![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মামুন মিজান-এর ক্রম কবিতা-৪৪
এই বর্তুলাকার বারুদগ্রাম পেরিয়ে
করতলে বিদ্যুতের বহতা বেগ ধরতে যাই
যেন আমি এক ওরিয়ন।কবিতার শাশ্বত ছেলে।
এ্যান্ড্রোমিডা, তোমারই গুপ্ত লাভাস্রোতে
ভেসে যাওয়া স্বপ্নগুলো
সমুদ্র থেকে উঠে আসার পর দ্যাখো, আজও কাঁপছে…
যেন সব দুঃখের ফোটন-ধুলো মাখা ঠোঁটে।
আমারই বুকপকেটে লুকিয়ে থাকা মৃত্যুকে
যখন পোষ মানিয়ে নিয়ে যাই মোহনায়-যাবতীয় জলীয় মতে।
তখন ওই চর ফেলে
অভিমানে সরে যাওয়া বিদ্যুতের নদী জানায় শত বরফট্টাই।
মাথার ওপর তুলে ধরে কবিতার স্বর্ণকুলো-
আজও থেকে থেকে যেন বা সেই অমৃতজল এই চোখের কোণায় ছোটে
মামুন মিজান-এর ক্রম কবিতা-৪৩
এই রক্তের নদী পেরিয়ে
বিদ্যুৎ-রেখায় লেখা নামে যেন এক ধ্যানমগ্ন শাশ্বত-মাছি ঘষে হাত।
ওই জলকরাতের নিচে
পকেটে মৃত্যু উথলায় যখন
সত্যপিঁপড়ের স্বেদ মাখা বালি ঝরে পড়ে, কেবলই শ্রমে ও কামে।
যখন চাঁদের একাকীত্বে মেশানো কালো দাগে পিছলায় রাত
শেষ হয় মৃত্যুর সঙ্গে সমূহ কথোপকথন।
ললিত লাউফুলে জড়ানো বসন্ত
আছড়ায় তবু চোখের পাতায়, এই জলতীর্থেরও আগে অন্তরে অন্তরে-
কেবলই কাঁপা কাঁপা ঠোঁটভর্তি আলো ঠিকরায়।
রাস্তায় লাফিয়ে ওঠা যেন অদৃশ্যের করতালি
শুনতে শুনতে তখন আমার ভেতরে
আমৃত্যু কবিতার চিরমধু ঠোঁটে নিয়ে
যেন কবিতারই স্রোতে ভেসে যাই এক নগ্ন শিশু-সন্ত…
মামুন মিজান-এর ক্রমকবিতা-৪০
...আমার এই কাঁচবাড়িটাই যখন কাঁপছে একা একা তিরতির
উথলে ওঠা স্বপ্নের আঁভা যখন এই করতলে যেন ঘুমায় চোখ মুদে
তখন যেন পেছাতে থাকা দেয়ালটাও পারছি না দেখতে ছুঁয়ে
সমূহ আসবাব থেকে চুয়ে পড়ছে যেন তারই নিউক্লিক কামনার শিশির।
এই জানলায় আছড়ে পড়া আকাশের চোখে জ্বলছে ধিকিধিকি আগুন-
আমারই আঙুলে এসে পুড়তে পুড়তে তা-ই পরিণত হলো শুক্র ও বুধে…
এই আলজিহ্বার নিচে লুকনো পুরনো প্রেমিকার গল্প যেন আজও রাখছি রুয়ে!
সেই বেড়ালিনী আজও এই হাত বেয়ে উঠে এসে চুমু খেতে চায় এই ঠোঁটে
মৃত্যুকেই এ-বাড়ির ভেতরে পোষ মানাব বলে দেখছি বারবার মাথা নুয়ে নুয়ে!
