোথা থেকে আসল ? ...। এভাবে আমরা এক সময় থেমে যাব এবং প্রথম পুরুষ ও নারীতে পৌঁছাব। এটাই তো স্বাভাবিক, তাই নয় কি ?









আচ্ছা, এখন যদি প্রশ্ন করি প্রথম নারী-পুরুষ কিভাবে আসলো ? যদি উত্তর আসে বানর, শিম্পাঞ্জী, এপম্যান কিংবা বনমানুষ থেকে। তাহলে আবারও প্রশ্ন করব তারা কোথা থেকে আসলো ? আবারও যেতে যেতে পুরুষ ও নারী শিম্পাঞ্জীতে এসে থেমে যাব বা পুরুষ ও নারী এপম্যানে এসে থেমে যাব। এরপরও যদি অন্য কোন প্রাণীর কথা বলা হয়, তাহলে তারও একই অবস্থা হবে। যদি বলা হয় সকল প্রাণীর অস্তিত্ব এসেছে এককোষী অ্যামিবা কিংবা তারও আগের প্রোটোপ্লাজম থেকে অথবা এমনই আরও কিছু। তবে শিশুর মতোই সরলভাবে বলতে থাকবো, সেটা আবার কোথা থেকে ...। এ পর্যায়ে এসেও কি বলব যে- এটা এমনিতেই এসেছে ! সেটাকে নিয়ে আসা হয়নি !



যদি এগুলো নিজে থেকে না এসে থাকে তবে আমরা দ্বিতীয় পর্বে গিয়ে প্রশ্ন করতে পারি তবে ‘কে’ একে আনলো ? প্রকৃতি ? তবে ‘প্রকৃতি'কে আবার আনলো কে ? এ পর্যায়ে এসে যদি মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলেন বিগব্যাং -এর মহা বিস্ফোরনের ফলে প্রকৃতি বা এই মহাবিশ্বের মহা সিস্টেম তৈরী হয়েছে। এবার এখানে বলব একটা মহা বিস্ফোরনের ফলে কিভাবে এমন নিখুঁত সিস্টেম তৈরী হতে পারে ? একটা বিস্ফোরণ কি একটা সুন্দর সিস্টেমের জন্ম দিতে পারে ? একটি বিস্ফোরণ কি কিছু অবিন্যস্ত ধ্বংসাবশেষ ছাড়া আর কিছুর জন্ম দিতে পারে ? ধরুন কেউ এসে আপনাকে বললো যে, রাস্তায় দু'টো গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষে তৃতীয় একটি গাড়ি তৈরী হয়েছে, তাহলে তা মেনে নেয়া কি আপনার পক্ষে সম্ভব হবে ?



আচ্ছা ঠিক আছে আমি বিগ ব্যাং থিওরী মেনেই নিলাম(যদিও স্টিফেন হকিং নিজেই কিছুটা সন্ধিহান,অন্য বিজ্ঞানীরাতো রীতিমত এটার বিরুদ্ধ মত প্রতিষ্ঠা করে ছেড়েছেন)। তবে, আবার প্রশ্ন করবো মহা-বিস্ফোরণটা আসলো কিভাবে- কিছু পদার্থ ছাড়াই ? অথবা বিস্ফোরণটা ঘটলো কিভাবে ? বিস্ফোরণকে স্বীকার করলে অবশ্যই সেখানে কিছু পদার্থের উপস্থিতি স্বীকার করে নিতে হচ্ছে। এই পদার্থটা আসলো কোথা থেকে বা কিভাবে ? আমরা কিন্তু এই প্রশ্ন করে আবারও সেই প্রথমে ফিরে গেছি। অর্থাৎ সবসময়ই একটা কিছুর অস্তিত্ব থেকে যাচ্ছে যাকে আমরা বিলীন করতে পারছি না। আবার সেই বস্তু নিজেকে নিজে সৃষ্টি করছে এমনটাও ভাবতে পারছি না। কেননা, নিজেকে সৃষ্টি করতে গেলে আগেই নিজের অস্তিত্ব থাকতে হবে। আর যদি নিজের অস্তিত্ব থেকেই থাকে,তাহলে নিজেকে সৃষ্টি করার প্রসঙ্গটাই অবান্তর।



