নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

৩২ পৃষ্ঠায় খড়, ৩৩ পৃষ্ঠায় অাগুন

টোকন ঠাকুর

কবিতা গল্প লিখি, ছবি আঁকি-বানাই, একাএকা গান গাই...

টোকন ঠাকুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

গুচ্ছ কবিতা

০৮ ই নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:৫৪

১. সব কবিতার শিরোনাম লাগে না



রোদ তুই ছন্দ জানিস? মাত্রা মানিস?

সামান্য ফাঁক-ফুটো পেলেই ঢুকে পড়িস?



রোদ তোর আসার পথে দেখা হয়েছে কার কার সঙ্গে, বল?

মেঘরা ছিল কোন বৃত্তে, কথা হয়নি আমাকে নিয়ে?



পরিপার্শ্বের হাওয়া, কার কাছে তুই অক্ষরবৃত্ত শিখে হয়েছিস হিম?

কোন ছন্দে পাতা ঝরে? বলদ এবং বাঙলা বিভাগের

বিরাট অধ্যাপকের মধ্যে যবে এত অনুপ্রাস তবে এত মিল?



গান তুই হাওড়ের মাঠে শুয়েছিলি শীতকালে

তোর উস্তাদ কোন কুলাঙ্গার খাঁ?

ধান তুই আমার শব্দে বোনা ফসল

মহাজন সাহিত্য সম্পাদক?



রোদ আজ সব খুলে বল, আমি তো তোকে জানি-

ড ফুলস্টপ না করেও তুই কেমনে কবিতা লিখিস

অচেনা ম্লান-মুখে?



জোশ জোশ!

চটি পড়েনি, কী নিরক্ষর!

থ্রি এক্স দ্যাখেনি

কী গ্রাম্য!

চড়ুই সেক্স করছে মহাসুখে…



২. শীতপত্র



এই পত্রে কমবেশি কুয়াশা লেগে থাকবে সেটাই সহজ প্রকল্প

যেহেতু মাকড়সার জালের সঙ্গে কুয়াশার একটি ইঙ্গ-মার্কিন চুক্তি রয়েছে

এই পত্রে কমবেশি শিশিরও জড়িয়ে যাবে সেটাই সরল গল্প

কেননা, সমুদ্রের তীরে দাঁড়িয়েও একদিন চোখ থেকে একফোটা অশ্রু ঝরে পড়ে



আমি সতর্ক, যথা কুয়াশার কথা লিখছি না, কুয়াশাই আমার সঙ্গে

পথে পথে রহস্যপ্রস্তাব করছে

আমি সজ্ঞান, তথা শিশিরের কথাও লিখছি না, শিশিরই আমাকে বরং

নিঃশব্দে পতন শেখাচ্ছে

পত্রে আমি তোমার কথাও লিখছি না, তুমিই শাদা কাগজের উপর

লেখা হয়ে হয়ে যাচ্ছ

পত্রে আমিও সময়ের কথাও লিখছি না, ঘড়ির কাঁটাই কালো কালো অক্ষরে

নৈশ-ধারণাকে ঘনীভূত করে তুলছে



যদিও, আমি লিখতে চেয়েছিলাম, একটি হলুদপাতা ঝরানৃত্য কোথায় শিখেছে?

প্রেমিকমনের ছাপচিত্রে অসংক্ষিপ্ত অভিপ্রায় জানাতে চেয়ে পত্রে আমি

বাল্যমাঠের শর্ষেফুলে প্রজাপতির রঙিন আত্মজীবনী লিখতে চেয়েছিলাম



যদি আত্মহত্যা করি তো এই পত্র আত্মহত্যার আগে লেখা অসংলগ্ন চিরকুট :

আমার মৃত্যুর জন্য এবারের অপার্থিব শীতকালই দায়ী…



৩. দেখি রাক্ষসের মুখ, পাই ডাইনির নিঃশ্বাস



আয়নার মধ্যে তাকিয়ে নিজেকে রাক্ষস মনে হলো!