আমার আঙুলও যখন কাঁপছে রোদ্দুর শুষে নিয়ে যেই বাতাসের নুন-
যখন নিজেরই এই কাঁচবাড়িতে কবিতাসহ পড়ে যাই একা একা হোঁচটে হোঁচটে…
মামুন মিজান-এর ক্রমকবিতা-৩৮
…নদীবর্তী ওই কাঠতুতো গাছে
বেড় দিয়ে থাকা আশালতাটা নিয়ো না ছাড়িয়ে।
ওকে বাড়তে দাও। জ্ঞানবৃক্ষের সমান হতে দাও। অন্তরে অন্তরে…
আকাশের সমান হতে দাও।আর সেই
আড়াই প্যাঁচে লতিয়ে ওঠা লোহিতাভ গান
যেয়ো না কখনো ভুলে।আঠালো ওই দুধ-ভালোবাসায় জড়িয়ে
মুখের মধ্যে জিহ্বার মতো রেখো হে লুকিয়ে আপ্রাণ…
ওই জলীয় জাল যতই ছাড়াতে চাও, ততই আসে কাছে
ততই ফিরে যেতে ইচ্ছে করে
ততই ঠোঁট ভেজাতে ইচ্ছে করে পুরনো সে-লবণেই…
মামুন মিজান-এর ক্রমকবিতা-৩৭
…করতলে সূর্যও যখন সহনীয় হয়ে ওঠে। ঝরে পড়ে
সমস্ত কমনীয়তা, মনোলীনা তোমারই ওই শরীর থেকে ধীরে ধীরে-
তখন এই আঙুলে ওঠা জলঘূর্ণি থেকে
উঠে আসা যেন দীর্ঘ-ঈ মেশানো সব ভালোবাসা, দিলাম তুলে আজ এই একুশের তীরে।
যেন ওই সত্যসমুদ্র থেকে হামাগুড়ি দিয়ে উঠে আসার আগেই
তৃণগুচ্ছের এইসব আসবাব ছুটল ঘরে ঘরে, একে একে…
সেকি তুমুল কামস্রোতস্বিনীতে, অজস্র টারবাইনে; আর কোনো নাবিক নেই
ওই আলোভর্তি নৌকায়। কেবল বৈঠায় মাখা এক জলসুন্দরী কেবলই ছলকালো-
আহা দ্যাখো, জন্ম ও মৃত্যুর দ্বৈরথে কাঁপা কাঁপা ফেননিভ ঝরে ঝরে হায়
এই করাঙ্গুলিতে এসে হলো রক্ত…
আর দ্যাখো, যেন এই ঠোঁটে লেপ্টে থাকা ওই আলো
এবং বিগত জলপ্রেম তবু ঝরছেই…সমুদয় সমুদ্রে, আশায় আশায়।
হৃদকম্পের থরো থরো কাঁপুনি আর প্রতিটি ধ্বনিতে
চুয়ে পড়ছে যেন আজও ওই রক্তাভ সূর্য অদৃশ্য কামে ও প্রেমেই।
আমিও এ্যামাইনো এই ওষ্ঠে যাবতীয় লবণের স্পর্শ নিতে নিতে
ভালোবেসে গেছি চিরলাগা ওই বর্তমানকেই।যেন ওই দীর্ঘ-ঈর চাইতেও তা থেকে গেল অব্যক্ত…
মামুন মিজান-এর ক্রমকবিতা-৩৬
...যে বছর মেঘে মেঘে রটে গেল ওই লালিমা
অশ্রুসহ লবণের সেকি উচ্ছ্বাস উঠল সমুদ্রে সমুদ্রে আহা...
ওই কালো চাঁদের থেকে ঝরে পড়া আঁভায়
লুকিয়ে জিহ্বা ফিরলাম একা একা এই কাঁচবাড়িতে…
সেই থেকে দ্যাখো, মিথ্যা ও মৃত্যু নিল পিছু। তবুও পিউ কাহা
বলে সত্যপাখিও নিরন্তর এই বাঁকা হয়ে যাওয়া কাঁধে বসতে চায়।
তাই এই কাঁচঘরে আজ রক্তাক্ত খাতা খুলে অসহ্য এই আত্মসুখে রে অসীমা
তুই বসে থাক কলাবউ সেজে, আর আমি একটা তিল হয়ে বেঁচে থাকি যেন তোরই থুতনিতে…
মামুন মিজান-এর ক্রমকবিতা-৩৪
…আজও অন্তরনগরে করো বাস
আয়নাঘরে মুখ দেখে বাঁচো হে জলপড়শি এক…
যেন আমার বুক-বাগানের তুমিই আদি মালিনী।
নিঃসীম দুখের দোলনায় দুলতে দুলতে পার হয়ে গেলে যেন মেঘবাড়ি।
তবুও আজ প্রতীক্ষায় কাটাই কাল, শুনব বলে ওই ভেসে যাওয়া নূপুরের রিনিঝিনি…
যদিও ওই মঙ্গল সূত্রই হলো শেষে ও গলার ফাঁস…
আমার আলোভর্তি খাতা পড়ে থাকল পাশে-যেন আজও আঁভা দেখছি তারই।
অভিমানে ওই কড়িকাঠই হলো দ্যাখো, ক্রুশ-দু’হাতে বিঁধল অস্ফুট সেই প্রেমের পেরেক…
আমি যা চাইনি তাই দিয়েছ তুমি। এই খেলাচ্ছলে জলাধার থেকে
যখন ফিরছি ঘরে, তখন দেখছি অনেক ধুলো মাখা এই আঙুল
কেবলই কাঁপছে তোমারই স্পর্শ মনে করে! একে একে
মৃত্যুর সাধও যখন বেরিয়ে যায় এই চোখ থেকে, সব তুলতুলে ভুল-
দুমুঠোয় চেপে রেখে আমরা ক'জন দেবশিশু
ঢেকে রেখে প্যাপিরাসে এই তালব্য শ দ্যাখো, তবু যাই রঙ্গালয়ে...
