নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দ্য েস্লভ

দ্য েস্লভ › বিস্তারিত পোস্টঃ

হোসেন এখন ভাল আছে !!

১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১০:১৯






দিনগুলো হেসে খেলেই পার হয়ে যাচ্ছিল নাফিসের। ক্লাশ না থাকলে সকাল ১২টায় ঘুম থেকে ওঠা ,বেডে আধশোয়া হয়ে নাস্তা করে ফেসবুকে ঢোকা। বন্ধুদের সাথে একটু আধটু আড্ডা জমিয়ে দু এক পিছ গার্ল ফ্রেন্ডকে ফোন করা। এভাবেই বিকেল। এক কাপ কফি খেয়েই গাড়িটা নিয়ে শহরটা চষে বেড়ানো কিছু বন্ধুর সাথে। সন্ধ্যায় নামী কোনো ফাস্টফুডের দোকানে এটা সেটা খেয়ে স্টুডিওতে জ্যামিং অথবা কোনো বন্ধুর ফাকা বাড়িতে গিটার প্রাকটিস। উচ্চস্বরে হাসি,ঠাট্টা,মুভি,নারীদেহ,নারীমন,চরিত্র,সমাজ সকল বিষয় নিয়ে সমালোচনা,গালাগালি,মারামারি,কোলাকুলি করে রাত ১২টায় বাসায় ফেরা। বেশীরভাগ দিনই কিছু না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়া ,অথবা মায়ের অনুরোধে কিছু গলদ্ধকরণ। রাতে কখনও কখনও দীর্ঘ সময় টেলিফোনে কাটানো,অতঃপর ঘুমের ঘোরে টলে পড়া।

ইউনিভার্সিটির নার্গিছ নামক মেয়েটা চরম ! পা থেকে মাথা পর্যন্ত পছন্দ। অপূর্ব সুন্দর তার চেহারা,সুনিপুঁন তার দেহখান। নাফিস তাকিয়ে থাকে্ । মনে মনে প্রেমে পড়ে যায় কিন্তু কথা হয়নি।

একদিন এক বন্ধুকে মেয়েটির সাথে দেখে তার ক্রোধ জাগ্রত হয়। মনে হতে থাকে তার শিকারে হামলা হয়েছে। একইসাথে অনুধাবন করে এখনই সময় নিজেকে তুলে ধরার,নইলে পস্তাতে হবে্ । সেই আসরেই বন্ধুর সামনে সাহসী আচরণ করে সে। কৌশলে নিজের সামাজিক অবস্থান প্রচার করে নাফিস। মেয়েটিও বেশ গলে পড়ে। শুরু হয় নতুন বন্ধুত্ব।


মেয়েটিকে নাফিসের অসম্ভব ভাল লাগে। সে যেমনটি আশা করে এ যেন তেমনটিই। নার্গিসের সাথে সুসম্পর্ক থাকায় গার্লফ্রেন্ডরা অসন্তুষ্ট হয়। কিন্তু এর প্রতি অতি আবেগ থাকার কারনে সে পাত্তা দেয়না। রাতের পর রাত টেলিফোন চলতে থাকে। ফেসবুকের ফ্রেন্ডরাও তাকে তেমন পায়না। উভয়ে উভয়কে চরম ভালবেসে ফেলল।


একদিন নাফিস একটি দামী রেস্টুরেন্টে তার পরিবারের সাথে ডিনারে গিয়ে দেখল কোনার একটি চেয়ারে নার্গিস এক অপরিচিত ছেলের সাথে বসে গল্প করছে। হঠাৎ নাফিসের কলিজার মধ্যে ছ্যাৎ করে উঠল। তার পিতা কিছু বলতে চাইলে সে বলল,একটু আসছি...এক মিনিট প্লিজ।

রেস্টুরেন্টের বাইরে থেকে সে নার্গিসকে ফোন করল কিন্তু নার্গিস না রিসিভ করল না। এসএমস করল। এরপর নার্গিস উত্তর দিল-বাসায় নতুন মেহমান এসেছে একটু ব্যস্ত। ঘন্টা দুয়েক পর কল ব্যাক করছি....।