সঙ্গে সঙ্গে রাক্ষসের মানে, সংক্ষিপ্ত বাঙলা অভিধানে পাওয়া গেল- নরখাদক জাতি, নিশাচর, কর্বূর, প্রাচীন অনার্যজাতি ইত্যাদি… যদিও, রাক্ষসের একটা অপ্রত্যাশিত ভয়ঙ্কর মুখচ্ছবি আঁকা আছে মনুষ্যকুলের মনে। এটা জানি, কারণ এদ্দিন আমিও মানুষের রোল প্লে করে এসেছি। এদ্দিন আমিও মানুষ ছিলাম।



কিন্তু আজ! আজই, নাকি কয়েকদিন ধরেই, যখনই আয়নার সামনে গিয়ে নিজেকে দাঁড়াই, বিলিভ ইট, আমার চোখেই ধরা পড়ে আমি একটা রাক্ষস! আমার সারামুখে ডাইনিদের মিহি-নিঃশ্বাসের আঁচে পৃথিবীগ্রহের মায়াময় ম্যাপ আঁকা হয়ে চলেছে, মুখ বিভাজিত হয়ে পড়েছে…



বিশেষ দ্রষ্টব্য ১. ডাইনিদের একেকটি নিঃশ্বাস কমপক্ষে বারোমাস মাথার মধ্যে কিংবা দেওয়ালে দেওয়ালে ঝুলে থাকে; তারপর আরেকটি নিঃশ্বাসে ছাপা হয় আবার একটি বাৎসরিক ক্যালেন্ডার



বিশেষ দ্রষ্টব্য ২. ডাইনিদের নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাসে অনেক তরুণ যোদ্ধা অকালেই মরে ভূত হয়ে যায়। যারা ভূতে বিশ্বাস করে না, আমার মতোন, একদিন আয়নার মধ্যে তাকিয়ে দ্যাখে– সে নরখাদক, সুযোগ পেয়ে নিজেকে খেয়েছে; সে নিশাচর, আঁখিতে আঁধি চারণ করেছে; সে প্রাচীন অনার্য, কারণ তার অনুচ্চবর্গের দেহ;



দেখি, আয়নার মধ্যে আনস্পেকটেড একটি অচেনা মুখ, রাক্ষসের



৪. নিঃসঙ্গের ছদ্মবেশে



মানুষের ছদ্মবেশে থাকি, আদতে রাক্ষস!

একদিন রাক্ষসপুরীতে ছিলাম। কিন্তু রাক্ষসদের সঙ্গে আমার বনিবনা হতো না। সবসময় খিটিমিটি লেগে থাকত। ভালোবেসে যে রাক্ষুসী আমার পাশে ছায়াচ্ছন্ন দাঁড়িয়েছিল, এক সন্ধ্যার অজান্তে তাকে অন্য রাক্ষসেরা ভক্ষণ করে ফেলেছিল। মনের দুঃখে, স্বপক্ষত্যাগী আমি মানুষের ছদ্মবেশে মানবসমাজে চলে এসেছি। আমিও কবিতা লিখি…



এই হচ্ছে মানুষের মধ্যে থেকেও আমার নিঃসঙ্গতার সংগোপন ইতিহাস। এই হচ্ছে মানুষের সমাবেশে থেকেও আমার মানুষ হতে না পারার ইহলৌকিক যন্ত্রণা। কারণ, সৌন্দর্যলুব্ধক এক মোমের মানবীকে ভালোবাসতে গিয়ে সম্পূর্ণ ভুলে গিয়েছিলাম যে, আমি গোত্রান্তরিত রাক্ষস। স্বগোত্রে আমার জন্য এক রাক্ষুসী আত্মাহূতি দিয়েছিল। আর এদিকে আমি মোমের মানবীতে হাত ধরে আবেগে-আবেগে- যেই বলেছি, রাক্ষুসী, প্রিয়ে, তোমাকেই আজ ভালোবাসি, তুমি আমার পাশে দাঁড়াও; কিন্তু সে ভয় পেয়ে ছিটকে পালায়, আর



রাক্ষসের ভয়ে মানবীরা চিরকাল ভীত বলে আমি নিঃসঙ্গ হয়ে যাই, যথাক্রমশ নিঃসঙ্গ হয়ে উঠি। নিঃসঙ্গতা এমন একটি উদাহরণ, যে-কেউ গ্রহণে অনিচ্ছুক… হায় রে এমন নিঃসঙ্গ থাকি



সকাল থেকেই একটা শালিখ কার্নিশে ভিজছে স্থিরচিত্রে, নিঃসঙ্গের ছদ্মবেশে আমি এখন ওই ভেজা শালিখ পাখি



শালিকের ছদ্মবেশে কবিতা লিখি!