এখন কথা হচ্ছে এই জিনিসটা(সত্ত্বা,ব্যক্তি,বস্তু সবকিছু) যদি নিজেই নিজেকে সৃষ্টি না করে থাকে,তবে অবশ্যই কেউ বা কাহারা বস্তুটাকে এখানে এনেছে বা সৃষ্টি করেছে। প্রশ্ন হচ্ছে আনার কাজটা বা অস্তিত্ব সৃষ্টির কাজটা কারো একার কৃতিত্ত্ব নাকি একাধিকের কৃতিত্ত্ব। যদি একাধিকের কৃতিত্ত্ব হয়, তাহলে গোটা মহাবিশ্ব, প্রকৃতি বা আশপাশের কোন কিছুই দেখা হয়নি আমাদের। কারণ- যদি আমরা প্রকৃতিতে কোন বৈপরিত্য দেখতাম বা গোটা মহাবিশ্বের কোথাও বৈপরিত্য পরিলক্ষিত হত, তাহলে একাধিকের অস্তিত্ব মেনে নেয়ার উপায় ছিল। কিন্তু মানব সভ্যতার ইতিহাসে এ জাতীয় বৈপরিত্যের কোন লক্ষণ দেখা যায়নি বা যাচ্ছে না। বরং সবকিছুই একটা সুনির্দিষ্ট নিয়ম-পদ্ধতি অনুসরণ করে চলছে। এ থেকে বলা যায় যে, কোন কিছুরই অস্তিত্ব ছিল না এবং এই সবকিছুরই অস্তিত্ব আনয়ন করা হয়েছে। যখন কোনকিছুরই অস্তিত্ব ছিল না, তখন একক কোন শক্তির অস্তিত্ব থাকতেই হচ্ছে যা থেকে এই সবকিছু এসেছে। আর সেই একক শক্তি বা সত্ত্বার এক ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্য থাকতেই হবে যা তাকে সৃষ্টির সীমাবদ্ধতা থেকে পৃথক করেছে। সেই সত্ত্বাকে ‘অসীম’ তথা ‘অনাদী’ ও ‘অনন্ত’ হতে হবে।



এখন এই অসীম সত্ত্বা, হয় কারো দ্বারা সৃষ্ট অর্থাৎ কিনা একে কেউ সৃষ্টি করেছে, নয়তো এই সত্ত্বা নিজেই নিজেকে সৃষ্টি করেছে নতুবা এই সত্ত্বা পরিপূর্ণ ও স্বয়ংসম্পূর্ণ। এবার বিষয়টা পর্যালোচনা করে দেখি আসলে কোনটি সঠিক।



** প্রথম চিন্তাটা একেবারেই ভিত্তিহীন যে, ‘অন্য কেউ এই সত্ত্বাকে সৃষ্টি করেছে’। কেননা, যদি তাই হয়ে থাকে তবে এই সত্ত্বাও আর দশটা সৃষ্ট প্রাণী, বস্তুর মতোই সীমাবদ্ধ। যুক্তিযুক্তভাবেই এ ধরনের কোন সত্ত্বাকে আর যাই হোক স্রষ্টার আসনে বসানো যায় না। (এ বক্তব্যটাই চরম ভুল, কারণ বলা হচ্ছে অন্য কেউ এই সত্ত্বাকে সৃষ্টি করেছে। তাই যদি হয় তাহলে, এই সত্ত্বা স্রষ্টা নয় বরং তাকে যিনি সৃষ্টি করেছেন তিনিই স্রষ্টা।)



** অপরদিকে, যদি বলি সেই ‘সত্ত্বা নিজেই নিজেকে সৃষ্টি করেছে’ তবে প্রশ্ন থেকে যায় যে, এটা কিভাবে সম্ভবপর যে, সেই সত্ত্বা আগে থেকেই ছিল (নিজেকে বানানোর জন্য!) আবার নির্মিতও হচ্ছিল ? কেউ এই চিন্তা করলে তার মস্তিস্কের ভারসাম্যটাই বরং প্রশ্নের সম্মুখীন হবে।



