নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সৈয়দ মামুনূর রশীদ

সৈয়দ মামুনূর রশীদ

কাঙাল মানুষ, কাঙাল মন / আগা-গোড়া কাঙালী জীবন/ দুঃখ করি না, দুঃখ দিই না/ জোৎস্নার দিঘীতে স্নান দিয়ে/ সুখে ভাসতে চাই।

সৈয়দ মামুনূর রশীদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

সাইবার অপরাধ

২০ শে অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৩:৫৮

মেহেরজান এখন অন্য বাড়ীর বউ। বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ছেলেটা তার নিত্যদিনের সহায়তাকারী, উপকারী বন্ধু, ওই ছেলেটাই ছিল তার প্রেমিক। পড়ালেখা পাশ দিয়ে মেহেরজান প্রেমিকের কাছে হাত পাতে বিয়ের জন্যে। বেকার জীবন নিয়ে সাকার প্রেমিক পুরোপুরি অপরাগতা প্রকাশ করে। বাঙালী সমাজের সামাজিক মেয়ে-জীব আশাহত মেহেরজান বিয়ে করে অন্যত্র। ভালই যাচ্ছিল মেহেরজানের, নতুন সম্পর্ক, নতুন অধ্যায়, নতুন জীবন। হঠাৎ একদিন সাবেক প্রেমিক এসে হাজির মেহেরজানের শশুরবাড়ীতে। নানা চাপে, নানা হুমকীর মুখে মেহেরজান বাধ্য হয়, সাবেক বেকার প্রেমিকের বাসায় যেতে। অসহ্য মানসিক যন্ত্রণা আর অস্থিরতা নিয়েও মেহেরজান সাধ্যমত চেস্টা করে প্রেমিককে নিবৃত রাখতে। সংসার, স্বামী সব মিলিয়ে মাঝে একটু ব্যতয় ঘটে, প্রেমিকের কথামতো সময়মতো সাড়া দিতে পারে না মেহের। উত্তেজিত ও ক্ষুদ্ধ প্রেমিক কৌশলে একদিন নিয়ে আসে বাসায়। ফাঁদ পেতে অপেক্ষায় থাকে মেহেরজানের জীবনের সর্বনাশ। বাসায় বসে টুকরো টুকরো কথাগুলো চলে তাদের মাঝে। এক পর্যায়ে মেহেরজান যথারীতি বাধ্য হয়ে . . . .। লুকানো ক্যামেরার ধুর্ত লেন্স মেহেরজান আর তার প্রেমিকের কথা আর দৃশ্য ধারণ কওে ফেলে। মেহেরজান পায়ে পড়ে, টাকা-পয়সা দেয়, কিন্তু কোন কিছুতেই ধর্ষক প্রেমিকের মন গলে না। মেহেরজানের স্বামীকে ফোন করে বলে, আপনার স্ত্রী আমার রুমে, কথা বলেন তার সাথে। সংসার ভেঙ্গেও তৃপ্তি আসে না পশু-অধম কথিত প্রেমিকের, শর্ত দেয় আজীবন যৌনদাসী থাকার। সর্বহারা মেহেরজান মামলা টুকেন সাবেক প্রেমিকের বিরুদ্ধে। এতে প্রেমিক আরো ক্ষেপে যায়। গোপনে ধারণ করা ভিডিও ছেড়ে দেয় নানা ওয়েবসাইটে। নারীর মুখে এসিড ছুঁড়ে মারার আইন আছে দেশে, সর্বোচ্চ মৃত্যুদন্ডও দিতে পারে হাকিম। ভারাক্রান্ত মন নিয়ে মেহেরজান দেখে এই অপরাধের কোন আইন নাই। কলংকময় এই অধ্যায়ের প্রেমিক পুরুষের অপরাধ কী এসিড নিক্ষেপের চেয়ে কম? তার শাস্তি কী মৃত্যুদন্ডের চেয়ে কম হলে পুষাবে মেহেরজানের কিংবা অন্য কোন নারীর জীবনে? দেশে এই কলংকের ভিডিও সরিয়ে নেয়ার কোন প্রযুক্তি নাই, ওয়েবসাইট কর্তৃপক্ষের সাথে কঠোরভাবে যোগাযোগের তৎপর রাষ্ট্রিয় কোন কর্তৃপক্ষ নাই। এই প্রেমিক-জারজের যথার্থ বিচারের কোন নির্দ্দিষ্ট আইন নাই। তাহলে মেহেরজান কোথায় যাবে, কার কাছে যাবে? তার পক্ষে জজ ব্যারিস্টার নাই, থানা পুলিশ নাই, মন্ত্রী-প্রেসিডেন্ট নাই, মা-বাবা নাই, সমাজ নাই, কোথাও যাওয়ার নাই তার! সমাজ পরিবার এমনকি রাস্ট্রের কাছে নিতান্ত চরিত্রহীন একজন মহিলা; মেহরজান। যার কোথাও যাওয়ার থাকে না তার একমাত্র রাস্তা বোধহয় আল্লাহর রাস্তা! মেহেরজান আল্লাহর রাস্তা ধরলেন; কবরের পথে।