৫. জঙ্গলের মধ্যে জাদুঘর



জঙ্গল দেখলেই মনে হয়, ঐ জঙ্গলের একদম ভেতরে একটা জাদুঘর আছে। অসংখ্য গাছে গাছে ভরা অবিরাম পাতায় পাতায় হাওয়া-বাতাসের অর্কেস্ট্রা আর অগণন পাখিতে পাখিতে নরম পালকে পালকে ডিসপ্লে করা গ্রিনমিউজিয়াম… এই পৃথিবীতে যতগুলো জঙ্গল আছে, প্রায় প্রত্যেকটা জঙ্গলের মধ্যেই একটা করে জাদুঘর আছে



জাদুঘরে, গাছের সঙ্গে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে আছে মরচেধরা অনেকদিন আগের একটা বাইসাইকেল। সেই সাইকেলটা কার গো, কার? যথা অপরিণামদর্শী কৌতূহলে, জঙ্গলে প্রবেশ করিয়া যে বালক আর কোনওদিনও ফিরে আসিল না, তার? জংলিপনায় স্নাতকোত্তর আমি, জঙ্গল দেখলেই বুঝতে পারিÑ এই জঙ্গলের ভেতরে একটা জাদুঘর আছে। বাইসাইকেল আছে। বালক-পুরুষ ফিরতে না-পারার জনশ্রুতি আছে।



জনশ্রুতির অধিক রহস্য, সেটাই ধরিত্রী, সেটাই অবলীলা চৌধুরীর লাবণ্য; লাবণ্যের ভেতরে মিশিমিশি আফ্রিকা, ঘনান্ধকার আমাজান… সাহস করে একবার ঢুকে পড়লেই জাদুঘর পর্যন্ত পৌঁছে যাবার প্রেরণা পাওয়া যাবে। ক্লান্ত সাইকেল গাছে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়বে এবং সম্ভবত আমার আর কোনওদিনও ফিরে আসা হবে না… হবে না



এ অঞ্চলে এটাই সত্য, জঙ্গলে হারানো পুরুষ শেষপর্যন্ত কিংবদন্তি হয়ে যায়



৬. ডানাঅলা কবিতা



জানা নেই, ডানা থাকলে আমি কী করতাম?



বেরিয়ে পড়বার প্রস্তুতি চাপিয়ে ঢাকা শহরে নেমে আসত ভোর, প্ররোচক হাওয়া এসে ডাকনাম ধরে ডাকত: যা তুই খুঁটে খুঁটে নিয়ে আয় খড়কুটো-ভালোবাসা। হঠাৎ ফিসফিসিয়ে হাওয়া হয়তো কানে কানে সেই প্রাচীন নিয়মাবলিই বলে দিত একাকিত্বের অসুখ ভেঙে ভালো হয়ে যা। যা তুই বাবুই বংশের ছোট ছেলে হয়ে যা। ওড়াউড়ি বাদ দিয়ে বাসা বুনে বসে থাক, যা। উড়ে আসবে অন্য কেউ, বন্য ঢেউ, যা তুই তার জন্য অপেক্ষা হয়ে যা



ডানা থাকলে সীমানা ভাঙার উৎসাহব্যঞ্জনা থাকত বেশি। একদিন, আমি হয়তো আর বাবুই থাকতাম না। হয়তো শালিখ থাকতাম। এই বর্ষায় ভিজে ভিজে বৃষ্টির জলকণা দিয়েই রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে টক্কর দিয়ে কবিতা লিখতাম যদিও, শালিখ কোনো কবিতাই লেখে না, কিন্তু শালিখ কবিতা হয়ে তুমুল ভিজতে থাকে তরুণ কবির খাতার ভেতর, মাথার ভেতর, সে কবিতা ছাপা হতে পারে লিটল লিটল মেঘে, সেই মেঘই অনুবাদপূর্বক পড়তে পড়তে মুগ্ধ কোনো কুরঙ্গবালিকার চোখে এক ফ্রেম চিকচিক করে ওঠা দুপুরবেলার নদী একটা গল্প হয়ে উঠত