পথে পথে লিগামেন্ট ক্ষয়ে গেল. যেতে যেতে তোমারই পিছু-
রে জৈব মা, ক্ষমা ক'রো। যদি থাকি পথান্তরে কিছুটা আশায় কিঙবা ধরো আরও কিছু ভয়ে...
Mamun Mizan
February 18
আমার বাবা ঢাবি থেকে এমএ করে তখন একজন তরুণ এ্যাডভোকেট। আমরা তিনভাইবোন জন্মেছি। মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলো। বাবা দেশপ্রেমিক ও গণ পরিষদের সদস্য হওয়ায় মুক্তিযোদ্ধা-সংগঠক হয়ে মানকাচরের কাঁকড়ি পাড়া ক্যাম্পে অবস্থান নিলেন। পরে পাকহানাদার ও তাদের এ দেশীয় দোসর-রাজাকার,আলবদর, আলশামসের হাত থেকে বাঁচতে মাসহ আমরা পালিয়ে চলে গেলাম বাবার কাছে। গাড়ি করে যেতে অল্পের জন্যে আমরা বেঁচে গেছি। আমি তখন দেড় বছরের শিশু। এক দিন পথ হারিয়ে ফেলি। এক পান্তাবুড়ির ঘর থেকে আমাকে উদ্ধার করা হয়। ধরা পড়ে কালান্তক ব্যাধি টাইফয়েড। ক্ষতিগ্রস্ত হয় আমার ডান পা। আমি সেজন্য ক্ষতি পূরণ চাই না। যাদের অত্যাচার-হত্যা-ধর্ষণ থেকে পালিয়ে বাঁচতে গিয়ে বাংলার অসংখ্য পরিবার আজও কাঁদে-তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত শাহবাগের আগুন যেন না নেভে। তা-ই চাই।
...ওই মধুর ছোঁয়া তবু মনে রেখে, হৃদয়ের কোণে রেখে
পেরিয়ে যাই ছায়াবাড়ি, কায়াবাড়ি!
চঞ্চল এই বৈঠা, ক্যায়সে কহু, ধুলোর রাঙ মেখে
অশ্রুতেই তবু বয়ে চলে।সমুন্দরে কোই হ্যায়, বাতিওয়ালা? গাড়ি
থামাও, এই পথে ফিরে গেছে নিউট্রিনা, এই পদচ্ছাপ বুকে করে...
তাকেই ধরে আনো
এই করাঙ্গুলি দেখাই, কতটা লোহিতাভ মায়াবাদী
বরফট্টাই জানে ওই দীর্ঘ-ঈ। আলোর রাশি মাখানো
ওই হরতনে লাগাই হরিতকী চন্দ্রিমা যত দ্যাখো, হৃত-কলার কাদি...
ততই তা তা থৈ থৈ ওই জলছোঁয়া উথলায় এই প্যারা মাইন্ড অন্তরে, অন্তরে...
সে এক মেঘের সঙ্গে দেখা হলো এক বাষ্পাকুল প্রান্তরে!
মিল্কিওয়ের কিছুটা নিচে, ওই কলহপ্রবণ কাঁচা-বাজারে...
এই জিহ্বাতল থেকে মিথ্যার থুতু ফেলে দিতে দিতে
তবুও এগিয়ে গেলাম তার কাছে।সেকি জলীয় সংঘর্ষ, বৈদ্যুতিক তারে তারে!
