নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সৈয়দ মামুনূর রশীদ

সৈয়দ মামুনূর রশীদ

কাঙাল মানুষ, কাঙাল মন / আগা-গোড়া কাঙালী জীবন/ দুঃখ করি না, দুঃখ দিই না/ জোৎস্নার দিঘীতে স্নান দিয়ে/ সুখে ভাসতে চাই।

সৈয়দ মামুনূর রশীদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

সংগঠিত হওয়া জরুরী : আরবান কমিউনিটি স্বেচ্ছাসেবক

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৫৫



স্বেচ্ছায় নিঃস্বার্থে মানুষ, সমাজ, দেশ ও বিশ্বের কল্যাণে অংশগ্রহণই মুলত; স্বেচ্ছাসেবকত্ব (Voluntarism)| । গভীর রাতে পাশের বাড়িতে আগুন লাগলে, ডাকাত পড়লে কিংবা প্রতিবেশী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে সম্পূর্ণ সেবার মনোভাব নিয়ে ঝাপিয়ে পড়া মানুষের চিরন্তন এবং শ্বাশত স্বভাব। আদিকাল থেকে মানুষের মানবীয় গুণাবলীর মাঝে স্বেচ্ছাসেবকত্ব একটি অন্যতম গুণ হিসেবেই স্বীকৃত। কালের পরিক্রমায় প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় প্রকৃতির কোলে যাপিত জীবনের ক্ষুদ্র মানুষগুলো একদিন ভাবতে শুরু করল যে, মানুষ আর অসহায় নেই। প্রকৃতির কোলে বসে প্রকৃতির সšতান মানুষ ধীরে ধীরে সামাজিক জীবের পারস্পরিক নির্ভরতা, সহায়তার বন্ধন শিথিল করে অতিমাত্রায় আত্মকেন্দ্রিক, বাণিজ্যিক জীবে পরিণত হতে শুরু করে। উন্নত পৃথিবীর উন্নত মানুষ নানা প্রকৃতির প্রকৌশল বিদ্যার উন্নয়ণ ও চর্চার মাধ্যমে পৃথিবী নামক গ্রহটির প্রতিটি উৎস অতিব্যবহারে মনোযোগী হলেন। আবিস্কৃত প্রযুক্তি প্রকৃতি বান্ধব কিনা না ভেবে শুধুমাত্র নিজেদের স্বার্থ বান্ধব কিনা তাই ভেবে এসেছে এতকাল। প্রকৃতি বোধহয় বিষয়টি সহজভাবে না নিয়ে তার চিরাচরিত করুণাময়ী রূপের বিপরীত পিঠের ভিন্নরূপ দেখাতে শুরু করে, যার নাম প্রাকৃতিক দুর্যোগ। প্রাকৃতিক দুর্যোগ পূর্বেও ছিল, যা এখন মাত্রা, সংখ্যা এবং পরিমাণগতভাবে অকল্পনীয়ভাবে বেড়ে গেছে নিঃসন্দেহে। বর্তমানে যে হারে বন্যা, সুনামি, ভুমিকম্প, জলোচ্ছাস, ঘুর্নিঝড়, পাহাড়ধসসহ নানা দুর্যোগে দুর্বিষহ পর্যায়ে অবস্থান করছে তাতে মানুষ বোধহয় আবারও প্রকৃতির কাছে অসহায়বোধ করা শুরু করেছে। তারা আবারও সামাজিক বন্ধনগুলো সুসংহত, পুনরুজ্জীবিত করার সর্বোচ্চ প্রচেষ্ঠা শুরু করেছে। শুধু প্রকৃতি নয় মানুষের মধ্যে সামাজিক বন্ধন শিথিল হওয়ার কারণে সমাজে বেড়ে গেছে দুর্বৃত্তায়ন, রাহাজানি, খুনাখুনিসহ নানা অপরাধ। মানুষ যখন প্রত্যেকে একা একা সমাজ বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো বসবাস শুরু করে কার্যত তারা নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ে। সমাজ বিচ্ছিন্ন যাপিত জীবনের এই নিঃসঙ্গতা কিছু মানুষকে হিংস্র কিংবা অপরাধপ্রবণ করে তোলে আবার অপরপক্ষে আরেকটি অংশ দুর্বল ও অসহায় হয়ে পড়ে।