কিন্তু ডানা থাকলে হয়তো আমি একদিন আর শালিখও থাকতাম না। আত্মপ্রকাশের তরঙ্গে অনেক আথালি-পাথালি আর দ্বন্দ্বে বিদীর্ণ সম্পর্কের অনেক টানা-হ্যাঁচড়ার একটা সফল পরিণতি হতে পারত। এই মনস্তাত্ত্বিক মেটাফর প্রযোজিত ভাবনাচিত্রে শেষ পর্যন্ত আমি ঈগল হয়ে উঠতাম কী না! চরিত্রে দস্যুবৃত্তির অভিযোগ নিতাম কী না! বুনোঘ্রাণে আমি গোত্রচ্যুত, সব সময়। নিঃসঙ্গতার আততায়ী উপস্থিতি নিয়েও তুলনামূলক দূরত্বসঞ্চারী ঈগলের চোখে এত বিষাদ কেন থাকবে এর উত্তর লেখা থাকবে না কোনো কবিতায়, পক্ষীসমীক্ষায়। মোটামুটি সব্বাই জানে, ঈগলের কোনো অভিমান থাকতে পারে না, ঈগলকে এড়িয়ে গেলেই অন্যান্যের ভালো থাকা হয়। কর্নেল ঈগলকে কেউ চিঠি লেখে না, ই-মেইল করে না, ফোন করে না, ‘কেমন আছ’ বলে না। ঈগল শুধু ঈগল হয়েই ওড়ে, দূরে, ডানা থাকলে আমিও যেতাম উড়ে



আরও কত নামহীন পাখি আছে, ডানা থাকলে আমার হয়তো কোনো নামই থাকত না, অপেক্ষা-বিষাদ দূরত্ব থাকত না



৭. উত্তরের হাওয়া



কার কথা কীভাবে বলব আমি?



বন থেকে প্রকাশিত দৈনিক ঝরাপাতা কারা তাতে লেখে আর কারাই বা পাঠক-পাঠিকা? কার কাছে বলা যায় উত্তরের হাওয়া আসে গুপ্তচর হয়ে? সন্ধে থেকেই ওঁৎ পেতে বসে আছে আততায়ী ঘ্রাণ, চন্দ্রমল্লিকার! মনে হয়, ভাবনা সম্প্রচার কেন্দ্রের আজ রজতজয়ন্তী, তুমুল ভাবনাসূচি: ভাবনাকে দেখতে আসে বুদ্বুদ, দোস্তে দোস্তে জুয়া খেলে কয়েক সেকেন্ড; এর মধ্যেই ঝাঁপ দেয় গনগনে কবিতাখসড়া, এর মধ্যেই উঁকি দিয়ে যায় এক স্বর্ণমৃগয়া, নড়ে ওঠে ঝোপঝাড়, যেহেতু সতর্ক, পদধ্বনি বাইপাস করে ছুটতে থাকি ছুটতে ছুটতে ছুটতে ছুটতে বনবনানীর নির্জনতায় যেখানে এলাম ওহ কী দুরবস্থা, নিজেই রচনা করেছি সুনিপুণ আত্মঘাতী ব্যাকরণ। আমি এই জঙ্গলের গাছে গাছে ফেরার কোনো চিহ্ন এঁকে রেখে আসিনি, কীভাবে ফিরব? আমি কি আজ অরণ্যমন্ত্রী? না, আমি এই বনবাস উদ্্যাপন করছি না। হাওয়া-বাতাসের অর্কেস্ট্রায় এই মর্মর কম্পোজিশন আমার ভালো লাগছে না। আমি জানি, এক দিগ্বালিকা বড় হচ্ছে ঘরের মধ্যে, রাতে; বাইরে বসন্তপূর্ণিমা, বাইরে অঙ্গার বৈরাগীর গান পাতা-টাতা নাই বনে, ভালোবাসি তোমারে, হরিণেরা কি জানে, ভালোবাসি তোমারে? ঘরের মধ্যে বড় হচ্ছে বালিকা, বালিকারা বড় হচ্ছে কার জন্যে এই প্রশ্ন কোনো প্রশ্নই হয়ে উঠত না, যদি, আমাদের কবিতার চেয়ে করে আসা লোকাচার, ধর্মাচার, তদীয় গ্রন্থাচার বড় না হতো! আমি জানি এক দিগ্বালিকা বড় হচ্ছে ঘোরের মধ্যে, ঘরের মধ্যে, জনপদে। সে বালিকা জানে তার ভালোবাসা সেই ডালিম, ধীরে ধীরে বড় হয়, লুব্ধক প্রেমিকের হাতে পড়লেই পাকা ডালিমটা ফেটে যায়, পাকা ডালিম ফাটা ডালিম ভেতরটা দেখিয়ে দেয়। আমি সেই ফলের রসময়ী দানাগুচ্ছ থেকে বহুদূরে এক স্বর্ণমৃগয়ার খপ্পরে পড়ে এই বনভূমির মধ্যে, আজ আর এই গ্রিন অভিবাস পছন্দ করছি না।

