নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সৈয়দ মামুনূর রশীদ

সৈয়দ মামুনূর রশীদ

কাঙাল মানুষ, কাঙাল মন / আগা-গোড়া কাঙালী জীবন/ দুঃখ করি না, দুঃখ দিই না/ জোৎস্নার দিঘীতে স্নান দিয়ে/ সুখে ভাসতে চাই।

সৈয়দ মামুনূর রশীদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

কেঁচো সারের ব্যাপক ব্যবহার নিশ্চিত করে পরিবেশ রক্ষায় উল্লেখযোগ্য ভুমিকা ও জমির হারানো উর্বরতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব

২৫ শে আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৩:৩৯

ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য নিশ্চিতকরণে চাষাবাদে প্রয়োজন অধিক ফলন। ফলে অধিক ফলন নিশ্চিকরণে সারা দেশের চাষযোগ্য জমিতে ব্যবহৃত হচ্ছে নানাধরণের রাসায়নিক সার ও বিভিন্ন ধরণের কীটনাশক। প্রকৃতির প্রাকৃতিক ফলন ব্যবস্থায় রাসায়নিক প্রযুক্তির মাত্রাহীন ব্যবহারে অধিক ফলন সম্ভব হলেও দেখা দিয়েছে নানারকম পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া। প্রথমত এসব রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহারের ফলে ঘটছে; পরিবেশ দুষণ ও অন্যান্য জলজ ও মাটির উপকারী জীব-পতঙ্গের বিপন্নতা। দ্বিতীয়ত যে বিষয়টি সবচেয়ে আশংকাজনক তা হলো জমির উর্বরতা কমে যাওয়া। অনেকের মতে রাসায়নিক সারে উৎপাদিত ফসলের স্বাদও পাল্টে যায়। শুধু স্বাদ নয়, বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, উৎপাদনে অতিমাত্রায় রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহারের ফলে উৎপাদিত ফসলেও ওই সকল রাসায়নিক দ্রব্যের ক্ষতিকর প্রভাব রয়ে যায়- যা মানব স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তবে একথাও অত্যন্ত বাস্তব যে, বিপুল জনসংখ্যার খাদ্য সংস্থানে অধিক ফলন অত্যন্ত জরুরী। এমন এক সংকটাপন্ন অবস্থায় প্রকৃতির ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে, বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহি সুজলা-সুফলা, শষ্য-শ্যামলা উর্বর জমির হারানো খ্যাতি ফিরিয়ে আনতে ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার বড়ধরণের ভুমিকা রাখতে সক্ষম। বলা হয় ‘কেঁচো’ জমির প্রাকৃতিক নাঙ্গল। গ্রামাঞ্চলের মানুষের মুখের প্রবাদ আছে ‘যে জমির মাটি যত বেশি উর্বর, সে জমিতে তত বেশি কেঁচো পাওয়া যায়’৷ বস্তুত: এদেশের চাষাবাদের জমি ‘সুজলা-সূফলা’ খ্যাতির পেছনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকায় ছিল এই কেঁচো। বলা যায় রাসায়রিক সার ও কীট নাশক প্রয়োগের ফলে বর্তমানে প্রাকৃতিক নাঙ্গল খ্যাত ‘কেঁচো’ এখন হুমকির মুখে। এমতাবস্থায় কৃষি বিশারদগণ বলছেন, আবারো ফিরে যেতে হবে সেই উপকারী বন্ধু প্রাকৃতিক নাঙ্গলের কাছে। কারণ জমিতে রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে মাটিতে প্রোটিনের পরিমাণ ব্যাপকভাবে কমে যাচ্ছে। কেঁচো সার ব্যবহারের ফলে মাটির উর্বরতা বাড়ে, বিপরীতে রাসায়নিক সারের মতো প্রোটিন কমে না। তাই এ সার জমি ও পরিবেশের জন্য অনেক উন্নত। ফলে দিনদিন বাড়ছে কম্পোস্ট এবং ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সারের ব্যবহার ও জনপ্রিয়তা। কম্পোস্ট কথাটি ল্যাটিন শব্দ যার অর্থ কয়েকটি জিনিস একত্রে মিশানো। কয়েকটি জিনিস একত্রে মিশিয়ে স্তরে স্তরে সাজিয়ে এ সার তৈরি করা হয়। কেঁচোসার উৎপাদন-প্রযুক্তি অত্যন্ত সহজ, যা গ্রামের একজন সাধারণ নারীও প্রস্তুত করতে সক্ষম। প্রথম অবস্থায় কাঁচা গোবর সংগ্রহ করে তা সাত/ আট দিন চট দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে, যাতে সরাসরি সুর্যের আলো না পড়ে। তারপর ছাউনিযুক্ত খোলা ঘরে বা বাইরে ছাউনী তৈরী করে একটি সø্যাবের উপর একটি রিং দিয়ে এক-একটি উৎপাদন ইউনিট স্থাপন করতে হবে। সাত/ আট দিন পর পূর্বে রাখা ওই পুরানো গোবরের স্তুপ থেকে ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ কেজি গোবর রিং-সø্যাবের প্রতিটি উৎপাদন ইউনিটে এমনভাবে দিতে হযে যাতে রিংয়ের উপরিভাগে এক আঙুল খালি থাকে। তারপর প্রতিটি উৎপাদন ইউনিটে (একটি রিং-সø্যাব) পাঁচশত প্যারেন্ট কেঁচো ছেড়ে দিয়ে নাড়াচাড়া কওে মিশেয়ে দিতে হবে। মনে রাখতে হবে দিনের বেলায় প্রতিটি রিংয়ের (উৎপাদন-ইউনিট) উপর চটের আস্তরণ দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে- যাতে সুর্যের আলো সরাসরি না পড়ে এবং সন্ধ্যার পর চটের আস্তরণ সরিয়ে নিতে হবে - যাতে গ্যাস সরে যেতে পারে। মাঝে মাঝে গোবর শুকিয়ে আসলে পানি ছিটানোর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে এবং নিয়মিত গোবর নাড়াচাড়া করতে হবে। এভাবে প্রথম উপাদন-কালে সময় লাগবে; পঁয়তাল্লিশ দিন এবং পরবর্তী উৎপাদনকাল হবে; পঁচিশ থেকে ত্রিশ দিন। প্রতিটি উৎপাদনকাল শেষে প্রতিটি উপাদন-ইউনিটে (একটি রিং-সø্যাব) ১২-১৫ কেজি কেঁচো সার উৎপাদন হয় এবং প্রতি তিন মাস অন্তর একটি ইউনিটে দেয়া পাঁচশত কেঁচো প্রজনন প্রক্রিয়ায় বংশবিস্তার করে সংখ্যা দাঁড়ায় এক হাজার কেঁচো। এভাবে এ পক্রিযায় সার এবং কেঁচো দুটোই উৎপাদন করা যায়। ফলে ইউনিট প্রতি আয় হয় দশ টাকা হারে কেঁচোসার বাবদ একশত পঞ্চাশ টাকা এবং কেঁচো পিছপ্রতি একটাকা হারে পাঁচশত টাকা (এলাকা ভেদে মুল্য ভিন্ন হতে পারে) এবং সর্বমোট ‘উৎপাদন ইউনিট’ প্রতি একটি উৎপাদনকালে আনুমানিক ছয়‘শ থেকে সাড়ে ছয়’শ টাকায় করা সম্ভব। কেঁচো একটি অমেরুদন্ডী প্রাণী৷ এ প্রাণীকে পোষতে বাড়তি কোন ঝামেলা নেই৷ কেঁচো দ্রুত বংশ বিস্তার লাভ করে এবং কয়েক মাসেই তা উপযোগিতা লাভ করে। অন্যদিকে বিভিন্ন ফসলের একর প্রতি ১০০০ কেজি ভার্মি কম্পোস্ট ব্যবহার করে আশানুরূপ ফল লাভ হয়েছে। ফল বাগানে গাছ প্রতি ৫ থেকে ১৫ কেজি ভার্মি কম্পোস্ট ব্যবহার করে ভালো ফলন হয়।