নাফিস কিছুই বলল না,পরিবারের সাথে বসে খেতে লাগল। কিন্তু মন তার ভারাক্রান্ত বিষন্ন। পিতা-মাতার প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গেল সে,যদিও তারা আন্দাজ করেছে -কিছু একটা হয়েছে। তেমন কিছুই খেতে পারল না সে। ওদিকে নার্গিস গল্প শেষ করে উঠে দাড়ানোর সময় দূরের টেবিলে খাওয়ারত নাফিস ও তার পরিবারকে দেখতে পেল। বেশ তাড়াহুড়া করে সে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে পড়ল। বারবার ভাবতে থাকল-সে কি আমাকে দেখেই তবে ফোন ও এসএমএস করেছে ? নাকি না জেনে ? নার্গিসের মাথা ঘুরতে লাগল। বিষয়টা এমন যে তা জিজ্ঞেস করা অসম্ভব।


২/৩ ঘন্টার মধ্যে নার্গিস কল ব্যাক না করাতে নাফিস ফোন করল। কি ব্যাপার, ব্যস্ত ? আত্মীয়রা এখনও আছে নাকি ?
: না , আসলে ঠিক আছে..কি বলবে বল।

: লোকটা কে ? নতুন পাখি নাকি ?
: আরে কি যে বল, উনি আমার দুলাভাই !

: আচ্ছা, ঠিক আছে দুলাভাই নিয়েই থাকো।
: মাইন্ড করোনা জান। বিশ্বাস করো, দুলাভাই এমন করে বলল যে না করতে পারলাম না। আর তুমি মাইন্ড করবে বলে তোমাকে সত্য বলিনি।


নাফিস মোটেও বিশ্বাস করল না। তবে সম্পর্ক আগের মতও বহাল থাকল না। অবেগ বেশ কমেছে,ক্রোধ বেড়েছে। এরপর আরও একদিন উক্ত দুলাভাইএর সাথে তাকে দেখে বুঝল ঘটনা অনেকদূর গড়িয়েছে। উক্ত দুলাভাইকে ধোলাই দিতে চেয়েও এক বন্ধুর পরামর্শে তা আর হলোনা। বরং তার আরেকটি পরামর্শ পছন্দ হল। সেটা হল-বিশ্ব প্রেমিক হও। আজ এর সাথে তো কাল ওর সাথে।


নাফিস ধাক্কা পুরো কাটিয়ে না উঠলেও সেটাকে হালকা করার জন্যে অন্য মেয়েদের সাথে মেশা শুরু করল। ওদিকে উক্ত দুলাভাইরূপী লোকটি কিছুদিন পর অন্য মেয়েকে বিয়ে করাতে নার্গিসের মানুষিক অশান্তি চরমে পৌছলো। কিন্তু সে নাফিসের কাছে এ ঘটনা প্রকাশ করল না,এমনকি অন্য বন্ধুদের সাথেও না। এভাবেই চলছিল।


নিজের কৃত কর্মের কথা চিন্তা করে নার্গিস অনেকটা লজ্জিত হল। তার বিশ্বস্ত হওয়া উচিৎ ছিল বলে মনে করল। এসময় পড়াশুনা সংক্রান্ত বিষয়ে সাহায্য নেওয়ার প্রয়োজনে অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র হোসেনের সাথে তার সখ্যতা হল।

হোসেন গ্রামের ছেলে। ঢাকাতে আত্মীয়ের বাসায় থাকে। মেধার জোরে বুয়েটে। ছেলেটা বেশ সহজ সরল এবং ধার্মিক। কারো সাথে তেমন একটা মেশেনা কিন্তু নির্ভেজাল মানুষ বেশ উপকারী হিসেবে সুনাম আছে। গরিব মানুষের জন্যে মাঝে মাঝে নিজের রক্ত দিতে যায়। হাসপাতালে পরিচিত কারো রক্ত প্রয়োজন হলে সে ব্যপক পরিশ্রম করে ম্যানেজ করে ফেলে। নার্গিস এই ছেলেকে পছন্দ করে বসে। সুন্দর,সহজ সরল জীবন তার মানুষিক শান্তির কারন হতে পারে এমনটাই ভাবে। হোসেন ধার্মিক হওয়ার কারনে নার্গিসের কাছাকাছি আসতে চায়না। দূর থেকে প্রয়োজনীয় কথা সারতে পছন্দ করে। কিন্তু সে দিন দিন লক্ষ্য করে এই প্রয়োজনীয় কথাটা আরও দীর্ঘায়িত হলেই যেন তার ভাল লাগে। কিছুদিন পর তার মনে হতে থাকে নার্গিস যদি আরও কিছু প্রয়োজনে যোগাযোগ করত তবে ভাল হত। শেষে নিজ থেকে উদ্যোগী হয়ে সে নার্গিসকে বিভিন্ন উছিলায় ফোন করতে থাকে।

