![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
"আদর্শলিপি" র কথা মনে আছে তো! প্রি স্কুলের একটা ছেলে আদর্শলিপি মুখস্ত করে ফেলেছে। এইতো গোটাপঞ্চাশেক বর্ণ, শখানেক শব্দ আর কিছু বাক্য । যদিও যুক্তাক্ষর সে এখনও পড়তে শিখে নাই। কিন্তু এটা করেই সে ধরে নিয়েছে পৃথিবীর তাবৎ জ্ঞান ভান্ডার তার দখলে। এবার সে তার এই ক্ষমতা নিয়েই দাবী করছে সে আসলে সবই বুঝে ফেলেছে, এবং তাবৎ দুনিয়ার সব কিছুই সে পড়তে পারে। এই আদর্শলিপিই তার ডিকশনারী, গ্রামার বুক। দুনিয়ায় কার্ল মার্কস পড়তে যেমন rich vocabulary র প্রয়োজন হয়, তেমনি রস আহরনের জন্য একটা ভালো মানের চটি পড়তেও যুক্তাক্ষর পড়তে জানতে হয়। কিন্তু ছেলেটি কিন্তু তার দাবীতে অনঢ়। তার জানা vocabulary দিয়ে সে সবই পড়তে বসে, এবং যেটুকু তার কমন পড়ে ওটুকু পড়েই সে নিজের মতো মানে সাজিয়ে নেয়। ফলে মূল অর্থের ধারে কাছে সে যেতে পারুক না পারুক, সে কিন্তু বলে সে সব বুঝে ফেলেছে এবং সেই আদর্শলিপির মুখস্ত করা বাক্যগুলোই সে ঘ্যানঘ্যান করে পড়ে শুনিয়ে জ্ঞানের লহমা বাজায়।
আজ থেকে বছর আঠারো আগে একটা ছেলে তসলিমা নাসরিন পড়েছে। সেখান থেকেই তার কিছু লজিকাল vocabulary তৈরী হয়েছে। খুব ভালো। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, এই vocabulary থেকে সে আর বের হতে পারেনি। এই vocabulary র মধ্য থেকে সে তাবৎ দুনিয়ার সর্বজ্ঞান আহরণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু পৃথিবী এর মধ্যে অনেক বদলে গেছে। পক্ষে বিপক্ষে অনেক আধুনিক তত্ব তৈরী হয়েছে। কিন্তু সেই vocabulary র সাথে সেসবের যেটুকু কমন পড়ে ওটুকু বুঝে নিয়েই সবকিছুর মানে ছেলেটা নিজেই সাজিয়ে নেয়। কিন্তু ঋদ্বেদ পড়তেও যে কিছু বাড়তি vocabulary লাগে সেটা সে কোথায় পাবে। আরজ আলী মাতবর পড়তেও কিন্তু একটা ম্যাচুইরিটি লাগে, তেমনি স্যাটানিক ভারসেস এর মানে বুঝতেও কিন্তু জ্ঞান লাগে। একটা জাকির নায়েকের কথা থেকে যুক্তি বের করতেও যেমন প্রচুর পড়াশোনা লাগে, তেমনি একজন পোপ এর কথার মর্মার্থ বুঝতেও কিন্তু সহনশীল মন-মানসিকতা লাগে। কিন্তু সেই মুখস্ত করা বাক্যগুলোর বাইরে সে কিন্তু নতুন কিছু বলা শিখে নাই, আর শিখবেই বা কেমনে, শেখবার জন্যেও তো বোঝবার এলেম চাই। শুধুমাত্র "কমন পড়া"টুকু দিয়ে আর কতদিন চলবে? তাবৎ দুনিয়ার জ্ঞানীরা যেখানে অনেক পড়েও বলছে, আমি ছাত্র, ঐ ছেলেটা আদর্শলিপি তথা তসলিমা নাসরিনটুকু পড়েই বলছে, সে আসলে সবই বুঝে ফেলেছে। হুমায়ুন আজাদের লালনীল দীপাবলী পড়বার জন্য তার আগ্রহ জাগে না, কিন্তু পাকসার জমিন বাদ এর নির্দিষ্ট অংশ পড়েই ব্যখ্যা দাড় করাতে পারে। সাইমন ডি ব্যুয়েভারের সেকেন্ড সেক্স পড়ে মর্মার্থ বুঝুক না বুঝুক, নির্দিষ্ট অংশের মানেটুকু কিন্তু বুঝেই ছাড়ে। ধর্মগ্রন্থ পড়ার ধৈর্য থাক বা না থাক, উহাদের অংশবিশেষের অর্থ লইয়া কেউ বিকৃত অর্থ বের করলে ওটুকু পড়েই সে পুরো ধর্মগ্রন্থের ভুল ধরার আনন্দে ব্যাকুল হয়। আর বারবার আউড়ায়, সেই মুখস্ত কথা, ঐ যে, তসলিমার বইয়ে লেখা ছিলো যে!
©somewhere in net ltd.