যদিও কোকিল ডাকছে, এতে পরিস্থিতির আরো অবনতি হচ্ছে, স্বাভাবিকতার পতন ঘটছে। এ সময় কবিতা লিখতে ইচ্ছে করে, এ সময় উত্তরের হাওয়া আসে গুপ্তচর হয়ে, দক্ষিণের বারান্দায় ওঁৎ পেতে বসে থাকে আততায়ী ঘ্রাণ, চন্দ্রমল্লিকার। মনে হয়, শিহরণ শব্দের অর্থ বুঝতেই দিগ্বালিকা আজ আর স্কুলে যাবে না, কিন্তু স্কুলে যাবার নাম করে সে ঠিকই বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়বে।



শিহরণ, তোর কথা কীভাবে লিখব আমি?



৮. বসন্তদিন



রহস্যপুর গল্পটা পড়া শেষ হয়নি



আমি সিরিয়াস পাঠক। পড়তে পড়তে পৃষ্ঠা পৃষ্ঠা এগিয়ে যাই, তাকিয়ে দেখি গল্পের মধ্যে সোনার ঢেঁকি… পাড়ের শব্দও শুনি। ঠিক তক্ষুণি, পর্দাজুড়ে দৃশ্যমান, হাঁক দিয়ে চলে যাচ্ছে দইঅলা বলে একটা চরিত্র, আমি তার পিছু পিছু এগিয়ে যাই কয়েক পৃষ্ঠা, হঠাৎ সামনে পড়ে পোড়ো রাজবাড়ি, রাজবাড়িটা ভাঙা ভাঙা এবং ভৌতিক… ভীতিলুব্ধ সিঁড়িতে একটা প্রজাপতি, আমি প্রজাপতিকে লক্ষ করে উপরে উঠতে থাকি। প্রত্নকোঠার ছাদের কিনারে গিয়ে বলি, ‘প্রজাপতি, তোমার আত্মজীবনী আমি মুখস্থ করতে চাই’, শুনেই ডানাঅলা এই প্রায়পাখিটি উড়ে যায়। এবার আমিও উড়তে থাকি প্রায়পাখিটির সঙ্গে, পৃষ্ঠার পরে পৃষ্ঠা, বাক্যের পর বাক্য, শব্দের পর শব্দ, প্রয়োজনীয় নৈঃশব্দ… প্রজাপতি, আমাকে তুমি কোথায় নিয়ে যাচ্ছ? তুমি কি কোনো বংশীবাদক, সুরের ফাঁদে ষড়যন্ত্র করছ? ট্র্যাপ করে পাহাড়ের দিকে টানছ?