নার্গিস হোসেনের আবেগ বুঝতে পারে এবং সেও মানুষিকভাবে কাছাকাছি আসতে চায়। অল্প স্বল্প গল্প থেকে তারা আরও গভীরে প্রবেশ করে। হোসেন টিউশনি থেকে যা পায় তাতে তার চলে যায়। তার পিতা ধনী না হলেও মোটামুটি স্বচ্ছল।গ্রামে জমিজমা আছে,পিতা স্থানীয় বাজারে আড়ৎদারী করে। নার্গিসের পরিবারও মধ্যবিত্ত।


হোসেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চতর শিক্ষার জন্যে স্কলারশিপ পেল। সে যাবার আগে নার্গিসকে বিয়ে করতে চাইলো। নার্গিসের পরিবার রাজি হল। বিয়ে হল। এর কিছুদিন পর হোসেন আমেরিকা পাড়ি দিল।


এদিকে ঘটল আরেক ঘটনা। বেশ কয়েক বছর পূর্বে নার্গিসের সাথে ঢাকার রাসেল নামক এক ধনীর ছেলের দহরম মহরম সম্পর্ক ছিল। কিন্তু সে তখন পড়াশুনার জন্যে আমেরিকা গমন করে এবং ছেলেটি পরে আর তেমন যোগাযোগ করেনি। প্রথম দিকে কথা ছিল সে বিয়ে করে তাকে আমেরিকা নিয়ে আসবে। এবং এখানে পড়াশুনা করে ভাল চাকুরী করবে।


হোসেনের চলে যাওয়ার পর উক্ত ছেলেটি যার নাম রাসেল,সে যোগাযোগ করে। রাসেল তার কৃত কর্মের জন্যে ক্ষমা চায় এবং বলে আমি জানি তোমার বিয়ে হয়েছে কিন্তু এখনও আমি তোমাকে ভালবাসি। সে কেন এতদিন যোগাযোগ করতে পারেনি তাও ব্যাখ্যা করে।

হোসেনের চলে যাওয়ার পর নার্গিস একাকিত্ব অনুভব করে,আর সে সময়ে রাসেল তার সাথে যোগাযোগ শুরু করে। হোসেনও যথেষ্ট যোগাযোগ করে কিন্তু সে পড়াশুনা,গবেষণা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় তেমন সময় দিতে পারেনা। ওদিকে নার্গিসকে আনার জন্যে হোসেন কাগজপত্র প্রসেস শুরু করেছে। কয়েক মাসের মধ্যে নার্গিস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গমন করবে।


দিনে দিনে রাসেলের সাথে নার্গিসের সখ্যতা বেড়ে যায়। নানান রকম মজায় তারা সময় পার করতে থাকে। স্কাইপীর মাধ্যমে তারা আনন্দময় সময় পার করে্ ।


এরপর নার্গিস আমেরিকা চলে যায় তার স্বামীর কাছে। ভালই চলছিল। হোসেন পরহেজগার মানুষ। নার্গিসকে নিয়ে সে জামাতে নামাজ আদায় করে। হোসেনের জীবন শৃঙ্খলিত এবং সুনিয়ন্ত্রিত। সে নার্গিসকেও তার মত করে পেতে চায়। তাকে ইসলাম শিক্ষা দেয়। কখনও কখনও তারা উভয়ে মসজিদে জামাতে জুম্মার নামাজ আদায় করে। এরপর কোথাও ঘুরতে যায়,কোনো রেস্টুরেন্টে খায়। হোসেনের সকল বিষয়ই পবিত্রতায় পরিপূর্ণ। কথা কাজে তার মিথ্যার মিশ্রন নেই। ওয়াদা করলে তা পালন করে। কারো গীবত করেনা এবং গীবত শ্রবনও করেনা। নার্গিস অনেক সময় কারো কারো সত্য বিষয়ে তাকে বললে-সে বলে, এটা গীবত হয়ে যাচ্ছে। উক্ত লোকটি তোমার এই কথাটি হয়ত পছন্দ করবে না। তার চাইতে আমরা অন্য বিষয়ে কথা বলি। এগুলো এড়িয়ে চলি।