আর তাই, আমাদেরকে শেষোক্ত পথেই যেতে হচ্ছে। অর্থাৎ এই সত্ত্বা এমন, ‘যাকে কেউ সৃষ্টি করেনি বরং তা স্বয়ংসম্পূর্ণরূপে অনন্ত কাল থেকে ছিলো, আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে’ ।



আসলে, চারপাশে আমরা যা কিছু দেখি, শুনি বা অনুভব করি তার সবই সীমাবদ্ধ ক্ষমতার অধিকারী। এমনকি, যে মহাবিশ্ব আমাদের সাপেক্ষে বিশাল তাও অনেকগুলো সীমাবদ্ধ বস্তুর সমষ্টি। একাধিক সীমাবদ্ধ বস্তুর সমষ্টিও স্বভাবতই সীমাবদ্ধ। এইসব বস্তুগুলো সীমাবদ্ধ হওয়াতে আমরা সহজেই বুঝতে পারি যে, কেউ একে অস্তিত্বে এনেছে। আর, এগুলো দেখেই আমরা এভাবে ভাবতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি যে, সকল বস্তুই সৃষ্ট। তাই, স্রষ্টার প্রসঙ্গতেও আমরা বোকার মতো জিজ্ঞাসা করি যে, ‘তাকে কে সৃষ্টি করলো ?’ অথচ, এখানটাতেই সৃষ্ট বস্তু থেকে তার মূল পার্থক্য, আর তা হলো স্রষ্টা অসীম কিন্তু সৃষ্ট প্রাণী বা বস্তুগুলো সীমাবদ্ধ। স্রষ্টাকে যদি কেউ সৃষ্টি করত তাহলে আমরা বুঝতে পারতাম যে, ‘তিনি আসলে স্রষ্টা নন বরং তাকে যিনি সৃষ্টি করেছেন তিনিই হলেন প্রকৃত স্রষ্টা’ আর যৌক্তিকভাবে এর(স্রষ্টার) পেছনে অগ্রসর হওয়া অসম্ভব হয়ে দাড়াচ্ছে (অর্থাৎ স্রষ্টাকে কে সৃষ্টি করল, স্রষ্টার স্রষ্টাকে কে সৃষ্টি করল, তাকেও আবার কে সৃষ্টি করল।



এভাবে যত পেছনেই যাই না কেন এমন এক স্রষ্টার অস্তিত্ব থাকতে হচ্ছে বা সবসময় থেকেই যাচ্ছে যার থেকে সকল কিছুর সৃষ্টি বা সকল কিছুর শুরু)। অতএব স্রষ্টা হলেন তিনি , যিনি কারো দ্বারা সৃষ্ট হননি বরং যিনি সবকিছুকে সৃষ্টি করেছেন এবং এমন স্রষ্টার অস্তিত্ব সবকিছুরই(প্রাণী,বস্তু) পেছনে থেকে যাচ্ছে,যাকে যুক্তি দিয়ে সরানো যাচ্ছে না ।







এখন প্রশ্ন হচ্ছে- যাকে সর্বশক্তিমান স্রষ্টা হিসেবে বুঝতে পারছি তার পরিচয় কি ? তিনি কি চান ? এটা খুবই স্বাভাবিক যে মানুষ তার সীমাবদ্ধতার কারনে তার সাথে যোগাযোগ করতে সক্ষম নয়। বরং মানুষ বড়জোর সৃষ্ট বস্তুগুলোকে বিশ্লেষণ করে এর পেছনে কোন পরিকল্পনাকারীর অস্তিত্ব খুঁজে পেতে পারে। সে এটা করতে পারে কেননা সৃষ্ট বস্তু এবং এবিষয়ে গবেষণা তার আয়ত্বাধীন। এই অবস্থায় স্রষ্টাকেই তার সৃষ্টির সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতে হবে এবং এটাই স্বাভাবিক। আর, স্রষ্টা তার সৃষ্টির সাথে কিভাবে যোগাযোগ রক্ষা করবে এটা তার একান্ত নিজস্ব ব্যাপার। আমরা আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে জানি যে, মানুষ সৃষ্টিজগতের মধ্যে সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণী। মানুষ সকল প্রাণীর মধ্যে স্বতন্ত্র বৈশিষ্টের অধিকারী হওয়ায় স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে যে, একে নিয়ে স্রষ্টার কোন বিশেষ পরিকল্পনা আছে কিনা ?