সাধারণ গ্রামীণ নারীরা গৃহস্থালী কাজের পাশাপাশিও কেঁচো সার উৎপাদনে সক্ষম, এর জন্য বাড়তি বিশেষ সময়ের প্রয়োজন পড়ে না। কৃষক পরিবারে কৃষিকাজের পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবে কেঁচো সার উৎপাদন করে বাড়তি আয়ের সংস্থানও করা যায়। পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ এবং পিকেএসএফ এর সহায়তায় যে সকল এনজিও মাঠ-পর্যায়ে ভার্মি কম্পোজ উৎপাদন, প্রশিক্ষণ এবং প্রযুক্তি সহায়তা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে তাদের তথ্যসুত্রেও দেখা যায় বাংলাদেশের গ্রামে-গঞ্জের আনাচে-কানাচে অনেক নারী স্বাবলম্বী এবং বহু কৃষক তাদের পরিবারের অর্থনৈতিক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছে। আশা করা যায় পরিবেশ বান্ধব এই কেঁচো সার উৎপাদন এবং ব্যবহার যদি সারাদেশে প্রতিটি গ্রামে নিশ্চিত করা যায়, তাহলে বাংলাদেশের সকল চাষযোগ্য জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পাবে, হারানো গৌরব ফিরে পাবে, অসংখ্য কৃষক পরিবার অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হবে, যা জাতীয় উন্নয়ণে এক বড় আকারের ভুমিকা রাখতে সক্ষম হবে।
----সৈয়দ মামুনূর রশীদ

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৫:৩৫

বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় বলেছেন:
সচেতনামূলক পোস্ট++++++্

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.