নার্গিস আমেরিকা আসার কয়েক সপ্তাহ পর রাসেলের সাথে তার যোগাযোগ হয়। স্বামী কেমন তা জানতে চাইলে সে জানায়- লোকটা ভাল কিন্তু বেশী সৎ। তাকে রোবটিক লাগে। রোমান্টিক,তবে অতি নিয়ন্ত্রিত হওয়া ভাল লাগেনা। নিজেকে অনেকটা পরাধীন মনে হয়। আমি চাই কখনও বিহঙ্গ হতে। এত সৎলোকের সাথে আসলে জমেনা। রাসেল তার নতুন কেনা দামী গাড়ির ব্যাপারে বলে,কোথায় কোথায় ঘুরল,কোন কোন দামী লোকের সাথে ডিনার করল,তার বাড়ির ডিজাইন কেমন,কতটা বিশাল,গড়পরতা আমেরিকানদের চাইতে সে যে অনেক উচুতে থাকে তা বিভিন্নভাবে বয়ান করতে থাকে।



এক রাতে ফজরের নামাজের সময় হলে হোসেন নার্গিসকে বার কয়েক ডাকে কিন্তু নার্গিস বেঘোরে ঘুমাচ্ছে দেখে সে মজা করে ওজুর পানি তার চোখে মুখে ছিটিয়ে দেয়। নার্গিস ব্যপক ক্রোধান্বিত হয় তার এই আচরনে। উচ্চবাচ্চ করতে থাকে। হোসেন মাফ চায় কিন্তু কোনো লাভ হয়না। কাজটা হোসেন সুন্নাহ অনুযায়ী করেছে শুনে নার্গিস ক্রোধান্বিত হয়ে বলে-তুমি শুধুমাত্র একজন ধার্মিক,আর কিছু নও। সেদিন নার্গিস ফজর পড়ল না।

হোসেন নিজেকে অপরাধী বলে মাফ চাইল কিন্তু নার্গিস কথা বলা বন্ধ করল। সেদিনই নার্গিস রাসেলের সাথে দীঘক্ষণ ধরে মনের কথা শেয়ার করল। তার এই জীবন বন্দী খাচা মনে হচ্ছে জানালো। এত নিয়ম কানুনের মধ্যে তার আর ভাল লাগেনা। রাসেল তাকে স্বপ্ন দেখালো গবীরভাবে ভালবাসার।তারা আরও গবীরে প্রবেশ করল।প্রত্যেকদিনের কার্যাবলী সে রং চড়িয়ে রাসেলের কাছে প্রকাশ করতে লাগল। রাসেল তাকে বলল-তুমি যদি কখনও একা হও,তবে আমি তোমাকে বিয়ে করব। কারন অনেক পূর্ব থেকেই আমি তোমাকে ভালবাসি।তুমি সতিই সুখে থাকবে।


এক ছুটিতে হোসেন নার্গিসকে নিয়ে কলোরাডো নদী ,গ্রান্ড ক্যানিয়ন দেখতে যাওয়া মনস্ত করল কিন্তু শরীর খারাপ বলে নার্গিস রাজি হলনা। হোসেন ভাবতে থাকে নার্গিসকে কিভাবে খুশী করা যায়। নার্গিসের মন মানুষিকতা দিনকে দিন খারাপ হচ্ছে। ভাল করে কথা বলেনা। এসব নিয়ে হোসেনেরও মন ভাল নেই্ ।


এসব নিয়ে কথা বলতে বলতে একদিন কথা কাটাকাটি শুরু হল এবং তারপর তুমুল ঝগড়া। হোসেন তার কর্মক্ষেত্রে চলে গেল।

নার্গিস রাসেলকে ফোন করে বলল,তুমি আমাকে বিয়ে করবে ? রাসেল বলল-হ্যা, আমার দরজা তো তোমার জন্যে ওপেন।