আচ্ছা, আমাদের পেছনের ইতিহাসে কি এমন কোন নিদর্শন আমরা দেখতে পাই, যা থেকে বুঝব যে, স্রষ্টা আমাদের সাথে যোগাযোগের কোন চেষ্টা করেছেন কি না ? আমরা সর্বশক্তিমান, অনাদী, অনন্ত, একক স্রষ্টার অস্তিত্ব এবং তার সৃষ্টির উদ্দেশ্য সম্পর্কে একটিই কিতাব পাব যা শুরু থেকে এখন পর্যন্ত অবিকৃত রয়েছে। এটি হল-আল-কুরআন। অবতীর্ণ হওয়ার পর আল-কুরআনের সংকলিত কপি (যা মিউজিয়ামে রক্ষিত) ও এখনকার কপি হুবহু এক। সৌভগ্যক্রমে এই একটি কিতাবই আমরা পাই যা সংকলিত হওয়ার পর অতি সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। আর এটা সম্ভব হয়েছিল- ব্যপকভাবে কাগজের প্রচলন হওয়ার কারনে। অন্য কোন কিতাবের ক্ষেত্রে আমরা এভাবে যাচাই করার সুযোগ পাই না। কেননা সেগুলোর প্রত্যেকটিই বহুকাল আগেই পৃথিবীতে এসেছে এবং বিকৃত হয়েছে। এছাড়া অন্য কোন আসমানী কিতাবের হাফিজ নেই। অথচ এই মুহুর্তে সারা বিশ্বে ৫ কোটির উর্ধ্বে আল কুরআনের হাফিজ রয়েছেন এবং তাদের স্মৃতিতে সংরক্ষিত আল কুরআনের মধ্যে কোন তারতম্য দেখা যায় না। এই কিতাবের প্রথম আয়াতেই দেখা যায় ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ অর্থাৎ ‘পরম করুনাময় অসিম স্রষ্টা আল্লাহর নামে শুরু’।



এতক্ষনে আমরা একটি নাম পেলাম যেখানে স্রষ্টাকে ‘আল্লাহ’ নামে অভিহিত করা হয়েছে। এবার এই আল্লাহ নামক সত্ত্বা আল-কুরআন নামক কিতাবে নিজের সম্বন্ধে কি বলছেন তা দেখা যাক-



“তুমি বলো- তিনি আল্লাহ্, একক- অদ্বিতীয়;

আল্লাহ কারো মুখাপেক্ষী নন,

তাঁর থেকে কেউ জন্ম নেয়নি, তিঁনি কারো থেকে জন্মগ্রহণ করেন নি।

আর তাঁর সমতুল্যও দ্বিতীয় কেউ নেই।” (সূরা ইখলাস)





“আল্লাহ যা ইচ্ছা তাই করেন”(আল-কুরআন,৮৭ঃ১৬) “তিনি যখন কোন কিছু করতে ইচ্ছা করেন, তখন কেবল এটুকু বলেন, ‘হও’ অতঃপর তা সঙ্গে সঙ্গে তৈরী হয়ে যায়।”(আল-কুরআন, ৩৬ঃ৮২)