মানব বসতিতে নানাধরণের দুর্যোগের এই ভয়াবহ সময়ে মানবতা এবং সামাজিকতা থেকে সরে আসা বিচ্ছিন্ন মানুষদের মাঝে প্রাকৃতিকভাবে বিরাজমান স্বেচ্ছাসেবক গুণটি সংগঠিতভাবে জাগ্রত করতে দেশে দেশে বিশ্বব্যাপী স্বেচ্ছাসেবক (Voluntarism)| তৈরীতে মনোযোগী হয়েছেন বিশ্ববাসী। নানা প্রক্রিয়ায় নানাভাবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গর্বিত স্বেচ্ছাসেবক তৈরী করা হচ্ছে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে। এই মহান ব্রতে এগিয়ে আসছে তরুন-তরুণীসহ সকল স্তরের সকল বর্ণের মানুষ। দুর্যোগ মোকাবেলায় স্থানীয় অধিবাসীদের প্রশিক্ষিত করার মাধ্যমে ভলান্টিয়ারিজম-এ উদ্ভুদ্ধ করা সময়ের জরুরী প্রয়োজন। ভোগলিক আবস্থানগত কারণে বাংলাদেশ একটি দুর্যোগ ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। নানাধরণের প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দৃর্যোগ প্রায় প্রতিনিয়তই এ ব-দ্বীপে আঘাত হানে। সাধারণত: এই দুর্যোগ মোকাবেলায় স্থানীয় জনগণই প্রথম উদ্ধারকারী হিসেবে এগিয়ে আসে। আক্রান্ত হোক বা অনাক্রান্ত হোক তারাই প্রথম সাড়া প্রদান করে আক্রান্ত মুমুর্ষ মানুষের সাহায্যে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় জনগণের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও জ্ঞান থাকলে, দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারী বেসরকারী সংস্থাসমুহ দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছার পূর্বে স্থানীয় জনগণ দুর্ঘটনা মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করতে পারবে। এ ছাড়া যে কোন দুর্ঘটনার পর তা নিয়ন্ত্রনের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারী বেসরকারী সংস্থার সহিত স্থানীয় জনসাধারণ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে দ্রুত দুর্ঘটনা জনিত ক্ষয়-ক্ষতিনিয়ন্ত্রণে ও নিরূপণে প্রয়োজনীয় ভুমিকা পালন করতে পারেন। দুর্যোগ মোকাবেলায় কমিউনিটি স্বে"ছাসেবক হিসেবে নারীদেরও এক বিশেষ ভুমিকা রয়েছে। দুর্যোগে আহত মানুষের প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদানের পাশাপাশি আহত শিশু ও নারীর পরিচর্চায় প্রশিক্ষিত মহিলা স্বে"ছাসেবক অত্যšত কার্যকর ভুমিকা রাখতে পারে। বিশেষ করে উদ্ধার করা আহত শিশুদের তাৎক্ষনিক পরিচর্চার মতো অত্যšত জরুরী বিষয়ে নারী স্বেচ্ছাসেবক বিশেষ ভুমিকা রাখতে পারে।