নার্গিস বলল-এক্ষুনি আমি আসছি। রাসেল কিছুটা ইতস্তত করে বলল-ঠিক আছে,এসো...আহ তোমাকে কাছে পাব,,ভাবতেই কেমন জানি শিহরণ জাগছে।


===========================

হোসেন ফিরে এসে দেখল একটি চিঠি ,তাতে লেখা-আমি চলে গেলাম। তুমি তোমার মত কাওকে খুজে নিও।


হোসেন চোখের পানিতে বুক ভাসালো। তার সকল বিশ্বাস,ভালবাসা তছতছ হয়ে গেল। কর্মক্ষেত্র থেকে ছুটি নিয়ে ঘরে বসে থাকল। কোনো কিছুতেই তার মন বসল না। এ বিষয়টি পুলিশকেও সে জানালো না। একসময় চিন্তা করল-নার্গিস যদি তার মত করে ভাল তাকতে চায়,তবে ভাল থাকুক।



========================


নার্গিস হোসেনের বাসা থেকে বের হয়ে নিজেকে এক মুক্ত বিহঙ্গ ভাবল। বুক ভরে নিঃশ্বাস নিল সে। রাসেলের কাছে গিয়ে ভাবল যেন হারানো ভালবাসা ফিরে পেয়েছে।

রাসেলের বাসাটি বেশ বড়সড় এবং সে অনেক দামী গাড়িতে চলাফেরা করে। প্রথমদিনই তারা একটি দামী রেস্টুরেন্টে লাঞ্চ করল। নার্গিসকে হোসেন এমন দামী রেস্টুরেন্টে কখনও আনেনি। হোসেনের প্রতি তার ক্ষোভ বেড়ে গেল। লাঞ্চের পর তারা হাত ধরাধরি করে এক পার্কে অনেকক্ষন ঘুরল। দুহাত উপরে তুলে নার্গিস একটি দীর্ঘশ্বাস নিল,আর তাতে মনে হল জীবনের সকল জ্বরা,ক্ষরা যেন দূরীভূত হয়ে অনাবিল আনন্দ ছড়িয়ে পড়ল সমস্ত দেহ মনে।


রাতে নার্গিসের খানিক আপত্তি থাকার পরও তারা একসাথে ঘুমালো। রসেল বলল-আইনীভাবে তোমার ডিভোর্স হলেই আমরা বিয়ে করে ফেলব। সমস্যা নেই, বিষয়টা এখানে খুবই সাধারণ। কিন্তু উকিলের সাথে কথা বলে মনে হল বিষয়টা জটিলও বটে। তাছাড়া অনেক পয়সা খরচের ব্যাপার রয়েছে।একসময় নার্গিসের ডিভোর্স এর বিষয়টা বিলম্ব হতে লাগল। কিন্তু রাসেল খুব ব্যস্ত। ইতিমধ্যে রাসেলের সাথে নার্গিসের ৩টি মাস অতিবাহিত হয়েছে,এক বিছানায়। বিয়ের ব্যাপারে তার দ্বীমত নেই কিন্তু একটি শুভ ক্ষন তার চাই,যখন সে বিয়ে সম্পাদন করতে পারে,আর আইনী ঝামেলা থেকেও মুক্ত হওয়া দরকার। রাসেল খুব রোমান্টিক,বেশ আমোদ ফুর্তি করে সে। কখনও কখনও মাতাল হয়ে এটা সেটা ভাঙচুর করলেও গালি দেয়না বা নার্গিসকে অসম্মান করেনা।


দিনের পর দিন চলতে থাকল কিন্তু রাসেলের ব্যস্ততা,নানামুখী সমস্যা শেষ হয়না। এক সময় নার্গিস আবিষ্কার করল সে শুধু শস্যাসঙ্গী হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এক রাতে রাসেল মাতাল হয়ে ফিরলো এবং এক সাদা চামড়ার মেয়ের সাথে কিভাবে সুন্দর সময় পার করেছে সেটা দারুনভাবে বর্ণনা করতে লাগল। নার্গিস সাজলেও তাকে উক্ত সুন্দরিটির মত লাগবে বলে মন্তব্য করল। রাসেল সোফায় ঘুমিয়ে রাত পার করল।