রহস্যপুর গল্পের তেইশতম পৃষ্ঠায় সেই হাইডআউট লোকেশন, পাঠক যেখানে অসহায়, দুরু দুরু-সন্ত্রস্ত কিন্তু এগিয়ে যেতে উৎসাহী। প্রতিষ্ঠিত অন্ধকারে মুখোমুখি এক মায়াবী অধ্যায় : আলো হয়ে প্রকাশিত নারী। নারীর সর্বাঙ্গে সদম্ভ আগুন, অহোরাত্র নারীকে পড়তে গিয়েই আগুনে পুড়তে হয়… এই নিয়তি নির্ধারিত বলে, মন পুড়ে যায়। পোড়া মন চিকিৎসাধীন… নার্সও দেখতে প্রায়নারী, বেতন-ভাতায়।



আমি রহস্যপুর হাসপাতালে শুয়ে আছি, গল্পের মাঝামাঝি কোনো পৃষ্ঠায়। খুবই জানি, সুস্থ হলেই আবারও সেই ষড়যন্ত্র, প্রজাপতির। হয়তো আমারও খুব ইচ্ছে করবে, তার ডানার খোপের অন্ধকারে রঙ মেখে ঘুমিয়ে থাকি, জাগি। বোঝাই তো যাচ্ছে, এরপর গল্পে একটা খুন এসে যাবে। টিকটিকিরাও জানাচ্ছে, চিরকালই খুনের প্রেরণা নারী। সিরিয়াস পাঠক আমি, হিটলিস্টে আছি, সুতরাং খুন হয়ে যাব– এই ভয়ে অসুস্থ থাকি। হাসপাতালে শুয়ে শুয়ে (জন্মদোষে) নার্স ও নারীর আন্তঃপার্থক্যটুকু ধরার চেষ্টা করছি, পড়ার চেষ্টা করছি… আমার পোড়ামন চিকিৎসাধীন



এদিকে বসন্তদিন…



৯. খুব ভালো হতো



মনে করো সেই পার্বত্য কবিতাটি আমি বাংলায় লিখছি…



পাহাড়ি মেয়েটি ঝর্নার পাশে বসে খুব ভয়ে ভয়ে কাঁদছে। উপত্যকার যৌবন আর্তনাদে আর্তনাদে ফুঁপিয়ে উঠছে। এ সময় মনে হয়, আত্মার অব্যক্ত বিলাপনই মর্মর কবিতা…



কবিতার আগে রচিত হলো ঘটনা। যতদূর মনে পড়ে, ঘটনা সম্ভবত এরকম যে, পাহাড়ি ছেলেটি আলিঙ্গন ছিন্ন করে বলল, ‘যেতে দাও, যাই?’ মেয়েটি বলল, ‘আর একটু উত্তাপ দিয়ে যাও, বুকের, না হয় আজ আর যেও না…’ তবু পাহাড়ি ছেলেটি মেয়েটিকে দীর্ঘ এক চুমু খেয়ে বলল, ‘আসি?’



মেয়েটি কাঁদছে: সে আমাকে রেখে যখন চলে গেল, ঝিরিপথে প্রচুর নুড়ি থাকায় কিছুদূর যেতেই আমি তার পা’র গোড়ালি আর দেখতে পেলাম না। আমি তাকে পেছন থেকে এতো করে ডাকলাম, তবু এই ঝর্নার শব্দে শব্দে সে আমার ডাক শুনতে পায়নি। কুয়াশাও চায়নি আমি তাকে বহুদূর পর্যন্ত দেখি, তাই আর কিছুদূর যেতেই সে আমার দৃষ্টিসীমানা ডিঙিয়ে গিয়ে পাহাড়ের ওপারে চলে গেল



কিছুক্ষণ পর, উপত্যকায় গুলির শব্দ হলো। ছেলেটি আর ফিরল না। পাহাড়ি মেয়েটি তাই ঝর্নার পাশে বসে খুব ভয়ে ভয়ে কাঁদছে যদি ঝর্নাজলে ভেসে আসা এই রক্ত তার প্রণয়ের রক্ত না হতো, খুব ভালো হতো, খুব ভালো হতো, খুব ভালো হতো







মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:০৬

এহসান সাবির বলেছেন: অনেক লেখা একসাথে পেলাম..... ভালো লেগেছে..

২| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:০৩

এস এম লুৎফুল্লাহ মাহমুদ বলেছেন: চমৎকার!!!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.