স্বপ্নগুলো যেন সেই থকে ট্যারান্টুলার বিষ-লালায় মিষ্টান্ন খুঁজে নিতে নিতে
পিঁপড়া-দল হয়ে উঠে আসছে আজও এই জানালার কাঁচে, এই মেঘার্ত ঘরে...
...এ্যান্ড্রোমিডা, এই শত জলকষ্ট জিহ্বার নিচে লুকিয়েই
এ গ্রহ থেকে তুলে নিই দ্যাখো, এই আঙুলের আঁভা!
ফোটনের পাল তুলে কোয়ার্কের কণায় কণায় ভেসে যেন যেই
নামি তোমারই নেত্র কোণায়! কেন তবু ভেঙ্গে যায় চাকা, ছুটন্ত কারাভাঁ...
...শৈবাল হয়ে জল খেতে খেতে এ বছর সমুদ্রেই কাটালাম দীর্ঘশীতকাল!
তাই এ নখ থেকে লবণের গন্ধ গেল না। এই ঠোঁটে উঠে আসলো
তোমারই লাবণ্য! তোমাকেই বুকপকেটে নিয়ে দ্যাখো, উথাল-পাথাল
হয়ে ঘুরতে ঘুরতে তোমাকেই খুঁজি, যখন এই মুখের লাবণিই ফুরলো...
...এই শীতার্ত ওষ্ঠ উষ্ণ জলের দেখা পেতে পেতে
যেন একটা সমুদ্রই পার হয়ে গেল। আর যেন বা এই কালের চাদর কাঁধে নিয়ে
মেঘ হাতে নামতে নামতে সেকি রলরোল শুনতে হলো। হাওয়া খেতে খেতে
কেবলই রক্তবাহিনী প্রপাত হলো। অজস্র কাম-ঘাম-নুন ঝরাতে গিয়ে
ক্ষয়ে গেল লিগামেন্ট! দ্যাখো, শত ক্রনিকলে জড়ালো এই দুপায়ের শুকতলি...
দ্যাখো, সত্য-শকুনের নখরে বেড়ে ওঠা লোলজিহ্ব স্বপ্নগুলো তবু কুয়াশায় জাগে!
এই শীত তাই আমাকে দণ্ড দিয়ে যায় অবিরত...
আর এই শীতরাত যখনই এই টেবিলের কাঁচে এসে আছড়ায়, চোখে এসে লাগে-
জলরেখা খুঁজতে খুঁজতে তখন লিখি মেঘলিপি,লিখে যাই বই কিংবা জলের কাহিনী শত-
তখনই আমি পাই জলবার্তা! যেন বারবার সিসিফাসের মতো তাই পাথর বয়ে চলি...
...প্রতিদিন কু-আশায় ভিজে ভিজে তবু নৈরঞ্জনা নদীতীরে যাই
এই শীতে এক মুঠো ওম খুঁজে পাব বলে।
নতজানু হয়ে বসি তোমারই পায়ের ঠাঁই-
মুখ লুকাই আজও তোমার আঁচলে।
জিহ্বা থেকে মৃত্যুর কালো জট ছাড়াতে ছাড়াতে
তবু পাঠাই জলবার্তা একাকী...
এ্যাকাশিয়া শ্বাসকষ্ট ভুলে এইখানে এই শীতমাখা রাতে
দ্যাখো, তোমারই অবুঝ ও লাল-সবুজ স্বপ্নে তবু চোখ রাঙাতে থাকি-
হে আলোদাত্রী কালো শিক্ষিকা আমার!
এই দূর ধূলিগ্রাম থেকে যেই মেঘ দ্যাখো, আজও ভেসে যায়
মেঘবতী, কাছে এসে নীলগিরি পর্বতের ধার...
তাকে তুমি ছুঁইয়ে নিয়ো হে ওষ্ঠ-কোণায়!
..কেন হলো এই দেখা, কেন এই স্ফটিক দানার মতো শিশর দেখে
ছুঁতে চেয়ে কাঁপে এই আঙুল? মেঘের সাথে মেঘের কেন হয় দেখা?
এইখানে এই কবিতার অশ্রুতে ভেজা খাতা পাশে ফেলে রেখে
বেঁচে থাকার সব কবিতা-পাপ ক্ষমা ক'রো তবু বৌঠান, একা একা...
©somewhere in net ltd.