সমালে নার্গিস তাকে বিয়ের ব্যাপারে চাপ দিতে থাকল। কিন্তু রাসেল বলল-দ্যাখো,এটা আমেরিকা। এখানে সোজা আঙলে ঘি উঠলে ভাল,নইলে আঙ্গুল বাাঁকা করে বিপদে পড়তে হয়। আমি তোমাকে কথা দিয়েছিলাম বিয়ে করব,কিন্তু আমার সময় দরকার। তুমি বেশী পিড়াপিড়ি না করে চুপ থাকো সেটাই উত্তম। তোমার ভবিষ্যত এখন আমার কাছে। তুমি শিক্ষা সম্পন্ন করোনি,ভাল ইউনিভার্সিটিতে পড়তে তোমার অনেক টাকা দরকার। তুমি শিক্ষা শেষ করলে ভাল বেতনে চাকুরী করতে পারবে কিন্তু এত তাড়াহুড়া করোনা। তাহলে তোমাকে পস্তাতে হবে। এদেশে ডমেস্টিক পার্টনারদেরকেও ভাল চোখে দেখা হয়। তাদের আইনী বৈধতা আছে। তুমি এভাবেই বৈধতা পেতে পার। তবে আমি বিয়ে করব,ওভাবেই তুমি এখানে থাকতে পারবে তোমার পূর্ণ স্বাধীনতা নিয়ে।

নার্গিস বলল কিন্তু সেটা কবে ? উত্তরে শুধু হবে হবে, শিঘ্রই,অপেক্ষা কর ইত্যাদী বাক্যই চলতে থাকল।

দিন দিন রাসেল উশৃঙ্খল হয়ে উঠল। নার্গিসের কোনো বিষয় পাত্তাই দিতে চাইল না। নার্গিসের কোনো ইনকাম নেই,আমেরিকাতে যাওয়ার কোনো স্থান নেই,যে ঘটনা ঘটিয়েছে তাতে দেশে সম্মান নিয়ে ফেরা সম্ভব নয়। আবার ফিরেও কি করবে সেটাও আরেক চিন্তা। নার্গিস আমেরিকাতেই থাকা মনস্থির করল কিন্তু আমেরিকান সাষ্কৃতি সে ধারন করতে সক্ষম হলনা। রাসেলের সাথে তার মানুষিক দূরত্ব তৈরী হল। অবস্থা এমন আকার ধারন করল যে-শুধুমাত্র খেয়ে পরে বেচে থাকার জন্যে রাসেলের সয্যাসঙ্গী হতে হল। তার চোখের সামনেই রাসেল অন্য মেয়ের সাথে মিশে এবং তার গল্পও দারুনভাবে নার্গিসের সামনে পকাশ করে।নার্গিস যেন একটি বোঝা, বা ব্যবহৃত শেভিং রেজর,যা ফেলে দেওয়াই উত্তম ! এতে নার্গিস ভেতরে ভেতরে জ্বললেও তা হিংস্রভাবে প্রকাশ করতে পারে না। সে তার সকল অধিকার হারিয়ে একটি দেহসর্বস্ব প্রানীতে পরিনত হয়েছে। হোসেনের সাথে যোগাযোগের কোনো অবস্থা সে রাখেনি। দেশে পরিবারকে এই ঘটনার মাধ্যমে ব্যপক সামাজিক হেনস্থা করার কারনে তাদের সাথেও সুসম্পর্ক নেই। তার নিজের মনের অবস্থা অন্যের সাথে শেয়ার করার মত অবস্থাও নেই। এক অপরিচিত জায়গায় অপরিনামদর্শী কাজ করে সে নিজের কাছেই পরাস্থ। অর্থনৈতিকভাবে সে পুরোপুরি পরনির্ভরশীল। তার যা আছে তা হল-ভাবিষ্যতের আশ্বাস,যা মিথ্যারই নামান্তর।