আগেকার যুগে গণমানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল চিঠি। ধনীরা যোগাযোগে চিঠি আর টেলিফোন দুটোই ব্যবহার করতেন। চিঠি টপকিয়ে আসে টেপ রেকর্ডারের ফিতা পাঠানো। সৌদি প্রবাসী ছেলে ক্যাসেটের ফিতায় বলে, আম্মাজান আস-সালামু-আলাইকুম! আল্লাহর ঘর কাবা শরীফের কাছ থেকেই বলছিগো, মা! তারপর আসল বেতার মোবাইল, ডিশ এ্যান্টোনার ইথার যুদ্ধ, আকাশ দখল। সর্বশেষ যোগাযোগের প্রাচীন সমস্ত প্রথা ভেঙ্গে ঝড়ের বেগে অসে ইন্টারনেট। ইন্টারনেট এর মাধ্যমে ওয়েবসাইট, ফেসবুক, টুইটার, ম্যাসেন্জার, কত কী! যোগাযোগের এত্ব পরিবর্তনের সাথে আমাদের আইন-শৃন্খলা নিয়ন্ত্রণে নিয়োজিত বাহিনীগুলোর অবস্থান, গতিবিধির কী উল্লেখযোগ্য কোন পরিবর্তন হয়েছে? নিশ্চয় না। তারা এখনো সেই মান্দাত আমলের প্রাগৈতিহাসিক রিমান্ড পদ্ধতি নিয়ে চলছেন খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে।

সাইবার অপরাধ দমনে যুগা-উপযোগী আইন প্রণয়নের পাশাপাশি তথ্য প্রযুক্তিতে দক্ষ জনবল গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরী। উপরোল্লিখিত ঘটনার মতো ওয়েবসাইটে কারো আপত্তিকর ছবি দেয়ার সাথে সাথে ওয়েবসাইট ব্লগ করে দেয়া কিংবা ছবি সরিয়ে নেয়াসহ দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার মতো প্রযুক্তিজ্ঞান সম্পন্ন দক্ষ জনবল দরকার। সেই মান্দাত আমলের মতো মাঠে মাঠে, রাত বিরাতে ঘুরে ঘুরে আসামি খেঁজার দিন বোধহয় আর নাই। কারণ আইন শৃন্খলা বাহিনী বসে থাকলেও অপরাধীরা বসে নেই। তারা প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে সাথে নিজেদের উন্নয়ণ করে যাচ্ছে প্রতি মিনিটে। সম্প্রতি সাগর-রুনী হত্যাকান্ড, রামু-তান্ডবসহ আরো অনেক চাঞ্চল্যকর ঘটনার দ্রুত তদন্ত সম্ভব না হওয়ার পেছনে আমাদের দেশের আইন শৃন্খলা বাহিনীর তথ্য প্রযুক্তি জ্ঞান এবং অপরাধ বিজ্ঞানে পেছনে পড়ে থাকার ফসল। সাইবার অপরাধের ধরন প্রকৃতি কিন্তু দ্রুত পরিবর্তনশীল। যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে প্রযুক্তির আপগ্রেড এবং মানুষের মানষিকতার পরিবর্তন ইত্যাদি কারণে সাইবার অপরাধের নির্দ্দিষ্ট সংজ্ঞা নির্ণয় করাও কঠিন। সাইবার অপরাধের ক্ষেত্রে সবসময় যে পেশাদার অপরাধী দিয়ে হয়, তা কিন্তু সত্য নয়। শতকরা ষাট ভাগ সাইবার অপরাধ ঘটে কৌতুহলবশত: কৌতুহলি তরুণ-তরুণীর হাত দিয়ে। সাহিত্যিক আনিসুল হক এর লেখা, “এ যন্ত্র দিয়ে আমরা কী করিব” লেখাটির মত ইন্টারনেট এর মত অভাবনীয় প্রযুক্তি দিয়ে আমরা কী কী করতে পারি দেখতে দেখতে অনেক সময় বড়ধরণের অপরাধ সংঘটিত হয়ে যায়। সাইবার অপরাধ দমনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে যারা আইএসপি কোম্পানীরা আছে তারা বড়ধরণের ভুমিকা রাখতে পারে। তাদের ক্লাইন্টদের উপর নিয়মিত পর্যবেক্ষণ এর মাধ্যমে অনেক বড় বড় সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন এবং আইন শৃন্খলা বাহিনীদেও তথ্য দিয়ে সহায়তা করতে পারে। এক্ষেত্রে সাইবার অপরাধ প্রতিরোধ আইনে আইএসপি কোম্পানীদেরও আইনের আওতায় আনা যায়। যোগাযোগের পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যুগের পরিবর্তন হয়, যুগের পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে মানুষের মানষিকতা আর জীবন-জীবিকার পরিবর্তন হয়, জীবন-জীবিকার পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে অপরাধের ধরণ ও মাত্রারও পরিবর্তন হয়। সুতরাং অপরাধের পরিবর্তনের সাথে সাথে আমাদের আইন-শৃন্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পদ্ধতি, জ্ঞান, সক্ষমতা ও মানষিকতারও পরিবর্তন অনিবার্য। শুধু শাস্তিমুলক ব্যবস্থার উপর শতভাগ নির্ভর না করে সংশোধনমুলক অভিনব বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পর্কেও তাদের জ্ঞান ও দক্ষতা এবং আন্তরিকতা প্রয়োজন। সাইবার অপরাধ প্রতিরোধে সচেতনতামুলক কার্যক্রমের পাশাপাশি সাইবার অপরাধকে একটি গ্রহণযোগ্য ফ্রেমে (সংজ্ঞায়ন) এনে কার্যকর এবং যুগের উপযুক্ত আইন প্রনয়ন করা বোধহয় জরুরী। এই আইন যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে তাল মিলিয়ে সংক্ষিপ্ত সময়ে পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও পরিমার্জনের ব্যবস্থা রাখাটাও জরুরী।
--------- সৈয়দ মামুনূর রশীদ

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৫:৪৯

সজল৯৫ বলেছেন: সহমত....

২| ২০ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৮:০৯

ইকরাম বাপ্পী বলেছেন: সহমত

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.