...আমি(আল্লাহ) এই সমস্ত দৃষ্টান্ত এ কারণে বর্ণনা করি যাতে মানুষ এ ব্যাপারে চিন্তা করে। তিনিই আল্লাহ যিনি ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই, তিনি অদৃশ্য ও দৃশ্যের পরিজ্ঞাতা, তিনি দয়াময়, পরম দয়ালু। তিনিই আল্লাহ, যিনি ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই। তিনিই অধিপতি, তিনিই পবিত্র, তিনিই শান্তি, তিনিই নিরাপত্তা বিধায়ক, তিনিই রক্ষক, তিনিই পরাক্রমশালী, তিনিই প্রবল, তিনিই অতি মহিমান্বিত। মানুষ যাকে শরীক স্থির করে আল্লাহ তাঁর থেকে পবিত্র, মহান। তিনিই আল্লাহ, সৃষ্টিকর্তা, উদ্ভাবনকর্তা, রূপদাতা, তাঁর জন্যই সকল (গুণবাচক) উত্তম নাম। আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে, তাঁর সব কিছুই আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে। আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। (আল-কুরআনঃ সূরা নং-৫৯, আয়াত নং ২১-২৪)



উপরোক্ত বৈশিষ্ট্যগুলো যার মধ্যে আছে, তিনিই স্রষ্টা এবং এই স্রষ্টাই হলেন অল্লাহ।







চলবে.....(আগামী পর্বটি অবশ্যই পড়বেন,অনুরোধ রইল)

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১:৫৩

পরাজিত মধ্যবিত্তের একজন বলেছেন: প্রতিষ্ঠিত ধর্মগুলোতে সৃষ্টিকর্তার যে ব্যক্তিত্ব তথা মানবিক অনুভূতি তুলে ধরা হয়ে সেটা নিয়ে আমার কিছু প্রশ্ন রয়েছে। পড়ার পর মন্তব্য দেওয়ার আহবান জানাই

Click This Link

২| ১১ ই জুলাই, ২০১৩ দুপুর ২:২২

প্রতিবাদীকন্ঠ০০৭ বলেছেন: আপনার চিন্তাধারা অনেক মৌলিক, অনেক চিন্তাপ্রসূত বলে আমার কাছে মনে হয়। আপনার মত আমি ও অনেক প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুঁজতে একসময় আমাদের সীমাবদ্ধতার কাছে আমরা হেরে যাই।

মনে হয়, পিঁপড়ার কি কোন দিন পাখির অস্তিত্বে বিশ্বাস করবে ? বা একটা পিঁপড়ার কি মানুষের আকৃতি বুঝার সামর্থ্য আছে ? উত্তর হল নাই।

একিভাবে আমরা সৃষ্টির শেষ্ঠ জীব। কিন্তু আমাদের সীমাবদ্ধতা এত বেশি যে আমরা একক ভাবে সৃষ্টি র বিশালতার রহস্য কিছুই উদ্ধার করতে পারব না।

মাঝে মাঝে মনে হয় কি জানেন, আমরা সবাই মিলে একটা সত্ত্বা। জিনিস টা ঠিক বুঝাতে পারব না। মানে মৃত্যুর পর শারীরিক সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে আমরা সেই সত্ত্বার সাথে মিলিত হব। তখন আমাদের কাছে সব পরিষ্কার হয়ে যাবে। যদিও অনেক প্রশ্ন থেকে যায়।

১১ ই জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৩:৫৪

দ্য েস্লভ বলেছেন: জাজাকাল্লাহ খায়রান,ভাই । আখিরাতে সবই পরিষ্কার হয়ে যাবে। সকলে বুঝতে পারবে কোনটা সত্য

৩| ১১ ই জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৩:১৪

পরাজিত মধ্যবিত্তের একজন বলেছেন: প্রতিবাদী কণ্ঠ , ভালো বলেছেন। এ কারনেই সৃষ্টিকর্তার ওপর আরোপ করা মানবিক অনুভূতি আর মানবিক সত্ত্ব নিয়ে প্রশ্ন ওঠা খুবই স্বাভাবিক।

৪| ১১ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ১১:২১

প্রতিবাদীকন্ঠ০০৭ বলেছেন: ধন্যবাদ ব্লগার পরাজিত মধ্যবিত্তের একজন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.