মানুষিকভাবে হতাশ,পরাস্ত,বিধ্বস্ত,ধর্ষিত নার্গিস বুঝতে পারে হিরাকে কাঁচ,আর কাঁচকে হিরা ভেবে সে কতটা ভুল করেছে। কিন্তু এই আত্মবিশ্লেষণ আজ তার কোনো কাজেই লাগবে না। সে নিজেই তার সুন্দর জীবনকে ধ্বংস করেছে। সে অনুধাবন করে পবিত্রতাই সুন্দর,এটাই জীবনের চরম সুখ। নিজেকে সে ক্ষমা করতে পারেনা। সিদ্ধান্ত নেয় আত্মহত্যার।


রাসেল বাসায় ফিরে অবচেতন নার্গিসকে দেখতে পায়। ....তাড়াতাড়ি তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। টয়লেট পরিষ্কার করা লিকুইড খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল সে, কিন্তু এটা ততটা বিষাক্ত না হলেও অতিরিক্ত খেয়ে সে মারাত্মক অসুস্থ্য হয়ে পড়ে।



================================
================================

জ্ঞান ফেরার পর বেড়ের পাশে সে হোসেনকে আবিষ্কার করে সবকিছু তালগোল পাকিয়ে ফেলে। বুঝতে পারেনা,কি ঘটেছে,এখন কোথায় ! খানিকপর তার হুশ হল। সে নিজেকে কেন শেষ করতে পারল না,তার জন্যে আক্ষেপ করে উচ্চস্বরে ক্রন্দন করতে থাকল। বলতে থাকলো-তুমি আমাকে অভিশাপ দাও এবং হত্যা কর। আমি চরম পাপী। আমি আমাকে ধ্বংস করেছি। আমি ব্যাভীচারী,লোভী,চরিত্রহীন ! আমাকে হত্যা কর, দয়া করে হত্যা কর !

হোসেন বলল-এই কথাগুলোই আল্লাহর উদ্দেশ্যে বলো এবং তওবা করো। তিনি মহান এবং তিনি ক্ষমাশীল। তিনি ক্ষমা করতে পছন্দ করেন। দাম্ভিক আলেমের চাইতে তিনি বিগলিত পাপীকে অধিক পছন্দ করেন। আর আমি তোমাকে ক্ষমা করলাম।

=================================
=================================

:তুমি যদি চাও, আমি তোমাকে আবারও পেতে চাই।

: আমি তোমার ক্ষমা পাবার অযোগ্য,তবে তুমি যদি চাও,আমি তোমারই থাকতে চাই। একান্তভাবেই তোমার। আমি আমার জন্যে পবিত্রতাই পছন্দ করলাম এবং এটা কতটা আসল,তা আমার চাইতে আর কেউ বেশী জানেনা।

হোসেন: তাহলে চলো,আমরা আল্লাহর রহমতপ্রাপ্ত বান্দা হিসেবে নিজেদের সম্পর্ককে রিনিউ করে নেই। প্রত্যেকটা বিষয় মহান প্রভূর আদেশে মানার মধ্যেই কল্যান রয়েছে,কারন আমাদের স্রষ্টাই একমাত্র সঠিক বিষয় অবহিত করেন। তিনিই সত্য এবং মিথ্যা,ভাল এবং মন্দ তৈরী করে পরিক্ষা করেন।আমরা কোনটি গ্রহন করি, তা দেখতে চান। কোনটার পরিনতি কি তা বলে দিয়েছেন। সঠিক পথের অনুসারীদের জন্যেই পৃথিবী এবং আখিরাতের কল্যান।............. আর একটি কথা, ফজরের সময় ঘুম থেকে না উঠলে কিন্তু পানি থেরাপী চলবে,বিনা ওজরে এই বিষয়ে কোনো খাতির নেই। ............

----উচ্চস্বরে হেসে উঠে নার্গিস বলল- হুমম...হতে পারে তুমিই সেটার শিকার হবে !
















মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১০:২১

খেলাঘর বলেছেন:


ভালো লাগেনি

৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:২৬

দ্য েস্লভ বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৪:৩৭

মু. মিজানুর রহমান মিজান (এম. আর. এম.) বলেছেন: আগে জানতাম না যে, এখানে আপনি আছেন।

৩| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৫:৪৫

নূসরাত তানজীন লুবনা বলেছেন: হোসেন ইকুটু বেশিই ভালো
নার্গিসের ভাগ্যের তুলনা হয় না
তবে শিক্ষনীয়
ভালো লাগলো

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.