বিশ্বের সকল উন্নত দেশেই বড় দুর্যোগ মোকাবেলার লক্ষ্যে তাদের রেগুলার ফোর্সের পাশাপাশি স্বে"ছাসেবক গড়ে তোলা হয়। আমাদের দেশেও উন্নত বিশ্বের আদলে বড় দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ে আওতাধীন কমপ্রিহেনসেভ ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রাম (সিডিএমপি) এর সহায়তায় ২০০৯ সাল হতে সারাদেশে ৬২,০০০ (বাষট্টি) হাজার স্বেচ্ছাসেবক তৈরীর প্রকল্প হাতে নেয়া হয় এবং বর্তমানে বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের দক্ষ ও অভিজ্ঞ প্রশিক্ষকদের মাধ্যমে তা বা¯তবায়িত হচ্ছে। দেশের সমগ্র জেলা সদর ও সিটি কর্পোরেশনগুলির প্রতিটি ওয়ার্ড হতে ২০০জন করে প্রশিক্ষিক স্বে"ছাসেবক তৈরী করা হবে। তাছাড়া বাংলাদেশ আর্মড র্ফোসেস, বাংলাদেশ পুলিশ, বাংলাদেশ আনসার, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর, রোভার স্কাউট, প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক্র মিড়িয়া সাংবাদিকদেরও পর্যায়ক্রমে এ প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। যাতে সম্মিলিতভাবে সবার অংশগ্রহণে দুর্যোগ নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ভুমিকা পালন করতে পারেন। দুর্যোগ মোকাবেলায় কমিউনিটি স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে নারীদেরও এক বিশেষ ভুমিকা রয়েছে। দুর্যোগে আহত মানুষের প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদানের পাশাপাশি আহত শিশু ও নারীর পরিচর্যায় প্রশিক্ষিত মহিলা স্বেচ্ছাসেবক অত্যন্ত কার্যকর ভুমিকা রাখতে পারে। বিশেষ করে উদ্ধার করা আহত শিশুদের তাৎক্ষনিক পরিচর্যার মতো অত্যন্ত জরুরী বিষয়ে নারী স্বেচ্ছাসেবক বিশেষ ভুমিকা রাখতে পারে।
প্রশিক্ষণটির লক্ষ্য, উদ্দেশ্য নিঃসন্দেহে একটি মহতি এবং কার্যকর উদ্যোগ। মানুষ হিসেবে মানুষের বিপদে এগিয়ে আসার ইচ্ছা সবারই আছে, কিন্তু সে ইচ্ছা যদি প্রশিক্ষিত আর সংগঠিত হয় তাহলে ইতিবাচক ফলাফল অর্জন অত্যšত সহজ। এই সমন্বিত কার্যক্রমের প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবক তৈরীর পর মূলত: এই উদ্যোগের দায়বদ্ধতা এবং করণীয় আরো বেড়ে যাওয়ার কথা। আগামীদিনে দুর্যোগ দুর্বিপাকে প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবকদের অংশগ্রহণে উৎসাহিতকরণ কিংবা তাদের যথার্থভাবে কাজে লাগানোসহ এই প্রশিক্ষণলব্দ জ্ঞান আর চর্চার জন্য নিয়মিত মহড়া, প্রয়োজনীয় প্রাথমিক সরঞ্জাম এবং পরস্পর যোগাযোগ, মতবিনিময়, আলোচনা নিতাšতই প্রয়োজন। প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবকদের মাঝে পরস্পর যোগাযোগ এবং চর্চা না থাকলে হয়তো এই উদ্যোগের সফলতা আতুড়ঘরেই থেমে যেতে পারে। ক্রমান্বয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত আরবান কমিউনিটি ভলান্টিয়ারদের যথার্থভাবে কাজে লাগাতে প্রথম যে কাজটি জরুরী তা হলো তাদেরকে সংগঠিত রাখার একটা স্থায়ী ব্যবস্থা করা। ভলান্টিয়ারদের এমন এক নৈতিক ভিত্তি, সরকারী স্বীকৃতি এবং আদর্শ পদ্ধতিতে সংগঠিত করতে হবে যাতে সরকারী বা দাতা সংস্থার ফান্ড শেষ হয়ে গেলেও ডিজাস্টার ভলান্টিয়ারদের সংগঠনটি নিজেদের উদ্যোগে কাজ চালিয়ে যেতে পারে। আরবান কমিউনিটি ভলান্টিয়ারদের ওয়ার্ডভিত্তিক সংগঠিত করে প্রতি ওয়ার্ডের প্রতিনিধি নিয়ে থানা, জেলা এবং জাতীয় কমিটি গঠনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক পন্থায় একটি আদর্শ নাগরিক সংগঠন গড়ে তোলা যায়। যে সংগঠনের কর্মী এবং নেতৃবৃন্দ আদর্শ আর নৈতিকতার শিক্ষায় সত্যিকার অর্থে নিজেদের স্বেচ্ছাসেবক কিংবা স্বেচ্ছাসেবক নেতা হিসেবে গড়ে তুলবে। স্বেচ্ছাসেবক পর্যায়ে ত্যাগী কর্মী ও নেতা তৈরীর ক্ষেত্রে অবশ্যই সর্বাগ্রে সরকারী স্বীকৃতি প্রয়োজন, যাতে একজন স্বেচ্ছাসেবক গর্বের সাথে তার পরিচিতি সমাজের কাছে তুলে ধরতে পারে। তাদের স্বীকৃতি প্রদানের লক্ষ্যে আরবান কমিউনিটি ভলান্টিয়ারদের সরকারীভাবে আইডি কার্ড প্রদান, এলাকাভিত্তিক প্রশিক্ষণকেন্দ্রসহ কার্যালয় স্থাপন, প্রতি ওয়ার্ড কমিটির তত্ত্বাবধানে দুর্যোগে উদ্ধারকাজের প্রাথমিক সরঞ্জাম প্রদানসহ ত্যাগী স্বেচ্ছাসেবকদের জাতীয় পর্যায়ে পুরুস্কার প্রদানের ব্যবস্থাকরণ ইত্যাদি পদক্ষেপের মাধ্যমে সফল হওয়া সম্ভব। মুলত: আরবান কমিউনিটি ভলান্টিয়ার তৈরীর চেয়ে তাদের সংরক্ষণ এবং প্রতিনিয়ত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মহড়ার মাধ্যমে তাদেরকে সদা কার্যপোযোগী করে রাখার কাজটি আরো বেশী জরুরী।
-------------------সৈয়দ মামুনূর রশীদ

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:১৭

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: আপনার পোস্টটি হয়ত গুরুত্বপূর্ন! কিন্তু জানি না, কেন যে পোস্টটা পড়ার আগ্রহ পাচ্ছি না। কোন ভাবে ইন্টারেস্টিং করা যায় কিনা দেখুন তো।

২| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:৪৯

জাহাঙ্গীর.আলম বলেছেন:
ভাল পোস্ট । মুলত: আরবান কমিউনিটি ভলান্টিয়ার তৈরীর চেয়ে তাদের সংরক্ষণ এবং প্রতিনিয়ত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মহড়ার মাধ্যমে তাদেরকে সদা কার্যপোযোগী করে রাখার কাজটি আরো বেশী জরুরী- সহমত ৷ মানবিকতার চর্চা অব্য্যাহত থাকুক ৷

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.