![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অন্যজগত
লেখকঃ তোফায়েল আহমেদ
ঘটনাগুলো চোখের সামনে ঘটলেও যেন কিছুই দেখতে পায়নি শরীফ। প্রথমে একজন এসে তার হাত পেছনে নিয়ে বাধল। তারপর ধাক্কা দিয়ে সামনের দিকে ফেলল তাকে। তাদের মধ্যে নিচুগলায় কিছু কথাবার্তা হল যার কিছুই শরীফ বুঝতে পায় নি। তারপর তার শিকার লোকটাকে নিয়ে তারা আস্তে আস্তে চলে গেল। পায়ের নিচে পড়া ভেজা পাতাগুলোর হালকা মচমচ শব্দ শুনে তার মনে হচ্ছিল পাতাগুলো যেন তাকে উপহাস করছে। তার চোখে যেন আঙ্গুল দিয়ে কিছু দেখানোর চেষ্টা করছে। হঠাৎই প্রচন্ড ক্লান্তি এসে ভর করল তার শরীর ও মনে। কিছু না ভেবেই শুয়ে পড়ল সেখানে।
★★★
সারাদিন একটা কথাই ঘুরছে তার মাথার ভেতর। কারো অনুগ্রহ আর সহানুভূতি নিয়ে বেচে আছে সে। যতবার কথাটা মনে হচ্ছে ততবারই ভয়ঙ্কর একটা আক্রোশ এসে জমা হচ্ছে মনে। ইচ্ছা হচ্ছে কিছু একটা ভেঙ্গে তছনছ কনে দিতে। কিন্তু শরীফ জানে মাথা গরম করে কিছুই হয় না। মাথা ঠান্ডা করার চেষ্টা করল সে। এককাপ চা খেতে পারলে ভাল হত। চায়ের সব সরঞ্জাম ঘরে থাকলেও চা বানাতে ইচ্ছা হচ্ছে না। অবশ্য বাসার সামনেই একটা চায়ের দোকান আছে। সেখান থেকে খেয়ে আসা যায়। শরীফ রুমের দরজাটা টেনে দিয়ে বাইরে বেরিয়ে এল। চায়ের অর্ডার দিয়ে যখন সামনের বেঞ্চটায় বসল তখনই তার চোখ আটকে গেল খবরের কাগজের প্রথম পাতার হেডলাইনটায়। হেডলাইনটা এরকম— আবারো কুখ্যাত সন্ত্রাসী শরীফ। নিচে একটা স্কেচ দেখা যাচ্ছে। নিশ্চঃয়ই অভিজ্ঞ লোকের হাতে আঁকা। কিন্তু তার চেহারার ধারেকাছেও নেই। বুঝা যাচ্ছে কারো বর্ণনায় ছবিটা আঁকা হয়েছে।
চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে চিন্তায় ডুবে গেল আবার শরীফ। দ্রুত কাজ করছে মাথা। তাহলে ধরে নেওয়া যায় শিকার পুলিশের কাছে গিয়েছিল। পুলিশের লোক তার বর্ণনাতেই মনে হয় স্কেচটা করিয়ে নিয়েছিল যেটা পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। কিন্তু যারা শিকারকে উদ্ধার করে নিয়ে গেল তারা কি পুলিশের লোক?? না তা হতে পারে না। পুলিশের লোক হলে নিশ্চঃয় তাকে ফেলে যেত না। তাদেরকে বড় কোন দল বলেও ধরে নেওয়া যায় না। বড় কোন গ্যাং হলে নিশ্চঃয় শরীফের কাছে এদের খবর থাকত। তাছাড়া তাকে মারার এতবড় একটা সুযোগ পেয়েও কেন তাকে বাচিয়ে রাখা হল। তবে কি তারা শরীফকে চিনতে পারেনি। না চিনলে পত্রিকায় খবর বের হল কিভাবে?? আবারো সব গোলমাল পাকিয়ে যাচ্ছে। ঠান্ডা মাথায় ব্যাপারটা নিয়ে বসতে হবে। শরীফ বসে থেকেই তার আজকের কাজগুলো ঠিক করে নিল। প্রথমে যতটা পারা যায় খোজখবর নিতে হবে। কয়েকটা অস্ত্রের অর্ডার করতে হবে। তারপর পুরনো ঠিকানাটা থেকে অস্ত্রগুলো নিয়ে আসতে হবে। গতরাত থেকে তার সাথে কোন অস্ত্র নেই ভাবতেই গা শিরশির করে উঠল তার।
চায়ের বিলটা দিয়ে রুমে ফিরে আসল শরীফ। রুমে ঢুকেই ভেতর থেকে দরজাটা লাগিয়ে দিল। ড্রয়ারটা টান দিয়ে বের করে নিল ল্যাপটপটা। মুখে একধরনের দৃঢ়তা নিয়ে চালু করল ল্যাপটপ। প্রথমেই মোট তিনটা অস্তের অর্ডার দিল। তার মধ্যে একটা তার প্রিয় কেভি 39। তারপর দলটা সম্পর্কে খোজ নিতে শুরু করল। প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো টুকে নিল নোটখাতায়। তবে সবই সাংকেতিক চিহ্নে।
আধাঘন্টার মধ্যেই ল্যাপটপটা বন্ধ করে ড্রয়ারে রেখে দিল আবার। তারপর বাথরুমে ঢুকল গোসল করার জন্য। অনেকক্ষন লাগিয়ে গোসল শেষ করে খেয়েদেয়ে আবার বাইরে বেরুবার প্রস্তুতি নিতে শুরু করল সে। অর্ডারের সময় দেওয়া তার পুরোনো ঠিকানা থেকে অস্ত্রগুলো নিয়ে আসতে হবে। সবকাজে সে ঐ ঠিকানাটাই ব্যবহার করে একটা বাড়তি সতর্কতা হিসেকে। কিন্তু তারপরও একটা অস্থিরতা কাজ করছে তার মাঝে। মনে হচ্ছে কি যেন একটা বাদ পড়ে যাচ্ছে। জোড় করে অস্থিরতাটা ঝেড়ে ফেলে সে রওয়ানা দিল পুরোনো ঠিকানার উদ্দেশ্যে। সেখানে এখন কেউ থাকে না। একসময় শরীফ থাকত সেখানে। তার পরিচিত সবার কাছে ঐ ঠিকানাপাই দেওয়া। সেখানে পৌছাতে ঘন্টাখানেকের মত লাগবে। এর মধ্যেই অস্ত্রগুলা এসে পড়ার কথা। অনেকদিন ধরেই এদের কাছ থেকে অস্ত্র আনে সে। সময়ের ব্যাপারে এরা খুব সচেতন। অন্য কোন জায়গা থেকে এত তাড়াতাড়ি অস্ত্র নিয়ে আসা সম্ভব নয়।
রাস্তায় হাটতে হাটতে পুরো ব্যাপারটা নিয়ে আরেকবার ভাবতে চেষ্টা করল সে। কিন্তু গাড়ির হর্ণ আর মানুষের চিৎকার চেচামেচিতে বারবার অন্যদিকে মন চলে যাচ্ছিল বলে চিন্তাটা বাদ দিতে হল তাকে। মাথাটাকে হালকা করার চেষ্টা করল সে। একবার ইচ্ছা হল বাসে চলে যেতে। কিন্তু তার বাসে উঠতে ইচ্ছা করে না। কেমন যেন দম বন্ধ হয়ে যায়। নিতান্ত বাধ্য না হয়ে সে বাসে উঠে না।
অস্ত্রগুলো প্যাকেট থেকে খুলে চামড়ার ব্যাগে ভরে যখন পরিত্যাক্ত বাসাটা থেকে বের হল তখন বাইরে বিকালের আলো নিভে গেছে। গাছের আড়ালেও সূর্যের অস্তিত্বটা দেখা যাচ্ছে না। তারপরও চাদের আলোর মত হালকা একটা অালো ছড়িয়ে আছে চারদিকে। গোধূলির আলো। কেমন যেন অপার্থিব একটা সৌন্দর্য ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে। এই গোধূলির আলোতে সবকিছু অর্থহীন মনে হচ্ছে শরীফের কাছে। এই রাস্তা, তার পরিকল্পনা, হাতের চামড়ার ব্যাগ কেমন যেন খেলনান মত মনে হচ্ছে। একবার মনে হল সবকিছু ছেড়েছুড়ে দূরে কোথাও চলে গেলে কেমন হয়। যেখানে কেউ থাকবে না, কেউ তাকে চিনবে না। হঠাৎই গতরাতের মেয়েটার কথা মনে পড়ে গেল। যার উষ্ণ হাতটা ক্ষনিকের জন্য ছুয়ে গিয়েছিল শরীফের হাত। সেও যে স্বপ্ন দেখতে জানে তা যেন ভূলেই গিয়েছিল এতদিনে। ভূলে যাওয়ারই কথা। প্রথম যেদিন সে পিস্তল হাতে নিয়েছিল সেদিনই সে বুঝে গিয়েছিল এখানে আবেগ বলে কিছু নেই। এখানে বেচে থাকতে হলে অন্যকে মেরে বেচে থাকতে হবে।শুরুটা খারাপ হয়নি তার। প্রথম প্রথম খুন করতে খুব ভাল লাগত। নিজেকে রাজা রাজা মনে হত। যত খুশি টাকা উড়ানো যেত। তারপর আস্তে আস্তে ঘৃণা ধরে গেছে এগুলোর উপর। এখন শুধুমাত্র বেচে থাকার জন্য এগুলো করে যাচ্ছে সে। সে জানে এখান থেকে বেরুনো তার পক্ষে কখনোই সম্ভব নয়।
বাসায় ঢুকতে গিয়ে নতুন একটা আশঙ্কা উকি দিলমাথায়। বুকের ভেতরটা কেপে উঠল আবারো। রুমের সামনে আসতেই ধুকপুকানিটা আরো বেড়ে গেল। তার আশঙ্কাটাই সত্যি। রুমের দরজাটা খোলা। বেরুনোর সময় দরজায় তালা লাগায় নি সে। এদিকে তেমন কেউ আসেনা বলে প্রায়ই দরজা খোলা রেখে বাইরে যায় সে। সবসময় তালা থাকলে লোকে সন্দেহ করতে পারে ভেবেই এটা করত । কিন্তু আজ পরিস্থিতি অন্যরকম। তবুও তালা লাগানোর কথা মনে হয়নি একবারও। তার আশঙ্কাটা ছিল হয়ত এতক্ষন তাকে ফলো করছিল কেউ। যতক্ষন সে বাইরে ছিল ততক্ষনে তার রুম সার্চ করা হয়েছে। সতর্ক পায়ে রুমের দিকে একটু এগুতেই দড়াম করে খুলে গেল দরজাটা।
চলবে
©somewhere in net ltd.